Madrasa

সম্পাদক সমীপেষু: শিক্ষায় রেডিয়ো

১৯৪৭ সালে ভারত যখন স্বাধীনতা লাভ করল, তখন অল ইন্ডিয়া রেডিয়োর ১৮টি ট্রান্সমিটার-সহ ৬টি সম্প্রচার কেন্দ্র ছিল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২০ ০০:৩৬
Share:

‘শীঘ্রই রেডিয়োয় পাঠ দেবে মাদ্রাসা’ (৫-১০) পড়ে ভাল লাগল। অনলাইন শিক্ষায় লাগে কম্পিউটার বা স্মার্টফোন, নেট সংযোগ। গরিব পরিবারের পক্ষে এ সব জোগাড় করা, এবং ধারাবাহিক ভাবে তার ব্যবহার করা মোটেই সহজ নয়। রেডিয়োয় সে সব সমস্যা নেই। আমপানের পরে যখন প্রায় সারা বাংলায় বিদ্যুৎ চলে গিয়েছিল, তখন মোবাইল, টিভি, ইন্টারনেট বন্ধ থাকলেও রেডিয়ো পরিষেবা দিতে পেরেছিল। আসলে আমরা রেডিয়োর শক্তি ও সম্ভাবনাকে এখনও পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারিনি। নামমাত্র খরচে এই মাধ্যম জনগণের কত কাজে লাগতে পারে, আজও তা জানি না। ১৯৩০ সালে আকাশবাণী সরকারি ভাবে শুরু হয়েছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত যখন স্বাধীনতা লাভ করল, তখন অল ইন্ডিয়া রেডিয়োর ১৮টি ট্রান্সমিটার-সহ ৬টি সম্প্রচার কেন্দ্র ছিল। বর্তমানে অল ইন্ডিয়া রেডিয়োর ১৪৪টি মিডিয়াম ট্রান্সমিশন (মিডিয়াম ওয়েভ), ৫৪টি হাই ফ্রিকোয়েন্সি (শর্ট ওয়েভ) এবং ১৩৯টি এফএম ট্রান্সমিশন-সহ ২১৫টি সম্প্রচার কেন্দ্র সমন্বয়ে সম্প্রচার নেটওয়ার্ক চালু আছে, জনসংখ্যার ৯৯.১৩% এই সম্প্রচারের ব্যাপ্তির মধ্যে আসে।

Advertisement

লকডাউনের সময় রেডিয়োর ব্যবহার বেড়ে জনসংখ্যার প্রায় ৮২%-এ পৌঁছে গিয়েছিল। বেতারমাধ্যমকে আরও ব্যাপক ভাবে শিক্ষায় ব্যবহার করা চাই। অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও ভাবা উচিত।

অশোক বসু

Advertisement

বারুইপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

সাঁওতালি বই

মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষার গুরুত্ব বিষয়ে কম-বেশি সকলেই জানি। এ দেশে আদিবাসীদের ক্ষেত্রে কথাটা কি প্রযোজ্য নয়? ২০০৩ সালে সংবিধানে সাঁওতালি ভাষা অষ্টম তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তার পর এতগুলো বছর কেটে গিয়েছে, এই বছর প্রথম উচ্চমাধ্যমিকে সাঁওতালি মাধ্যমে ছেলেমেয়েরা পরীক্ষা দিয়েছে। তাও আবার বই ছাড়াই। একেবারে ছোট থেকে যারা সাঁওতালি মাধ্যমে পড়ে অভ্যস্ত হয়েছিল এবং সাঁওতালি মাধ্যমেই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল, তাদেরকে বাধ্য করা হল ইংরেজি অথবা বাংলা মাধ্যমের বই পড়ে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে।

শিশু শ্রেণি থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত সাঁওতালি মাধ্যমের অলচিকি লিপিতে যত বই, সবই অজস্র ভুলে ভরা, অসম্পূর্ণ, অপ্রাসঙ্গিক শব্দ বা বাক্যে ভর্তি। অনেক সমীকরণ দেওয়া নেই, অথচ বলা আছে ‘এত নং সমীকরণ থেকে পাই।’ আছে অজস্র ছাপার ভুল। গত তিন বছর ধরে সাঁওতালি মাধ্যমের ছাত্রছাত্রীরা এই ভুলে-ভরা বই নিয়েই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। বইগুলোর পরিমার্জনার কথা ভাবা হচ্ছে না। পরিকাঠামোর অভাব, শিক্ষক অপ্রতুলতাকে নিয়ে এগিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার এ বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি দেবে এবং যথাযথ পদক্ষেপ করবে, এই আশা রাখি।

পার্শাল কিস্কু

সহকারী অধ্যাপক, ত্রিবেণী দেবী ভালোটিয়া কলেজ, রানিগঞ্জ

তুলনা কেন?

‘ভয়ের নাম মাদক আইন’ (৬-১০) নিবন্ধটিতে বলা হয়েছে, ইউএপিএ, রাষ্ট্রদ্রোহিতার মতো আইনগুলোর তুলনায় মাদকবিরোধী আইন ভয়ঙ্কর। কারণ আইনটির কাঠামোগত কঠোরতা। তা হলে, আইনটা ভাল, অপপ্রয়োগ খারাপ— এই অবস্থান (যা সরকারেরও বাঁধা বুলি) ঠিক নয়? আইনের চরিত্রের মধ্যেই এমন কিছু উপাদান আছে, যার অতি স্বাভাবিক পরিণতি হচ্ছে চূড়ান্ত অপপ্রয়োগ? আর, গ্রেফতার নিয়ন্ত্রণ করলে, জামিনের শর্ত শিথিল করলে বা চার্জশিটের সময়সীমা কমিয়ে দিলেই অপপ্রয়োগ উবে যাবে? অভিজ্ঞতা কি তাই বলে? সাধারণ ফৌজদারি কার্যবিধিতেই ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেফতার, বাড়িতে রাতে হানা দেওয়া, তল্লাশি চালানোর ক্ষমতা রয়েছে পুলিশের। সে ক্ষেত্রেও অপপ্রয়োগ একই ধরনের। তা ঠেকানোর জন্য ১৯৭৭-৮০ সালে জাতীয় পুলিশ কমিশনের সুপারিশ থেকে শুরু করে সুপ্রিম কোর্টের একাধিক নির্দেশ, মেমো অব অ্যারেস্ট, পুলিশি সংস্কার ইত্যাদি প্রস্তাব বাজে কাগজের ঝুলিতে ঠাঁই পেয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার রোখা যাচ্ছে না। সাধারণ আইনের মাধ্যমেই পুলিশ বল্গাহীন সন্ত্রাস চালায়। মাদক আইনটি শোষণ ও অত্যাচারের একটি অতিরিক্ত হাতিয়ার।

ইউএপিএ আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র সচিবের অনুমোদন নেওয়ার বিধান আছে, তাই পুলিশ যথেচ্ছাচার করতে পারে না— এই পর্যবেক্ষণ হতবাক করে দেয়। রাওলাট আইনের উত্তরসূরি ‘টাডা’ বা ‘পোটা’ আইনের চূড়ান্ত অপপ্রয়োগের ইতিহাস সংসদে (যথাক্রমে ১৯৯৫ এবং ২০০৪ সালে) স্বীকার করেছে সরকার। আইন দুটো সরকার নিজেই প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। এই দুই লুপ্ত আইনের সব ধারা-উপধারা নিয়েই তৈরি ইউএপিএ। তার অপপ্রয়োগ আমরা চাক্ষুষ করছি নিত্য দিন— বামফ্রন্টের আমলে, তৃণমূলের আমলে, ভীমা-কোরেগাঁও মামলাতে, দিল্লির সিএএ-বিরোধী আন্দোলনে। রাষ্ট্রদ্রোহিতার আইনকে মুড়ি-মুড়কির মতো ব্যবহার করতে দেখছি হাথরসে, কাফিল খানকে বন্দি করা থেকে গোহত্যা-সংক্রান্ত মামলায় বিনা বিচারে অভিযুক্তদের আটক করার মধ্যে। দেখছি জাতীয় নিরাপত্তা আইনের (এনএসএ) ‘প্রয়োগ’ কাশ্মীরে, ২০১৯ সালে এক রাতের মধ্যে পাঁচ হাজার মানুষকে গ্রেফতারে। ফলে, আমলাদের অনুমোদনের শর্ত থাকলে বাড়তি সুরক্ষা মিলবে— তথ্যের বিপরীতে দাঁড়িয়ে এ কথা বলা চূড়ান্ত বিভ্রান্তিমূলক।

অন্য ভয়ঙ্কর আইনগুলোর সঙ্গে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনের তুলনা করা কি আদৌ সম্ভব? প্রত্যেকটা আইনই বিষাক্ত সাপের মতো। কোনও একটা আইনের কয়েকটি ধারার সঙ্গে অন্য এক, বা একাধিক ধারার মিল থাকতে পারে, অমিল থাকতে পারে, কিন্তু প্রত্যেকটি দমনমূলক। তাই তুলনা ঠিক নয়। ইউএপিএ-র সহযোগী আইন হিসেবে অস্ত্র আইন, বিস্ফোরক আইন যেমন ব্যবহৃত হয়, তেমন ব্যবহৃত হয় মাদক আইন। কারণ, স্বদেশ-বিদেশের ‘জঙ্গি’-দের আয়ের অন্যতম উৎস মাদক ব্যবসা। সুতরাং তুলনাতেও গৌণ।

দু’টি আইনের ধারা-উপধারা যদি তুলনা নেহাতই করতে হয়, তা হলেও ধারা ধরে ধরে দেখিয়ে দেওয়া সম্ভব, কেন ইউএপিএ আইনকে (অন্যান্য আইন-সহ) বাতিলের দাবি তোলে সব মানবাধিকার সংগঠন, রাষ্ট্রপুঞ্জও। কারণ, গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে ওই আইনগুলি সঙ্গতিপূর্ণ নয়। বরং মাদক আইনে মাদকাসক্ত অভিযুক্তদের নানা ছাড়ের বিধান আছে, ধৃত ব্যক্তির সার্চ সংক্রান্ত বিশেষ পদ্ধতি আছে। সাজার প্রশ্নে ইউএপিএ-তে মৃত্যুদণ্ড সর্বোচ্চ সাজা। মাদক আইনে কুড়ি বছর।

সর্বোপরি, রিয়া বা দীপিকাকে ঘিরে আমরা কি শুধু কিছু ‘উত্তেজনা’ প্রত্যক্ষ করেছি, না আরও ভয়ঙ্কর কিছু? ১০০ দিন ধরে তো আমরা প্রত্যক্ষ করেছি তদন্তের নামে কী ভাবে অভিযুক্তদের আইনি সুরক্ষাগুলো পদদলিত হয়েছে। সে সবের অনুল্লেখ বিস্ময়কর।

ভানু সরকার

কলকাতা-৪৯

সোনার চূড়া

ভক্তের দানে মন্দিরের বৈভব, চাকচিক্য বাড়ে। কিন্তু নিরন্ন, বিপন্ন মানুষ চিরকালই গুমরে কাঁদে (‘অম্বানীরা সোনায় মুড়ছেন চূড়া’, ১০-১০)। ভারতের বিভিন্ন মন্দিরের ভাঁড়ারে অঢেল ধনসম্পদ। বিশ্বের অন্যতম সম্পদশালী মন্দির কেরলের পদ্মনাভস্বামী মন্দির। আদালতের নির্দেশে ওই মন্দিরের ধনসম্পত্তির মূল্য নির্ধারণ করার উদ্যোগ করা হয়েছিল। সব ভল্ট খোলা হয়নি, কিন্তু যে ক’টি খোলা হয়েছিল, তার সঞ্চিত রত্নরাজির সম্ভার দেখে ‘ভ্যালুয়ার’দের চক্ষু চড়কগাছ! সংবাদপত্রের রিপোর্ট অনুযায়ী, সেখানে সঞ্চিত সম্পদের মূল্য প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলার! এ দিকে অতিমারির প্রকোপে দেশের অর্থনীতি তলানিতে। বহু লোক কর্মচ্যুত। রুটিরুজির ব্যবস্থা করতে না পারায় আত্মহত্যার ঘটনাও কম নয়। কী বিচিত্র এই দেশ!

ধীরেন্দ্র মোহন সাহা

কলকাতা-১০৭

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement