—প্রতীকী ছবি।
জহর সরকারের ‘নিরামিষ-তন্ত্রের দমনপীড়ন’ (১২-৩) প্রবন্ধটির পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা। প্রবন্ধের মূল বক্তব্য, কোনও বিশেষ একটি দল মানুষকে জোর করে মাছ-মাংস খেতে দিচ্ছে না। মধ্যপ্রদেশ সরকার সে রাজ্যে আইন করে আমিষ খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। প্রবন্ধকার আরও লিখেছেন যে, গরিব লোকের আয় বাড়লে তাঁরা দুধ আর ডিমের উপর খরচ করেন, আর মাছ-মাংস পেলে তো কথাই নেই।
প্রবন্ধের বক্তব্যগুলি কতখানি যথার্থ, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়। পশ্চিমবঙ্গে শাসক দল ভোটের পূর্বে প্রচার করে বেড়াচ্ছে যে, ভারতের যেখানে ওই ‘বিশেষ’ দলটি ক্ষমতায় আছে, সেখানেই তারা আমিষ খাবার বন্ধ করে দিয়েছে। প্রবন্ধকারের মতামতও এই প্রকারই। চাকরিসূত্রে আমাকে গোটা ভারত চষে বেড়াতে হয়েছে। ভারতের কোথাও আইন করে আমিষ খাবার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, সেটা চোখে পড়েনি। কোথাও এ রকম কথা শুনিওনি। ভৌগোলিক কারণে ভারতের উপকূলবর্তী ও নদীবহুল রাজ্যগুলিতে আমিষ খাবারের প্রচলন থাকলেও ভিতরের দিকের রাজ্যগুলিতে আমিষের প্রচলন কম। এ ছাড়াও ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রভাবে ভারতের একটা বিশাল জনগোষ্ঠী নিরামিষ খান। পাহাড়-সহ দেশের একটা বৃহৎ অংশের মানুষ ‘শাওন’ মাসে নিরামিষ খান। ২০২৩ সালে সেই ‘নিরামিষ শাওন’ মাসের স্থায়িত্ব ছিল দীর্ঘ ৬০ দিন, অর্থাৎ দুই মাস। সে সময় আমি ছিলাম বিহারে। ওই সময় বাঙালি এলাকা ছাড়া মাছ-মাংসের দোকান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, দামও কমে গিয়েছিল অনেকটাই।
তা ছাড়া অনেকে নিরামিষ খান শরীর-স্বাস্থ্য ভাল রাখতে বা চিকিৎসকের নির্দেশে। শিখরা গুরুদ্বার সংলগ্ন পঞ্জাবি হোটেলে আমিষ খাবার রাখেন না, কেবলমাত্র নিরামিষ খাবার তৈরি করেন। সুতরাং, সরকার আইন করে কোনও রাজ্যে আমিষ খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে, এমন উদাহরণ নেই বলেই আমার ধারণা।
গরিব মানুষ টাকা পেলে দুধ, ডিম, মাছ, মাংস খেতে চান, এটাও সত্যের অপলাপ মাত্র। মানুষ তার খাদ্যাভ্যাস অনুযায়ী খাবার খাবে। জৈনরা, বৈষ্ণবরা কোটিপতি হলেও আমিষ খাবার খাবেন না। গরিব মানুষ হাতে যতই টাকা পান, তাঁরা তাঁদের নিজেদের খাদ্যাভ্যাস অনুযায়ী নিজের খাবার বেছে নেন, কারও নির্দেশ অনুযায়ী খাদ্যাভ্যাস স্থির করেন না। গুন্ডা-পুলিশ পাঠিয়ে মানুষের ভোটাধিকার ছিনিয়ে নেওয়া যায়, কিন্তু গায়ের জোরে খাদ্যাভ্যাস পাল্টে দেওয়া যায় না।
ভাস্কর ঘোষ, কলকাতা-১০৭
অন্য শিক্ষা
বর্তমান সরকারি স্কুলগুলিতে বহু ক্ষেত্রেই শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিয়মিত পড়াশোনা এবং অনুশীলনের অভাবে নিজের বিষয়ের বহু অংশ বিস্মৃত হয়ে যান। দিনের পর দিন গতানুগতিক ভাবে ছাত্রছাত্রীদের পাঠ দিয়ে যান। শিক্ষা দফতরের উচিত এই প্রবণতা বন্ধ করা। ছাত্রছাত্রীদের যেমন নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে পরীক্ষায় বসতে হয়, তেমন ভাবেই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মূল্যায়নের জন্যও বিশেষ পরীক্ষা পদ্ধতির প্রচলন করা উচিত, যাতে তাঁরা সময়ের সঙ্গে নিজেদের অনুশীলনের অভ্যাস হারিয়ে না ফেলেন, এবং নিয়মিত বিভিন্ন বিষয় পড়াশোনার মাধ্যমে তাঁরা নিজেদের এবং ছাত্রছাত্রীদেরও সমৃদ্ধ করতে পারেন।
প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর মস্তিষ্কে এই চিন্তাটি ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন যে, ব্যবসায়িক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা লাভ করার চেয়ে নিজে পাঠ্যবই অনুশীলন করে শিক্ষালাভ অধিক কার্যকর। এবং ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোর দিকে ধাবিত হওয়ার আর এক ধরনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে যাদের মধ্যে, তাদের এটা বোঝা উচিত যে ভাষার ভেদে পাঠ্যবিষয়গুলি কখনও পরিবর্তিত হয়ে যাবে না। সর্বোপরি, ‘সেল্ফ স্টাডি’-র মাধ্যমে পছন্দমতো সমস্ত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাতেই সফল হওয়া সম্ভব— এই আত্মবিশ্বাসকে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে জাগ্রত করতে হবে।
আর্তি মণ্ডল, কলকাতা-৩২
সাধারণের দাবি
লোকসভা ভোটের দামামা বেজে গিয়েছে নির্বাচন কমিশনের ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশের মধ্যে দিয়ে। ইতিমধ্যে কমবেশি সমস্ত প্রথম সারির রাজনৈতিক দলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণাও হয়ে গিয়েছে। এমতাবস্থায়, আমরা যারা এই বহরমপুর লোকসভার সাধারণ জনগণ, যারা সারাটা বছর বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হই, এটাই তো ‘আদর্শ’ সময় আমাদের সমস্যাগুলো তুলে ধরার। বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেসের অধীর রঞ্জন চৌধুরী, তৃণমূলের ইউসূফ পঠান, বিজেপির ডা নির্মল সাহার মতো হাই প্রোফাইল প্রার্থীদের কাছে আজ এই লোকসভার ভোটার হিসাবে প্রশ্ন রাখতে চাই, কেন আমাদের এই সুপ্রাচীন জনবহুল পিছিয়ে পড়া জেলাতে স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রের পক্ষ থেকে এমস তৈরি করা হবে না? কেন উচ্চশিক্ষার জন্য আমাদের বাইরে ছুটতে হয়? কেন বহরমপুর-কেন্দ্রিক একটি পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির উদ্যোগ করা হবে না? কেন লালগোলা-শিয়ালদহ ও খাগড়াঘাট-সালার-হাওড়া লাইনে এক্সপ্রেস, প্যাসেঞ্জার, লোকাল ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হবে না? কেন আজও রেল মানচিত্রে মহকুমা শহর তথা ভবিষ্যতের জেলা শহর কান্দি যুক্ত হল না?
মুর্শিদাবাদ জেলার খেলাধুলার উন্নতিসাধনে আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম তৈরির প্রয়োজন। প্রয়োজন, বহরমপুর শহরকে কর্পোরেশনে রূপান্তরিত করা, যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রসার ঘটাতে বাবলা নদীর উপর লোহাদহ সেতু, কান্দির পুরন্দরপুরে কানা ময়ূরাক্ষী নদীর উপর খরগ্রামের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য নদী ব্রিজ তৈরি করা। বাংলাদেশের সঙ্গে থাকা আন্তর্জাতিক সীমানায় যাত্রী আসা-যাওয়ার ব্যবস্থাপনা-সহ পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর তৈরি, গঙ্গাভাঙন রোধে বিশেষ ব্যবস্থা করা, আকর্ষণীয় ও সমৃদ্ধময় ইতিহাসযুক্ত জেলার পর্যটনকে দেশের মানচিত্রে নিয়ে যেতে বিশেষ ব্যবস্থা করাও জরুরি। তা ছাড়া এই জেলার প্রত্নতাত্ত্বিক স্থলগুলোকে সংরক্ষণ, বিশেষত কর্ণসুবর্ণের ভূগর্ভে লুকিয়ে থাকা ইতিহাস প্রকাশ্যে আনতে খননকার্য চালানোর জন্য বিশেষ তহবিলের ব্যবস্থা করা, মুর্শিদাবাদের ঐতিহ্যময় আম-লিচুর খ্যাতি জগদ্ব্যাপী প্রসারে ফুড প্রোসেসিং হাব বানানো ইত্যাদি উদ্যোগও করতে হবে। আশা রাখছি, জনতার আশীর্বাদে সঠিক ব্যক্তিই ক্ষমতার অলিন্দে পৌঁছবেন আগামী দিনে। সাধারণ মানুষের গঠনমূলক উন্নয়নের আশু প্রয়োজনগুলো কি পূরণ হবে আগামী পাঁচ বছরে?
অঙ্কুর পাণ্ডে, কান্দি, মুর্শিদাবাদ
স্বচ্ছ নিয়োগ
‘স্বচ্ছ নিয়োগ নিশ্চিত করতে’ (১১-৩) শীর্ষক তূর্য বাইনের প্রবন্ধটি বাস্তবসম্মত। যে ভাবে সরকারের প্রতিটা দফতরে নিয়োগ সংক্রান্ত ব্যাপারে অস্বচ্ছতা দেখা যাচ্ছে, তাতে শিক্ষিত যুবক-যুবতীরা হতাশ। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার ‘দ্য পাবলিক এগজ়ামিনেশনস (প্রিভেনশন অব আনফেয়ার মিনস) বিল ২০২৪’ পাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরিতে দুর্নীতি প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি গ্রহণ করা হবে। রাজ্য সরকারেরও উচিত দ্রুত এই রকম আইন পাশ করে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা। প্রবন্ধের শেষের দিকে উল্লিখিত হয়েছে— দেশে ক্রমবর্ধমান বেকার সংখ্যার নিরিখে কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরির সুযোগ অতি সীমিত, তুলনায় রাজ্য সরকারি চাকরির সুযোগ বেশি। শিক্ষিত বেকারদের বড় অংশ তারই প্রস্তুতি নেন। তাই এই চাকরিতে যত দিন না দুর্নীতিমুক্ত নিয়োগ হচ্ছে, তত দিন ন্যায্য চাকরির দাবিতে পথ আটকানো আর পুলিশি হেনস্থা থেকে বেকারদের নিস্তার নেই।
স্বপন আদিত্য কুমার বিশ্বাস, অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা