কমল ভট্টাচার্যের দন্ত চিকিৎসকদের সরকারি কাজে নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে চিঠির (‘দন্ত চিকিৎসক’, সম্পাদক সমীপেষু, ১০-১০) পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠি। পশ্চিমবঙ্গে বিডিএস-এ এত আসন রাখার যৌক্তিকতা আছে কি না, তা ভেবে দেখার বিষয়। সরকারি ও বেসরকারি, দুটো ব্যবস্থাতেই এই নজর দেওয়া উচিত। যেমন, বর্ধমান ডেন্টাল কলেজ খোলার যৌক্তিকতা আছে কি না, তা ভেবে দেখা প্রয়োজন। এখানে সপ্তাহে ক’দিন ক্লাস হয়, তা খোঁজ করলে আঁতকে উঠতে হবে। কলকাতার ঐতিহ্যপূর্ণ ড. আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল-এর অবস্থাও আগের মতো নেই। ক্লাসে ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতি খুব কম। দন্ত চিকিৎসক হওয়ার পর তাঁদের চাকরির ক্ষেত্র খুবই ছোট পরিসরে সীমাবদ্ধ। প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে গেলেও যন্ত্রপাতি কেনার জন্য প্রাথমিক ভাবে অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। এমবিবিএস করলে চিকিৎসকরা ওষুধের দোকানে প্রাইভেট প্র্যাকটিস শুরু করতে পারেন।
গত ২০ সেপ্টেম্বর এক হাজারের বেশি চিকিৎসক নিয়োগ করা হয়েছে জিডিএমও পদে। কিন্তু গত ১০ বছর কোনও দন্ত চিকিৎসক নেওয়া হয়নি সরকারি কাজে স্থায়ী পদে। গ্রামীণ হাসপাতালে সাধারণ ভাবে কোনও দন্ত চিকিৎসক নিয়োজিত থাকেন না। তবে মহকুমা হাসপাতালে এক জন করে দন্ত চিকিৎসক নিয়োজিত থাকেন। প্রতিটি মহকুমা হাসপাতালে দু’জন করে দন্ত চিকিৎসক নিয়োজিত হলে, সপ্তাহে দু’-এক দিন করে প্রতি মহকুমার সব ক’টা ব্লক হাসপাতালে গিয়ে রোগী দেখতে পারেন এক জন দন্ত চিকিৎসক। এতে মানুষের ‘মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য’ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির সঙ্গে দন্ত চিকিৎসারও ব্যবস্থা করা হবে ও অন্তত ৩০০ দন্ত চিকিৎসক নিয়োগ করা যাবে।
সুবীর কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-৫৯
যাত্রাপালা
গ্রামবাংলা এখন তার নিজস্ব সংস্কৃতিকে হারাতে বসেছে। মেকি শহুরে বিনোদনের অন্ধ অনুকরণে বিকৃতির শিকার গ্রাম্য মনন। ছাত্র-যুবসমাজ মোবাইল গেমে, গৃহস্থ নর-নারীরা টিভি সিরিয়াল-সিরিজ়ে আর প্রবীণ মানুষরা আড্ডা দিয়ে কাটিয়ে দিচ্ছেন তাঁদের অবসর সন্ধ্যা-রাতগুলি। উৎসব উপলক্ষে যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে, তাতে মিউজ়িক অর্কেস্ট্রার জগঝম্প আর বিভিন্ন কণ্ঠী গায়ক, গায়িকা, টিভি সিরিয়াল খ্যাত শিল্পীদের একঘেয়ে ‘পারফরম্যান্স’-এ গ্রামের গন্ধটুকু থাকছে না।
অথচ, কয়েক দশক আগেই গ্রামের অ্যামেচার যাত্রায় গ্রামবাসীদের সারা মাস ধরে রিহার্সাল, প্রস্তুতিতে মেতে উঠত গ্রামগুলি। শুরুর গৎ-এর উন্মাদনা জাগানো বাজনা, মাঝে মাঝে বিবেক গীতি আর দু’ঘণ্টা সময় জুড়ে উচ্চগ্রামের অভিনয়ে জমে উঠত গ্রামের রাত। সে যাত্রা এখন তার জৌলুস হারিয়েছে। আগে অ্যামেচার ও পেশাদার, দু’প্রকার যাত্রাপালাতেই পুরুষরা নারী সেজে অভিনয় করতেন। চপল ভাদুড়ি, ফণী ভট্টাচার্য, বাবলিরানি-রা ছিলেন প্রকৃত অর্থেই যাত্রা-নক্ষত্র। তাঁদের তেজি গলার স্বর, অসাধারণ মঞ্চ কাঁপানো অভিনয় ছিল খোলা মাঠের নিজস্ব বিনোদন। তাই আবারও গ্রামগঞ্জের রাতগুলিকে আনন্দমুখর করে তুলতে ফিরে আসুক সেই মেঠো সুর। ফিরে আসুক অনন্য বিনোদন— যাত্রাপালা।
পার্থ পাল, মৌবেশিয়া, হুগলি
শীতের পাখি
শীতের সময় অতিথি পাখির আগমন প্রকৃতির একটি ছন্দোবদ্ধ নিয়ম। বালিহাঁস, কাদাখোঁচা, সরালি, বাটুল, চখাচখি, শামুকখোল, খোপাডুবুরি-সহ অন্যান্য পাখির চঞ্চল ওড়াউড়ি মুগ্ধ করে যে কাউকে। শীতের দৌরাত্ম্য কমে গেলে পাখিগুলো তাদের ঠিকানায় ফিরে যায়। দুঃখের বিষয় হল, প্রশাসনের অবহেলার কারণে পাখি শিকারিদের শ্যেনদৃষ্টি তারা এড়াতে পারে না। দেশে পরিযায়ী পাখিদের নিরাপত্তা দেওয়ার আইন থাকলেও (বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইন ১৯৭২) আইন প্রয়োগকারী সংস্থার এ ব্যাপারে গা-ছাড়া ভাব লক্ষ করা যায়। এমনিতেই প্রাকৃতিক জলাভূমি কমে যাওয়া এবং দূষণের ফলে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এর উপর চোরাশিকারিরা জালের ফাঁদ পেতে কিংবা এয়ারগান কিংবা কীটনাশক মিশিয়ে ‘বিষটোপ’ তৈরি করে অবাধে পাখি শিকার করে।
প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা, জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও নিজেদের স্বার্থে পরিযায়ী পাখি নিধনের মতো অমানবিক কাজ পরিহার করে মানবিক হওয়া প্রয়োজন এবং পাখিদের জন্য প্রাকৃতিক অভয়ারণ্য সৃষ্টি করা খুবই জরুরি। অন্যথায় পৃথিবীতে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া অন্যান্য প্রাণীর মতো পক্ষিকুলও এক দিন বিলুপ্তির পথে চলে যাবে। বস্তুত প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণের স্বার্থে পরিযায়ী পাখিদের বাঁচানোর দায়িত্ব আমাদের সবার।
পরিশেষে বলব, সচেতন রাজ্য প্রশাসন, গণমাধ্যম এবং শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিক সমাজ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সম্মিলিত উদ্যোগ করতে হবে এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকার সচেতন লোকদের এই কাজে জুড়তে হবে।
অমিয় বিশ্বাস, গোবরডাঙা, উত্তর ২৪ পরগনা
বন্ধুহীনের সঙ্গী
‘ভয়ানক আসক্তি’ (১৫-১০) শীর্ষক চিঠিতে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের একটা বড় অংশের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থাকায় পত্রলেখক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কারণ, ‘ডিজিটাল হিংসা’। আমি দীর্ঘ দিন ফেসবুক ব্যবহার করে আসছি। কিন্তু কোথাও এ ধরনের কিছু চোখে পড়েনি। প্রসঙ্গত, কথায় কথায় বিশেষণ হিসেবে ‘ডিজিটাল’ শব্দটা বাংলায় ব্যবহার করা প্রায় ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ, এর অর্থ অনেক জায়গায় বিভ্রান্তিকর হয়ে যায়। যেমন এ ক্ষেত্রেও হয়েছে।
বরং আমার মনে হয়, ফেসবুক একটা উন্মুক্ত ময়দান। এখানে ব্যবহারকারী এখনও স্বাধীন ভাবে বিচরণ করতে পারেন। সেখানে কেউ যদি গান, কবিতা লেখেন বা পড়েন, অল্প কথায় তাঁর বক্তব্য বা বিখ্যাত ব্যক্তির কোনও তাৎপর্যপূর্ণ উক্তি পোস্ট করেন, তাতে অসুবিধে কোথায়? কোনটা কার ভাল লাগবে কে বলতে পারে? অবশ্য আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার কখনও সমর্থনযোগ্য নয়। ‘ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপ যেন মাদকাসক্তির চেয়েও ভয়ঙ্কর’— এই উক্তি প্রসঙ্গে জানাই, মাঝে মাঝে এই মাধ্যমে কিন্তু অনেক বিরল তথ্যও জানা যায়। ঠিকমতো ব্যবহার করলে সমাজমাধ্যমের মতো সঙ্গী মেলা ভার।
মনোজ ঘোষ, কলকাতা-৬১
শুদ্ধতার জন্য
গত ১৫-২৯ সেপ্টেম্বর সরকার ও সরকার পোষিত সমস্ত বিদ্যালয় ১৫ দিনব্যাপী ‘নির্মল বিদ্যালয় পক্ষ’ পালন করেছে। এর প্রধান উদ্দেশ্য, বিদ্যালয়কে নির্মল, নিরাপদ, নিরপেক্ষ ও প্রতি পড়ুয়ার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান করে তোলা। এই ১৫ দিনের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিনটি ছিল হাত ধোয়ার দিন, বা ‘হ্যান্ড ওয়াশিং ডে’। প্রাত্যহিক জীবনে হাত ধোয়ার উপকারিতা নিয়ে সচেতন করার বিষয়টি সকলের জন্যই প্রযোজ্য, শুধুমাত্র পড়ুয়াদের জন্যই নয়। গত এক দশক ধরে প্রতি বছর ১৫ অক্টোবর ‘গ্লোবাল হ্যান্ড ওয়াশিং ডে’ পালিত হয়। কোভিড পরিস্থিতিতে দিনটি বাড়তি গুরুত্ব পেয়েছে। নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে নানা জটিল রোগ এড়ানো সম্ভব। বর্তমানে স্কুলে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কিত যে সব অনুশীলন শিক্ষকদের কাছে পড়ুয়ারা পেয়েছে, সেগুলো পরিবারের সুরক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। করোনা অতিমারির শুরু থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হাত ধোয়ার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়। সারা বছরই এ ব্যাপারে প্রচার চালু থাকা দরকার।
বিপদতারণ ধীবর, বেলিয়াতোড়, বাঁকুড়া