ছবি: সংগৃহীত
মৌ ভট্টাচার্যের ‘লকডাউনেও ওঁরা দশভুজা’য় (রবিবাসরীয়, ১৩-৯) কুমোরটুলির মহিলা প্রতিমাশিল্পীদের দুরবস্থার কথা জেনে খারাপ লাগল। আরও খারাপ লাগল যখন পড়লাম, পুরুষ প্রতিমাশিল্পী প্রতিবেদককে বলেছেন, ‘‘এখানে কোনও মহিলা-ফহিলা ঠাকুর করেন না। সামনে এগিয়ে যান, ওখানে পেলেও পেতে পারেন।’’ এই বিপদে যখন তাঁদের একই নৌকায় অবস্থান, তাঁরা কোথায় সহযোদ্ধার মতো পাশে দাঁড়াবেন, তা না করে মহিলাদের ছোট করছেন!
ভারতপথিক রামমোহন রায় বলেছিলেন, ‘‘অবলাদিগের বুদ্ধির পরীক্ষা লইয়াছেন কি, যে সহজেই তাহাদের অবলা কহেন?’’ কুমোরটুলির প্রতিমাশিল্পী চায়না পাল, কাঞ্চী পাল দত্ত, মায়া পাল, অণিমা পালেরা যোগ্যতার পরীক্ষায় পাশ করে গিয়েছেন। নইলে বছরের পর বছর তাঁরা ঠাকুর গড়ার বায়না পেতেন না। এ বছর করোনার আবহে, লকডাউনে সবারই রোজগার কম, তাঁরা কম বায়না পেয়েছেন। ও দিকে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, সহ-কারিগরদের মাইনে দিতে হচ্ছে, আমপানে তাঁদের চালাঘর ভেঙেছে, প্রতিমা গড়ার মাটি ধুয়ে গিয়েছে।
এত সব প্রতিকূলতার মধ্যেও তাঁরা দশভুজার মতো ঠাকুর গড়ছেন, স্টুডিয়ো স্যানিটাইজ় করছেন, আবার সকলের জন্য রান্নাও করছেন। এই মহিলা শিল্পীদেরকে স্যালুট। দুর্যোগ কেটে গিয়ে তাঁরা নিশ্চয়ই সূর্যের ভোর, স্বপ্নের ভোর দেখবেন।
শিখা সেনগুপ্ত, কলকাতা-৫১
আসবে কখন
আমার জীবনে যতগুলো মহালয়া বরাদ্দ আছে, গত বৃহস্পতিবার তার থেকে একটা কমে গেল। এ ধরনের চিন্তাগুলো এখন আর মনের ওপর তেমন কোনও চাপ ফেলে না। সারা বছরের জমা-খরচের হিসেব মেলাতে মেলাতে বেচারা মন কখন যে তার নিজ বাসভূমে পরবাসী হয়েছে, টেরও পাইনি। আজ আর ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ অনুষ্ঠানে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের উদাত্ত কণ্ঠ বা পঙ্কজকুমার মল্লিকের সুরের অমরাবতী আগের মতো নাড়া দিয়ে যায় না। শুধু ‘ওগো আমার আগমনী আলো’ গানে শিপ্রা বসুর গলাটা যখন শেষে এসে হঠাৎই দরাজ হয়ে গেয়ে ওঠে, ‘‘দিক হারানো শঙ্কাপথে আসবে, অরুণরথে আসবে কখন আসবে,’’ ঠিক তখনই একটা ইস্পাতে-তৈরি বজ্রমুষ্টি আমার হৃৎপিণ্ডটাকে আস্তে আস্তে চেপে ধরে। একটা দলাপাকানো ব্যথা গলার কাছে মুচড়ে উঠে জানিয়ে দিয়ে যায়— আসবে না, কোনও রথেই তাঁদের ফিরে আসার সুদূরতম সম্ভাবনা নেই। প্রাচীন ভারতের দার্শনিক জানিয়ে দিয়েছেন— ‘‘শ্মশানানলে দগ্ধস্য বান্ধবেন পরিত্যক্তা কিং প্রত্যাগচ্ছতি।’’
বাবা, মা, জ্যাঠামশাই কখন যে নাম পাল্টে ‘পিতৃপুরুষ’ হয়ে গিয়েছেন, সেটা বুঝতেও পারিনি। এত দিনের কথাবার্তা, হাসিঠাট্টা, মান-অভিমান মেশানো সম্পর্কগুলো আজ মিশে গিয়েছে পিতৃতর্পণের জলাঞ্জলিতে। জীবনজুড়ে থাকা মানুষগুলোকে যখন নাম আর গোত্র ধরে সম্বোধন করে ‘‘ময়া দত্তেন সতিলোদকেন গঙ্গোদকং তৃপ্যতামেতৎ তস্মৈ স্বধা’’ এই বলে কোষার আর চোখের জল একসঙ্গে অর্পণ করি, তখন পঙ্কজ মল্লিক মশাইয়ের গলায় ‘‘নতেভ্যঃ সর্বদা ভক্ত্যা চাপর্ণে দুরিতাপহে’’-র মতোই তা ভোরের আকাশে ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টির সঙ্গে হাওয়ায় মিশে যেতে যেতে আমাকে জানিয়ে দিয়ে যায়, এই নশ্বর জীবনে রূপ, জয়, যশ আমার ভাগ্যে আর জুটল না। এই মারি-লাঞ্ছিত পৃথিবীতে আজ শুধু একটাই প্রার্থনা, ‘‘বিধেহি দেবী কল্যাণম্, বিধেহি বিপুলাং শ্রিয়ম্।’’
অভিষেক দত্ত, কলকাতা-১০
কানের দফারফা
কলকারখানা, গাড়ি, আতশবাজি থেকে পরিবেশ দূষণ কী পরিমাণে হয়, এত দিনে আমরা সে সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। যদিও দূষণ প্রতিরোধের বিধি কতটা মানা হয়, তা তর্কসাপেক্ষ। মহালয়ার দিন আবার নতুন বিপত্তি হাজির। ভোর চারটের পরে হঠাৎ লাউডস্পিকারে জুড়ে দেওয়া হল ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। কোনও এক রাজনৈতিক দলের ব্যবস্থাপনায়, মানুষের কোনও অসুবিধের তোয়াক্কা না করেই। স্থানীয় প্রশাসনের বোঝা উচিত যে, সব রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিই মানবিক নয়। পরিবেশ সম্বন্ধে এই উপলব্ধি আগামী দিনে আসবে কি?
অশোক দাশ, রিষড়া, হুগলি
বিপন্ন সরোবর
গত বছর ছটপুজোয় রবীন্দ্র সরোবরে পুলিশ তথা সরকারের যে দ্বিচারিতা মানুষ লক্ষ করেছেন, তার পর রবীন্দ্র সরোবরের পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র নিয়ে সরকারের আদৌ কোনও মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। হিন্দি সিনেমার খলনায়কদের যেমন নিজস্ব আইন ও বিচার আছে, সেখানে রাষ্ট্রের আইন চলে না, ঠিক সেই রকমই কোনও কোনও দিন আমাদের রাজ্যের কোনও কোনও এলাকায় যেন ভারতীয় আইন চলে না। কোর্টের রায়কে অগ্রাহ্য করে একটি জাতীয় সরোবরের গেটের তালা ভেঙে হাজার হাজার পুণ্যার্থী সরোবরকে এতটাই দূষিত করেছিল যে, পর দিন বহু মাছ, কচ্ছপ মারা যায় এবং অন্যান্য জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ নষ্ট হয়। পুলিশ সেখানে চুপচাপ দাঁড়িয়েছিল। রবীন্দ্র সরোবর কলকাতার ফুসফুস। ধর্মের দোহাই দিয়ে তা কিছুতেই ধ্বংস হতে দেওয়া যায় না। কোর্ট যে রায়ই দিক, আগামী ছটপুজোতে রবীন্দ্র সরোবরে কী ঘটতে যাচ্ছে, তা সহজেই অনুমেয়। এই জাতীয় সরোবরের বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশকে রক্ষা করতে রাজ্য সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ। হাইকোর্টের কাছে অনুরোধ, এই সরোবরের দায়িত্ব সিআইএসএফ-এর হাতে তুলে দেওয়া হোক। মহামান্য রাজ্যপালও এ বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা নিন।
অজয় দাস, উলুবেড়িয়া, হাওড়া
বাঁচুক সবুজ
রবীন্দ্র সরোবরে আমি প্রাতঃভ্রমণার্থী। সরোবরের ভিতরে বোর্ডে লেখা আছে, ‘‘এটি একটি জাতীয় সরোবর, রক্ষণের দায়িত্ব আপনারও।’’ সম্প্রতি কেএমডিএ পরিবেশ আদালতে আপিল করেছিল, রবীন্দ্র সরোবরের ভিতর ছটপুজো উদ্যাপন করতে দেওয়া হোক। আদালত স্বাভাবিক ভাবেই তা নাকচ করেছে। দক্ষিণ কলকাতায় একমাত্র রবীন্দ্র সরোবরেই যা সবুজের ছোঁয়া আছে। আমপানে এমনিতেই সরোবরের প্রভূত ক্ষতি হয়েছে, আরও ক্ষতি না করলেই কি নয়?
দেবাশীষ ঘোষ, কলকাতা-১৯
বিষণ্ণ বিশ্বকর্মা
না আছে প্যান্ডেল না আছে লোকজন, না বসেছে মেলা। চার দিকে বিষাদের সুর। এমনই ছবি বসিরহাট ২ নম্বর ব্লকের মাটিয়া থানার খোলাপাতায়। এলাকার একটা সুনাম ছিল বিশ্বকর্মা পুজোকে ঘিরে। বিভিন্ন শ্রমিক ইউনিয়ন ও গ্যারেজ একসঙ্গে থাকায় অনেকগুলি পুজো হত। শারদীয়ার জানান দিয়ে যেত এই উৎসব। এ বার চার দিক ফাঁকা, কোথাও আনন্দের ছটা নেই। এই ছবি চোখে দেখা যায় না। কোভিডের জন্য আর্থিক অবস্থা সচ্ছল না থাকায় সব পুজোই এ বার ছোট করে হচ্ছে, কোথাও আবার না হওয়ার মতো। তাই মন খারাপ খোলাপোতাবাসীর।
উৎসব সরকার, বসিরহাট, উত্তর ২৪ পরগনা
সুতোর বিপদ
‘ফিরে এল সেই ঘুড়ি’ (১৭-৯) চিঠিটির জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু আজকাল ঘুড়ি ওড়ানো হয় যে মাঞ্জা সুতো দিয়ে তা নাইলনের, ‘চায়না সুতো’ বলে পরিচিত। অনেকেই টের পেয়েছেন এ সুতো কত ভয়ানক। ঘুড়ি ওড়ানো ভাল। কিন্তু যে সুতো মানুষকে আহত করে, মৃত্যুও ডেকে আনে, সেই সুতো নিষিদ্ধ হোক।
বিবেকানন্দ চৌধুরী, কাটোয়া, পূর্ব বর্ধমান
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।