সম্পাদকীয় ‘অমৃত ও বিষ’ (১২-৭) শীর্ষক সম্পাদকীয় প্রবন্ধটি জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে সত্যিই প্রয়োজনীয়। প্যাকেটজাত খাদ্যকে যতই অমৃতের সমান মনে হোক না কেন, তা যে ক্ষেত্রবিশেষে বিষ পানের নামান্তর, সেই বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে হলে প্যাকেটের উপরে শর্করা, নুন ও সম্পৃক্ত চর্বির মাত্রা কত— তা ছোট হরফের পরিবর্তে বড় হরফে উল্লেখ করা প্রয়োজন। মনের উপর এর অভিঘাত বেশি হয়। পাশাপাশি উপাদানগুলির স্বাস্থ্যসম্মত রেফারেন্স ভ্যালু বা স্ট্যান্ডার্ড মানের উল্লেখ থাকলে আরও ভাল হয়। সে ক্ষেত্রে মানুষকে সচেতন করার উদ্যোগটি আরও সার্থক হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি দিন ৫ গ্রামের বেশি নুন খাওয়া উচিত নয়, অথচ প্যাকেটের উপর এ রকম কোনও সতর্কবার্তা থাকে না।
তবে প্যাকেটজাত খাবার বা ‘ফাস্ট ফুড’ থেকে ক্ষতির সম্ভাবনা যতটুকু, তার তুলনায় অতি পরিস্রুত পানীয় জলে ক্ষতির সম্ভাবনা খুব বেশি কম নয়। বেশি পরিস্রুত জল পান করলে আর্থারাইটিস, মানসিক অবসাদ, হাড়ের ক্ষয়, হদ্যন্ত্রে গোলযোগের মতো নানা সমস্যা হতে পারে। ভারতে ৩০ শতাংশ মানুষ রিভার্স অসমোসিস (আর ও) প্রক্রিয়ায় পরিস্রুত পানীয় জল সেবন করে থাকেন। ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল এঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এর বিশেষজ্ঞদের মতে, রিভার্স অসমোসিস প্রক্রিয়ায় জল থেকে ক্ষতিকারক অপদ্রব্য কণাগুলির পাশাপাশি মানবদেহের উপকারী ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের অধিকাংশই বাদ চলে যায়। অথচ, এই ধরনের পরিত্যক্ত উপাদানগুলি আমাদের শরীরের বিভিন্ন কাজে লাগে। এই মৌলগুলির অভাবে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। অল্পতেই ক্লান্তিভাব দেখা দেয়। এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৯ সালে মানুষকে সতর্ক করে দিয়েছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা অনুসারে, প্রতি লিটার পানীয় জলে ক্যালসিয়াম থাকতে হবে ৩০ মিলিগ্রাম, বাইকার্বোনেট থাকতে হবে ৩০ মিলিগ্রাম এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকতে হবে ২০ মিলিগ্রাম। তবেই তা স্বাস্থ্যসম্মত হবে। অথচ, এ সব হিসাবের তোয়াক্কা না করেই শহর ও গ্রাম জুড়ে রমরমিয়ে চলছে পানীয় জলের ব্যবসা। আমরা অমৃত মনে করে বিষ পান করে চলেছি প্রতিনিয়ত।
অজয় ভট্টাচার্য, বনগাঁ, উত্তর ২৪ পরগনা
ক্ষতির দায়
‘অমৃত ও বিষ’ সম্পাদকীয়ের শেষ পঙ্ক্তিতে বলা হয়েছে, অমৃতের স্বাদ আশা করে কেউ যাতে বিষ পান না করেন— তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য। প্রশ্ন হল, রাষ্ট্র কি সেই দায়িত্ব পালন করতে পারছে? মাঝে মাঝেই তো প্যাকেটজাত খাবারে ক্ষতিকারক বস্তু থাকার খবর সংবাদপত্রে দেখতে পাই। মধু, যা কিনা শিশু থেকে বৃদ্ধ— সব বয়সের মানুষরাই খেয়ে থাকেন, সেই নামী, দামি কোম্পানির মধুতেও ভেজাল পাওয়া গিয়েছে। তা হলে মানুষ কাদের বিশ্বাস করবেন? যাদের বিরুদ্ধে মধুতে ভেজাল মেশানোর অভিযোগ উঠেছে, তাদের বিরুদ্ধে কি তেমন কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করা হয়েছিল? এমন অভিযোগ প্যাকেটজাত খাবার, নুডলস, চিপসের বিরুদ্ধেও উঠেছিল। চটজলদি নুডলস-এর এক ব্র্যান্ডের বিরুদ্ধেও মাত্রাতিরিক্ত সিসা থাকার অভিযোগ উঠেছিল।
যাঁরা মাত্রাতিরিক্ত সিসা মেশানো নুডলস বা ভেজাল মধু ইতিমধ্যেই খেয়ে ক্ষতির শিকার হলেন, তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেবে কে? সরকারের কি এই সব উপভোক্তাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোনও নির্দিষ্ট আইন আছে? টিভিতে একটি কোম্পানির পানমশলার বিজ্ঞাপনে দেখতে পাই বলিউড ও ক্রিকেট জগতের একাধিক রথী-মহারথীকে। সত্যিই কি ওই পানমশলায় ক্ষতিকারক পদার্থ ছাড়া উপকারী কিছু থাকে? তা হলে ওই সব তারকা শুধু টাকার লোভে ওই সমস্ত বিজ্ঞাপনে শামিল হন কেন? তারকাদের কোটি কোটি মানুষ রোলমডেল হিসাবে দেখেন। মানুষের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে তাঁদের কি কোনও দায়িত্ব নেই? শুধু টাকাটুকুই সব?
ভেজাল শুধুমাত্র প্যাকেটজাত খাবারেই নেই। রাস্তার দু’পাশে, রেস্তরাঁয় যে সব ফাস্ট ফুড বিক্রি হয়, তার ভেজাল ধরার কোনও উদ্যোগ চোখে পড়ে না। অত্যধিক তেল, মশলা ও রাস্তার দূষণযুক্ত খাবার মানুষের যে কত বড় ক্ষতিসাধন করে চলেছে, তার হিসাব কেউ রাখে না। অধিকাংশ মানুষের আজ নানাবিধ রোগবালাইয়ের মূল কারণ রাস্তার দূষণ এবং ভেজালযুক্ত ফাস্ট ফুড খাওয়া। সমীক্ষায় উঠে এসেছে করোনাকালীন সময়ে রাস্তার ধারে ফাস্ট ফুড ও রেস্তরাঁ বন্ধ থাকার কারণে মানুষ ওই সব খাবার খেতে পারেননি। ফলে তাঁদের অন্য রোগব্যাধিগুলিও নিয়ন্ত্রণে ছিল। রাস্তার ধারের খাবারে ক্ষতিকর উপাদান বিষয়ে জনগণকে সজাগ করা একান্ত প্রয়োজন।
অতীশচন্দ্র ভাওয়াল, কোন্নগর, হুগলি
শিশুর বায়না
‘অমৃত ও বিষ’ সম্পাদকীয়টি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও সময়োপযোগী, সন্দেহ নেই। এর সঙ্গে সহমত পোষণ করেই বলি, বাস্তবতার বিচারে এ কথা সত্যি যে, প্যাকেটবন্দি খাবারের নাম, দাম এবং গুণগত মান ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলি সম্পর্কে উপভোক্তাকে সম্পূর্ণ ভাবে অন্ধকারে রাখার প্রবণতা প্যাকেটবন্দি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে কম-বেশি লক্ষ করা যায়। উল্লেখ্য যে, বর্তমান ভারতের প্রত্যেকটি কোণে এই প্যাকেটজাত খাবারের গুণাগুণ বা গুণগত মান যাচাই না করেই তা রমরমিয়ে চলছে বহু বছর ধরে। সাধারণ খরিদ্দার বা উপভোক্তাদের পক্ষে তা যাচাই করা কখনও সম্ভব হয় না। সংশ্লিষ্ট প্যাকেটজাত খাদ্যের গুণগত মান এ দেশে যাচাই করার কোনও রকম ইচ্ছে সরকারের নেই বা নিয়মিত কঠোর নজরদারি চালানোর পরিকাঠামোও নেই। স্বভাবতই দেখা যায়, তার কুফল ও অস্বাস্থ্যকর বিষয়গুলি সম্পর্কে আমাদের অজ্ঞতা ও অসচেতনতা জনিত কারণে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হয়।
পথচলতি মা-বাবাদের প্রায়ই দেখা যায় সঙ্গের ছোট শিশুদের আবদার ও বায়না মেটাতে মুখরোচক ও সহজলভ্য এই প্যাকেটজাত খাবার তাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। আমরা বড়রাই তাদের মধ্যে এই আসক্তি তৈরি করে দিচ্ছি। শিশুদের মধ্যে ছোট থেকেই অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি, ডায়াবিটিস, বদহজম, অ্যাসিডিটি, হৃদ্রোগ-সহ একাধিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। অভিভাবকদের মুখে হামেশাই শোনা যায়, “কী করব বলুন, আজকালকার ছোট ছোট ছেলেমেয়ের বাড়ির খাবার মুখে রোচে না। তাই বাধ্য হয়েই প্যাকেটবন্দি খাবার কিনে দিতে হচ্ছে; না হলে অশান্তির আর শেষ থাকে না” ইত্যাদি। আসলে শিশুদের মধ্যে সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস আমরা অভিভাবকরা তৈরি করে দিতে পারিনি, তাই ফাস্ট ফুডের এত বাড়বাড়ন্ত। এই পরিস্থিতিতে সম্পাদকীয় আলোচনাটিতে আমরা জানতে পারলাম যে, এই ধরনের খাবারের প্রতি আসক্তির ফলে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতে স্থূলকায় শিশুর সংখ্যা দু’কোটি সত্তর লক্ষ ছাড়াতে পারে।
ওয়ার্ল্ড ওবেসিটি অ্যাটলাস-এর এই রিপোর্ট যদি সত্যিই বাস্তবে ঘটে, তা হলে সমগ্র জাতির কাছে অত্যন্ত চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।
শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, নবদ্বীপ, নদিয়া
আসল দোষী
‘ফুটপাত দখল দিনে রাতে’ (১-৮) প্রবন্ধটিতে অরিজিৎ চট্টোপাধ্যায় কলকাতার রাস্তা থেকে উধাও হয়ে যাওয়া ফুটপাতের কথা বলেছেন। যাঁরা পেটের দায়ে ফুটপাত জুড়ে দোকান সাজিয়ে খলনায়ক হয়ে ওঠেন, তাঁদের দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু আড়ালে থাকা রাজনৈতিক নেতাদের চোখে পড়ে না। কলকাতার রাস্তার ধারের ফুটপাতগুলি নেতাদের জমিদারি। এঁদের আদেশ বিনা কোনও দোকান দেওয়া যায় না। নেতারা নিয়মিত টাকা আদায় করেন দোকানদারদের কাছ থেকে। এ কথা কারও অজানা নয়।
সঞ্জিত ঘটক, কলকাতা-১০৩