Society

সম্পাদক সমীপেষু: গোপনে সুপারিশ

রাজনৈতিক প্রভাব ছাড়াও এই ধরনের সুপারিশ হতে পারে ব্যক্তিগত পরিচয়, হাসপাতালে কর্মরত বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজন, অথবা হাসপাতালের কোনও পরিচিত উচ্চপদাধিকারীর মাধ্যমে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২২ ০৬:২৭
Share:

সুপারিশ।

Advertisement

গত ৮ সেপ্টেম্বর নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত তৃণমূল কংগ্রেসের এক বিশেষ সাংগঠনিক অধিবেশনে দলের শীর্ষনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধায়ক ও মন্ত্রীদের বলেছেন, তাঁরা যেন নিজেদের লেটারহেডে কারও চাকরির সুপারিশ না করেন (‘লেটারহেডে সুপারিশ নয়, সতর্ক করলেন নেতা-মন্ত্রীদের’, ৯-৯)। এই সাবধানবাণীটি যথার্থ, কারণ কোনও গণতান্ত্রিক দেশের নির্বাচিত সরকার কোনও ব্যক্তিবিশেষের জন্য আইনত কোনও সুপারিশ করতে পারে না। তা অশোভনও বটে।

তবে ‘সুপারিশ’ কথাটির দু’টি ভিন্ন দিক আছে— ১) অর্থের বিনিময়ভিত্তিক, এবং ২) পরিচিতি বা ব্যক্তিগত সংযোগভিত্তিক। প্রথমটিকে খুব সহজেই আমরা অপরাধের তালিকাভুক্ত করতে পারি, কিন্তু দ্বিতীয়টিকে কোন তালিকায় ফেলা উচিত, তা নিয়ে বিভ্রান্তি থাকে। যেমন, আমরা কখনও কখনও নিজ নিজ অঞ্চলের বিধায়ক বা কাউন্সিলরের কাছে বিভিন্ন রকম অগ্রাধিকারের অনুরোধ নিয়ে যাই শুধুমাত্র পরিচিতি বা সংযোগের ভিত্তিতে (রাজনৈতিক দল বা মত নির্বিশেষে), কোনও অর্থনৈতিক লেনদেন ছাড়াই। এমন অগ্রাধিকার নেওয়াটা খুব অপরাধ বলে মনে না হলেও, অন্যকে বঞ্চনার কিছু ছাপ রেখে যায় নিশ্চয়ই। সরকারি হাসপাতালে বেড পাওয়ার চেষ্টা এর একটা প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

Advertisement

রাজনৈতিক প্রভাব ছাড়াও এই ধরনের সুপারিশ হতে পারে ব্যক্তিগত পরিচয়, হাসপাতালে কর্মরত বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজন, অথবা হাসপাতালের কোনও পরিচিত উচ্চপদাধিকারীর মাধ্যমে। আর বেসরকারি ক্ষেত্রে এই ধরনের সুপারিশ প্রায়ই চলতে থাকে। কিন্তু মানুষের বিবেকের তো কোনও সরকারি-বেসরকারি নেই। এ ক্ষেত্রে আমাদের শুধু বিবেকের কাছে মাথা নত করা ছাড়া আর কোনও শাস্তিই প্রযোজ্য নয়।

অমিত কুমার চৌধুরী, কলকাতা-৭৫

শিক্ষকশূন্য স্কুল

‘পড়ুয়ার অধিকার’ (১৭-৯) সম্পাদকীয়তে রাজ্যের সরকারি ও সরকার পোষিত স্কুলগুলিতে যথেষ্ট শিক্ষক না থাকার বিষয়ে যথার্থ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। আড়াই দশক রাজ্যের একটি সরকার পোষিত উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এমন সঙ্কট অভূতপূর্ব। ২০১১-তে বর্তমান রাজ্য সরকার ক্ষমতায় এসে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের মাসপয়লা বেতনের ঘোষণা করেছিল। সেই প্রতিশ্রুতি বিগত ১২ বছর ধরে রক্ষিতও। বামফ্রন্ট আমলে শিক্ষকদের বেতনের নির্দিষ্ট দিন ছিল না। তাই আশা জেগেছিল, এই সরকার শিক্ষা ও শিক্ষকদের সমস্যা বিষয়ে আন্তরিক। খুশি হয়েছিলাম যখন বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ও স্কুলছুট আটকাতে সরকার ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্প চালু করে। তখনও মনে হয়েছিল, শিক্ষার প্রসারে ও শিক্ষার্থীদের কল্যাণে সরকার আক্ষরিক অর্থেই দায়বদ্ধ।

কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে যে ডামাডোল চলছে, তা রাজ্যের স্কুলশিক্ষা ব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। শিক্ষক নিয়োগের মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রে ভুল থাকা অমার্জনীয়। এই ভুলের দায় পর্ষদ অস্বীকার করতে পারে না। এখন প্রায় দিনই আদালতে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির যে সব তথ্য উদ্‌ঘাটন হচ্ছে, তা সমগ্র শিক্ষকসমাজেরই ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করছে। শিক্ষকের সম্মান চলে গেলে সমগ্র জাতিরই ক্ষতি।

এখন নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর ঘোষণা হয়েছে। নবনিযুক্ত পর্ষদ সভাপতি বলেছেন, ভবিষ্যতে পর্ষদের কাজে স্বচ্ছতা থাকবে। কিন্তু বর্তমানে প্রায় শিক্ষকশূন্য বিদ্যালয়গুলির পড়ুয়াদের কী হবে? এ বিষয়ে সরকারের উদাসীনতা আশঙ্কাজনক।

কৌশিক চিনা, মুন্সিরহাট, হাওড়া

ভুয়ো নিয়োগপত্র

গত ১২ সেপ্টেম্বর নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে সরকারি উদ্যোগে কারিগরি শিক্ষাপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীদের বেসরকারি চাকরি প্রদানের নামে যে প্রহসন অনুষ্ঠিত হল, তার তীব্র প্রতিবাদে এই চিঠি। দশ হাজার ছাত্রছাত্রীকে বেসরকারি চাকরি দেওয়ার নামে যে নিয়োগপত্র বিলি করা হয়েছে, তাতে তাঁদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে। অনুষ্ঠানে জিজ্ঞাসা করা হল, কিছু দিন পূর্বে অনুষ্ঠিত ‘জব ফেয়ার’-এ বাছাই করা পদপ্রার্থীরা ইতিমধ্যেই ইমেল-এ নিয়োগপত্র পেয়েছেন কি না। নেতিবাচক উত্তর পেয়ে বিব্রত মুখ্যমন্ত্রীকে দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা করতে দেখা গেল। এর পর মঞ্চে হাজির করা হল বেশ কয়েকটি ফাইল, এবং প্রদর্শন করা হল বেশ কয়েকটি নিয়োগপত্র। উপস্থিত ছাত্রছাত্রীদের বলা হল, তাঁরা বাসে টিফিনের সঙ্গেই পেয়ে যাবেন তাঁদের কাঙ্ক্ষিত নিয়োগপত্র। আর যাঁদের দেওয়া সম্ভব হবে না, তাঁরা তিন দিনের মধ্যেই তা পাবেন ইমেল-এর মাধ্যমে।

তিন দিন পর নিয়োগপত্রের পরিবর্তে কিছু প্রার্থী পেলেন শিক্ষানবিশি চুক্তিপত্র, বাকিরা পেলেন নিয়োগপত্র: কর্মস্থল বেশির ভাগই গুজরাত, হরিয়ানা ইত্যাদি রাজ্যে। আরও লজ্জার ব্যাপার, বিভ্রান্ত প্রার্থীরা সংশ্লিষ্ট সংস্থায় ফোন করে জানলেন, রাজ্য সরকারের সঙ্গে তাঁদের চাকরি দেওয়ার ব্যাপারে কোনও চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়নি, তাদের তরফ থেকে এমন কোনও ‘অফার লেটার’ পাঠানোই হয়নি। তা হলে কোম্পানির লেটারহেড-এ এমন ভুয়ো নিয়োগপত্র এল কোথা থেকে?

আমার মতে, এই কেলেঙ্কারি স্কুল সার্ভিসে নিয়োগের দুর্নীতির চেয়ে কোনও অংশে কম নয়, এবং সমস্ত মহল থেকে এর তীব্র প্রতিবাদ হওয়া বাঞ্ছনীয়। যাদের অপদার্থতায় বা দুর্বুদ্ধিতে কারিগরি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীদের চাকরির আশা জাগিয়ে এই ভাবে প্রতারণা করা হল, আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে তাদের কঠিন সাজা হওয়া উচিত।

অনুভা ঘোষ, শিবপুর, হাওড়া

আশার আলো

দুর্নীতিই যেন পশ্চিমবঙ্গে নীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে (‘মুড়ি-মুড়কির মতো দুর্নীতি হয়েছে: বিচারপতি’, ২০-৯)। কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এর আগেও অনেকগুলো ক্ষেত্রে নির্ভয়ে রায় দিয়েছেন। তাঁর মতো কর্তব্যপরায়ণ এবং দৃঢ়চেতা বিচারপতি থাকলে তবেই দুর্নীতিকে সম্পূর্ণ নির্মূল করা যাবে। নিজের প্রাণের ভয়ে যে তিনি বিচার বিভাগের অবমাননা সহ্য করবেন না, তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের নিয়োগ ব্যবস্থাকে স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এই সংগ্রাম চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

দিগন্ত চক্রবর্তী, জাঙ্গিপাড়া, হুগলি

দেশের সম্পদ

গত ১৯ সেপ্টেম্বর এক নজিরবিহীন ঘটনা ঘটল। এই প্রথম টেলিভিশন চ্যানেলে কোনও কর্মরত বিচারপতিকে সাক্ষাৎকার দিতে দেখা গেল। কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বিচারাধীন মামলার বিষয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা করতে করলেন। অনেকে এ নিয়ে অনেক প্রশ্ন তুলবেন, সেটা আইনের বিষয়। তবে এক জন সৎ,আপসহীন, নির্ভীক, বিচারপতি এই ঘুণ ধরা সমাজের অসৎ, দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের কাছে আইনের কড়া অনুশাসনের চরম এক বার্তা দিলেন, এটা নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়। এই সাক্ষাৎকার সাধারণ মানুষের মনে বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনবে।

অসীম কুমার মিত্র, আমতা, হাওড়া

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement