প্রতীকী ছবি।
উন্নতির পথে পশ্চিমবঙ্গ। সদ্য-প্রকাশিত শিক্ষা সংক্রান্ত জাতীয় নমুনা সমীক্ষা বলিতেছে, রাজ্যে সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পাইয়াছে। ২০০১ ও ২০১১ সালের জনগণনায় যাহা ছিল যথাক্রমে ৬৮.৬৪ ও ৭৬.২৬ শতাংশ, বর্তমানে তাহা ৮০.৫ শতাংশ হইয়াছে। অর্থাৎ বিগত দুই দশক ধরিয়া রাজ্যে শিক্ষার হার ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী, রাজনৈতিক জমানা ব্যতিরেকেই। ইহা আশার কথা হইলেও সন্তুষ্টির স্থান নাই। ক্রমোন্নতি ঘটিলেও তালিকায় পশ্চিমবঙ্গ এখনও দশম স্থানে; এবং প্রথম স্থানাধিকারী কেরলে সাক্ষরতার হার ৯৬.২ শতাংশ। অতএব দীর্ঘ পথ চলা বাকি। এবং, একই সঙ্গে স্মরণে রাখা বিধেয় যে, সাক্ষরতা যেন কেবলমাত্র আলঙ্কারিক না হইয়া থাকে— অক্ষরজ্ঞান যেন সত্যই শিক্ষার সোপান হয়। সেই পথে যে ঘাটতিগুলি আছে, এক্ষণে তাহা পূরণ করাই বিধেয়। যথা অনলাইন লেখাপড়া, যাহা অধুনা শিক্ষাব্যবস্থার অপরিহার্য অঙ্গ, তাহার নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ পশ্চাৎপদ রাজ্য। রাজ্যে ৯.৪ শতাংশ পরিবারের নিকট কম্পিউটার আছে, ১৬.৫ শতাংশ পরিবার ইন্টারনেটের সুযোগ পায়। জাতীয় হিসাবের নিরিখে চিত্রটি করুণ। করোনাভাইরাসের প্রকোপ এখনও বহু দিন চলিবে, ততোধিক সময় বহাল থাকিবে অনলাইন লেখাপড়া। তাল মিলাইয়া চলিতে হইবে বইকি।
অনলাইন শিক্ষার মূল দুই চাবিকাঠি— যন্ত্র বা ডিভাইস এবং ইন্টারনেট সংযোগ— পাকাপোক্ত করাই প্রাথমিক কর্তব্য। ক্ষেত্রটি পরিকাঠামো উন্নয়ন সংক্রান্ত, অতএব এই কাজে কেন্দ্র ও রাজ্য, উভয়েরই ভূমিকা আছে। স্কুলবাড়ি, বইখাতা, ডেস্ক-বেঞ্চ, মাস্টারমহাশয়ের ন্যায় শিক্ষাদানের জন্য এই দুই উপাদানও এখন অপরিহার্য। পরিবর্তিত মাধ্যমে যথাযথ যন্ত্র বা ইন্টারনেট সংযোগ ব্যতীত লেখাপড়া করাই অসম্ভব হইয়া পড়িবে। স্মরণে রাখিতে হইবে, মফস্সল বা গ্রামাঞ্চলে এবং শহুরে দরিদ্র পরিবারগুলিতে এখনও এই দুই উপাদানের প্রচলন তত ঘটে নাই। বিত্ত বা অবস্থানের হিসাবে শিক্ষার হেরফের ঘটিলে, তাহা গণসাক্ষরতার পথে বাধাস্বরূপ। প্রশাসনিক উদ্যোগ ব্যতীত পথ নাই।
যদিও এই প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্কের মন্তব্য সংশয় জাগায়। তিনি বলিয়াছেন, অতিমারির প্রকোপের পর নাকি স্কুলশিক্ষার ধরন পাকাপাকি ভাবেই পাল্টাইয়া যাইবে, বৃদ্ধি পাইবে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট নির্ভরতা। যেখানে কেন্দ্রীয় সমীক্ষাই বলিতেছে যে দেশের আশি শতাংশ মানুষ কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের সুযোগ হইতে বঞ্চিত, সেইখানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এই ঘোষণা বাস্তবানুগ নহে। দিল্লি, কেরল, হরিয়ানা, পঞ্জাব-সহ হাতে গোনা কিছু রাজ্য ব্যতীত অধিকাংশ স্থলেই অনলাইন শিক্ষার হাল অতি করুণ। সিবিএসই স্কুল, কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় ও জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ের অধিকাংশ পড়ুয়ার নিকট অনলাইন শিক্ষার সরঞ্জাম নাই। তদুপরি ন্যূনাধিক বিদ্যুৎ ঘাটতির সমস্যা দেশের সর্বত্রই বিদ্যমান। বর্তমান কাল সঙ্কটের কাল— বাধ্যত শিক্ষার মুখ্য মাধ্যম হইয়াছে অনলাইন ব্যবস্থা। কিন্তু ভবিষ্যতে পৃথিবী সুস্থ হইয়া উঠিলে কেন এই ব্যবস্থা চালু থাকিবে, তাহা অনুধাবন করা দুষ্কর। অনলাইন এবং অফলাইন ব্যবস্থা দুইটি পরস্পরের সম্পূরক বা পরিপূরক হইবে, অনলাইনের উন্নতিও দরকার। কিন্তু যে দেশে এখনও পরিকাঠামো অপ্রতুল, সেই দেশে শুধু অনলাইন পদ্ধতি বাঞ্ছনীয় নহে।