তপন সিংহের ‘সাগিনা মাহাতো’ ছবির ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘গৌর+তপন+ইউসুফ = সাগিনা’ (রবিবাসরীয়, ২৫-৮) প্রবন্ধ পড়ে আরও কিছু তথ্য জানাতে চাই। এই প্রসঙ্গে ‘সাগিনা মাহাতো’ ছবির নায়ক এবং লেখকের সঙ্গে তপন সিংহের কী সম্পর্ক ছিল, তা জানলে খুবই ভাল লাগবে। তপন সিংহ যাঁকে ‘ধূমকেতু’ বলে বর্ণনা করেছিলেন, সেই গৌরকিশোর ঘোষের গল্প অবলম্বনে ‘সাগিনা মাহাতো’ ছবি করতে গিয়েই দিলীপকুমারের সঙ্গে তপন সিংহের গভীর বন্ধুত্ব হয়েছিল। তপন সিংহের কথায় ‘‘দিলীপের অভিনয়ে একটা ব্যাপার লক্ষ করতাম। একটা শট তিন বার নিলে নিজের অজান্তে তিন রকমের রং চড়াতেন। খেয়াল গাইয়ের মতো মাঝখানে অনেক কাজ করে সহ-অভিনেতা বা অভিনেত্রীর যাতে সুবিধা হয় সে জন্য একই জায়গায় এসে ছেড়ে দিতেন।’’ তপন সিংহ দিলীপকুমারকে ‘ভারতবর্ষের তোসিরো মাফুনি’ আখ্যা দিয়েছিলেন। প্রসঙ্গত, কিংবদন্তি জাপানি অভিনেতা তোসিরো মাফুনি ছিলেন আকিরা কুরোসাওয়ার ‘রশোমন’, ‘সেভেন সামুরাই’ ইত্যাদি ছবি ছাড়াও আরও অনেক ছবির অভিনেতা।
ইমার্জেন্সির সময়ে গৌরকিশোর ঘোষকে যে গ্রেফতার করা হয়েছে, সে খবর তপন সিংহকে দিয়েছিলেন সন্তোষকুমার ঘোষ। তিনি তো এ-ও চিন্তা করেছিলেন যে হার্টের রোগী গৌর ‘বাঁচবে না’। যদিও পরে ডাকযোগে গৌরকিশোর তপন সিংহকে জানিয়েছিলেন যে প্রেসিডেন্সি জেলে তিনি ভাল আছেন, তবে রাতে উত্তর দিকের একটি মাত্র জানালা দিয়ে হুহু করে ঠান্ডা আসে। তা শুনেই অরুন্ধতী দেবী তপনবাবুর পুরনো গরম শোয়ার পোশাক প্যাক করে দিতেই তা নিয়ে জেলে হাজির তপন সিংহ। জেলার নিজে হাতে সে প্যাকেট গ্রহণ করেছিলেন এবং জানিয়েছিলেন যে গৌরকিশোর জেলে ‘জমিয়ে আছেন’। আর বাড়ি ফিরে অরুন্ধতীকে তপন বলেছিলেন, ‘‘...ও ছেলে জেলে মরবার নয়। দেখো গিয়ে প্রেসিডেন্সি জেলকে আনন্দবাজার পত্রিকার অফিস করে বসে আছে।’’ ‘সফেদ হাতি’র শুটিংয়ে হাতির আঘাতে গুরুতর জখম তপন সিংহকে নার্সিংহোমে দেখতে এলে তপন জানিয়েছিলেন— ‘‘জানো, প্রথম বুকে মারতেই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে যখন পিঠে মারল, জ্ঞান ফিরে এল।’’ তৎক্ষণাৎ গৌরকিশোর বলেছিলেন, ‘‘আমারও এক বার তাই হয়েছিল। উত্তরবঙ্গে রাজনীতি করতে গেছি— প্রথমে এক ডান্ডা খেয়েই অজ্ঞান। দ্বিতীয় ডান্ডায় জ্ঞান ফিরে এল।’’ গৌরকিশোরকে অরুন্ধতী বলতেন— ‘ও যে কত বড় দুষ্টু, ওর ব্রজবুলি পড়লেই তা বোঝা যায়। আমাকেও ছাড়েনি। ওর ‘ব্রজদা’ নাকি আফ্রিকা থেকে অরুন্ধতী তারার দিকে তাকিয়ে পথ চিনে কলকাতায় এল। রাম পাজি!’’ আর স্বয়ং তপন সিংহ বলতেন ‘গৌরকিশোর সম্বন্ধে লিখতে গেলে মহাভারত হয়ে যাবে।’
সকলের সঙ্গে সকলের এই রকম সুন্দর সম্পর্ক দিয়ে গড়ে উঠেছিল এক অপূর্ব চিত্র আলেখ্য, যার নাম ছিল ‘সাগিনা মাহাতো’।
শঙ্খশুভ্র চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা-৭৮
অগস্ত্য যাত্রা
তারিখটা ছিল ১০ মে ২০১৯। সকাল-সকাল কাঞ্চনজঙ্ঘাতে সপরিবার নামলেন বিনয় কুণ্ডু। সঙ্গে মেয়ে-জামাই। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীর বাসিন্দা। তাঁরা নিউ মাল জংশন থেকে সোজা চলে গেলেন কোলাখাম। বিনয়বাবু বাহাত্তরের শক্ত-সমর্থ পুরুষ। এখনও মেরুদণ্ড ঋজু। খানিক জিরিয়ে মধ্যাহ্নভোজ সারলেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করলেন। কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য তাঁর মনের সমস্ত গ্লানি মুছে দিতে লাগল। চলমান জীবন, সংসার, দায়িত্ব— সব কিছু পেরিয়ে তিনি এসেছেন প্রকৃতির কাছে।
হঠাৎ বুকের বাম পাশে চাপ অনুভব করলেন। শ্বাসের কষ্ট হচ্ছে, চিনচিনে ব্যথাটা বুক থেকে সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছে। সঙ্গে ওষুধপত্র আছে। খেলেনও। কিন্তু ব্যথা কমল না। পারিবারিক ডাক্তারকে ফোন। তিনি জানালেন— এখনই হাসপাতালে ভর্তি করাতে। কিন্তু কোলাখামে হাসপাতাল কোথায়? হোটেলের কর্মীরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন। নিয়ে আসা হল দূরের মালবাজার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। তখন রাত্রি ৯ টা। পৌঁছতে দেরিই হয়েছিল। চেষ্টা চলল। কিন্তু সব চেষ্টাকে ব্যর্থতার আঁধারে ডুবিয়ে চির ছুটির দেশে পাড়ি দিলেন বিনয়বাবু। প্রকৃতির সৌন্দর্যের মাঝে তাঁর আত্মা চির ছুটির শাশ্বত বলয়ে ফিরে গেল।
প্রশ্ন হল: পর্যটন বেড়ে উঠছে। আমরা পর্যটনকে শিল্পের তকমা দিচ্ছি। সরকার তাতে উৎসাহ দিচ্ছে। বেড়াতে এসে যে কেউ অসুস্থ হতেই পারেন। তার জন্যে ন্যূনতম চিকিৎসার সুযোগ থাকবে না কেন? পর্যটনক্ষেত্রে পর্যটকের জন্য ন্যূনতম চিকিৎসা পরিষেবাসম্পন্ন গ্রামীণ হাসপাতাল থাকা অত্যন্ত জরুরি; বিশেষত পাহাড়ে। সরকার একটু ভাবুক, তা হলে কারও বেড়াবার জন্য বাড়ি থেকে যাত্রা হয়তো অগস্ত্য যাত্রা হবে না।
প্রভুদান হালদার
বাসন্তী, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
অব্যবস্থা
আপার প্রাইমারি কোর্ট কেসের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত অব্যবস্থা চলছে। আদালতে আট মাস ধরে শুনানির পরে শুনানি হয়ে যাচ্ছে অথচ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। এই রকম দীর্ঘসূত্রতার জন্যেই আদালত আর বিচার ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের বিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। আর কিছু অসাধু মানুষ এর সুযোগ নিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে যে কিছু মানুষ যাদের চাকরি পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই, তারা এই কারণেই কেস করছে, যাতে অন্যদের চাকরি আটকে যায়। কারণ সকলের মতো তারাও জেনে গিয়েছে যে এক বার কেস করে দেওয়া মানেই কয়েক বছরের ধাক্কা। আদালতে শুনানির পরে শুনানি হবে। বিচার মিলবে না।
দেবরাজ দত্ত
বল্লভপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
ভেজাল চা
চা একটি অপরিহার্য পানীয়। ধনী-গরিব স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রায় সকলেই চা পান করেন। অথচ বাজারে লভ্য ও বিক্রিত চা-পাতা ৬০/৭০ শতাংশ ভেজাল মিশ্রিত। চা ও অন্যান্য ছোট গাছের ডাল সরু, ছোট করে এবং অন্যান্য গাছের পাতা শুকনো করে ভেঙে চা-পাতার সঙ্গে মিশিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। এটা করা হচ্ছে দাম নিরপেক্ষ ভাবে। ফলে আমরা যে চায়ের আসল স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি শুধু তা-ই নয়, শরীরেরও ক্ষতি হচ্ছে। এ ব্যাপারে গুণমান যাচাইকারী সংস্থাগুলির ঔদাসীন্য ও নীরবতা বিস্ময়ের উদ্রেক করে। চা-পাতায় ভেজাল রোধের জন্য রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলি উপযুক্ত পদক্ষেপ করুক।
মলয় রঞ্জন বিশ্বাস
কলকাতা-৫৬
কাটমানির রেশ
সম্প্রতি নানান কাজে কলকাতার কয়েকটি জায়গায় যেতে হয়েছিল। বয়সজনিত কারণে ট্যাক্সি করেই যাতায়াত করতে গিয়ে এক অভিজ্ঞতা হল। প্রথমে উত্তরপাড়া থেকে এন্টালি, গাড়িতে উঠতেই ড্রাইভার বলল দশ-বিশ টাকা বেশি দেবেন। আবার এন্টালি থেকে ট্যাক্সি ধরে শরৎ বসু রোড— ড্রাইভারের এক কথা, কাজ শেষে শরৎ বসু রোড থেকে বেকবাগান যাওয়ার সময় ড্রাইভার প্রথমে কিছু না বললেও নামার পরেই এক কথা, দশ টাকা বকশিশ। মনে হচ্ছে কাটমানির রেশ এদের মধ্যে সঞ্চালিত হয়েছে।
প্রণব সেনগুপ্ত
খড়গপুর
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
ভ্রম সংশোধন
অমর্ত্য সেনের ‘বাঙালির স্বরূপ’ নিবন্ধের (৬-৯, পৃ ৪) সঙ্গের ছবিটি জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ির জল্পেশ শিবমন্দিরের (বাঁ দিকে) নয়, কোচবিহারের বাণেশ্বর শিবমন্দিরের। লক্ষণীয়, বাণেশ্বর-সহ কোচবিহারের আরও অনেক মন্দিরের মতোই জল্পেশ মন্দিরের চূড়াতেও ইসলামি-শৈলীর গম্বুজ নির্মিত হয়েছিল। ছবির পরিচিতিতে অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।