সম্পাদক সমীপেষু: অরণ্যের অধিকার

বর্তমানে হুল পালিত হয়, সিধু, কানু, চাঁদ, ভৈরব-এর সঙ্গে উল্লেখ করা হয় না তাঁদের বোন অসীমসাহসিনী ফুলু, ঝুনুর কথা। আরণ্যক বিরল প্রাণী শিকারে মেয়েদের অংশ নেওয়া নিষিদ্ধ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৪৯
Share:

‘সরহায় উৎসব’ (১-২) নিয়ে শিবু সরেন-এর চিঠির জন্য ধন্যবাদ। ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চলে, বিশেষ করে পুরুলিয়ায় শীতের সময়ে সহরায় নিয়ে অসংখ্য গান শুনেছি। তিনি প্রিয় দিদি, যাঁর কাছে সুখ-দুঃখের কথা, আনন্দ উৎসবের কথা, মুক্ত ও স্বাধীন কর্মজীবনের কথা বলা যায়। দিদি গো, আকাশে উড়ে যাওয়া পাখিদের মতো আমরা, মাঠে পাহাড়ে ঘাসে, অরণ্যে স্বাধীন ঘুরিফিরি। জলায় ডুব দিই, সাঁতার কাটি। শহরে যাই, লোকে আমাদের দেখে, আমরাও শহর দেখি। মেয়েগুলান বাঁধাকপির মতো, ছেলেরা খ্যাংরা ঝাঁটা। বনে যখন ফিরি, আকাশে চাঁদ তারারা আমায় দেখে। এ জামাইটা নেশা করে, অলস, কালোম (সামনের বছর) এটাকে বদলে নেব। এই রকম সব গানেই সহরায়দৈ পরম আপনজন। বাঁধনা শব্দটিও জাহেরাবন্দনার মতো সোহরায় বন্দনা। পুরুলিয়ায় অন্য আদিবাসীরা গো-মহিষের বাঁধনা পালন করতেন, ভোরে জাগরণী রাখালিয়া গান গেয়ে। কিন্তু সহরায় শীতের নিষ্ফলা কুমারী প্রকৃতিদেবী। সাঁওতাল সমাজে অবিবাহিতাদের যথেষ্ট সম্মান ছিল, যেখানে পড়শি সমাজে কিনা মেয়েদের বিয়ে দিতে না পারলে অভিভাবকরা সমাজচ্যুত হন। সিধু কানু মুর্মুর বড়দিদি ফুলু ও ঝুনু (ঝিনুক) অবিবাহিতা ছিলেন।

Advertisement

বর্তমানে হুল পালিত হয়, সিধু, কানু, চাঁদ, ভৈরব-এর সঙ্গে উল্লেখ করা হয় না তাঁদের বোন অসীমসাহসিনী ফুলু, ঝুনুর কথা। আরণ্যক বিরল প্রাণী শিকারে মেয়েদের অংশ নেওয়া নিষিদ্ধ। এখন তারাও শিকারে যুক্ত হয়, অথচ প্রকৃতি সুরক্ষার অরণ্য উৎসবের কথা ভুলে যায়। মাতৃভাষার চর্চা না থাকায় নতুন প্রজন্মের কাছে প্রাচীন জ্ঞান, গান হারিয়ে যায়।

ইদানীং স্কুল কলেজে যাওয়া, সাইকেল চড়া মেয়েদের দেখা মেলে, যারা গৃহকাজ, কৃষিকাজেও পটু। তবু আমাদের অনুকরণে কন্যাপণ-এর বদলে বরপণ, রুপোর বদলে সোনার গহনা চালু হয়েছে। সুঠাম ফুলসাজ মেয়ে এখন বিউটি পার্লারে রং ব্লিচ করে। নেলপালিশ, সিন্থেটিক পোশাকে ও পেশায় সে প্রকৃতি-বিচ্ছিন্না। পাহাড় পাথর অরণ্যদেবী হারিয়ে গেছে নোংরা শহর হোটেল, বাজার, ব্যবসা, বহুতলে। পরব ছাড়া নৃত্য হত না, এখন অসময়ে ‘ভদ্রলোক’ শ্রেণির উৎসাহে তা-ও চলছে। যেখানে দেশজ গাছ ছাড়া সব রকম কৃত্রিম গঠন নিষিদ্ধ, সেই জাহেরা, সারণা অরণ্যমাকে ভুলে আমাদের অনুকরণে গাছ বাঁধানো, গাছ কেটে মন্দির, মূর্তি, প্রণামী, ধর্মব্যবসা, পণ ও বিবাহ-ব্যবসা বাড়ছে। পাশ্চাত্য অরণ্যরক্ষা ও বাস্তুনীতি নিয়ে ব্যস্ত, আর আমরা অবহেলায় হারিয়ে ফেলছি এই আদি ভারতীয় সংস্কৃতি যার মূল কথা হল: অরণ্য পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ দেবস্থান-ধর্মস্থান।

Advertisement

অর্চনা বন্দ্যোপাধ্যায় ডিয়ার পার্ক, শান্তিনিকেতন

বাংলার পর্যটন

কোনও এক ছুটির দিনে মুর্শিদাবাদ বেড়াতে গেলে পর্যটন দফতরের ছন্নছাড়া ভাবটি প্রকট হবে। একই যাত্রায় হাজারদুয়ারি, খোশবাগ, কাটরা মসজিদ, কাঠগোলা, নসিপুর রাজপ্রাসাদ, জাহানকোষা কামান, জাফরাগঞ্জ দেউড়ি, হিরাঝিল প্রভৃতি ঘুরিয়ে দেখানোর মতো ভাল গাইডের অভাব আছে। সফরটি বহরমপুর/মুর্শিদাবাদ/কাশিমবাজার— ঠিক কোথা থেকে শুরু হবে তেমন সব তথ্যসমৃদ্ধ বোর্ড ওই সব রেল স্টেশন বা বাস স্ট্যান্ডে নেই। ভরসা সেই টাঙাওয়ালাদের থোড়-বড়ি-খাড়া আর খাড়া-বড়ি-থোড় বর্ণনা। তাও তাঁরা সত্য-মিথ্যের মিশেলে অক্লান্ত চেষ্টা চালান কাস্টমারকে খুশি করতে। হাজারদুয়ারির বাইরে মদিনা মসজিদ, ঘড়িঘর, বড় ইমামবাড়া কামান ইত্যাদি দেখাতে যদিও বা দু’চার জন গাইড মেলে কিন্তু তাঁরা আর আগের মতো হাজারদুয়ারির অন্দরে প্রবেশাধিকার পান না। অথচ এখনও এই প্রাসাদটির ভেতরে আছে নবাবের রুপোর সিংহাসন, আর্ট গ্যালারিতে আছে বিখ্যাত শিল্পীদের আঁকা তিন-চারশো তৈলচিত্র, হাতির দাঁতের তৈরি পালকি ও তাঞ্জাম, বিশাল ঝাড়বাতি, অসংখ্য পুঁথি, পাণ্ডুলিপি ও কোরান শরিফ, সিরাজের আমলের তলোয়ার, গাদা বন্দুকসহ বাঘনখ ও অস্ত্রভাণ্ডার। কিন্তু এই সকল ইতিহাসের না আছে কোনও বোর্ড, চার্ট, বা জাদুঘরের নিয়ম-নীতি মানা কোনও সুষ্ঠু প্রদর্শন-ব্যবস্থা।

অথচ গত মাসে বেঙ্গালুরু সফরে গিয়ে দেখি, বেঙ্গালুরু প্রাসাদে ঢোকার দর্শনী ২৪০ টাকা। প্রথমে মাথাপিছু টাকাটা একটু বেশি মনে হলেও, অচিরেই আমাদের ভুল ভাঙল। প্রবেশপথে প্রত্যেক দর্শককে একটা ফাইবারের রিস্ট-ব্যান্ড পরিয়ে দেওয়া হল। সঙ্গে প্রত্যেক দর্শককে নিজের পছন্দমত ভাষার একটি করে অডিয়ো-গাইড নামক যন্ত্র দেওয়া হল। খুবই সুন্দর যন্ত্রটি দেখতে অনেকটা মোবাইল ফোনের মতো। গলায় রংবেরঙের সুদৃশ্য ঝোলানোর টেপ লাগানো যন্ত্রটিতে ০ থেকে ৯ পর্যন্ত সংখ্যা আছে। কোনও একটি বা দুটি সংখ্যা টিপলে ডিসপ্লে বোর্ডে সংখ্যাটি ফুটে উঠছে, আর কানে লাগানো হেডফোনের মাধ্যমে অপূর্ব কণ্ঠস্বর ও বাচনভঙ্গিতে অতি সুন্দর আবহ সংগীতসহ চলছে অতীত ইতিহাসের ঘটনার বিবরণ।

বেঙ্গালুরু প্রাসাদের প্রতিটি কক্ষ সুন্দর পরিপাটি করে সাজানো ও প্রতিটি জিনিসের সামনে এক-দুই-তিন ইত্যাদি ক্রমিক সংখ্যা লেখা বোর্ড দেওয়া। আবার তিরচিহ্ন দিয়ে পরবর্তী প্রদর্শনকক্ষে যাওয়ার দিক নির্ণয় করা আছে। কোনও দর্শক ইচ্ছামত অডিয়ো-গাইডের বোতাম টিপে প্রদর্শিত একটি জিনিস সম্পর্কে একাধিক বার তথ্যাদি শুনতে পারবেন। এমন ঝাঁ-চকচকে প্রদর্শশালা দেখতে দেখতে আমাদের এই বাংলার পিছিয়ে পড়া পর্যটন দফতর ও ছন্নছাড়া হাজারদুয়ারির কথা বার বার মনে পড়ছিল। মাত্র ক’টি টাকা ও একটু উদ্যোগ নিলেই যে বাংলার পর্যটনশিল্প আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে, এই সত্যটুকু প্রশাসনিক ব্যক্তিরা কবে বুঝবেন?

সঞ্জীব রাহা কৃষ্ণনগর, নদিয়া

শিরোনাম

‘সরি, সুব্রতদা, ডেঙ্গি নিয়ে আপনি ফেল’, (১৩-২) সংবাদটির শিরোনামে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন বলে বলা হয়েছে, তা মুখ্যমন্ত্রী বলেননি।

এ-বিষয়ে প্রকৃত তথ্য অনুসন্ধান করে জানা গেল যে, ডেঙ্গি রোগ-প্রতিরোধ সংক্রান্ত গৃহীত উদ্যোগ নিয়ে আলোচনাকালীন তিনি পঞ্চায়েত বিভাগ এবং বিডিও-দের আরও বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করার জন্য নির্দেশ দেন। এ-প্রসঙ্গে, রাজ্যের সমস্ত পঞ্চায়েত এলাকায় ভেকটর-বাহিত রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে আরও সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে প্রশাসনিক সভায় উপস্থিত পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন বিভাগের অতিরিক্ত মুখ্য সচিবকেও তিনি উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। সুতরাং, সংবাদটির শিরোনাম যথাযথ নয়।

মিত্র চট্টোপাধ্যায় তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার

প্রতিবেদকের উত্তর: সংবাদের শিরোনাম তার পুঙ্খানুপুঙ্খ উপস্থাপন নয়, মূল বক্তব্যের নির্যাস, যাতে পাঠক এক নজরেই সংবাদের বিষয়বস্তু সম্পর্কে অবগত হতে পারেন।

এর পরেও যেটা বলার তা হল, তথ্য অধিকর্তার চিঠি পড়লে মনে হয়, ১২ ফেব্রুয়ারি কৃষ্ণনগরের প্রশাসনিক সভায় মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী পঞ্চায়েত বিভাগ এবং বিডিও-দের তিরস্কার করেননি, কিছু পরামর্শ দিয়েছিলেন মাত্র। অথচ ঘটনা হল, প্রশাসনিক বৈঠকে সুব্রতবাবুর নাম করে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘আরবান ডেভেলপমেন্ট তবু ভাল কাজ করেছে, কিন্তু পঞ্চায়েত ভাল করেনি। ‘সরি টু সে’ সুব্রতদা, পঞ্চায়েত মনিটরিং করছে না।’’

এই মন্তব্য মন্ত্রী হিসাবে সুব্রতবাবুর ব্যর্থতার দিকেই আঙুল তোলে না কি? অন্তত মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী তো তা-ই বোঝাতে চেয়েছিলেন বলে আমাদের মনে হয়। শিরোনামেও তারই প্রতিফলন ঘটেছে। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী দাঁড়ি-কমা মিলিয়ে ওই বাক্যটিই বলেছেন, এমন কথা তো বলা হয়নি।

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement