এই বাংলায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নানা ধরনের প্রতিযোগিতা দেখা যায়। কিন্তু তার বেশির ভাগটাই লোকদেখানো, আর সেগুলির ফলও সব সময় মানুষের জন্য শুভ হয় না।
এখন একটা প্রতিযোগিতা চলছে, যেটাকে বাংলার মানুষ সাধুবাদ জানাচ্ছেন— কমিউনিটি কিচেন স্থাপনের প্রতিযোগিতা। বামেরাই এটা আরম্ভ করেছে। এখন শাসক দল তৃণমূলও মাঠে নেমে পড়েছে। লকডাউন পরিস্থিতিতে বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াতে বামেরাই প্রথম কমিউনিটি কিচেন খোলে। ২০ টাকায় পেটপুরে ডিম-ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা করে। তৃণমূলও তার কিছু দিন পরে কমিউনিটি কিচেন খোলে। তারা আরও কম দামে ডিম-ভাত দিতে শুরু করে। বামেরা এর পর আরও কমিউনিটি কিচেন খুলেছে, এবং ২০ টাকা থেকে কমিয়ে ১০ টাকায় তারা দুপুরের খাবার দিচ্ছে। যেমন, দক্ষিণ দমদম এলাকায়। বিজেপিকে এখনও কমিউনিটি কিচেন সংগঠনের আসরে তেমন ভাবে দেখা যায়নি। এই সময় যখন লোকে চরম আর্থিক দুর্দশায়, তখন রাজনৈতিক দলগুলোর এই কার্যকলাপকে সাধারণ মানুষ দু’হাত তুলে আশীর্বাদ জানাচ্ছেন। রাজ্য প্রশাসন যদি দুর্গাপুজোর জন্য ক্লাবগুলোর অনুদান কমিয়ে ওই টাকায় আরও ব্যাপক ভাবে কমিউনিটি কিচেন চালু করত বাংলা জুড়ে, তবে গরিব মানুষগুলো এই সময় একটু ভাল ভাবে বাঁচতে পারত।
অশোক বসু, বারুইপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
দেশাচারের দাসত্ব
যখন করোনা এমন মারাত্মক রূপ নিয়ে আসেনি, তখন পুজো কমিটিগুলোর প্রতি সরকারের যা উদারতা দেখেছি, তার বহু গুণ উদারতা দেখছি এখন। এ রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় আড়াই লক্ষ। জানি না, পুজোর মধ্য দিয়ে, ঈশ্বরকে তুষ্ট করার মধ্য দিয়ে এই সমস্যার সমাধান খোঁজার চেষ্টা চলছে কি না। এর পরও কি সরকারি উদ্যোগে ঘটা করে বিদ্যাসাগরের জন্মদিনে তাঁর গলায় মালা দেওয়া যায়? শোনা যায়, বিদ্যাসাগরই বলেছিলেন, চোখের সামনে মানুষ অনাহারে মরবে, ব্যাধি, জরা, মহামারিতে উজাড় হয়ে যাবে, আর দেশের মানুষ চোখ বুজে ‘ভগবান’, ‘ভগবান’ করবে— এমন ভগবৎ প্রেম তাঁর নেই। তাঁর ভগবান আছেন মাটির পৃথিবীতে। এই প্রসঙ্গে তাঁর আর একটি বক্তব্যও স্মর্তব্য। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি দেশাচারের নিতান্ত দাস নহি। নিজের ও সমাজের মঙ্গলের নিমিত্ত যাহা উচিৎ বা আবশ্যক হইবে, তাহাই করিব, লোকের বা কুটুম্বের ভয়ে কদাচ সঙ্কুচিত হইব না।’’
গৌরীশঙ্কর দাস, সাঁজোয়াল, খড়্গপুর
প্রাপ্য সম্মান
‘কুর্নিশ করুন, সাহস দিন’ (২৯-৯) নিবন্ধের জন্য ধন্যবাদ জানাই অভিজিৎ চৌধুরীকে। আমরা হয়তো অনুধাবন করতে পারব না, কত কষ্ট, ভয় ও যন্ত্রণা নিয়ে গত সাত মাস ধরে সমস্ত স্তরের স্বাস্থ্যসেনানীরা করোনার সঙ্গে লড়ে যাচ্ছেন। পরিবার থেকে দূরে যাচ্ছেন রোগীর সেবা করার জন্য, যেন তাঁরা কোনও যুদ্ধে দেশান্তরে যাচ্ছেন। কোভিড ডিউটি করে আসার পর তাঁকে সম্পূর্ণ আলাদা ঘরে সাত দিন থাকতে হবে। খাওয়া-দাওয়া, পোশাক পরিচ্ছদ, শৌচাগারের পুরোপুরি আলাদা ব্যবস্থা করতে হচ্ছে।
অথচ, তাঁরা প্রতিদানে কী পাচ্ছেন? অবহেলা, বঞ্চনা, একঘরে করে রাখার হুমকি, অসহযোগিতা ও অমানবিকতা। সমাজের উচিত এই সেনানীদের সম্মান জানানো। সরকারের উচিত তাঁদের জন্য অতিরিক্ত ভাতার ব্যবস্থা করা এবং রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের উচিত বিনা ভাড়ায় তাঁদের কর্মস্থলে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কী করছেন? ঘাড় ধরে ট্রেন থেকে স্বাস্থ্যকর্মীদের নামিয়ে দিচ্ছেন। এই কি তাঁদের প্রাপ্য?
শ্রীমন্তী ভৌমিক, ইছাপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
কঠিন কর্তব্য
আমরা করোনার ভয়ে অনেকেই বাড়ি থেকে বেরোচ্ছি না, ‘সোশ্যাল ডিসটেন্সিং’ বজায় রাখছি এবং নিজেকে যথাসাধ্য প্রতিরোধকে মুড়ে রাখছি। অন্য দিকে, যাঁরা সব জেনেও করোনা আক্রান্তদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করছেন, তাঁদের নত হয়ে শ্রদ্ধা জানানো দরকার। প্রচণ্ড গরমে পিপিই পরে কাজ করা অসহনীয়। তবু টানা ৮ ঘণ্টা ডিউটি দিচ্ছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। ভাবুন ওঁদের কথা।
জানেন কি, এক বার পিপিই পরে নিলে টানা ৮ ঘণ্টা বাথরুমে যাওয়া যায় না? নার্স বা ডাক্তার-দিদিদের যদি পিরিয়ড চলে, কতটা অসুবিধে নিয়ে তাঁদের কাজ করতে হয়। তবুও এঁদেরই কাউকে ফ্ল্যাটে ঢুকতে বারণ করেন বাড়ির মালিক, যাতায়াতের অব্যবস্থায় ভুগতে হয়, হাসপাতালে নানা আক্রমণ সইতে হয়। কখনও চড়-থাপ্পড়, রড দিয়ে মাথা ফাটানো, নার্সদিদির চুল ধরে মারা, ডাক্তারদিদিকে কুরুচিকর কথা বলা— অনেক কিছুই সইতে হচ্ছে ওঁদের। আসুন ওঁদের পাশে থাকি।
ঋত্বিক ভুঁইয়া, চণ্ডীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর
বিপন্ন মজুর
অতিমারি এবং লকডাউনকে সামনে রেখে ছোট-বড় সমস্ত কোম্পানি তাদের কর্মচারীদের প্রতি দুর্ব্যবহার শুরু করেছে। কেউ কর্মী ছাঁটাই করছে, তো কেউ মাইনে কমিয়ে দিচ্ছে। কেউ বা পূর্ব নির্ধারিত ছুটির দিনগুলোকেও কাজের দিনে পরিবর্তিত করছে কোম্পানির মুনাফা বাড়ানোর তাগিদে, কর্মচারীদের বাড়তি একটা পয়সাও না দিয়ে। অতিরিক্ত সময়েও কাজ করতে হবে, কিন্তু তার জন্য বাড়তি পয়সা দেওয়ার কোনও সদিচ্ছা ম্যানেজমেন্ট-এর নেই। কাজ করতে পারলে করো, না পোষায় বাড়ি যাও— এটাই তাদের বক্তব্য। সরকার নির্বিকার।
এই ভাবে এককালীন মুনাফার আশায় শ্রমিকদের বেলাগাম শোষণই যদি চলতে থাকে, তা হলে তার পরিণাম হবে ভয়ঙ্কর। এই সমাজব্যবস্থা, রাষ্ট্রযন্ত্র কেবলমাত্র পাঁচ শতাংশ ধনীদের তোষণ করে কোনও অবস্থাতেই বৃহত্তর কল্যাণে কাজে লাগতে পারে না। বৈষম্যমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় আজ দেশের মানুষ বিপন্ন, রাষ্ট্র দিশাহীন। এর কোনও প্রতিকার কি নেই?
শুভজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-১৪১
সর্পাঘাত
গ্রামবাংলায় সাপের ছোবলে মৃত্যুর খবর আমরা খবরের কাগজের পাতায় প্রায়ই পড়ছি। বর্ষাকালের সময় সাপের উপদ্রব বাড়ে। ধান রোয়ার সময় মাঠে যখন জনমজুর কাজে ব্যস্ত থাকেন, তখন কেউটে ইত্যাদি সাপের সামনে তাঁদের প্রায়ই পড়ে যেতে হয়। কখনও কখনও সেই সাপের কামড়ও তাঁদের খেতে হয়।
কিন্তু এখন যে খবর বেশি পাচ্ছি, তাতে দেখা যাচ্ছে বাড়ির ভেতরেই মানুষ সর্পদষ্ট হচ্ছেন। এবং অধিকাংশই ঘুমের মধ্যে। এর কারণ, মাটির বাড়িতে সাপ ঢুকে পড়ে ইঁদুরের সন্ধানে। মাটির মেঝেতে ইঁদুর গর্ত খুঁড়ে বাস করে। তাই এই গর্ত যাতে না হয়, তার জন্য গৃহস্থকে সতর্ক হতে হবে। সাপ রুখতে ঘরের চার দিকে কার্বলিক অ্যাসিড ছড়ানো যেতে পারে।
ফসল চাষে এখন যে সব ওষুধ ব্যবহার করা হয়, তা খুবই বিষাক্ত। পোকামাকড় শুধু নয়, সাপ, কেঁচো ইত্যাদির পক্ষেও তা ক্ষতিকারক। কেঁচো আজকাল প্রায় দেখাই যায় না। তাই সাপ মাঠ ছেড়ে এখন লোকালয়ের দিকে চলে যাচ্ছে। ফলে সর্পাঘাতে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। কিন্তু সাপে কামড়ালেই যে মৃত্যু হবে, তেমনটা তো নয়। তা হলে হাসপাতালে নিয়ে যেতে কি দেরি হচ্ছে? প্রাথমিক চিকিৎসা ওঝাদের দিয়ে করানো হচ্ছে না তো? হাসপাতালে ঠিকমতো চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে? ওষুধের পর্যাপ্ত জোগান আছে কি? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা জরুরি।
প্রমীলা মিত্র,আঝাপুর, পূর্ব বর্ধমান
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।