অত্যাবশ্যক পণ্য (সংশোধনী) আইনটি বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে লোকসভার স্ট্যান্ডিং কমিটি। শুধু সুপারিশ করে ক্ষান্ত হয়নি, এ রকম এক যুগান্তকারী আইন প্রণয়নের জন্য সরকারের ভূয়সী প্রশংসাও করা হয়েছে। উল্লেখ্য, সংসদের খাদ্য, ক্রেতা সুরক্ষা ও গণবণ্টন বিষয়ক সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, যদিও শেষ মিটিংয়ে তিনিই নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত থাকার অজুহাতে অনুপস্থিত ছিলেন এবং তাঁর অনুপস্থিতিতে এই সুপারিশ পত্রে সই করেন অস্থায়ী চেয়ারম্যান, বিজেপি সাংসদ টোনি মিশ্র। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার আগে সদস্যরা একাধিক বৈঠকে মিলিত হয়ে আলোচনার পর সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে উপনীত হন। বিরুদ্ধ মত রেকর্ড করারও সুযোগ থাকে।
গত সেপ্টেম্বরে সংসদে আলোচনা ব্যতিরেকে পাশ-করানো তিন কৃষি আইনের অন্যতম ‘অত্যাবশ্যক পণ্য (সংশোধনী) আইন’। এই ‘কালা কানুন’-এর প্রতিবাদে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন বিজেপির দীর্ঘ দিনের জোটসঙ্গী, অকালি দলের সাংসদ। প্রাথমিক গড়িমসি কাটিয়ে রাজ্য সরকার এই নয়া কৃষিবিলের বিরোধিতা করে বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ করে। বামপন্থী দলের মতো, অন্তত কাগজে-কলমে, মা-মাটি-মানুষের সরকার মনে করে, এই নয়া কৃষি আইন দেশের অন্নদাতাদের স্বার্থের পরিপন্থী এবং কালোবাজারি, মজুতদার ও কর্পোরেটদের জন্যই এই আইন আনা হয়েছে। নতুন আইনে চাল, ডাল, আটা-সহ ২০টি দ্রব্য অত্যাবশ্যক পণ্য তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। গণবণ্টন ব্যবস্থাকে লাটে তুলে দেওয়ার এ এক পুঁজিবাদী চক্রান্ত বলে অনেকেই এর বিরোধিতায় সরব।
স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে সুদীপবাবু এই মঞ্চকে যথাযথ ব্যবহার করে সংগ্রামরত কৃষকদের বাড়তি অক্সিজেন জোগাতে পারতেন। কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে শেষ দিনে অনুপস্থিত থেকে, এবং এই কৃষি আইনটির প্রশংসাসূচক সুপারিশের পরোক্ষ শরিক হয়ে, তিনি ও তাঁর দল নিশ্চিত ভাবে ভাবের ঘরে চুরি করেছেন। মোদী-দিদির গোপন আঁতাঁত তত্ত্বও এতে মান্যতা পেয়ে যাচ্ছে। শহিদ কৃষকদের অপমানের বিষয়টি নাহয় উহ্যই থাক!
রাজশেখর দাস
কলকাতা-১২২
আলোর রেখা
‘বামপন্থীর পরিচয়’ (সম্পাদক সমীপেষু, ১-৪) পত্রে যশোবন্ত্ বসু এক জন বামপন্থীর যে হতাশাজনক চিত্র তুলে ধরেছেন, তার প্রেক্ষিতে মার্ক্সবাদে বিশ্বাসী এক জন সদর্থক কমিউনিস্টের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আমার এই লেখা। তিনি আমার কাকা। বছর দুই হল তিনি প্রয়াত হয়েছেন। এক সময় রেলের ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। আজীবন শ্রেণিসংগ্রামে বিশ্বাসী মানুষটির সততা এখনও আমায় বিস্মিত করে। অগাধ পড়াশোনা করা মানুষটির প্রতিটি কথাতে ফুটে উঠত লড়াইয়ের মাধ্যমে জীবনে টিকে থাকার গল্প।
ভোগসর্বস্ব জীবন থেকে শত হস্ত দূরে থাকা মানুষটি এই সে দিনও বিপ্লবের স্বপ্ন দেখতেন। মনে করতেন, এক দিন মানব-চেতনা এমন উচ্চস্তরে পৌঁছবে, যেখান থেকে প্রতিটি মানুষ একে অপরকে সম্মান করতে শিখবে। নিজেরাই নিজেদের অধিকার সম্বন্ধে সচেতন হবে। যেখানে ধর্ম থাকবে ব্রাত্য। শেষের দিকে অধিকাংশ সময়েই তিনি বাম শাসনের ৩৪ বছরের হতাশাজনক অধ্যায়গুলি নিয়ে আলোচনা করতেন। কাকু বলতেন, “চৌত্রিশ বছরটা একটা মানুষের জীবনে অনেকটা সময়। অথচ, এই দীর্ঘ সময় জুড়ে যে দল একটা জাতির শ্রেণিচরিত্রের বদল পর্যন্ত ঘটাতে পারত, সেই কাজটাই সঠিক ভাবে ওরা করে উঠতে পারল না। দলের কলেবর বৃদ্ধিজনিত স্বার্থান্ধের ঘেরাটোপেই শুধু পড়ে রইল।”
রেলওয়ে কর্মচারী হিসেবে স্বেচ্ছাবসর নেওয়া কাকু বলতেন, কমিউনিজ়ম একটা জীবনবোধ চর্চা। সারা বিশ্বে কমিউনিজ়মের ভগ্ন দশা দেখেও তাঁর স্বপ্নে চিড় ধরেনি। তাঁর বিশ্বাস ছিল, কমিউনিজ়ম চর্চার মাধ্যমেই আমরা উন্নততর সমাজ গঠনের লক্ষ্যে ধাবিত হব। অথচ, তিনি চিরকাল আমার সঙ্গে যুক্তি-তর্কের মাধ্যমেই কমিউনিস্টদের ভালমন্দ বিচার করে এসেছেন। যা আজ প্রায় বিরল। তাই ‘বামপন্থীর পরিচয়’ পত্রলেখকের দেখা জনৈক ভদ্রমহিলাতেই শুধু সীমাবদ্ধ নয়। কিছু বামপন্থীর ব্যতিক্রমী জীবন, চিন্তাভাবনা, এই হতাশার অন্ধকারেও আলোকবর্তিকা হয়ে পথ দেখায়।
সঞ্জয় রায়
দানেশ শেখ লেন, হাওড়া
পরিচয় মানুষ
‘বামপন্থীর পরিচয়’ শীর্ষক চিঠিতে এক মহিলা পত্রলেখকের কাছে নিজের পরিচয় দিয়েছেন ‘তিন প্রজন্মের বামপন্থী’ বলে। তিনি কোনও মুসলমানকে ফ্ল্যাট ভাড়া দেবেন না। বামপন্থা কোনও ধর্মে বিশ্বাসী নয়, মানুষে বিশ্বাসী। কমরেড সেলিম বামপন্থার আদর্শ। আনিসুর রহমান, হান্নান মোল্লার মতো অসংখ্য মুসলিম কমরেড বামপন্থায় আছেন, যাঁরা মানুষের অধিকার আদায়ে লড়ে চলেছেন। ২০২১-এর বিধানসভায় আইএসএফ নেতা আব্বাস সিদ্দিকিও কিন্তু কমরেড মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়কে নিজের বোন পরিচয় দিয়ে তাঁর হয়ে লড়ছেন।
এটাই বামপন্থা। লকডাউনের দিনগুলোতে শ্রমজীবী ক্যান্টিন জাত দেখেনি, খাবার তুলে দিয়েছিল অভুক্তের মুখে।
অজিত ঘোষ
গঙ্গারামপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর
শুধুই শ্লেষ
‘বামপন্থীর পরিচয়’ চিঠিতে বর্ণিত ঘটনাটির পরিপ্রেক্ষিতে বলব এ লজ্জা শুধু বামপন্থীদের নয়, এ লজ্জা সমগ্ৰ হিন্দুদের। সব দল চুরি করবে, ঘুষ খাবে, কিন্তু বামপন্থীদের কেউ এ কাজ করলেই আঙুল তুলবে, “তোমরা এ সব করবে কেন? তোমরা তো কমিউনিস্ট?” যেন তাঁরা অন্য গ্ৰহের জীব। কোনও বামপন্থী নেতাকে দেখবেন না রাজনৈতিক সভায় চণ্ডীপাঠ করেন বা কোরানের কথা বলেন। তবু তাঁদের হেয় করতে নানা পত্রপত্রিকা শ্লেষাত্মক কথা লেখে।
অসিত কুমার নায়ক
নরেন্দ্রপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
ধনীর স্বার্থ
‘হল্লাগাড়ি থেকে জনতার টাকা, প্রচারে নয়া বাম’ (১৯-৩) প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে ভোট প্রচারে বামপন্থীদের নেওয়া বিবিধ যুগোপযোগী ভোট-কৌশলের কথা। দীর্ঘ দিনের বৃদ্ধতন্ত্রকে কাটিয়ে উঠে বামেদের এ বারের প্রার্থী-তালিকা আশাপ্রদ। কিন্তু ভাবাচ্ছে বালির সিপিএম প্রার্থী দীপ্সিতা ধরের মন্তব্য— কর্পোরেটের থেকে অর্থ তাঁরা নেবেন না, কারণ কর্পোরেটের স্বার্থ তাঁরা দেখবেন না। এখন প্রশ্ন হল, এই রাজ্যে কর্মসংস্থানের যে স্বপ্ন ওঁরা দেখাচ্ছেন, তা কি আদৌ সম্ভব কর্পোরেটের প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ ছাড়া? ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পূর্বেই যদি কর্পোরেট সম্পর্কে এমন মনোভাব থাকে, তা হলে পুঁজির বিনিয়োগ কতটা আনতে পারবে সংযুক্ত মোর্চা? বিনিয়োগ যাঁরা করবেন, তাঁদের ‘স্বার্থ’ অবশ্যই দেখতে হবে রাজ্য সরকারকে। পাশাপাশি এ-ও দেখতে হবে যাতে অতি-ধনী সেই শ্রেণির মানুষরা অন্যায্য সুযোগ না পান।
বিল্বদল ভট্টাচার্য
বালি, হাওড়া
ঘর সামলান
রাজ্যে ৩৪ বছর ক্ষমতায় থেকেও বিগত দশ বছরে বামেদের অস্তিত্ব বিপন্ন। গত দশ বছরে তেমন কোনও বড় আন্দোলন রাজ্যে করতে পারেননি। যে ক’টা ধর্মঘট ডেকেছেন, বিফল হয়েছে। এমনকি লকডাউন বা আমপানেও তাঁদের ভূমিকা সন্তোষজনক নয়। বিজেপি বা তৃণমূলের সমালোচনা না করে, নিজেদের অস্তিত্ব সঙ্কট থেকে মুক্ত হওয়ার দিকে মন দিন বাম নেতারা।
পঙ্কজ সেনগুপ্ত
কোন্নগর, হুগলি