ঈশানী দত্ত রায় তাঁর প্রবন্ধে প্রশ্ন করছেন “জিশু কে?” (‘চিরসখা, ছেড়ো না’, ১৬-৪)। তিনি কি এক জন ধর্মপ্রচারক, না এক জন আপসহীন বিপ্লবী? জানা প্রয়োজন, কোন আর্থসামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে খ্রিস্টধর্মের উদ্ভব হয়েছিল এবং কেনই বা ষোড়শ, সপ্তদশ শতকে ইউরোপের গণবিদ্রোহের স্লোগান হিসেবে জিশুর নাম উচ্চারিত হত?
এঙ্গেলস লিখেছেন, আধুনিক শ্রমিকশ্রেণির আন্দোলনের সঙ্গে প্রাচীন খ্রিস্টধর্মের যথেষ্ট সাদৃশ্য আছে। মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের ধর্ম হিসেবেই খ্রিস্টধর্মের উত্থান (অন রিলিজিয়ন)। জিশুর নামের উল্লেখ পাওয়া যায় ইহুদি ইতিহাসবিদ ফ্লেভিয়াস জোসেফাসের লেখা অ্যান্টিকুইটাস গ্রন্থে। তিনি জিশুকে ‘মেসায়া’ বলে উল্লেখ করেছেন। এটাই বিপ্লবী জিশুর অস্তিত্বের অন্যতম জোরালো প্রমাণ। জিশুর আগে আবির্ভূত হয়েছিলেন অনেক মেসায়া, যাঁরা রোম সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন, পরিণামে অনেকে ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। রোমান সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রাম চালান ইহুদিদের এক সম্প্রদায়, যাঁরা ‘জ়েলট’ নামে পরিচিত।
মার্ক থেকে মথি পর্যন্ত সুসমাচারে রোমান শাসকদের অঙ্গুলিহেলনে জিশুর মূল বাণীকে বিকৃত করার বহু উদাহরণ আছে। কারণ তত দিনে (৭০ খ্রিস্টাব্দ) ইহুদিদের সমস্ত প্রতিরোধ চূর্ণ করে রোমানরা জেরুসালেম দখল করে লক্ষাধিক ইহুদিকে হত্যা করে। খ্রিস্টধর্ম, মার্ক্সের ভাষ্য অনুযায়ী, তার বিপরীতে রূপান্তরিত হল। যা ছিল শোষণের বিরুদ্ধে এক শাণিত তরবারি, তা হয়ে উঠল শোষকের হাতে এক অমোঘ আয়ুধ।
কিন্তু আদি বিদ্রোহী সারবস্তুর অনেক কিছুই থেকে গিয়েছে সুসমাচারে। যেমন জিশুর উক্তি— “আমি শান্তি দিতে আসিনি, এসেছি তরবারি দিতে।” কিংবা “যার তরবারি নেই, সে যেন নিজের পরিচ্ছদ বিক্রি করে তরবারি কেনে।” জিশুর গ্রেফতার রুখতে পিটার তরোয়াল চালিয়ে এক প্রহরীর কান কেটে নেন। রেজ়া আসলানের জ়েলট: দ্য লাইফ অ্যান্ড টাইমস অব জিসাস অব নাজ়ারেথ গ্রন্থেও জিশু এক মুক্তিকামী, আপসহীন বিপ্লবী হিসেবে চিত্রিত। এমন এক জন, যিনি রক্তজমাট শিকলপূজার পাষাণবেদি উপড়ে ফেলার আহ্বান জানান।
শিবাজী ভাদুড়ি
হাওড়া
পণের দাবি
পণপ্রথা বিষয়ক সমর মিত্রের ‘নিষ্ঠুর প্রথা’ চিঠিটি (সম্পাদক সমীপেষু, ১৭-৩) পড়ে কয়েকটি কথা মনে হল। ‘পণ কেন নেব না, প্রশ্ন তুললেন বর?’ (৯-৩) শীর্ষক সংবাদটির ঠিক নীচে আর একটি সংবাদ ছিল— ‘নারী দিবসে কোবিন্দ-মোদীর শুভেচ্ছাবার্তা’। দেশের নারীরা যাতে মর্যাদা নিয়ে নিরাপদে দিনযাপন করতে পারেন, তেমন শুভেচ্ছাই সেই বার্তায় ছিল। অথচ, আজও দেশে পণপ্রথা একটি অত্যন্ত গুরুতর সামাজিক ব্যাধি হিসেবে বহাল তবিয়তে টিকে রয়েছে? এই পণ দিতে গিয়ে কত সংসার আজও আর্থিক ভাবে পঙ্গু হয়ে যায়, পণ দিতে না পারায় বিয়ের পিঁড়ি থেকে কত বর দলবল নিয়ে উঠে চলে যায়, পণের দাবি ঠিকমতো পূরণ করতে না পারায় কত বধূর উপর নেমে আসে মারধর, গঞ্জনা, বাড়ি থেকে বার করে দেওয়া, গায়ে কেরোসিন ঢেলে জ্বালিয়ে দেওয়া, খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়া— এমন আরও কত রকমের অত্যাচার। সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার কত ঘটনাই না ঘটে! এ সব কি দেশের শীর্ষনেতাদের নজরে আসে? যদি আসে, তবে তার সুরাহা করেন না কেন? সুরাহাই যদি না করেন, তবে দেশের মহিলাদের কাছে তাঁদের শুভেচ্ছার কী মূল্য রয়েছে!
কেন্দ্র-রাজ্যে একের পর এক সরকার বদলায়। কিন্তু নারীদের জীবনের অবহেলা, অত্যাচারের ছবিটা কমবেশি একই থেকে যায়। ১৯৬১-তে পণপ্রথা বিরোধী আইন চালু হয়েছে। অথচ তথ্য বলছে, শুধুমাত্র ২০২০ সালেই পণ সংক্রান্ত বিষয়ে নথিভুক্ত অভিযোগ দশ হাজারের বেশি এবং এই কারণে মৃত্যুর সংখ্যা ৬৯৬৬। হবে না-ই বা কেন? দেশের যাঁরা পরিচালক, লোকসভায় সেই ৫৪৩ জন সদস্যের মধ্যে অনেক জনের বিরুদ্ধেই নানা অপরাধমূলক কাজের অভিযোগ আছে, এবং তার মধ্যে আবার অনেকগুলোই ধর্ষণ বা নারী নির্যাতন সংক্রান্ত অভিযোগ। এঁরা নির্বাচনে দাঁড়ানোর অনুমতি পান কী করে? প্রধানমন্ত্রী যতই ‘বেটি বচাও’ স্লোগান তুলুন, তাঁর দলের নেতাকর্মীরাই তো কাঠুয়ায় ধর্ষকদের সমর্থনে মিছিল করেছে, উন্নাও, হাথরসে নির্যাতিতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। বিজেপি-আরএসএস’এর বিভিন্ন নেতা-মন্ত্রী নারীদের সম্পর্কে যা মন্তব্য করেন, তাতেই বোঝা যায় তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি সেই সামন্ততান্ত্রিক যুগেই পড়ে রয়েছে। অন্য রাজনৈতিক দলগুলিও মুখে যতই নারী প্রগতির কথা বলুক, বাস্তবে নারীদের প্রতি সমাজের মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে কতটুকু? নারীদের প্রতি সমাজের মানসিকতার পরিবর্তনের জন্য, মর্যাদা ও সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যে কাজ করার প্রয়োজন ছিল, তার কিছুই হয়নি। তাই আজও সমাজে পণের দাবিতে বধূহত্যা, কন্যাভ্রূণ হত্যা, বাল্যবিবাহ, নারী-শিশু পাচার, কর্মস্থলে যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, হত্যার মতো জঘন্য অপরাধমূলক ঘটনার প্রবাহ অনায়াসেই বয়ে চলতে পারছে।
মাঝে মাঝে ভাবি, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, এমএলএ, এমপি-দের পরিবর্তে আমাদের যদি কয়েক জন রামমোহন, বিদ্যাসাগর, বেগম রোকেয়া, জ্যোতিবা ফুলের মতো মানুষ থাকতেন, তবে বোধ হয় নারী-দুর্গতির চিত্রটা আজ অন্য রকম হত!
বিজলী মণ্ডল
গড়বেতা, পশ্চিম মেদিনীপুর
অভিযোগ
এই সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় “চাকরির নামে ‘পরিচারিকা’, কাঠগড়ায় মন্ত্রী” (৩০-৪) শীর্ষক সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে আমার এই প্রতিবাদ। ২৯ মার্চ আপনাদের প্রতিবেদক ডেবরা ব্লকের সবিতা লায়েকের অভিযোগ প্রসঙ্গে ফোনে আমাকে প্রশ্ন করেন। আমি জানাই যে, এই অভিযোগ সর্বৈব মিথ্যা। এ-ও বলি, এই অভিযোগ যে ভিত্তিহীন, তার সপক্ষে আমার কাছে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে এবং সেই তথ্যপ্রমাণ দেখার জন্য তিনি যেন আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, সেই অনুরোধও জানাই। তা সত্ত্বেও পরের দিন সংবাদপত্রে এই অভিযোগের সত্যতা যাচাই না করে তা প্রকাশ করা হয়েছে। যার ফলে আমার সম্মানহানি হয়েছে।
হুমায়ুন কবীর
কলকাতা-১০৭
প্রতিবেদকের উত্তর: ডেবরার বাসিন্দা আদিবাসী তরুণী সবিতা লায়েক মন্ত্রী হুমায়ুন কবীরের নামে একাধিক জায়গায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন এবং সেই অভিযোগপত্রের ছবিও আমরা প্রকাশ করেছি। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারও লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন এবং তদন্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। সে কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, আমার সঙ্গে ফোনে কথোপকথনে মন্ত্রীও তরুণীর অভিযোগের কথা স্বীকার করে দাবি করেন, ওই তরুণী তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় মিথ্যা অভিযোগ জানাচ্ছেন এবং তরুণীকে উস্কানি দিচ্ছেন মেদিনীপুরে মন্ত্রীর কিছু ‘শত্রু’। সে কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
সাংবাদিকতার নীতি ও নিয়ম অনুসারে, কোথাও কারও বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের হলে সেই খবর সংবাদমাধ্যম তুলে ধরবে। শর্ত হল, সেই প্রতিবেদনে ‘অভিযোগ’ কথাটি থাকবে এবং যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁর বক্তব্য বা পাল্টা যুক্তি থাকতে হবে। এই দু’টি শর্তই আমাদের প্রতিবেদনে সম্পূর্ণ ভাবে মেনে চলা হয়েছে। সেখানে অভিযোগকারীর কথা ও অভিযুক্তের কথা সমান গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়েছে এবং পরিষ্কার লেখা হয়েছে যে, হুমায়ুন তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করছেন। মন্ত্রীর সবিস্তার বক্তব্যও প্রকাশিত হয়েছে। বাকিটা তো তদন্তসাপেক্ষ এবং ভবিষ্যতে হয়তো আদালতের বিচারসাপেক্ষ। তরুণী ও মন্ত্রীর সঙ্গে কথোপকথনের রেকর্ডিং-ও আমাদের কাছে রয়েছে।