Uttam Kumar

সম্পাদক সমীপেষু: মানবিক গুণও প্রচুর

যদি ২৪ জুলাইকে কেন্দ্র করে বাংলার টিভি চ্যানেলগুলির উত্তম-ময় হয়ে ওঠার কোনও সমালোচনা করতেই হয়, তা হলে শমিত ভঞ্জের প্রতি তাদের চূড়ান্ত উদাসীনতার প্রসঙ্গ তোলা উচিত।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২০ ০০:৪২
Share:

উত্তমকুমারের জন্ম ও মৃত্যু দিবস উপলক্ষে মানুষ উত্তমকুমার যদি আলোচিত হয়েই থাকেন, তাতে ক্ষতি কী (‘যুদ্ধটা ব্যক্তি বনাম নায়কের’, ১-৮)? বিশেষ করে আমরা যদি তাঁর মানবিক গুণ থেকে শিক্ষা নিতে পারি? ক্যামেরা তাঁর দিকে ফোকাস করা ছিল বলে ‘স্টার’ উত্তমকুমার ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন, কারণ চিত্রনাট্যের দাবি অনুযায়ী ক্যামেরার ফোকাস নবাগত অনিল চট্টোপাধ্যায়ের দিকে হওয়া উচিত ছিল! লাঞ্চ মেনুতে অসাম্য লক্ষ করে বঞ্চিত কনিষ্ঠ সহকর্মীদের পক্ষ নিয়ে সরব হয়েছেন তিনি। নিবন্ধের লেখকের মতে, এর নাম ‘‘আদিখ্যেতার বার্ষিক প্রকল্প।’’ তা যদি হয়, তা হলে এমন ‘আদিখ্যেতা’ যেন অব্যাহত থাকে।

Advertisement

যদি ২৪ জুলাইকে কেন্দ্র করে বাংলার টিভি চ্যানেলগুলির উত্তম-ময় হয়ে ওঠার কোনও সমালোচনা করতেই হয়, তা হলে শমিত ভঞ্জের প্রতি তাদের চূড়ান্ত উদাসীনতার প্রসঙ্গ তোলা উচিত। শমিত ভঞ্জ অত্যন্ত বড়মাপের অভিনেতা। ১৭ বছর আগে তিনি ২৪ জুলাই তারিখেই প্রয়াত হন। কিন্তু তাঁকে নিয়ে কি একটিও শব্দ উচ্চারিত হয়? তাঁকে সে দিন স্মরণ করলে কি উত্তমকুমারের সর্বোচ্চ আসন টলে যাবে? যদি দূরলোক থেকে সরব হওয়া সম্ভব হত, তা হলে নিশ্চয়ই উত্তমকুমার ভর্ৎসনা করতেন শমিতকে সম্পূর্ণ ব্রাত্য করে প্রচারের যাবতীয় আলো তাঁর দিকে নিয়োজিত করার জন্য!

কাজল চট্টোপাধ্যায়

Advertisement

সোদপুর, উত্তর ২৪ পরগনা

বন্দি নায়ক
সায়নদেব চৌধুরীর মতে, বিশ্বের জনপ্রিয় অভিনেতাদের উল্লেখযোগ্য ছবি নাকি বড়জোর ১৫, উত্তমকুমারের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা অন্তত ৫০। সেই সব আন্তর্জাতিক অভিনেতাদের তালিকায় তিনি রেখেছেন ক্যারি গ্রান্ট, হামফ্রি বোগার্ট, মার্লন ব্র্যান্ডো ও আলাঁ দুলোঁকে (রিচার্ড বার্টন আর গ্রেগরি পেক কেন বাদ গেলেন জানি না)। উত্তমকুমারের ছবির সংখ্যা দু’শোর একটু বেশি, তার মানে দাঁড়ায় তাঁর ২৫% ছবিই মাস্টারপিস। অথচ লেখক নিজেই মেনে নিচ্ছেন তাঁর শেষ চার বছরের ছবিগুলি তেমন ভাল হয়নি। এই চার বছরে উত্তমকুমার ৩৭টি ছবি করেছিলেন। তা হলে মাস্টারপিস-এর গড় কিন্তু আরও বেড়ে যায়। বীরপূজা ভাল, তাই বলে এতটা ইতিহাস বিকৃত করে ফেলতে হবে!
অনস্বীকার্য যে, উত্তমকুমার অভিনয় করেছেন শুধুমাত্র সহজাত দক্ষতা নিয়ে। মহানায়কের অভিনয় শিক্ষা কলকাতার পাবলিক থিয়েটার ও নিউ থিয়েটার্স-এর আবেগমথিত বাংলা সিনেমা থেকে, যেখানে অভিনয়ের মান উচ্চস্তরের ছিল না। দোষ তাঁর নয়, সে যুগে আন্তর্জাতিক সিনেমার অঙ্গন এতটা উন্মুক্ত ছিল না। ষাটের দশকে তপন সিংহের উপদেশে তিনি নিয়মিত কলকাতায় মুক্তি-পাওয়া হলিউডি ছবি দেখতে, ও তার অভিনয়শৈলী আয়ত্ত করতে শুরু করেন। কিন্তু তত দিনে নায়কত্ব তাঁর স্বভাবসিদ্ধ হয়ে গিয়েছে, যার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন সত্যজিৎ রায়ের ছবি নায়ক। নিজের সৃষ্ট সেই সোনার খাঁচার মধ্যে উত্তম নিজেই বন্দি হয়ে গিয়েছিলেন। ছাঁচ ভাঙার তাগিদ তাঁর মধ্যে ছিল না। দু’একটি ব্যতিক্রমের কথা মনে আসে, অভিনেতা জীবনের প্রথম পর্বে সাহেব বিবি গোলাম এবং শেষ পর্বে যদুবংশ।
উত্তমকুমারের উত্থানের আর্থ-সামাজিক পটভূমিকা নিয়ে লেখক কিছু বলেননি। দুর্ভিক্ষ-দাঙ্গা-দেশভাগে ক্ষতবিক্ষত বাঙালি তখন এমন এক ‘আইকন’ খুঁজেছিল যিনি নির্ভরযোগ্য, শক্ত হাতে পরিস্থিতির হাল ধরতে পারেন। এই হাতা-গোটানো শার্ট-ধুতি পরা, সপ্রতিভ, সুদর্শন তরুণটি সেই ভরসা দিতে পেরেছিলেন। তাঁর অতুলনীয় জনপ্রিয়তার মূল শিকড় এইখানেই। একই কারণে তাঁর সমসাময়িক দুই বঙ্গসন্তান নিজ নিজ ক্ষেত্রে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিলেন, সঙ্গীতে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় আর ক্রিকেটে পঙ্কজ রায়।
দীপঙ্কর মুখোপাধ্যায়
কলকাতা-৩৩

নেই মহুয়াও
জুলাই মাসেই বাংলা চলচ্চিত্র হারিয়েছে অভিনেত্রী মহুয়া রায়চৌধুরীকে। যে কোনও চরিত্রে তিনি ছিলেন সাবলীল। ১৯৭২ সালে পরিচালক তরুণ মজুমদারের ছবি শ্রীমান পৃথ্বীরাজ-এ তাঁর আত্মপ্রকাশ। তাপস পালের সঙ্গে দাদার কীর্তি তাঁর জনপ্রিয় ছবি। তাপস পাল এবং চিরঞ্জিতের সঙ্গে তাঁর বেশ কিছু হিট ছবি রয়েছে। নাচ, অভিনয় সবেতেই দক্ষ ছিলেন তিনি। ১৯৮৬ সালের ২২ জুলাই, মাত্র ২৭ বছর বয়সে তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যু ছিল বিতর্কিত।
শিবব্রত গুহ
কলকাতা-৭৮

সেই হাসি
‘যুদ্ধটা ব্যক্তি বনাম নায়কের’ পড়ে শুধু বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস। আরও বেশি না পাওয়ার আক্ষেপ। তাঁর ভুবনভোলানো হাসিতে বাঙালি যখন প্লাবিত, তখন ব্যক্তি উত্তম তো গৌণ। মৃত্যুর ৪০ বছর পরেও বাঙালির অন্তরে যে নাম প্রোথিত, কোনও দিনই তা মুছে ফেলা যাবে না। কর্মক্লান্ত একঘেয়ে জীবন যখন একটু মুক্তি খোঁজে, তখন উত্তমকুমারের কোনও ছবি নিয়ে আসে এক ঝলক স্নিগ্ধ বাতাস, যা মনকে শান্ত করে।
তরুণ কুমার রায়
রুদ্রনগর, বীরভূম

হকির রত্ন
‘বাগানে ফিফার স্বীকৃতি’ (৩০-৭) প্রসঙ্গে জানাই যে, ২০১৯ সাল থেকে মোহনবাগান ক্লাব প্রাক্তন হকি খেলোয়াড়দের ‘মোহনবাগান রত্ন’ সম্মান দেওয়া শুরু করেছিল। তারই রেশ ধরে এ বছরেও প্রাক্তন দুই হকি অলিম্পিয়ান, গুরবক্স সিংহ এবং অশোককুমারকে ওই সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে।
এই সংবাদে আমাদের মতো হকিপ্রেমীদের মন খুশিতে ভরে ওঠে। সম্ভবত আর এক প্রাক্তন হকি অলিম্পিয়ান ভেস পেজ়কে আগামী বছর এই সম্মানে সম্মানিত করা হবে। আশা রাখি, মোহনবাগান ক্লাব কর্মকর্তারা অদূর ভবিষ্যতে আর এক প্রাক্তন হকি অলিম্পিয়ান ইনাম-উর-রহমান, যাঁকে ভালবেসে ‘প্রিন্স অব ভোপাল’ বলা হত, তাঁকে ওই সম্মানে ভূষিত করার সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি এবং তাঁর দুই ভাই, আনিসুর রহমান ও ইক্রাম-উর-রহমান বেশ কয়েক বছর কলকাতা হকি লিগকে সমৃদ্ধ করেছেন। ঐতিহ্যশালী বেটন কাপেও এই রকম আরও অনেক দক্ষ এবং কুশলী খেলোয়াড় আমাদের চোখ এবং মনকে তৃপ্ত করেছেন। সেই রেশ আজও কাটেনি।
অমিত কুমার চৌধুরী
কলকাতা-৭৫

অশুদ্ধ নয়
শব্দছক নিয়ে মানসী বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিঠির (২৩-৭) উত্তরে কিছু কথা জানাতে চাই।
১) হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রণীত বঙ্গীয় শব্দকোষ-এর পৃষ্ঠা ৬৯৪ অনুসারে ‘কৌশিক’ ইন্দ্রের অপর নাম। কুশিকরাজ ইন্দ্রতুল্য পুত্রের জন্য কঠোর তপস্যায় সহস্র বছর যাপন করলে স্বয়ং ইন্দ্রই তাঁর পুত্ররূপে জন্মগ্রহণ করেন। ওই পুত্রই গাধি নামে খ্যাত। সুতরাং ইন্দ্রপুত্র জয়ন্তকে সেই হিসেবে ‘কৌশিকাত্মজ’ বলা যেতেই পারে।
২) বঙ্গীয় শব্দকোষ-এর পৃষ্ঠা ১৭৪০ অনুযায়ী ‘মলয়’কে বলা হয়েছে— ‘‘ইহা পশ্চিমঘাট পর্বত, দাক্ষিণাত্যে মলবার উপকূলে অবস্থিত। ইহা সপ্ত কুলাচলের একতম।’’ অধ্যাপক পি আচার্য প্রণীত শব্দসন্ধান (১) পৃষ্ঠা ১৭৭ অনুসারে পশ্চিমঘাট পর্বতমালার উত্তরাংশকে ‘সহ্যাদ্রি’ বলা হয়।
৩) বঙ্গীয় শব্দকোষ-এর পৃষ্ঠা ১২৫৫-তে বলা আছে ‘পটবাস’ মানে বস্ত্রগৃহ বা তাঁবু। পটবাসক, পটমণ্ডপ সমার্থক। অধ্যাপক পি আচার্য প্রণীত শব্দসন্ধান-এর ২১৩ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে বস্ত্রনির্মিত গৃহ মানে তাঁবু, ‘পটবাস’, পটগৃহ, বস্ত্রগৃহ। অশোক মুখোপাধ্যায় প্রণীত সংসদ সমার্থশব্দকোষ-এর পৃষ্ঠা ৬৮-তে বলা হয়েছে ‘পটাবাস’-ও তাঁবুর প্রতিশব্দ। সংসদ বাংলা অভিধান-এ বলা আছে পটবাস, পটাবাস, পট্টাবাস তিনটিই তাঁবু, বস্ত্রগৃহের প্রতিশব্দ।
রামপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা-৮

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement