Judiciary

সম্পাদক সমীপেষু: গ্রেফতার বিমা 

সব বিচারাধীন বন্দি জামিন পেলে পালিয়ে যাবেন, প্রমাণ লোপ করে দেবেন, এমন ভাবা ভুল। সবাই গুরুতর অপরাধে বন্দি নন। কেউ কেউ ছোটখাটো চুরির দায়ে বন্দি, আবার কেউ বিনা কারণে বন্দি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৩ ০৫:০৬
Share:

—প্রতীকী ছবি।

রঞ্জিত শূরের ‘জামিনের অমানবিক শর্ত’ (৬-১১) দেশের ন্যায়ব্যবস্থার দুর্বলতম দিকটির উপর আলোকপাত করেছে।। সুপ্রিম কোর্টের নীতি, জামিন পাওয়াই নিয়ম, জেলে যাওয়া ব্যতিক্রম। কিন্তু সে নীতি আদৌ কার্যকর হয়নি। দরিদ্র ও দুঃস্থ বন্দিদের ক্ষেত্রে শুধু জামিন পাওয়াই নয়, সুবিচার পাওয়াও দুঃসাধ্য। তাই বিচারাধীন বন্দির সংখ্যা সাজাপ্রাপ্ত বন্দির তিন গুণ। ২০২২-এ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী ৫,৫৪,০৩৪ বন্দির মধ্যে ৪,২৭,১৬৫ (৭৬ শতাংশ) বিচারাধীন বন্দি। কী করুণ পরিস্থিতি।

Advertisement

সব বিচারাধীন বন্দি জামিন পেলে পালিয়ে যাবেন, প্রমাণ লোপ করে দেবেন, এমন ভাবা ভুল। সবাই গুরুতর অপরাধে বন্দি নন। কেউ কেউ ছোটখাটো চুরির দায়ে বন্দি, আবার কেউ বিনা কারণে বন্দি। তাঁরা না পাচ্ছেন জামিন, না হচ্ছে বিচার। এমতাবস্থায় তাঁরা জেলার ভিতর বছরের পর বছর কাটিয়ে দিচ্ছেন। এমনও নিদর্শন আছে যে, কেউ ত্রিশ বছর পর নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে ছাড়া পেয়েছেন। সেই ব্যক্তির ত্রিশটি বছর কে ফেরত দেবে? এ ভাবে তাঁর জীবনটাকে ছারখার করার দায় কে নেবে?

এই প্রসঙ্গটি নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যচিত্র তৈরি হয়েছে, পানিশমেন্ট উইদাউট ট্রায়াল। হিন্দি এবং ইংরেজিতে এই তথ্যচিত্রটির নির্মাতা সমাজসেবী জওহরলাল শর্মা একটি প্রস্তাব রেখেছেন। তা হল— ‘অ্যারেস্ট ইনশিয়োরেন্স’ বা গ্রেফতার বিমা। যদি বিচারে বন্দি নির্দোষ প্রমাণিত হন, তা হলে বিমা সংস্থার পক্ষ থেকে তাঁকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। অন্য দিকে, যদি তিনি দোষী সাব্যস্ত হন, তা হলে বিমার প্রিমিয়াম, যা সরকার বহন করেছে, সেটি ফেরত দিতে হবে বন্দিকে। অন্যথায় বন্দিদশা আরও কিছু দিন বাড়বে। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বন্দিদের দোষ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা দোষী নন, অপরাধী নন। তাই তাঁদের ব্যক্তি-স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ অসাংবিধানিক ও অমানবিক।

Advertisement

শ্রীময় ঘোষ, জামশেদপুর

অমানবিক

রঞ্জিত শূরের প্রবন্ধটি পড়ে মর্মাহত হলাম। বিচারাধীন বন্দির সংখ্যায় ভারাক্রান্ত ভারতীয় কারাগারগুলোতে বন্দি সংখ্যা কমানোর উদ্দেশ্যে ঢালাও জামিন দিতে যে শর্তের প্রস্তাব করা হয়েছে তা হল, জামিনপ্রাপ্ত বন্দির হাতে বা পায়ে বৈদ্যুতিন ব্রেসলেট (যার খরচ বন্দিকেই বহন করতে হবে) পরাতে হবে। অথবা সব সময়ে একটা স্মার্টফোন কাছে রাখতে হবে, যাতে তার উপর নজর রাখা যায়। এ তো মানবিকতার উপর কশাঘাত। গতিবিধির উপর নজর রাখতে বাঘ, হাতি এমনকি গরুর গলাতেও বকলস বাঁধার দৃষ্টান্ত অনেক আছে। তা হলে বিচারাধীন বন্দি মানুষেরা কি সেই চতুষ্পদ প্রাণীদের সমতুল্য? অনেকে হয়তো বলতে পারেন, কিছু পশ্চিমি দেশেও তো এই নিয়ম চালু হয়েছে। সে ক্ষেত্রে বলতে হয়, সেখানে কি এত মামলার পাহাড় জমে থাকে? বিচারপতির সংখ্যা কি প্রয়োজনের তুলনায় এত কম?

মনে পড়ে, পিয়ালী পাল তাঁর ‘বিচার নেই, কারাগার আছে’ (আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৪-১১-২০) প্রবন্ধে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো-র পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেছিলেন, সারা দেশে মোট বন্দি সংখ্যার শতকরা প্রায় ৭০ শতাংশ বিচারাধীন, যাঁদের অনেককেই স্রেফ সন্দেহের বশে আটক করা হয়েছে। আজ ২০২৩ সালেও সেই একই ছবি। এঁদের কি সহজ শর্তে জামিন পাওয়ার অধিকার নেই?

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর ‘মামলা চলছে, বন্দিই থাকে মানবাধিকার’ (১৪-৯-২০২১) প্রতিবেদনে লিখেছিলেন যে, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ না পেয়ে জেলেই মৃত্যুবরণ করেন বিচারাধীন বন্দি সুদীপ চোংদার। অতএব, এ দেশে সহজ শর্তে জামিন কি জরুরি নয়?

ওসমান মল্লিকের লেখা ‘মামলা জমছেই, বিচার কবে’ (১৮-১-২২) প্রবন্ধে দেখি, আব্দুল গনি, লতিফ ওয়াজ়া, আলি ভট্ট প্রমুখ নিরপরাধ বন্দির নির্দোষ তকমা পেতেই লেগে গিয়েছিল প্রায় ২৩ বছর। জামিন না মেলায় তত দিন তাঁদের জেলেই থাকতে হয়েছিল। এই প্রবন্ধেই পাই যে, সুশীল রায়, পতিতপাবন হালদার এবং সন্তোষ দেবনাথ ১৪ বছর জেলে বন্দি থাকার পর নির্দোষ প্রমাণিত হন। সুশীল রায় তো জেলেই মারা যান। এঁদের কি জামিনের ব্যবস্থা করা উচিত ছিল না? কে ফিরিয়ে দেবে তাঁদের জীবনের এই মূল্যবান সময়, কিংবা সুশীল রায়ের অমূল্য জীবন? তাই সহজ, সম্মানজনক এবং মানবিক শর্তে জামিনের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি।

সোনা বন্দ্যোপাধ্যায়, খড়দহ, উত্তর ২৪ পরগনা

ঘনিষ্ঠতন্ত্র

“কমিশনে বার বার ফিরে আসেন ‘ঘনিষ্ঠ’ সদস্যেরা” (৬-১১) সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি কথা। নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ, বিচারপতি নিয়োগ থেকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, মহিলা কমিশন, সিবিআই, ইডি ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে কেন্দ্রের শাসক দল নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখার জন্য নিজেদের পছন্দের মানুষকে নিয়োগ করতে সচেষ্ট— এই অভিযোগে বিরোধীরা বার বার সরব হয়েছেন। এই অভিযোগ অমূলক নয়। কিন্তু একই অভিযোগ বিভিন্ন রাজ্য সরকারের ক্ষেত্রেও ওঠে। এ রাজ্য তার ব্যতিক্রম নয়। ২০১১ সালে সরকার বদলের পর থেকে মানবাধিকার কমিশনের সক্রিয়তা প্রায় নেই। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রেও (পূর্বতন সরকারের সময়ে নিযুক্ত মীরা পাণ্ডের পরে) বারে বারে কাছের লোক বসিয়ে স্থানীয় স্তরের নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করার অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে তো রাজ্য সরকারের কোনও দফতরের আধিকারিক বলে ভ্রম হতে পারে।

নবান্নের এক আধিকারিক বলেছেন, অতীতে বাম জমানায় বা এখন অন্য রাজ্যেও শাসক ঘনিষ্ঠেরাই বিভিন্ন কমিশনে মনোনীত হয়ে থাকেন। তাঁর কথা থেকেই পরিষ্কার যে, কেন এই সব কমিশন অনেক সময় নিষ্ক্রিয়। অবশ্য সক্রিয়তা দেখালে তা যে শাসকের মতের অনুসারী হবে, এটাই প্রত্যাশিত। কেন্দ্র, রাজ্য এবং বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দল একে অপরের সমালোচনা করলেও, যে যেখানে ক্ষমতায় আসে, সে সেখানে একই রাস্তায় হাঁটে। এই প্রবণতা শাসকের ন্যায়পরায়ণতাকে কলঙ্কিত করে।

প্রদ্যোৎ পালুই, বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া

টাকার বিচার

জামিনের শর্ত যদি হয় জিপিএস-লাগানো ব্রেসলেটের খরচ বাবদ দশ হাজার টাকা দেওয়া, তা হলে কারা জামিনে ছাড়া পাবেন, আর কারা টাকা দিতে না পেরে বন্দি থাকবেন, তা সহজেই অনুমেয়। স্মার্টফোনই বা কত জন কিনতে পারেন, এবং সব সময়ে চার্জ দিয়ে রাখতে পারেন, যাতে তাঁর গতিবিধি ধরা পড়ে? বিচারাধীন বন্দির অধিকাংশই যেখানে গরিব, সেখানে ব্রেসলেট বা স্মার্টফোন কিনতে বলা কি কার্যত টাকা দিয়ে মুক্তি কেনার সুবিধা করে দেওয়া দাঁড়ায় না?

সনাতন মুর্মু, গড়শালবনি, ঝাড়গ্রাম

পুজোর পেরেক

‘উৎসবের দূষণ’ (১০-১১) সম্পাদকীয় বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরেছে। তবে জল, বায়ু বা শব্দদূষণ ছাড়াও গ্রামাঞ্চলে আর একটা অসুবিধা খুবই প্রকট— প্যান্ডেল খুলে নেওয়ার পর সেখানে পড়ে থাকা অজস্র ছোট পেরেক। সেগুলো সাইকেল, বাইক বা ছোট গাড়ির চাকার, এমনকি মানুষের পায়েরও ক্ষতি করে। এমনও দেখেছি যে, পুজোর পরে গভীর রাত পর্যন্ত খোলা থাকে চাকা সারানোর দোকানগুলি। পেরেকে ক্ষতিগ্রস্ত চাকা মেরামত করতে তারা অন্য সময়ের তুলনায় বাড়তি টাকা চায়।

বাসুদেব সেন, জাঙ্গিপাড়া, হুগলি

বাঁশের দ্রব্যাদি

গৃহস্থালির কাজে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রের প্রতি মানুষের আগ্রহ ক্রমশ কমছে। বাঁশের তৈরি ধানের গোলা, ডালি, কুলো, মাছ ধরার পলো ইত্যাদি ক্রমশই হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে যাঁরা এই সকল জিনিস তৈরি করেন, তাঁদের জীবন ও জীবিকা গভীর সঙ্কটের মুখে।

তাপস দাস, সিঙ্গুর, হুগলি

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement