Mahatma Gandhi

সম্পাদক সমীপেষু: ভালবাসার শক্তি

গাঁধীর উদ্দেশ্য ছিল বিপক্ষকে ধ্বংস করা নয়, তাঁদের বিবেকের পরিবর্তন ঘটানো। শত্রুর ধ্বংস নয়, মনের পরিবর্তনই লক্ষ্য।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২০ ০৩:২৮
Share:

—ফাইল চিত্র।

‘অহিংস প্রতিবাদই পথ’ (৩-১১) নিবন্ধটির প্রেক্ষিতে এই পত্র। হিন্দু-মুসলিম মৈত্রীর এক সুন্দর বাতাবরণের মধ্য দিয়ে মহাত্মা গাঁধী অহিংস অসহযোগ-খিলাফত আন্দোলন শুরু করেছিলেন। কিন্তু ১৯২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কিছু মানুষ হিংসার আশ্রয় নেন চৌরিচৌরা গ্রামে। মহাত্মা আন্দোলন বন্ধের ডাক দিলেন। প্রায় সব বিশিষ্ট নেতাই আন্দোলন বন্ধ করে দেওয়ার কারণে গাঁধীজির সমালোচনা করেছিলেন। কিন্তু দূরদর্শী রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি বুঝেছিলেন যে, একমাত্র অহিংস নীতির মাধ্যমেই মানুষের আদর্শের পরিবর্তন পাকাপাকি ভাবে সম্ভব। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে গাঁধীজি যে ধর্মীয়-রাজনৈতিক দর্শন ব্যবহার করেছিলেন, তা হল অহিংস-সত্যাগ্রহ। অহিংসা ভালবাসার শক্তি, যে ভালবাসা দুষ্কৃতীরও মঙ্গল চায়। গাঁধীর উদ্দেশ্য ছিল বিপক্ষকে ধ্বংস করা নয়, তাঁদের বিবেকের পরিবর্তন ঘটানো। শত্রুর ধ্বংস নয়, মনের পরিবর্তনই লক্ষ্য।

Advertisement

হরিজন পত্রিকায় গাঁধী লিখেছিলেন, ‘‘আমার জীবন যদি শেষ পর্যন্ত হিংসার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তবে আমার বিপক্ষ যদি আমার কাছে এক ইঞ্চি পরিমাণ কিছুও চায়, আমি তা-ও দিতে রাজি হব না, পাছে সে শেষ পর্যন্ত পুরো গজ পরিমাণটাই চেয়ে বসে। আবার যদি আমার জীবন অহিংসা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তবে বিপক্ষ যদি এক ইঞ্চি চায়; আমি তাকে নির্বিকারে এক গজ দিয়ে দেব। কেন না এক ইঞ্চির বদলে পুরো গজ পেয়ে দখলদারের মনে এক অদ্ভুত ও সুখকর অনুভূতি আসতে বাধ্য। সে তখন বিমূঢ় হয়ে পড়তে পারে এবং আমাকে নিয়ে কী করা যায়, সেই ভাবনায় পড়ে যাবে।’’

সৌপ্তিক অধিকারী

Advertisement

সোনারপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

ক্ষমতার মোহ

অমর্ত্য সেনের জার্মান বুক ট্রেড-এর দেওয়া শান্তি পুরস্কার (২০২০) উপলক্ষে প্রদত্ত বক্তৃতার নির্বাচিত অংশ ‘অহিংস প্রতিবাদই পথ’ শীর্ষক নিবন্ধের প্রেক্ষিতে এই পত্র। নিবন্ধের শুরুতে তিনি বলেছেন, আজকের পৃথিবীতে এশিয়া, ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ এবং খাস আমেরিকাতে স্বৈরতান্ত্রিক শাসন বলীয়ান হয়ে উঠছে, যা দুশ্চিন্তার কারণ। এর পর বর্তমান ভারতের শাসক দল বিজেপির স্বৈরতান্ত্রিক শাসন পদ্ধতি সম্পর্কে অনুপুঙ্খ বক্তব্য রেখেছেন। স্বৈরতন্ত্র হল শাসনযন্ত্র কুক্ষিগত রাখার একটি পদ্ধতি, এবং বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের ইতিহাসে এর প্রচুর দৃষ্টান্ত মিলবে। আজকের বিশ্বেও বিভিন্ন দেশে স্বৈরাচার ভিন্ন ভিন্ন মোড়কে ক্ষমতাসীন। কখনও তা গণতন্ত্র, তো কখনও কমিউনিজ়মের মোড়ক। এমনটাই আবহমান কাল ধরে চলে আসছে, যার ব্যতিক্রম আশা করা বাতুলতা মাত্র। যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, স্বেচ্ছায় তার কার্যকাল শেষ হওয়ার পর বিরোধী দলকে সে ক্ষমতা অর্পণ করবে এবং নিজের সব ভুল শুধরে নেবে— এই রকম ভাবা ‘কাঁঠালের আমসত্ত্ব’ ছাড়া কিছু নয়। গণতন্ত্র কিংবা সমাজতন্ত্র— সবেরই মূল কথা, এক বার নিজ পক্ষে জনসমর্থন আদায় করতে পারলে তা ধরে রাখার জন্য সমস্ত রকম প্রয়াস করবে ক্ষমতাসীনেরা। বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রের প্রধানেরা এই কাজটিই করে থাকেন, বর্তমান ভারতও এর ব্যতিক্রম নয়!

রাজা বাগচি

গুপ্তিপাড়া, হুগলি

মানুষের জয়গান

অমর্ত্য সেনের লেখাটির সঙ্গে সবিনয়ে একটু সংযোজন করতে চাই। তিনি বলেছেন, ভারতের বাইরের লোকেরা যাতে পড়তে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে উপনিষদের মতো হিন্দু শাস্ত্রগুলোর তর্জমার কাজটি শুরু করেন দারা শুকো। কোরানের বাংলা অনুবাদ করেন সাহিত্যিক তথা গবেষক দীনেশচন্দ্র সেন। বাংলা সাহিত্যে মানবিকতার জয়গান গাওয়া হয়েছে। ধর্মপ্রাণ ইচু ফকিরের গল্প লিখেছেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘মহেশ’ গল্পে গফুর ও আমিনার চরিত্রটি এঁকেছেন কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। প্রতিভা বসু তাঁর ‘সমুদ্র হৃদয়’ গল্পে ঢাকার নবাবের চরিত্র এঁকেছেন, যা মনকে মুগ্ধ করে। বাংলার সমাজ এবং সাহিত্য সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী।

সঞ্জয় চৌধুরী

খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

স্বৈরতন্ত্র

‘‘ওরা আমাদের লাঠি পেটা করলে আমরা তেরঙা ওড়াব। ওদের বুলেটের জবাবে আমরা হাতে ধরে-রাখা সংবিধানকে উপরে তুলে ধরব’’ — এমন স্লোগান দেয় যে অহিংস ছাত্র আন্দোলন, তার গায়েও যখন ‘সন্ত্রাসবাদী’ ছাপ দেওয়া হয়, এবং গণতান্ত্রিক অহিংস আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছাত্রছাত্রীদের নির্বিচারে জেলে পোরা হয়, তখন বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, দেশে স্বৈরতন্ত্র কতটা মাথাচাড়া দিয়েছে। বর্তমানে এ দেশে সরকার তথা শাসক দল-বিরোধী যে কোনও প্রতিবাদকে ‘দেশদ্রোহী’ আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। শাসক দলের অপছন্দের প্রসঙ্গ তুললে, তা রাষ্ট্রকে উৎখাত করার চক্রান্ত বা বিপথে চালিত করার অপচেষ্টা হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এই কাজ আমাদের বহু কষ্টে ও রক্তক্ষয়ে অর্জিত বাক্স্বাধীনতাকে যেমন খর্ব করছে, তেমনই আমাদের গর্বের গণতন্ত্রকে বিপন্ন করে তুলছে!

জনকল্যাণে সঠিক ভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে শাসক দলের পাশাপাশি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। কিন্তু এটা দুঃখের বিষয়, বর্তমানে এ দেশে বিরোধী দলগুলিকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বেকারত্ব, খাদ্যাভাব, অপুষ্টি, চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নতি সাধন, নতুন কর্মসংস্থান, স্বৈরতান্ত্রিক পরিবেশ ইত্যাদি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কোনও বৃহত্তর আন্দোলন করতে দেখা যাচ্ছে না। নামমাত্র কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদেরই কেবল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হতে দেখছি, যা এত বড় দেশে বৃহত্তর আন্দোলনের চেহারা নিচ্ছে না। দেশের সার্বিক উন্নতি সাধনে বিরোধী দলগুলি যদি নিজেদের প্রয়োজনীয় ভূমিকা যথাযথ ভাবে পালন না করে, তবে তা দেশের পক্ষে বিরাট দুর্ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

এ সমস্যা শুধু ভারতের নয়, নানা দেশে নানা অজুহাতে স্বৈরাচারী শাসন ক্রিয়াশীল। যেমন হাঙ্গেরিতে অভিবাসীদের আটকানো, পোল্যান্ডে সমকামী জীবনযাত্রা দমন, ব্রাজিলে দুর্নীতি দমনে সেনাবাহিনীকে নামানো ইত্যাদি। এর সঙ্গে আমেরিকা ও চিন তো আছেই। পরিশেষে, স্বৈরতন্ত্রের বাড়বাড়ন্ত প্রসঙ্গে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের একটি অত্যন্ত মূল্যবান মন্তব্য মনে করাতে চাই, ‘‘অন্যায় যেখানেই ঘটুক না কেন, তা সর্বত্র ন্যায্যতাকে বিপন্ন করে।’’

কুমার শেখর সেনগুপ্ত

কোন্নগর, হুগলি

সহানুভূতি

রত্নাবলী রায় তাঁর নিবন্ধে (‘ছোট ছোট কাজ একজোট হলে’, ৩১-১০) নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন। আমাদের সমাজ অসুস্থ মানুষগুলির পাশে দাঁড়ানোর পরিবর্তে তাঁদের পাগল বলে দেগে দিয়েছে। জ্বর, সর্দি, ডায়াবিটিস, হাই প্রেশার-এর মতো এটাও যে একটা রোগ বা অসুস্থতা, তা কেউ মানতে চান না। চিকিৎসা করলে এটাও আর পাঁচটা রোগের মতোই নিয়ন্ত্রণে থাকে।

রাস্তায় কোনও মানসিক ভারসাম্যহীনকে দেখলে, শুধু শিশুরা নয়, বড়রাও মশকরা করেন। এই মানসিকতা পাল্টাতে হবে। কোনও মানসিক রোগী সুস্থ হয়ে গেলেও পরিবারের লোক তাঁকে নিয়ে আসতে চান না। ভাবেন, সমাজে তাঁদের পরিবারটি চিহ্নিত হয়ে যাবে।

তবে আশার কথা, অনেকেই আজকাল এই ভাবনায় বিশ্বাসী নন। মানসিক রোগীদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে দরকার, পুনর্বাসন। এঁদের যেন কারও উপর বোঝা হয়ে না থাকতে হয়। লেখিকার কথারই পুনরাবৃত্তি করে বলি, একটু সহানুভূতি পেলে এঁরা অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠবেন।

সর্বাণী গুপ্ত

বড়জোড়া, বাঁকুড়া

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,

কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement