—প্রতীকী চিত্র। Sourced by the ABP
হাল আমলে ভারতে সরকারি ব্যাঙ্কগুলির সার্বিক স্বাস্থ্যের যথেষ্ট শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে। ২০১৭-১৮ সালে সব রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মিলিত লোকসানের পরিমাণ ছিল আশি হাজার কোটি টাকার বেশি (রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে মুনাফা ছাড়াল ১ লক্ষ কোটি, ২২-৫)। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে সেই চিত্র উল্টে গিয়ে নিট লাভ দাঁড়িয়েছে এক লক্ষ কোটি টাকার বেশি। মানতেই হবে, এ এক অভূতপূর্ব সাফল্য। সব ব্যাঙ্কের খাতাই বলছে, তাদের আমানত ও ঋণ যথেষ্ট বেড়েছে। কমেছে অনুৎপাদক সম্পদ। এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে সঠিক নীতি নির্ধারণের প্রয়াস ও কর্মীদের নিপুণ কর্মকুশলতা। প্রশ্ন হল, এর পরও কেন্দ্র কি ব্যাঙ্ক বিলগ্নিকরণ নীতিতে অনড় থাকবে? অতীত থেকে শিক্ষা নেওয়াটাও খুব জরুরি। এলআইসি-র শেয়ার বাজারে আনা আদৌ ফলপ্রসূ হয়নি। সরকারি ব্যাঙ্কের কর্মচারী ও সাধারণ গ্রাহকরাও একেবারেই চান না ব্যাঙ্কের হাতবদল হোক। দেশের অর্থনীতি উজ্জ্বল হবে যদি সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকে। ব্যাঙ্ক বিক্রির ঘোষণা কর্মচারিবৃন্দের মধ্যে অস্থিরতা, বিক্ষোভ, উষ্মা সৃষ্টি করবে। ব্যাঙ্কের পরিষেবাকে তা ব্যাহত করবে। সরকারের বক্তব্য, বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক চালানো তাদের কাজ নয়। কিন্তু অর্থনীতি পরিচালনার ক্ষেত্রে হুবহু পাশ্চাত্যকেই বা কেন অনুসরণ করব? ২০০৮-এর বিশ্বজোড়া মন্দা ভারতীয় ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাকে টলাতে পারেনি। টলেছিল বিশাল আমেরিকান অর্থকরী সংস্থা লেম্যান ব্রাদার্স। করোনা, যুদ্ধ, তেলের অস্থিরতা বিশ্বে নতুন করে মন্দা, মূল্যস্ফীতি এনেছে। আমেরিকার সিলিকন ভ্যালি ব্যাঙ্কের দরজা বন্ধ হয়েছে। অথচ, ভারতের রাষ্ট্রীয় ব্যাঙ্কগুলি সেই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও উল্লেখযোগ্য ফল ঘোষণা করেছে।
আশা রাখি, ব্যাঙ্ক বিক্রির মতো অতীব ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সরকার মহোদয় এর অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা করবেন।
স্বপনকুমার ঘোষ, কলকাতা-৩৪
বাংলা পরীক্ষা
সব রাজ্যে সিভিল সার্ভিসেস পরীক্ষায় স্থানীয় প্রধান ভাষার পেপার বাধ্যতামূলক। কিন্তু বাংলা বাধ্যতামূলক ছিল না। গত ২৮ এপ্রিল একটি গেজ়েট প্রকাশিত হয়, তাতে পশ্চিমবঙ্গের সিভিল সার্ভিসেস-এ বাংলায় ৩০০ নম্বরের বাধ্যতামূলক পেপার করা হয়। সেই সময় বহু মানুষ খুশি হয়েছিলেন। কারণ, পশ্চিমবঙ্গের ৮৬% মানুষ বাঙালি। তাই গ্রামবাংলা-সহ সমগ্র রাজ্যের বাঙালিকে পরিষেবা দিতে অফিসারদের বাংলা জানা খুব জরুরি। পরিষেবার স্বার্থে বাংলা বাধ্যতামূলক হওয়া সময়ের দাবি। মুখ্যমন্ত্রী আগেই বলেছিলেন অফিসাররা অনেকে বাংলা না জানায় সরকারি পরিষেবা দিতে সমস্যা হয়। কিন্তু অজানা কারণবশত কিছু মানুষ এর প্রতিবাদে নেমেছেন।
অন্য রাজ্যে যেটি সত্য, পশ্চিমবঙ্গে নয়। বিহারে ১০০ নম্বরের হিন্দি, উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশে ৩০০ নম্বরের হিন্দি, গুজরাতে ১৫০ নম্বরের গুজরাতি, মহারাষ্ট্রে ১০০ নম্বরের মরাঠি, কর্নাটকে ১৫০ নম্বরের কন্নড় পেপার বাধ্যতামূলক। তাই প্রতিবাদ কেন?
তন্ময় গরাইদুর্গাপুর, পশ্চিম বর্ধমান
সামনে পরীক্ষা
প্রতি বছরের মতো এ বছরও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে আগামী বছরের দু’টি পরীক্ষার রুটিন দিয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে দেখা গিয়েছে আগামী বছর ২ ফেব্রুয়ারি থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা আর ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হবে। মোটামুটি ভাবে দুটো পরীক্ষাই প্রায় এক মাস এগিয়ে এসেছে। যারা মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী, তাদের তবু মাস চারেক দশম শ্রেণির ক্লাস হয়েছে। কিন্তু দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের এখনও ক্লাস শুরু করা যায়নি। গত ২ মে থেকে তাদের ক্লাস হওয়ার কথা থাকলেও রাজ্য সরকারি ও সরকার-পোষিত স্কুলগুলিতে ওই দিন থেকেই গরমের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এমনকি কবে স্কুল খুলবে, সে ব্যাপারেও এখনও কিছু জানানো হয়নি। অথচ, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষা দিতে হবে, তারা কী ভাবে সেই সিলেবাস শেষ করবে? নভেম্বর মাসে টেস্ট পরীক্ষা আর পয়লা ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যেই তাদের প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষা দিতে হবে। এত কম সময়ের মধ্যে সিলেবাস শেষ হবে তো? আর যাদের প্র্যাক্টিক্যাল-এর মতো কোনও বিষয় নেই, তাদেরও এই কম সময়ের মধ্যে সিলেবাস শেষ হবে কী করে?
মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক উভয় পড়ুয়ারাই এই পরিস্থিতিতে মানসিক চাপের মধ্যে আছে। যদিও বর্তমানে প্রাইভেট টিউশন নির্ভর পড়াশোনা করতে হয়। কিন্তু, তা তো সকলের পক্ষে সম্ভব নয়। সুতরাং, পড়ুয়াদের কথা ভেবে যত শীঘ্র সম্ভব স্কুল খোলার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
ঋতুপর্ণা ভট্টাচার্যচুঁচুড়া, হুগলি
সময়ের দাম
প্রতি বছর মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের ফল বেরোলে মেধাতালিকার উপরের দিকের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি সবার দৃষ্টি থাকে— কে প্রথম হল, কে দ্বিতীয়-তৃতীয় হল। বলা বাহুল্য, এই ছেলে-মেয়েরা রীতিমতো মেধাবী। কিন্তু, পরবর্তী কালে এদের অধিকাংশই কোথায় হারিয়ে যায়, কে জানে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে যাঁরা অত্যন্ত কৃতী— বিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, সাহিত্য-বিশেষজ্ঞ, ইতিহাসবিদ— এঁদের অধিকাংশই মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক কিংবা স্কুলের বড় পরীক্ষাগুলিতে প্রথম, দ্বিতীয় ইত্যাদি হয়েছিলেন বলে শোনা যায় না। তা হলে যারা উক্ত স্থানাধিকারী হয়, তারা তো এঁদের চেয়েও বুদ্ধিমান। সেই বিপুল বুদ্ধিমানরা যায় কোথায়?
পরীক্ষায় ভাল ফল কেবল মেধা দিয়ে হয় না। কৌশলও আছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উত্তর দিতে হয়; যা অনেকে রপ্ত করতে পারে না। সময় বেশি দিলে হয়তো সে-সব ছাত্র-ছাত্রী বর্তমান প্রথম, দ্বিতীয় স্থানাধিকারীর চেয়েও বেশি নম্বর পেত। এরাই যখন গবেষক হয়, লেখক হয়— সেখানে সময়ের বাঁধাবাঁধি থাকে না; ধীরেসুস্থে, মস্তিষ্ক স্থির রেখে কাজ করতে পারে এবং নিজ ক্ষেত্রে অসামান্য সাফল্য অর্জন করে। চটজলদি চাকচিক্য, গণমাধ্যমের জোরালো আলো এদের উপরে হয়তো পড়ে না, কিন্তু শেষ হাসি এরাই হাসে।
আমাদের সমাজ বাহ্যিক রূপের পূজারি। তাই কোন পরীক্ষায় কে প্রথম হয়েছে, কে দ্বিতীয় হয়েছে— এটা নিয়েই বেশি চর্চা চলে। জয়েন্ট এন্ট্রান্স-আইআইটি, বা রাজ্য স্তরে ও কেন্দ্রীয় স্তরে সিভিল সার্ভিসেস পরীক্ষাগুলিকে বিশেষ মর্যাদার দৃষ্টিতে দেখি আমরা। কিন্তু একটু ভাবলেই বোঝা যায়, সেখানেও ওই এক ব্যাপার। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উত্তর প্রদান, ইন্টারভিউয়ের ক্ষেত্রেও দ্রুত উত্তর দিতে হয়— যা অত্যন্ত মেধাবী বহু ছাত্র-ছাত্রীর পক্ষেও সম্ভব হয় না। কারণ, ওই দক্ষতাটা (টেকনিক) সবার থাকে না, সবাই রপ্ত করতে পারে না, আবার অনেকে করার প্রয়োজনীয়তাও বোধ করে না।
জগদীশচন্দ্র বসু কিংবা নিলস বোর, রবীন্দ্রনাথ কিংবা শেক্সপিয়র, সিগমুন্ড ফ্রয়েড— স্কুলের পরীক্ষায় প্রথম, দ্বিতীয় হয়েছিলেন বলে তথ্য নেই। এঁদের মেধা নিয়ে কোনও প্রশ্নের অবকাশ আছে কি?
বহু মহৎ সৃষ্টি দীর্ঘ সাধনার ফল হিসাবে ফলেছে। গোয়টে ফাউস্ট লিখেছিলেন প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে। মার্গারেট মিচেলও গন উইথ দি উইন্ড লিখতে দীর্ঘ সময় নিয়েছিলেন। বছরের পর বছর নিভৃতবাসে সাহিত্য নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ চর্চা না করলে ক্যাথরিন ম্যান্সফিল্ড-এর ছোটগল্পগুলি এত উৎকর্ষ লাভ করত কি না, কে জানে। পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, আর্কিমিডিস থেকে এডওয়ার্ড জেনার— সময় না দিলে এঁরা না-পারতেন তরলে নিমজ্জিত বস্তুর ওজনের আপাত হ্রাস তত্ত্বের উদ্ঘাটন করতে, অথবা গুটিবসন্ত-প্রতিষেধক আবিষ্কারে অসামান্য কৃতিত্বের অধিকারী হতে। অতএব পরীক্ষার ফলকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
সুগত ত্রিপাঠীমুগবেড়িয়া, পূর্ব মেদিনীপুর