Dirty Cities of India

সম্পাদক সমীপেষু: শহরের জঞ্জাল

সমীক্ষা আরও বলছে, গঙ্গার তীরবর্তী সবচেয়ে নোংরা দশটি শহরের মধ্যে ন’টিই এই বঙ্গে। অন্য দিকে, স্বচ্ছতার দিক থেকে উত্তরপ্রদেশের বারাণসী রয়েছে প্রথম স্থানে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০২৪ ০৫:৪৮
Share:

বাঘাযতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতালে আবর্জনা। —নিজস্ব চিত্র।

‘এত্তা জঞ্জাল! নোংরা শহরে দশে দশ বঙ্গ’ (১২-১) প্রতিবেদনটি পড়ে বিস্মিত হতে হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক সময় বলেছিলেন কলকাতাকে লন্ডন বানাবেন। কলকাতা যে লন্ডন হয়নি, তা কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের ‘স্বচ্ছ সর্বেক্ষণ’ সমীক্ষায় ধরা পড়েছে। রিপোর্ট বলছে, পরিচ্ছন্নতার মাপকাঠিতে এক লক্ষের বেশি জনবহুল শহরগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতায় প্রথম চারশোর মধ্যে কলকাতার জায়গা হয়নি। এত্তা জঞ্জাল নিয়ে ৪৪৬টি শহরের মধ্যে কলকাতার স্থান ৪৩৮তম। একেবারে শেষের স্থানে রয়েছে হাওড়া, যা প্রমাণ করে দেশের মধ্যে সবচেয়ে নোংরা শহর হাওড়া। সমীক্ষা আরও বলছে, গঙ্গার তীরবর্তী সবচেয়ে নোংরা দশটি শহরের মধ্যে ন’টিই এই বঙ্গে। অন্য দিকে, স্বচ্ছতার দিক থেকে উত্তরপ্রদেশের বারাণসী রয়েছে প্রথম স্থানে। তার পর প্রয়াগরাজ, বিজনৌর, হরিদ্বার, কনৌজ।

Advertisement

মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, “উত্তরপ্রদেশের শহরগুলো মানুষ দেখেনি। দিল্লি, মুম্বইয়ের ভিতরটা মানুষ দেখেনি।” তাঁর বক্তব্য, কলকাতাকে বদনাম করতে মরিয়া কেন্দ্র। আমি গত ডিসেম্বরে বেনারস, অযোধ্যা, প্রয়াগরাজ ভ্রমণে গিয়েছিলাম। বেনারসে বিশ্বনাথের মন্দির দর্শন-সহ গঙ্গাবক্ষে নৌকা ভ্রমণ করেছি। রাস্তা একটু ছোট হলেও কোথাও অপরিচ্ছন্নতা চোখে পড়েনি। গঙ্গার ঘাটগুলি এতই পরিষ্কার যে, সেখানে বসে হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে গঙ্গা-আরতি উপভোগ করেছি কয়েক ঘণ্টা। প্রয়াগরাজ গিয়ে ইমামবড়া-সহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরেছি। কোথাও নোংরা বা নেতাদের ছবির কাটআউট লাগিয়ে শহর ঢাকা পড়েছে বলে দেখিনি।

কলকাতার এবং হাওড়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকরা এক বার উত্তরপ্রদেশের এই শহরগুলিতে গেলে বুঝতে পারবেন বাস্তবের সঙ্গে তাঁদের মানসিকতার তফাত কতটা।

Advertisement

মিহির কানুনগো,কলকাতা-৮১

দুই শহর

‘এত্তা জঞ্জাল! নোংরা শহরে দশে দশ বঙ্গ’ প্রতিবেদনটি পড়ে মন খারাপ হয়ে যায়! কলকাতার গর্ব করার কত উপাদান, নিদর্শন, স্থাপত্য রয়েছে, তবুও বদনাম— শহরটি জঞ্জালে ভর্তি। কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রক ২০২৩-এর ‘স্বচ্ছ সর্বেক্ষণ’ রিপোর্টে উল্লেখ করেছে, দেশের সবচেয়ে নোংরা দশটি শহর পশ্চিমবঙ্গে, তার মধ্যে কলকাতা, হাওড়াও রয়েছে। যে ৪৬টি বিষয়ের মাপকাঠিতে পুরসভা পরিচালিত শহরগুলির বিচার করা হয়েছে, তার মধ্যে ইনদওর ও সুরাত এ বার প্রথম স্থানে রয়েছে। সেখানে ৪৪৬টি শহরের মধ্যে কলকাতা ৪৩৮তম স্থানে। হাওড়া এই তালিকায় সর্বশেষ স্থানে।

পরিচ্ছন্নতার মাপকাঠিতে শেষ দশে রাজধানী শহর কলকাতা ছাড়াও রয়েছে ভাটপাড়া, কৃষ্ণনগর, কাঁচরাপাড়া, বিধাননগর, মধ্যমগ্রাম, কল্যাণী, রিষড়া, আসানসোল, হাওড়া। এই রিপোর্ট পেয়ে রাজ্যের মাননীয় পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রীর অভিযোগ, কেন্দ্রের রিপোর্টে এই কলকাতাকেই সবচেয়ে নিরাপদ শহর বলা হয়েছিল। তার পরও রাজ্যকে বদনাম করতে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক এই রিপোর্ট তেরি করেছে। নিরাপত্তা আর নোংরা-জঞ্জাল একই বিষয় কি না, মাননীয় মন্ত্রী সম্ভবত গুলিয়ে ফেলেছেন। তা ছাড়া, এ সব রিপোর্ট কাউকে শূলে চড়ানোর জন্য তৈরি হয় নানিশ্চয়ই। এই পর্যবেক্ষণকে কাজে লাগিয়ে ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করলেই মঙ্গল। নিজেদের নোংরা-জঞ্জাল ঢাকতে যদি অন্য শহরকে বা তার অবস্থানকে খাড়া করা হয়, তা দুর্ভাগ্যের। তুলনা উৎকর্ষের সঙ্গে হোক, নিকৃষ্টের সঙ্গে তুলনা টানতে গিয়ে নিজেকেই টেনে নামানো হয়। এতে নিজেদের অবস্থান বদলায় না।

সম্প্রতি মাস তিনেক অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের রাজধানী সিডনির একটি শহরতলিতে কাটিয়ে ফিরলাম। রোজ সকালের রুটিনে এ পাড়া-ও পাড়া, এ রাস্তা-ও রাস্তায় গড়ে পাঁচ কিলোমিটার হেঁটে প্রতিটি বাড়ি, সংলগ্ন রাস্তা দেখে তাজ্জব বনে গেলাম। এত ঝকঝকে ফুটপাত, বাড়ির লাগোয়া এক চিলতে জমিতে গোলাপের সারি, পেয়ারা, বেদানার গাছ যে যার মতো লাগিয়ে সাজিয়ে রেখেছেন। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ঘাসের জমিতে বড় বড় ইউক্যালিপটাস, মেপল গাছ। তার পর বাড়ির উঠোনের চেয়েও মসৃণ ঢালাইয়ের ফুটপাত। রাস্তাঘাট একটু উঁচুনিচু আছে দেশটির ভূপ্রকৃতি অনুযায়ী। তবে, পরিকল্পনার ছাপ সুস্পষ্ট চার দিকে। লোকজন বা বসতি যথেষ্ট কম, আদি বাসিন্দা কম, অন্য দেশের অভিবাসী বেশি, মোট জনসংখ্যাও আমাদের তুলনায় অনেক কম। তবু শুরু থেকে তাঁরা নিয়মে বেঁধেছেন ওখানকার লোকজনকে। সামান্য ত্রুটিবিচ্যুতি বরদাস্ত করা হয় না। বহুশ্রুত ‘জ়িরো টলারেন্স’ কাকে বলে, বুঝলাম।

প্রত্যেক বাড়ি বা বড় আবাসনগুলিতে নির্দিষ্ট ‘গার্বেজ সেন্টার’-এ ওঁরা পুরসভার দেওয়া ‘গার্বেজ বিন’ রেখে যান এবং নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে তা গাড়ি করে তুলে নিয়ে যান। কর্মীরা হাত লাগিয়ে বাড়ির আবর্জনা পাত্রগুলো রাস্তার ফুটপাত ঘেঁষে এক পাশে জড়ো করে রাখেন, গাড়ি যন্ত্রচালিত লিফটার, ডাম্পার দিয়ে সেগুলো তুলে নিয়ে গাড়ির ঢাউস চেম্বারে ঢেলে আবার বসিয়ে চলে যায়। নিয়মের বাইরে এক দিন আগে বা পরে আসেন না ওঁরা। খুবই সময়ানুবর্তী ওঁরা কাজে, দায়িত্বে আর বাস-ট্রেন চালানোয়। সৌজন্য যেন মুখে মুখে। পরস্পরের প্রতি, বাসচালক, পথচারী সামনে যাঁকে পান, এক বার করবেনই সৌজন্যমূলক সম্বোধন। এটাই সৌন্দর্য, সৌন্দর্য পারস্পরিক বোঝাপড়ায়, সৌন্দর্য নিজের চার পাশ সুন্দর ঝকঝকে তকতকে রাখায়।

রাস্তা পারাপারের জন্য বিভিন্ন পয়েন্টে পোস্টে ‘ট্র্যাফিক বাটন’ দেওয়া আছে। পার হতে চাইলে সেই বাটন টিপে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়। ছোট রাস্তা হলে সাত-আট সেকেন্ড, বড় রাস্তা বা হাইওয়েতে পনেরো-ষোলো সেকেন্ড দাঁড়াতে হয়। গাড়িঘোড়া নিয়মের বাইরে গেলে বা স্টপ সিগন্যাল বা সাইন না মানলে পনেরো দিনের সাসপেনশন। বাড়ির গাড়ি সামনের রাস্তায় রাখতে চাইলে উপযুক্ত পার্কিং ফি দিয়ে গাড়ি রাখার ব্যবস্থা আছে। নিয়মের বাইরে বুড়ো আঙুল দেখাতে হলে ‘টোয়িং’-এর আওতায় পড়া বাঁধা। কলকাতার ছবিটা উল্টো। এখানে রাস্তা অপরিসর, তবুও ব্যক্তিগত ব্যবহারের গাড়ি বা ট্যাক্সি সারা দিন-রাত রাস্তায় পড়ে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়। এগুলো সরাতে হবে, সরকার গ্যারাজ করে ভাড়া দিক। জনগণের হাতে সব ছেড়ে দিয়ে ভোটমুখী নামাবলি জপলে সৌন্দর্যের বিচারে শহরটি মার খাবেই।

সৌম্যেন্দ্র নাথ জানা, কলকাতা-১৫৪

রেজ়াল্টের দিন

বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের সেই মাদকতা এখন আর অনুভূত হয় না! অধিকাংশ ক্ষেত্রে ২৪ ডিসেম্বর রেজ়াল্ট বেরোনোর তারিখ থাকত। রবিবার কিংবা ছুটির দিন থাকলে আগের দিন, অর্থাৎ ২৩ ডিসেম্বর হত সেই দিন। একেবারে সকাল থেকেই স্কুলে স্কুলে শুরু হত ব্যস্ততা! স্কুলের গেটের বাইরে টেনশনে বিপর্যস্ত অভিভাবকদের দাঁড়িয়ে থাকা।

এখনকার দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ক্যানিং ডেভিড সেশন হাই স্কুলের ছাত্র আমি তখন। ১৯৬৮ সাল। মনে পড়ে, প্রধান শিক্ষক-সহ শ্রেণি শিক্ষক ক্লাসে প্রবেশ করতেন। তার পর প্রথম-দ্বিতীয়-তৃতীয় স্থানাধিকারীদের নাম ঘোষণার সঙ্গে সকলের রেজ়াল্ট প্রকাশ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে হালকা সবুজ রঙের কাগজে হাতে লেখা রেজ়াল্ট! বার্ষিক পরীক্ষার ফল ঘোষণার কয়েক দিন পরেই মিলনোৎসবের আয়োজন করা হত প্রতি বছর। নাচ-গান-আবৃত্তি ও নাটক পরিবেশন এবং সফল শিক্ষার্থীদের পুরস্কৃত করার মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান! পুরস্কার বলতে একমাত্র বই! পঞ্চম থেকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে প্রথম হওয়ার সুবাদে সুকুমার রায়ের ঝালাপালা পেয়েছিলাম! সে সব স্মৃতি আজও আছে অমলিন।

বিশ্বজিৎ করগড়িয়া, কলকাতা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement