PM Narendra Modi

সম্পাদক সমীপেষু: কলমের ক্ষমতা

বর্তমান শাসক দলের এটা বোঝা উচিত যে, এ ভাবে স্বাধীন চিন্তা এবং চেতনার অধিকারী নাগরিকদের সম্পূর্ণ ভাবে নিঃশেষ করে দেওয়া অসম্ভব।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২২ ০৬:০৫
Share:

কলমধারী অতি-বাম। প্রতীকী ছবি।

রাষ্ট্রক্ষমতা যখন মানুষের প্রকৃত উন্নয়ন করতে ব্যর্থ হয়, তখন সে বিরোধী এবং বিরোধিতাকে ভয় পায়। বিরোধী কণ্ঠস্বরকে বিভিন্ন নামে নামাঙ্কিত করে স্তব্ধ করে দিতে চায়। তাই ‘আর্বান নকশাল’, ‘টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং’-এর সঙ্গে নব সংযোজন, ‘কলমওয়ালা নকশাল’ (‘কলমওয়ালা’, ১-১১)। হরিয়ানায় রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের ‘চিন্তন শিবির’ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানালেন যে, বন্দুকধারী অতি-বামেদের সঙ্গে কলমধারী অতি-বামেরাও যুবসমাজের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। কলমধারী নকশালদের নির্মূল করার প্রয়াস তো অনেক আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে, এমন কত জন কারাগারে বন্দি হয়ে আছেন, কেউ বা বন্দি অবস্থায় মারা গিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে অশীতিপর কবি ভারাভারা রাও, সমাজকর্মী স্ট্যান স্বামী, আইনজীবী ও সমাজকর্মী তিস্তা শেতলবাড়, সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পান উল্লেখযোগ্য। পরাধীন ভারতে কবি, সাহিত্যিক, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের শেষ করে দিতে চেয়েছিল ব্রিটিশ শাসক। কিন্তু স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের দমন-পীড়ন নীতি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না। বর্তমান শাসক দলের এটা বোঝা উচিত যে, এ ভাবে স্বাধীন চিন্তা এবং চেতনার অধিকারী নাগরিকদের সম্পূর্ণ ভাবে নিঃশেষ করে দেওয়া অসম্ভব। সুস্থ গণতান্ত্রিক পথে ভিন্ন মতের মোকাবিলার সামর্থ্য না থাকলেই শাসক দমন-পীড়নকে বেছে নেয়।

Advertisement

দিলীপ কুমার সেনগুপ্ত, কলকাতা-৫১

বন্দুক ও কলম

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কলমধারীদের ‘মাওবাদী’ উল্লেখ করে তাঁদের ছেঁটে ফেলার কথা বলেছেন (“মোদী-লক্ষ্য ‘কলমধারী মাওবাদী’”, ২৯-১০)। বন্দুকওয়ালা নিয়ে যেমন সমস্যা, তেমন সমস্যা কলমওয়ালাকে নিয়েও হতে পারে শাসকের, তা প্রধানমন্ত্রীর আজব বচনেই উপলব্ধ হল। আদতে কলমধারীরা অন্যায় কাজ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বত্র প্রতিবাদ করে থাকেন। সচেতন ব্যক্তিরা সমাজের নানা সমস্যা ও দুর্নীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করার জন্য কলমকে হাতিয়ার করে থাকেন। যদিও এমন কলমধারীর সংখ্যা ক্রমশ পড়তির দিকেই। অযথা বিড়ম্বনা এড়াতে, শান্তিতে দিনযাপন করার তাগিদে, কোনও কোনও ক্ষেত্রে শাসকের অন্যায় কাজ দেখেও মুখ বুজে সহ্য করে আপন স্বার্থকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন বহু কলমজীবী। কিন্তু সকলে নন। তাই গণতান্ত্রিক দেশেও নাগরিকের কণ্ঠরোধে সচেষ্ট হচ্ছেন দেশের শাসক। শাসকের সকল কাজের সমর্থন করেই যেতে হবে, কিন্তু সমালোচনা নৈব নৈব চ— এমনই আজ প্রত্যাশা।

জনপরিসরকে বিরোধীশূন্য করতে, প্রতিবাদী কণ্ঠ দমিয়ে দিতে শাসকের মরিয়া প্রচেষ্টা চলছে। জনগণের বাক্‌স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে নির্বাচিত শাসক। এক দেশ-এক রেশন কার্ড, এক পুলিশ-এক উর্দি, এক দেশ-এক ভাষা, এমন নানা নিদানের আড়ালে ধীরে ধীরে এর পর হয়তো এই ধর্মনিরপেক্ষ দেশে ‘এক ধর্ম’ চালু করার কথা সুকৌশলে প্রচারিত হবে। প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, এক দেশে এখনও যে অবিরাম কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধিতা চলে আসছে, এক দেশে বিবিধ বেতন বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন দেশের লক্ষ লক্ষ শ্রমজীবী মানুষ, সেই বৈষম্য দূর করতে শাসক কী করছে? জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে জনপ্রতিনিধিরাই যে সর্বাধিক সরকারি সুবিধা ভোগ করেন, তা সবাই জানে। তাঁদের বেতন আর শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনে বিস্তর ফারাক। এ বিষয়ে রাজনীতির কারবারিদের মুখে রা নেই। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিরোধিতা থাকলেও সুবিধার রাজনীতিতে সবাই একই ভূমিকায়, একই পঙ্‌ক্তিতে অবতীর্ণ। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, রাজনীতির কারবারিরা মাত্র পাঁচ বছর জনপ্রতিনিধি থাকার সুবাদে পেনশনের যে সুবিধা লাভ করেন, সেখানে এক জন সরকারি কর্মচারী ২৭ বছরেরও বেশি বছর চাকরি করতে পারলে তবেই পেনশনের পুরো সুবিধা পান। তা-ও তা বন্ধ করতে নব নব পন্থা উদ্ভাবিত হচ্ছে।

মাওবাদী বন্দুকওয়ালারা সরকারকে বার্তা দিতে বিক্ষিপ্ত ভাবে হত্যালীলা সংগঠিত করে চলেছে, মানুষ সে দৃশ্য দেখে শিহরিত। কিন্তু অন্যায় ঘটলে, প্রশাসন উদাসীন হলে, শাসকের দমন-পীড়নে মানুষ জর্জরিত হলে মানুষ প্রতিবাদ করবেনই। বেকারত্ব বাড়লে, শিক্ষা-স্বাস্থ্য, অন্ন-বস্ত্রের ব্যবস্থা বিঘ্নিত হলে অসন্তোষের ঢেউ উঠবেই। প্রতিবাদের অন্যতম উপায় অবশ্যই কলম। যে লেখনীতে লেখা হয় বঞ্চনার ইতিহাস, তা তরোয়ালকেও হার মানিয়ে দেয়। শাসকের ভ্রান্তি ধরিয়ে সংশোধন করার পথ বাতলে দেয়।

ইন্দ্রনীল বড়ুয়া, কলকাতা-১৫

সাম্যের সন্ধান

‘দলের রাশ যাঁদের হাতে’ (২৫-১০) প্রবন্ধটি সময়োপযোগী। আধুনিক ভারতের রাজনৈতিক পার্টিগুলির সর্বোচ্চ নেতারা মুখে দলীয় সংবিধানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা দিলেও, নিজেরা কিন্তু গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন না। ১৯৪৭ সালে ভারতের রাজনৈতিক ক্ষমতা বিদেশি ইংরেজের হাত থেকে আসে উচ্চবর্ণ হিন্দুদের হাতে, অর্থাৎ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্যদের হাতে। গণতন্ত্রের মূল নীতি হল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ দ্বারা পরিচালিত আইনের শাসন। কিন্তু ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ হলেও, প্রকৃত সংখ্যাগরিষ্ঠের অংশগ্রহণ কোথায়? এই অংশগ্রহণ জানা যাবে ১৯৮০ সালের মণ্ডল কমিশন ও ২০০৬ সালের সাচার কমিটির রিপোর্টের পাতায় পাতায়। অধিকাংশ ভারতীয়কে রাখা হয়েছে তফসিলি জাতি, জনজাতি, এবং ওবিসি পঙ্‌ক্তিতে। ভারতের সকল ক্ষমতার মূল ভিত্তি হল রাজনৈতিক ক্ষমতা। আধুনিক ভারতের জনক ও সংবিধানের রূপকার বাবাসাহেব আম্বেডকর ২৫ নভেম্বর, ১৯৪৯ ভারতের গণপরিষদে ভবিষ্যৎ ভারতের গণতন্ত্র রক্ষা করার পরিপ্রেক্ষিতে তিনটি সতর্কতার মধ্যে তৃতীয় যে সর্তকবাণী দিয়েছিলেন, তা হল— ভারতীয় গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে গেলে রাজনৈতিক গণতন্ত্রকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক গণতন্ত্রে পরিণত করতে হবে। বর্ণহিন্দু শাসকগোষ্ঠী অসাম্য দূর করার জন্য কোনও পদক্ষেপই করেনি। ২০১৭ সালের হিসাব অনুযায়ী, ভারতের মোট ৫৮% সম্পদ দখল করেছেন ১%, যাঁদের মধ্যে প্রায় ৯০ জনই বর্ণহিন্দু। সর্বোচ্চ ধনীরা আরও স্ফীত হচ্ছেন। ক্ষুধা সূচকে নামছে ভারত।

ভারতের নির্বাচন ব্যবস্থায় অন্যতম ত্রুটি হল, এখানে নির্বাচনে প্রার্থী কে হবেন তা ঠিক করছেন রাজনৈতিক দলের সর্বোচ্চ নেতা বা নেত্রী। সেই প্রার্থী কোনও ভাবেই জনগণের দ্বারা মনোনীত প্রার্থী নন। পার্টির সর্বোচ্চ নেতৃত্ব যাঁকে ভোটে দাঁড়ানোর টিকিট দিচ্ছেন, তাঁকেই জনগণ নির্বাচন করতে বাধ্য হচ্ছেন। এখন তো ভোটের টিকিট টাকার বিনিময়ে বিক্রি হয়। প্রকৃত প্রতিনিধি নিশ্চিত করতে হলে ভারতে অবশ্যই দ্বৈত নির্বাচন ব্যবস্থার প্রয়োজন আছে। প্রাথমিক নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে ঠিক করতে হবে, কারা প্রার্থী হবেন। প্রাথমিক নির্বাচনের মাধ্যমে জয়ী প্রার্থীদের মধ্যে থেকে চূড়ান্ত নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি বেছে নেওয়া দরকার।

চণ্ডাল বিশ্বাস, নেউলিয়া, নদিয়া

হিন্দুত্বের শরণ

ভারতীয় নোটে লক্ষ্মী ও গণেশের ছবি দিয়ে অর্থনীতি চাঙ্গা করার যে নিদান অরবিন্দ কেজরীওয়াল দিয়েছেন, তা হাস্যকর (‘মহাজনের পথ’, ২-১১)। করোনাকে দৈবিক দুর্যোগ আখ্যা দেওয়ায় তিনিই কিন্তু বিজেপিকে কটাক্ষ করেছিলেন। তা হলে এই লঘু ভাষণের অর্থ কী? কেন বিজেপির পথে হেঁটেই আপ তার মোকাবিলা করতে চাইছে। দিল্লি সরকার রাজধানীতে বাজি কেনাবেচা নিষিদ্ধ করেছিল বলে আপ সরকারকে ‘হিন্দু বিরোধী’ বলে প্রচারে নামে বিজেপি। আসন্ন পুরভোটে যাতে এটা নিয়ে বিজেপি পুরসভার দখল নিতে না পারে, তাই কেজরীওয়ালের পাল্টা হাতিয়ার। কিন্তু এই মন্তব্যে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হল।

অভিজিৎ ঘোষ, কমলপুর, উত্তর ২৪ পরগনা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement