রূপালী গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘একেই কি বলে সভ্যতা’ (১৭-৪) শীর্ষক প্রবন্ধটি সময়োপযোগী। সমাজমাধ্যমে গুণিজনদের ‘ট্রোলিং’ বা গালাগাল দিয়ে এক ধরনের মানুষ তাঁদের জঘন্য মনোবৃত্তির পরিচয় দেন, এ কথা সত্যি। কিন্তু গুণিজনদের প্রতি এমন অশ্রদ্ধা তৈরির আসল উৎস অন্য। টেলিভিশনে এখন অসংখ্য সংবাদ চ্যানেল। তারাও আবার পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। ফলে অনেক সময়েই ‘বুদ্ধিজীবী’ বাড়ন্ত হয়। তাই সংবাদ চ্যানেলগুলো হাতের কাছে যাঁকে পাওয়া যায়, তাঁকেই বিশেষজ্ঞ হিসেবে স্টুডিয়োতে হাজির করে তর্কযুদ্ধে নামিয়ে দেয়। অখ্যাত সাঁতারু, দাবাড়ু, রিমেক গানের শিল্পী, চিত্রকর থেকে সিরিয়াল অভিনেতা, বাদ যান না কেউই। টেলিভিশনের তর্ক-আসরে অনেক সময়ই মুড়ি-মিছরি বা নকুলদানা-ক্ষীরকদমের দর হয়ে যায় সমান। যিনি যত তীব্র স্বরে, কুৎসিত ভঙ্গিতে এবং শ্লেষাত্মক ভাষায় বিপক্ষকে আক্রমণ করতে পারবেন, জয় যেন তাঁরই করায়ত্ত হবে। ফলে অধিকাংশ সময়ে আসল বিষয়গুলি বাদ দিয়ে এই বিতর্ক সভাগুলি নিতান্তই কলতলার ঝগড়ায় পরিণত হয়। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই জনমানসে তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কে এক ধরনের নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয়েছে।
আর ট্রোলদের দাবি, প্রতিবাদ করতে হবে কেবল টেলিভিশন চ্যানেলে বসে, চটজলদি ও চটুলতার সঙ্গে। না-হলে সেটা যেন কোনও প্রতিবাদই নয়! প্রতিবাদের কবিতায় বা চলচ্চিত্রের প্রতিবাদের ভাষায় জারিত হওয়ার সময় বা রুচি এই ট্রোলদের নেই। তবে সুশীল সমাজের অবমূল্যায়নের জন্য কেবল ট্রোলবাহিনীই দায়ী নয়, এক শ্রেণির কৃত্রিম ভাবে নির্মিত বুদ্ধিজীবীও দায়ী। অষ্টপ্রহরের টেলিভিশনের সংবাদ চ্যানেলও তাদের দায় অস্বীকার করতে পারবে না।
কৌশিক চিনা
মুন্সিরহাট, হাওড়া
কেন কটূক্তি?
‘একেই কি বলে সভ্যতা’ শীর্ষক প্রবন্ধ প্রসঙ্গে বলি, ১৯৬২ সালে চিন-ভারত যুদ্ধের পর জওহরলাল নেহরুকে নিয়ে বিখ্যাত কার্টুনিস্ট আর কে লক্ষ্মণ-এর একটি কার্টুন ‘ট্রোল’। ভাড়া-করা গুন্ডাদের দিয়ে শিল্পীদের আক্রমণের পরিবর্তে, পণ্ডিত নেহরু ফোন মারফত লক্ষ্মণকে কার্টুনটি উপভোগ করার কথা জানিয়েছিলেন এবং তাঁর নিজের সই সম্বলিত কার্টুনটির একটি বৃহৎ সংস্করণ পাঠিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। এটিই এক জন নেতা, তথা রাষ্ট্রনায়কের খেলোয়াড়-সুলভ মনোভাবের পরিচয়। আন্তর্জালিক সমাজমাধ্যমে যে শুধুমাত্র এ দেশেরই বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং বুদ্ধিজীবীরা সমালোচিত হন, এমনটা নয়। অন্য দেশেও তাঁদের আক্রমণাত্মক এবং শ্লেষাত্মক সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়। তাঁরা কিন্তু সেগুলি উপভোগ করেন, বুদ্ধিদীপ্ত মন্তব্য করতেও ছাড়েন না, যা এ দেশে স্বাভাবিক ঘটনার মধ্যে পরিগণিত হয় না।
এক সময়ে সকল বুদ্ধিজীবীই সমাজে কোনও একটি মতাদর্শের প্রেক্ষিতে চিহ্নিত ছিলেন, রাষ্ট্র পরিচালকদের একটি বিপ্রতীপ মনোভাব পোষণ করতেন তাঁরা। কিন্তু তাঁরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে উৎকর্ষের নিরিখে সমাজে সমাদৃত ছিলেন। যাঁরা সাধারণ মানুষের কাছে যথেষ্ট সম্মানিত এবং শ্রদ্ধেয় ছিলেন, হঠাৎ কী কারণে তাঁরা সমাজমাধ্যমে কটূক্তি আর অশ্রদ্ধার মন্তব্যে বিদ্ধ হতে শুরু করলেন? সেই কারণ খোঁজার কি কোনও দায় প্রবন্ধকারের নেই?
আন্তর্জালের ব্যবহার কে, কী ভাবে করবেন, সেটি তাঁর ব্যক্তিগত রুচি, দক্ষতা এবং শিক্ষার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ ভাবে নির্ধারিত হয়। বুদ্ধিজীবীমাত্রেই যেমন সুবক্তা কিংবা সহনশীল নন, তেমনই সকল সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীর কাছ থেকেও আন্তর্জাল-শিষ্টাচার বা ‘নেটিকেট’ আশা করা যায় না। পরিবর্তিত আর্থ-সামাজিক এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতিফলন হবে সমাজমাধ্যমে, সেটাই প্রত্যাশিত। কবির যেমন তাঁর কবিতায় ইচ্ছেমতো উপাদান ব্যবহারের স্বাধীনতা রয়েছে, নেতা-মন্ত্রীরা যেমন রাজনৈতিক ভাষণে, কিংবা তাঁদের মাইক্রোব্লগে যেমন খুশি আক্রমণের ভাষা, উপাদান এবং শব্দচয়ন করতে পারেন, তেমনই আন্তর্জাল-নির্ভর সমাজমাধ্যমে সমালোচনার উপাদানও জনসাধারণের ব্যক্তিগত রুচি, মতাদর্শ দিয়ে নির্ধারিত হয়।
পিনাকী রুদ্র
কলকাতা-১২৪
অগ্নিমূল্য
খুচরো কাঁচাবাজার মূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি রুখতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সুফল বাংলার ধারণা সদর্থক হলেও আখেরে খুব লাভ হচ্ছে না। মফস্সলে এই প্রকল্পের ছিটেফোঁটাও নেই। মূল্যবৃদ্ধির বাজারে পাঁচশোটি দোকান কত দিন আমনাগরিককে রক্ষা করবে? সম্প্রতি শ্রীরামপুরে আনাজ অগ্নিমূল্য। সরকারি টাস্ক ফোর্স বা অন্য কোনও সংগঠনের নজরদারি নেই। এ ছাড়াও সপ্তাহান্তে সব কিছুরই কেজি প্রতি দাম দশ থেকে কুড়ি টাকা বৃদ্ধি এক স্বাভাবিক নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঠিক কত সুফল বাংলা স্টল খুললে সুরাহা সম্ভব, তার উত্তর পাওয়া কঠিন। এটা দীর্ঘমেয়াদি সমাধানও নয়।
পারস্পরিক রাজনৈতিক দোষারোপ ছেড়ে সরকার পাইকারি ও খুচরো ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আন্তরিক, গঠনমূলক আলোচনা করে জিনিসপত্রের দাম ধার্য করুক, প্রয়োজনীয় ভর্তুকি দিক ও নজরদারি চালাক। এতে অবশ্যই সরকারকে একটি বড় অর্থমূল্য ভর্তুকিতে খরচ করতে হবে। অনুদানে রাশ টেনে সেই টাকা বরং এখানে দেওয়া হোক। সাধারণ মানুষ দু’মুঠো খেয়ে বাঁচবে।
অরিত্র মুখোপাধ্যায়
শ্রীরামপুর, হুগলি
পরিকল্পনা কই
আব্দুর রউফ মোল্লার চিঠি ‘জল অপচয়’ (২৮-৪) পড়ে সহমত পোষণ করে কিছু বলতে চাই। জলের জন্য আমাদের দেশের চেন্নাই, দিল্লি, গুরুগ্রামে গত বছর হাহাকার পড়ে গিয়েছিল। মহারাষ্ট্রেও এমন কিছু এলাকা আছে, যেখানে পানীয় জল আনতে অনেক দূর যেতে হয়। পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার অনেক জায়গায় জলের তীব্র অভাব আছে। বাস্তবে জলসঙ্কট যে আমাদের দেশে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে, তা নীতি আয়োগের গত বছরের ঘোষণায় জানা গিয়েছে। ২০১৮ সালের জল বিষয়ের সূচক বলছে, ২০২০ সালের মধ্যে ভারতের ২১টি বড় শহরের মাটির নীচে জল একেবারে শেষ হয়ে যাবে। ভারতের জনসংখ্যার প্রায় ৪৬% লোক প্রবল জলকষ্টে ভুগছেন। ভারতের ৭৫% পরিবারের পানীয় জলের নিজস্ব ব্যবস্থা নেই। গ্রামাঞ্চলে ৮৪% বাড়িতে পাইপ লাইনে পানীয় জল পৌঁছয় না। দেশবাসীর পান করা জলের ৭০% দূষিত এবং পানের অযোগ্য। জলবাহিত রোগে প্রতি বছর দু’লক্ষ লোকের মৃত্যু হয়। অর্থাৎ, সমস্যা গুরুতর।
সমাধানের জন্য জাতীয় স্তরে উপযুক্ত পরিকল্পনা নেই। জাতীয় জলনীতির শেষ সংশোধনে জলবণ্টন ও সরবরাহ মোটামুটি বেসরকারি করা হয়েছে। এর ফলে শিল্পসংস্থাগুলো যে ব্যাপক হারে জলদূষণ করে, তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা করা হয় না। কোনও সংস্থা দূষণ বিরোধী পদক্ষেপ করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলে উৎসাহ ভাতা দেওয়া হয়। কিন্তু তারা সেই প্রতিশ্রুতি পালন করল কি না খতিয়ে দেখা হয় না। আমরা যে প্যাকেজড মিনারেল ওয়াটার পান করি, তা এক লিটার তৈরি করতে চার লিটার জল অপচয় হয়। ফলে জলসঙ্কট আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা। ধনীরা এই জল কিনতে পারলেও মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষেরা দূষিত জল পান করে রোগে ভুগবেন। সরকারের উচিত এই সব বিষয়ে নজর দেওয়া। নয়তো দেশবাসী অথৈ জলে পড়বেন।
অভিজিৎ ঘোষ
কমলপুর, উত্তর ২৪ পরগনা