বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস উপলক্ষে অচিন চক্রবর্তীর লেখাটি (‘গরিবের রোগ, তাই অবহেলা’, ২৫-৩) খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রবন্ধ। এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করাটা একান্তই জরুরি। যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ মারা যান। এই রোগের চিকিৎসায় উচ্চহারের প্রোটিন-যুক্ত খাদ্য আর খোলামেলা পরিবেশ দরকার। লেখক সঠিক ভাবে এর উপর আলোকপাত করেছেন। এর জন্য যা অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে, চাহিদার তুলনায় তা অতি নগণ্য। শিশুদের জন্মের তিন মাসের মধ্যে প্রতিষেধক ব্যবস্থা হিসেবে বিসিজি টিকা দিলেও পরবর্তী কালে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। অন্য রোগের হাত ধরেও এই রোগ মানবদেহে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। আর রোগটা নিজেও ব্যাপক ভাবে সংক্রামক। লেখক এটাকে গরিবের রোগ বলেছেন। কিন্তু শুধুমাত্র গরিব মানুষেরাই নন, যে ব্যক্তিরা এই রোগে আক্রান্ত হয়ে চিরতরে না ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন, তার তালিকাটা নেহাত কম নয়।
লেখক কবি জন কিটস-এর উল্লেখ করেছেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের আদরের মেয়ে রেণুকা আলমোড়া থেকে কলকাতায় এসে রোগযন্ত্রণার কবলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মাত্র ১৩ বছর বয়সে। এর পর এল কবির আর এক কন্যা বেলার পালা। সেই সর্বনাশা ক্ষয় রোগ। ছোট মেয়ে মীরার পুত্র নীতীন্দ্রনাথ ছিলেন রবীন্দ্রনাথের অত্যন্ত প্রিয়। কবি মুদ্রণ শিল্পের কাজ শেখাতে ইউরোপ পাঠিয়েছিলেন নীতীন্দ্রনাথকে। সেখানে যক্ষ্মা হয়ে তিনি অল্প বয়সেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন।
আমাদের এই রাজ্যের কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের মৃত্যুও এই যক্ষ্মা আক্রান্ত হয়ে। তাই লেখকের সঙ্গে সহমত পোষণ করে বলি, অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে এই যক্ষ্মা রোগের নির্মূল করার ব্যাপারে আমরা যেন ঝাঁপিয়ে পড়তে পারি।
স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা-১১৭
ইপিএফ সঙ্কট
সম্প্রতি সিদ্ধান্ত হল, এমপ্লয়িজ় প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্গানাইজ়েশন-এ (সংক্ষেপে ইপিএফও) সঞ্চিত টাকার উপর সুদের হার ৮.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮.১ শতাংশ করা হচ্ছে। গত চার দশকে এই হারই সর্বনিম্ন। বিগত আর্থিক বছরগুলিতে ইপিএফ-এ সুদের হার মোটামুটি ৮.৫০ থেকে ৯ শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করত— সুদের হার কমত বা বাড়ত মোটামুটি ৫, ১০, ১৫, ২০ বেসিস পয়েন্ট-এর মধ্যে। সেখান থেকে হঠাৎ করে এই চলতি ২০২১-২২ অর্থবর্ষে প্রায় ৪০ বেসিস পয়েন্ট কমাল দেশের সরকার। বর্তমানে ইপিএফও-র সক্রিয় সদস্যসংখ্যা প্রায় পাঁচ কোটি। এই সদস্য শ্রমিক কর্মচারীদের মূল বেতনের ১২ শতাংশ ও শ্রমিক কর্মচারী, আর নিয়োগকর্তার মাধ্যমে ১২ শতাংশ অর্থ এই ইপিএফও তহবিলে জমা পড়ে প্রতি মাসে।
আবার, প্রতি বছর এই তহবিলে যে অর্থ জমা পড়ে, তার ১৫ শতাংশ এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড বা ইটিএফ-এর মাধ্যমে শেয়ার বাজারে লগ্নি করা হয়। বিগত দুই অর্থবর্ষেই তহবিলের অর্থ শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে ইপিএফও-র অছি পরিষদ আয় করেছে (বা বলা যায় লভ্যাংশ পেয়েছে) সত্তর হাজার কোটি টাকার বেশি। অথচ, সেই আয় বা লভ্যাংশের ছিটেফোঁটাও জোটেনি ইপিএফও-র অন্তর্গত শ্রমিক কর্মচারীদের— উল্টে তাঁদের জমানো টাকার উপর সুদের হার হয় একই থেকেছে, নতুবা কমেছে। এবং বর্তমান আর্থিক বছরে বিগত চার দশকে সুদের হারকে সর্বনিম্ন স্থানে নিয়ে গিয়েছে দেশের সরকার। ইপিএফও-র তহবিল কিন্তু বেড়েছে। অর্থাৎ, অনায়াসেই এই আর্থিক বছরে শ্রমিক-কর্মচারীদের জমানো কষ্টার্জিত টাকার উপর সুদের হার না কমিয়ে, বরং সুদের হার বাড়ানোর দিকেই মনোনিবেশ করতে পারত ইপিএফও অছি পরিষদ এবং দেশের সরকার। অন্তত ইপিএফ-এর ন্যূনতম পেনশন বৃদ্ধি করে কমপক্ষে ৭-১০ হাজার টাকা করা যেত।
ইন্দ্রনীল দে
বারাসত, উত্তর ২৪ পরগনা
শৃঙ্খলে সংবাদ
শমীক সেন (‘আদালত ও জাতীয় নিরাপত্তা’, ১১-৩) লিখেছেন, ইমার্জেন্সি ছিল ভারতের সংবাদমাধ্যমের উপর প্রথম বৃহৎ সরকারি আঘাত। এই প্রসঙ্গে কিছু বলার তাগিদে এই চিঠি। জরুরি অবস্থার কলঙ্কিত অধ্যায় শেষে একটা আশা ছিল, গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের দিন বোধ হয় শেষ। আশাভঙ্গে বেশি সময় লাগেনি। ১৯৭০-৮০’র দশকে প্রাক্-ইন্টারনেট যুগে গণমাধ্যম ছিল মূলত প্রিন্ট মিডিয়া আর সরকার নিয়ন্ত্রিত দূরদর্শনের খবর। অনুসন্ধানমূলক সংবাদ প্রতিবেদনে ফাঁস হয়ে যাচ্ছিল প্রশাসনের একটার পর একটা দুর্নীতি। তেল, চিনি, টেলিফোন ইত্যাদি
কেলেঙ্কারিতে জড়িত মন্ত্রী-আমলারা গ্রেফতার হচ্ছেন, পদত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছেন। সরকারের চক্ষুশূল এই মিডিয়া হাউসগুলোর উপর চাপানো হচ্ছে প্রকাশ্য বা প্রচ্ছন্ন সেন্সর। সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ করা, এমনকি বুক স্টল থেকে রাতারাতি সমস্ত পত্রিকা তুলে নেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। ১৯৮০-র দশকে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী জগন্নাথ মিশ্র সংবাদপত্রে ‘কুরুচিকর’ খবর প্রকাশে নিয়ন্ত্রণের জন্য বিধানসভায় বিল আনলেন। ১৯৮৭ সালে তাঁর মন্ত্রিসভার বর্ষপূর্তি উপলক্ষে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী সাংবাদিক সম্মেলন ডাকেন। প্রতিবাদী কাগজগুলোর উপর তিনি প্রথম দিন থেকেই বিরক্ত। সময়টা আবার দেশে জরুরি অবস্থা জারির দশম বর্ষপূর্তি।
আলোচনায় সে প্রসঙ্গ এলে রাজীব গান্ধী বলেন, জরুরি অবস্থার প্রয়োজন ছিল, দরকার পড়লে আর একটা জরুরি অবস্থা জারি হতে পারে! লক্ষণীয়, ব্রিটিশ শাসনের সময় থেকে আজ পর্যন্ত, যখন নির্ভীক সংবাদ গোষ্ঠীগুলোর নিপীড়নের জাঁতাকলে অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে, তখন সরকারের জয়গান গেয়ে এক শ্রেণির সংবাদ গোষ্ঠী তাদের কাগজের প্রচার ও ব্যবসা পরিপুষ্ট করছে। আর এখন তো পুরো মিডিয়া জগৎ অনুগত আর নিরপেক্ষ, এই দুটো শ্রেণিতে আড়াআড়ি ভাগ হয়ে আছে। পশ্চিমবঙ্গে জরুরি অবস্থার সময় এই বিভাজন খুব স্পষ্ট ভাবে দেখা গিয়েছিল। এক দিকে যখন আনন্দবাজার পত্রিকা গোষ্ঠীর সাংবাদিকদের গ্রেফতার,
স্টেটসম্যান-এর অফিসের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা ইত্যাদি সরকারি পীড়ন চালানো হচ্ছে, তখন কলকাতারই এক বৃহৎ সংবাদ গোষ্ঠী তাদের প্রকাশনার কাগজ/ পত্রিকাতে জরুরি অবস্থার সমর্থন করে, আর সরকারের জয়গান গেয়ে নিজেদের স্বার্থ মজবুত করেছিল।
বুদ্ধদেব চট্টোপাধ্যায়
কুলটি,পশ্চিম বর্ধমান
বিপন্ন ময়ূর
আজকাল দেখা যাচ্ছে রাস্তাঘাটে, মেলায়, দোকানে দেদার ময়ূরের পেখমের পালক বিক্রি হচ্ছে। কোনও বিধিনিষেধ নেই, ধরপাকড়ের ভয় নেই। অথচ, ভারতীয় বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইন, ১৯৭২ অনুযায়ী ময়ূর সংরক্ষিত বন্যপ্রাণের মর্যাদা পায়। ২০১৩ সালে ভারত সরকারের পরিবেশ মন্ত্রক ময়ূরের পেখম কেনাবেচার উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ময়ূর হত্যা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও হত্যাকারীর দশ বছর পর্যন্ত জেল ও জরিমানা, দুটোই হতে পারে। এমনিতেই বিচরণক্ষেত্র কমে যাওয়ায়, আর কীটনাশক ও পরিবেশ দূষণের ফলে ময়ূরের প্রজনন হার অনেক কমে গেছে। এর উপর যদি পেখমের লোভে যথেচ্ছ হত্যালীলা চলতে থাকে, তা হলে হয়তো অদূর ভবিষ্যতে বিলুপ্ত প্রাণীর তকমা পাবে ময়ূর। আবার সামনেই আছে জন্মাষ্টমী। আরও বাড়বে পেখমের চাহিদা। শহরের স্কুলগুলোতে
চলবে কৃষ্ণ সেজে ফোটোশুট। আর সেই পালকের জোগান দিতে খোয়া যাবে আরও কত ময়ূরের প্রাণ। এক দিকে জাতীয় পাখির মর্যাদা, অপর দিকে ধর্মীয় আবেগ, তাতে ময়ূরের লাভ কিছুই হয় না। উল্টে তাকে আরও বিলুপ্তির পথে এগিয়ে নিয়ে যায়।
গীতশ্রী কোলে
শ্রীরামপুর, হুগলি