Editorial

প্রাণের প্রধান শর্ত

জড় এবং জীবের প্রভেদ যেমন এখনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার অতীত একটি প্রহেলিকা, তেমনই অব্যাখ্যাত একটি রহস্য হইতেছে পৃথিবী গ্রহে প্রাণের স্পন্দন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২০ ০০:১৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

পৃথিবী গ্রহে প্রাণের উপস্থিতি এক বিস্ময়। সৌরমণ্ডলে অন্য গ্রহে প্রাণ নাই। এই ব্যতিক্রম বিস্ময়ের উদ্রেক না করিয়া পারে না। কারণ অনুসন্ধান করিতে গিয়া বিজ্ঞানীগণ জলের তরলাবস্থার কথা উল্লেখ করিয়া থাকেন। এই যুক্তি দেন যে, সৌর পরিবারে এই তৃতীয় সদস্যটি নক্ষত্র হইতে যথাযথ দূরত্বে তাহাকে প্রদক্ষিণ করিতেছে। দূরত্বের কারণে জল এই গ্রহে শূন্য ডিগ্রি হইতে একশত ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকিতে পারে। উক্ত পরিধি জলের তরলাবস্থা রক্ষায় আবশ্যক, সুতরাং প্রাণ এই স্থলে টিকিয়া থাকিতে পারে। এই যুক্তি পৃথিবীতে প্রাণের উপস্থিতির ব্যাখ্যা হইতে পারে, তবে ইহাতে গবেষকদিগের শতেক চেষ্টা সত্ত্বেও প্রাণসন্ধানে ব্যর্থতার হেতু অনুধাবন করা যায় না। জ্যোতির্বিজ্ঞানীগণ এমন অনেক গ্রহের সন্ধান পাইয়াছেন, যাহারা পৃথিবীর ন্যায় উষ্ণতার অধিকারী, অথচ যাহারা প্রাণধারণ করিতেছে না। পৃথিবীর ব্যতিক্রমতার কোনও ব্যাখ্যা অদ্যাবধি বিজ্ঞানীরা দিতে পারেন নাই। জড় এবং জীবের প্রভেদ যেমন এখনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার অতীত একটি প্রহেলিকা, তেমনই অব্যাখ্যাত একটি রহস্য হইতেছে পৃথিবী গ্রহে প্রাণের স্পন্দন।

Advertisement

জড়ের সহিত জীবের প্রভেদের একটি প্রধান লক্ষণ হইল খাদ্য-সংগ্রহ। জীব খাদ্য ব্যতিরেকে বাঁচিয়া থাকিতে পারে না। টিকিয়া থাকিতে জীবের কোষগুলিকে অনুক্ষণ কার্য করিতে হয়। আর কার্য করিতে এনার্জি বা শক্তি লাগে। জীবকোষে সেই শক্তি জোগায় খাদ্য। বিজ্ঞানীগণ আকুল, প্রাণীর জীবনধারণের অন্যতম রসদ খাদ্যের জোগান কত দিন চালু রাখিতে পারিবে এই গ্রহ, তাহা উহাদিগকে ভাবাইতেছে। উদ্বেগের হেতু দ্বিবিধ— প্রাণীর সংখ্যাবৃদ্ধি এবং ক্রমাগত পরিবেশক্ষয়। জার্মানিস্থ পটসড্যাম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চ প্রাণীকূলে কেবল মানুষের সংখ্যাবৃদ্ধির সহিত তাহার আহার্য জোগানের সম্পর্ক অনুসন্ধানে নামিয়াছিলেন। উক্ত কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞগণ গবেষণায় জানিতে পারিয়াছেন, এই ধরিত্রী এক্ষণে ৩৪০ কোটি মানুষের খাদ্যের জোগান দিতে সক্ষম। অথচ পৃথিবীর জনসংখ্যা ৭৮০ কোটি। তন্মধ্যে বড় ভাগিদার চিন এবং ভারত। চিনের জনসংখ্যা যেখানে ১৪০ কোটি, ভারতের ১৩০ কোটি। জনসংখ্যার চাপে মাতা বসুন্ধরা ক্লিষ্ট। দেখা যাইতেছে, খাদ্যের জোগান দিয়া ধরিত্রী যে পরিমাণ মনুষ্যকে বাঁচাইয়া রাখিতে পারে, আসল জনসংখ্যা তাহার দ্বিগুণ অপেক্ষা অধিক। খাদ্যের জোগান চাই, তাই ধরিত্রীর সাধ্যাতিরিক্ত আহার্য অন্বেষণে সে যাহার আশ্রয় লইতেছে, তাহাকে পরিবেশ নিধন ব্যতিরেকে অন্য কিছু বলা যায় না। বনানী সংহার, ফলনবৃদ্ধির লক্ষ্যে রাসায়নিক সার প্রয়োগ, কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার, ক্রমবর্ধমান জলসিঞ্চন ইত্যাদিতে পরিবেশ আজি বিপন্ন। যেন তেন প্রকারেণ ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি একমাত্র উদ্দেশ্যে পরিগণিত। জার্মান বিশেষজ্ঞগণ দেখিয়াছেন, ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করিয়া পৃথিবীতে ১০২০ কোটি মনুষ্যের খাদ্যের সংস্থান করা যায় বটে, কিন্তু তজ্জন্য কৃষিকার্যের বিন্যাস বদল আবশ্যক। বিন্যাস বলিতে কোন স্থানে কোন ফসল উৎপাদিত হইবে, তাহার পরিকল্পনা। খাদ্যাভ্যাসও বদলানো জরুরি। এই প্রশ্নে রাজনীতির প্রসঙ্গ আসিয়া পড়ে। যাহা আবশ্যক, তাহাই যে রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে কর্ণধারগণ মানিবেন, তাহার গ্যারান্টি কোথায়?

এই হতাশার মাঝে কিঞ্চিৎ আশার বাণী শুনাইয়াছেন পুষ্টি-বিশেষজ্ঞরা। বহু দিন যাবৎ শোনা যাইতেছে ‘নিউট্রিশনাল কোল্যাপস’ বা পুষ্টি সর্বনাশ। খাদ্যের পুষ্টিগুণ না কি কমিয়া যাইতেছে। কী রকম? বলা হইত, ১৯৫০ সালে একটি টোমাটো যে পুষ্টি দিত, তাহা পাইতে গেলে নাকি এই ২০২০ সালে ১০টি টোমাটো ভক্ষণ করিতে হয়। আমাদের পিতামহ-পিতামহী একটি কমলালেবু হইতে যে পরিমাণ ভিটামিন-এ সংগ্রহ করিতেন, সেই পরিমাণ ভিটামিন-এ নাকি এক্ষণে আটটি কমলালেবু হইতে মিলে। গবেষণা প্রমাণ করিয়াছে, শস্য বা ফলমূলের পুষ্টি কমিয়াছে ঠিকই, তবে হ্রাসের পরিমাণ অত নহে। ৪৩টি খাদ্যশস্যের পুষ্টিগুণ অনুসন্ধান করিয়া গবেষকগণ দেখিয়াছেন, হ্রাসের সর্বোচ্চ পরিমাণ ৬ শতাংশ। রাইবোফ্লাভিন, গোত্র-পরিচয়ে যাহা ভিটামিন বি-র শ্রেণিভুক্ত, তাহা হ্রাস পাইয়াছে ৩৮ শতাংশ। খাদ্যের পুষ্টিগুণ হ্রাস দুঃখজনক বটে, কিন্তু এখনও তাহা সঙ্কটময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করে নাই। সেই তুলনায় অনেক বেশি উদ্বেগজনক সংবাদ হইল খাদ্য উৎপাদনে পৃথিবীর সীমিত ক্ষমতা। তাহাই যে এই গ্রহে জীবের টিকিয়া থাকিবার প্রধান শর্ত।

Advertisement

যৎকিঞ্চিৎ

ট্রাম্প ও মোদী আক্ষরিক ভাবে গলাগলি বন্ধু। কিন্তু এখন দূরত্ব বজায় রাখার সময়। উত্তম আর সুচিত্রাও পারলে মাস্ক পরে দূর থেকে হাত নাড়েন। ফলে ওষুধ রফতানিতে মোদীর নিষেধ শুনে ‘দূরত্ব’ বোঝাতে এলেন ট্রাম্পও। গলাগলির জায়গায় গলায় এল শাসানি। কিন্তু মোদী, তড়িঘড়ি ‘ভেরি ভেরি সরি, মশলা খাবি?’ বলে বাড়িয়ে দিলেন ভার্চুয়াল আলিঙ্গন। ওষুধ গেল আমেরিকা। মহাসঙ্কটের মঞ্চে এই দুষ্টুমিষ্টি খুনসুটিই বলে দেয়, সবার উপরে সত্য— দাদাগিরি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement