Environment

সম্পাদক সমীপেষু: বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো

খুব স্পষ্ট করে বলে রাখা দরকার, এক জন বরিষ্ঠ সহনাগরিক হিসেবে পরিবেশকে সুস্থ রাখার প্রশ্নে শ্রীদত্তের সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ একমত।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:০১
Share:

পরিবেশ-সংগ্রামী সুভাষ দত্ত তাঁর ‘পৌষমেলা ও পরিবেশ’ (২৩-১) শীর্ষক চিঠিতে পৌষমেলা প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। আমরা জানলাম, কী ভাবে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ পরিবেশ আদালতকে দেওয়া তাঁদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। শ্রীদত্ত জানিয়েছেন কী ভাবে এই সংগ্রাম শুরু হল। ২০১৫-য় তিনি দেখেন সারি সারি ধোঁয়ার উনুন জ্বলছে, প্লাস্টিক ও আবর্জনার পাহাড় হয়েছে, নিষিদ্ধ ব্ল্যাক জেনারেটর গিজগিজ করছে, মেলাপ্রাঙ্গণের ধুলো খোলা খাবারের উপর একটা আস্তরণ ছড়িয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। স্বভাবতই বিষয়টা আদালতে গেল। যেমন গিয়েছিল ময়দানের বইমেলার ক্ষেত্রে। তাঁর চিঠির পরবর্তী অংশে শ্রীদত্ত আমাদের জানিয়েছেন, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ট্রাস্ট ডিডে নির্দেশিত তিন দিনের সময়সীমা না মেনে বিশ্বভারতীকে অগ্রাহ্য করে ‘সকলেরই অত্যন্ত প্রিয়’ এই পৌষমেলাও ক্রমাগত আদালত অবমাননা করে ময়দানের বইমেলার পরিণতির দিকে কী ভাবে অবধারিত গতিতে এগিয়ে চলেছে।

Advertisement

খুব স্পষ্ট করে বলে রাখা দরকার, এক জন বরিষ্ঠ সহনাগরিক হিসেবে পরিবেশকে সুস্থ রাখার প্রশ্নে শ্রীদত্তের সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ একমত। কিন্তু সেই সঙ্গে আমি মনে করি, এই সংগ্রামের ক্ষেত্র অনেক বেশি বিস্তৃত— বইমেলাকে ময়দান থেকে সরিয়ে দিয়ে বা পৌষমেলাকে বন্ধ করে বা দুর্গা প্রতিমাকে ক্রেন দিয়ে গঙ্গাবক্ষ থেকে তুলে এনে সম্ভবত এর সুরাহা হবে না। বইমেলা থেকেই বিতর্কটা শুরু করা যায়। ধরেই নেওয়া গেল, দশ দিনের এই মেলায় কলকাতার ফুসফুস ময়দানের এবং সেই সঙ্গে আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছিল এবং শ্রীদত্তের প্রচেষ্টায় তা থেকে আমরা বেঁচে গিয়েছি। কিন্তু অদূরেই অনন্ত কাল ধরে চলেছে ঘোড়দৌড় নামক একটি প্রমোদ, যেখানে প্রতিটি দৌড়ের দিনে ময়দানের শরীর পীড়িত হচ্ছে এবং প্রচুর বর্জ্য চতুর্দিকে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে। শিয়ালদহ স্টেশনের যে দিকটি কোলে মার্কেটের সন্নিকট— প্রতি দিন সেখানে কী পরিমাণ আবর্জনা জমে, তা বিদ্যাপতি সেতু দিয়ে গেলে চক্ষুহীন এক জন মানুষও মর্মে মর্মে টের পাবেন বিকট গন্ধে। শ্রীদত্তকে অনুরোধ করব তাঁর নানাবিধ ব্যস্ততার মধ্যে এক দিন বেলেঘাটা রোড থেকে ক্যানাল ইস্ট রোড ধরে উত্তর দিকে যেতে। তিনি দেখবেন, কিংবা হয়তো ইতিমধ্যেই দেখেছেন, কী ভাবে ফেলে দেওয়া জলের বোতল থেকে শুরু করে এই ধরনের অসংখ্য বর্জ্যবস্তু মশারির জালের মধ্যে বেঁধে পাহাড় প্রমাণ করে রাখা আছে। তাতে যে কোনও রকম জীবাণুর আশ্রয়স্থল হওয়া ছাড়াও রাস্তা ছোট হয়ে আছে— দুর্গন্ধের কথা নয় বাদই দিলাম। এটা ঘটছে প্রতি দিন, প্রতিনিয়ত একেবারে ঘনবসতি এলাকায়।

এ বার একটু ব্যক্তিগত কথা অতিসংক্ষেপে বলি। আমার বয়স বর্তমানে ৬৬ বছর এবং আমার জীবনের প্রায় পুরোটাই অতিবাহিত হল সিঁথি অঞ্চলে। বহু দিন ধরেই অঞ্চলটি স্বর্ণশিল্পের একটি কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। প্রায় প্রতিটি পাড়াতেই সোনার কাজ চলে সারা দিন সারা রাত। কারখানাগুলিতে চিমনি বসানো আছে এবং সোনা গলানো বা ওই ধরনের কাজ যখন চলে, এক ধরনের সাদা ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে চতুর্দিকে। কাশি এবং নিঃশ্বাসের কষ্ট চলতে থাকে— আমরা রুমাল চাপা দিয়ে, জানালা দরজা বন্ধ করে আত্মরক্ষার চেষ্টা করি। রাজনৈতিক দলগুলি দলমত নির্বিশেষে এ বিষয়ে নীরব— প্রশাসনও এই পরিস্থিতি বোধ হয় মেনে নিয়েছে। কোনও সুরাহার আশা আমরা দেখি না।

Advertisement

এমন উদাহরণ অনেক দেওয়া যায়। কিন্তু তার বোধ হয় দরকার নেই। এমন কথাও আমি বলছি না যে এই ভ্রষ্টাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করা সুভাষবাবুর একার দায়িত্ব। কিন্তু এটা অবশ্যই বলব যে, যেখানে ক্ষতিটা প্রাত্যহিক এবং অত্যন্ত ভয়াবহ, লড়াইটা সেখান থেকে শুরু করা উচিত। কারণ, সুভাষবাবুরও মূল লক্ষ্য নিশ্চয়ই পরিবেশের সামগ্রিক উন্নয়ন,শুধুমাত্র বইমেলাকে আজকের মতো ভ্রাম্যমাণ করে তোলা নয়। কেউ বলতেই পারেন, কেন বইমেলা তো বাইপাসের ধারে বা সল্টলেক সেন্ট্রাল পার্কে ভাল চলছে। অবশ্যই চলছে। কিন্তু ময়দানে যাতায়াতের যে স্বাভাবিক সুবিধা ছিল— মেট্রো, এসপ্ল্যানেড বাস ডিপো এবং জওহরলাল নেহরু রোড সন্নিকট হওয়ার ফলে, সে সুবিধা মিলন মেলায় কখনওই সম্ভব নয়। সেন্ট্রাল পার্কেও নয়। মনে আছে, ময়দানের বইমেলা শেষে বেরিয়ে আমার এক বন্ধু যেতেন হাওড়া বাস স্ট্যান্ডে, আমি যেতাম এসপ্ল্যানেড বাস স্ট্যান্ডে— কারও তেমন উদ্বেগ ছিল না। সেই নিশ্চিন্ততার দিন শেষ। এখন মেলায় ঢুকতে ঢুকতে জেনে নিতে হয় ফেরার বাস কত ক্ষণ পর্যন্ত পাওয়া যাবে।

অর্থাৎ পরিবেশকে নষ্ট করার অপরাধে প্রায় ১২-১৩ বছর আগে ময়দানে মেলা নিষিদ্ধ হলেও, সামগ্রিক ভাবে পরিবেশ বাঁচানোর আন্দোলন বিশেষ এগোয়নি। ঠিক কী পরিস্থিতিতে পৌষমেলার বিরুদ্ধে সুভাষবাবুর তৎপরতা শুরু হয়, জেনে প্রশ্ন জাগে, এই সারি সারি উনুন, খাদ্যের ওপর ধুলোর আস্তরণ তো প্রতিটি মেলার চরিত্র। তা হলে কোন মেলা পাশ-মার্ক পাবে?

তাই সুভাষবাবুকে অনুরোধ, পরিবেশ বিধি মেনে নেওয়ার লড়াই চলুক, কিন্তু সেটা অক্ষরে অক্ষরে পালন করার দাবি বোধ হয় বাস্তবসম্মত নয়। পরিবেশ নিয়ে তাঁর মতো যাঁরা ভাবছেন, তাঁরা উন্নতির চেষ্টা চালিয়ে যান, কিন্তু কিছু বিচ্যুতি হলেই আদালতের আদেশ এনে মেলাগুলি বন্ধ করে দেবেন না। পৌষমেলার মতো একটা বিশাল কাণ্ডে একটি স্টল হাতে পেয়ে সাজিয়ে তুলতেই দু’তিন দিন লেগে যায়। সেখানে তিন দিনের মেলা হলে সত্যিই কি তা ব্যবসায়ীদের পক্ষে অনুকূল হবে? আর ব্যবসা যদি না হয়, তা হলে বিশ্বভারতী আর কিছু সরকারি স্টল ছাড়া কেউ কি যোগ দেবেন শুধুমাত্র মহর্ষির ট্রাস্ট ডিডকে বাঁচিয়ে রাখতে?

পরিবেশ বিধি যেখানে প্রতি বছর মধ্য-জানুয়ারিতে গঙ্গাসাগর মেলার সময় বাবুঘাটের মতো জায়গায় প্রহসন হয়ে দাঁড়ায়, ছট পুজোর সময় সরকারের প্রচ্ছন্ন সমর্থনে রবীন্দ্র সরোবরের জলে মহানন্দে নিক্ষিপ্ত হয়, তখন দু’টি একটি ক্ষেত্রে সেই নির্দেশকে অপ্রত্যর্ক (শিবনারায়ণ রায় সৃষ্ট শব্দ) করে তোলাটাকে যদি ‘বজ্র আঁটুনি, ফস্কা গেরো’ বলি তা হলে খুব বেঠিক হবে কি? তবে, এ কথাও সত্যি যে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ স্বভাবত আইন মেনে চলেন। তা না হলে বইমেলা নিয়ে তামিলনাড়ুর মতো জাল্লিকাট্টু আন্দোলন গড়ে ওঠা অসম্ভব ছিল না।

শুভেন রায়

কলকাতা-৫০

পছন্দের সুযোগ

‘ধর্মীয় পরিচয়’ (৮-২) শীর্ষক চিঠির বিষয়কে সমর্থন করে বলি, রাষ্ট্র আমাদের, প্রায় জোর করেই, কে কোন ধর্মের তা চিহ্নিতকরণ করে থাকে। ২০১৬-র অগস্টে চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর, ‘পেনশনার এবং পেনশন সংক্রান্ত বিবরণী’ শীর্ষক ফর্মে নানা তথ্য পূরণ করতে গিয়ে ‘জাতি’ কলমে ভারতীয় লিখি। অফিসার ডেকে বলেন, এখানে লিখতে হবে, আপনি কোন ধর্মের মানুষ। বললাম, কেন? তা ছাড়া আমি কোনও বিশেষ ধর্মেরই আচরণ পালন করি না এবং মানি না। আমি ‘মানবতা’ লিখলাম। দু’দিন পরে আমার পূরণ করা ফর্মের একটি কপি ফেরত দিলেন। দেখি, অফিসার ‘মানবতা’ কেটে ‘হিন্দু’ লিখেছেন। বললাম, এটা করলেন কোন অধিকারে? আর আমি যে হিন্দু, বুঝলেন কী করে? উত্তরে বললেন, আপনার নাম দেখে। আর আপনি যদি ‘হিন্দু’ না লেখেন, আপনার কাজ পড়ে থাকবে। পেনশন পাবেন না। অফিসের অন্য কর্মীরা আমার প্রতি নানা কুমন্তব্য বর্ষণ করতে লাগলেন। আমার প্রতিবাদ গ্রাহ্য হল না, অফিসারের ‘হিন্দু’ লেখা ফর্মটিই গ্রাহ্য হল। তাই রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাই এমন, আমাকে কোনও না কোনও ধর্মীয় পরিচয়ে পরিচিত হতে হবে। আমরা সাধারণত জন্মসূত্রে ‘ধর্ম’পরিচয় পেয়ে থাকি। আমাদের জ্ঞান বুদ্ধি অনুযায়ী ‘ধর্ম’প্রাপ্তি হয় না। যে কোনও মানুষের, প্রাপ্তবয়স্ক, বিচার-বিশ্লেষণ শক্তির অধিকারী হওয়ার পর, ধর্ম গ্রহণের বিষয়টি আসা দরকার। আদৌ ধর্ম মানব কি না, বা কোন ধর্ম ভাল লাগছে বা লাগছে না, কোনও পছন্দের সুযোগ থাকছে না।

দীপক বিশ্বাস

ইন্দ্রপ্রস্থ, মুর্শিদাবাদ

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement