War

সম্পাদক সমীপেষু: স্বার্থের পক্ষে

আজ যে সব পশ্চিমি দেশ যুদ্ধের বিরোধিতা করছে, অতীতে যখনই তাদের জাতীয় স্বার্থে আঘাত লেগেছে, তখনই তাদের জুজুৎসু সর্বসমক্ষে অবতীর্ণ হয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৩ ০৫:২৯
Share:

আমরা বিশ্বায়িত হয়েও আগের থেকে অনেক বেশি বিশ্ববিমুখ। ফাইল চিত্র।

সেমন্তী ঘোষের “‘আমরা’ আর প্রশ্নও তুলি না” (২৫-২) প্রবন্ধ প্রসঙ্গে কিছু সংযোজন। আমরা বিশ্বায়িত হয়েও আগের থেকে অনেক বেশি বিশ্ববিমুখ। কিন্তু যুদ্ধবিমুখ নই, বিশেষত যখন যুদ্ধের বিরোধিতা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী হতে পারে। আজ যে সব পশ্চিমি দেশ যুদ্ধের বিরোধিতা করছে, অতীতে যখনই তাদের জাতীয় স্বার্থে আঘাত লেগেছে, তখনই তাদের জুজুৎসু সর্বসমক্ষে অবতীর্ণ হয়েছে। সে বাণিজ্যিক যুদ্ধই হোক, বা ভূখণ্ড গ্রাস করার যুদ্ধ। যুদ্ধের বিরোধিতার প্রশ্নটা আসলে হয়ে দাঁড়িয়েছে জাতীয় স্বার্থের বিরোধিতা করা হবে কি না, সেই প্রশ্নে— সেটা সুলভে তেল ও গ্যাসের আমদানি হোক, বা প্রতিদ্বন্দ্বী চিনকে চাপে রাখাই হোক। আর শুধু ভারতই নয়, নিজ স্বার্থে বত্রিশটি দেশের রাষ্ট্রপুঞ্জে ভোটদানের থেকে বিরত থাকা সেই মানসিকতাকেই প্রশ্রয় দেয়। তাই হয়তো এখন আর ইউক্রেনকে নিয়ে ‘তোমার নাম আমার নাম ভিয়েতনাম’-এর মতো মানবিক স্লোগানের জন্ম হয় না! আমরা পশ্চিমি দেশগুলোর মানসিকতা ও পুরনো অভিসন্ধি থেকে এটা বুঝতে শিখেছি যে, তারা তাদের সমস্যাকে বিশ্বের সমস্যা হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করলেও, নিজেদের জাতীয় স্বার্থকেই সর্বদা প্রাধান্য দেয়। আমাদেরও তেমনই করা উচিত। তাই সরাসরি কোনও যুদ্ধের বিরোধিতা না করে কূটনৈতিক আন্তর্জাতিক নীতির মাধ্যমে যুদ্ধবিরোধিতা আসলে উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়নশীল রাষ্ট্রনীতিরই পরিচয় দেয়।

Advertisement

পারিজাত ভট্টাচার্য, কলকাতা-১২৭

মিছিলে বিরক্তি

Advertisement

সেমন্তী ঘোষের প্রবন্ধের পরতে পরতে হতাশা স্পষ্ট। সেটা কিন্তু অবশ্যম্ভাবীই ছিল। আমরা এখন প্রশ্নও করি না, তার কারণ প্রশ্ন করা বারণ। আন্দোলন, মিছিল, বিক্ষোভ তো দূরের কথা। আমরা সন্তান-সন্ততিদের শিখিয়েছি শুধু নিজেরটুকু বুঝে নিতে, ঝামেলায় জড়িয়ে না পড়তে। যদি সমাজ-সচেতন হতেই হয়, তবে সমাজমাধ্যমে কয়েকটি উষ্ণ মন্তব্য করলেই যথেষ্ট। নিজেকে জড়ানো নৈব নৈব চ।

লেখক আক্ষেপ করেছেন যে, ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় আমাদের শহরের ছাত্রছাত্রী, যুব সমাজ যে ভাবে আন্দোলন করেছিল, এখন আর সে রকম হয় না। ঠিক কথা, কিন্তু গা-বাঁচিয়ে চলা বাঙালি, তথাকথিত শান্তিপ্রিয় বাঙালি তাদের নির্বোধ আখ্যা দিয়েছিল। আন্দোলন না-করে কেরিয়ারে উন্নতির পরামর্শ দিয়েছে। বর্তমান সমাজ নিজেদেরকে ছাঁচে ঢেলে ফেলেছে। এখন সবাই দূর থেকে মন্তব্য করতে, ভিড়ের মধ্যে সাহসী হতে, সমাজমাধ্যমে বিপ্লবী হতে ভালবাসে। এখন আমরা বাসে যেতে যেতে যদি দেখি সামনে কোনও মিছিল বা অবরোধ চলছে, অত্যন্ত বিরক্ত হই। জানতেও চাই না, ওই মিছিল বা অবরোধের কোনও যুক্তিগ্রাহ্য কারণ আছে কি না।

নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ফরাসি সাহিত্যিক রোম্যাঁ রোলাঁ বলেছিলেন, যেখানে শৃঙ্খলা অন্যায়কে ধরে রেখেছে, সেখানে বিশৃঙ্খলা হল ন্যায়ের সূচনা (হোয়্যার অর্ডার ইজ় ইনজাস্টিস, ডিজ়অর্ডার ইজ় দ্য বিগিনিং অব জাস্টিস)। সুতরাং, কোনও অন্যায়, অপশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যদি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে বিক্ষোভ, মিছিল ইত্যাদি হয়, তবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এখন বিক্ষোভ, আন্দোলন তো দূরের কথা, কোনও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলার অধিকারও বন্ধ করা হচ্ছে দুটো উপায়ে। এক, ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করে রাখা হচ্ছে, যাতে কেউ প্রশ্ন করলেই তাঁর সামাজিক ক্ষতি হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে। আর দ্বিতীয় হল, মস্তিষ্ক প্রক্ষালন যন্ত্রের (শিক্ষাব্যবস্থা, মুদ্রিতমাধ্যম, সমাজমাধ্যম) সাহায্যে কোনও রকম আন্দোলন, বিক্ষোভ ইত্যাদিকে ক্ষতিকর বা পিছিয়ে দেওয়ার সোপান হিসেবে দাগিয়ে দেওয়া। সেই কারণে বর্তমানে মেধাবী ছাত্র ও যুবসমাজ যে কোনও রকম বিক্ষোভ, আন্দোলন থেকে সচেতন ভাবে নিজেদের দূরে রাখে।

লেখক যথার্থই বলেছেন যে, শুধু আলোড়ন তুললেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে তা নয়, মানুষ হিসেবে মানুষের কাছে যে মানবিক জবাবদিহির দায় থাকে, সেটা এড়িয়ে যাব কী করে? অত্যন্ত সুন্দর ভাবে বলেছেন যে, আমরা এখন বিশ্বায়িত হয়েও বিশ্ববিমুখ। কিন্তু এর থেকে বেরিয়ে আসতে গেলে যে আত্মকেন্দ্রিকতা ত্যাগ করে মানবিকতাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, সেটা কতটা সম্ভব, তা ভবিষ্যৎই বলতে পারবে।

সুরজিত কুন্ডু, উত্তরপাড়া, হুগলি

যুদ্ধের পরে

তাপমাত্রা শূন্যের নীচে। বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ক্ষেপণাস্ত্রে অচল। চরম শৈত্যপ্রবাহে হিম হয়ে গেছে ইউক্রেনের জনজীবন। ‘আর এক ঠান্ডা যুদ্ধ?’ (১০-২) শীর্ষক প্রবন্ধ প্রসঙ্গে বলতে চাই, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামার বা থামানোর কোনও প্রচেষ্টাও নেই। জ্বালানি, ওষুধের তীব্র সঙ্কট। শিক্ষা, চিকিৎসা লাটে। তাতে কার কী-ই বা আসে যায়! এক দিকে মৃত্যু, দেশান্তর, সম্পত্তিহানি অব্যাহত। অন্য দিকে, বিশ্বকাপ, চলচ্চিত্র উৎসব, ওটিটি সিরিজ়ে নতুন ছবি প্রকাশ, বইমেলা, খাদ্যমেলাও— সবই আমোদে, আহ্লাদে অবিরত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উৎসব ও শবযাত্রা সমানতালে, সমান্তরালে চলছে একই ধরাতলে এক বছর কাল যাবৎ।

স্মরণে রাখা যেতে পারে, ‘ঠান্ডা যুদ্ধ’-উত্তর যে ওয়ারশ প্যাক্ট, তা অস্তাচলে গেলে গঠিত হয় কালেক্টিভ সিকিয়োরিটি ট্রিটি অর্গানাইজ়েশন। রুশ সরকারের দুশ্চিন্তা নেটোর আগ্রাসন থেকে রুশ কর্তৃত্বকে ইউরোপের পূর্বাঞ্চল ‘রেড লাইন’ বরাবর রক্ষা করা। যে-হেতু, স্বমহিমায় নেটো আজও বিরাজমান; যার অক্ষয়, অব্যয় উপস্থিতি ও ক্রমসম্প্রসারণ অভিসন্ধি এ যুদ্ধের অন্যতম কারণ। ফলত, এ যুদ্ধ চলমান থাকায় প্রত্যক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত রাশিয়া ও ইউক্রেন। সমরাঙ্গনে দর্শকাসনে বসে চরম মুনাফা করে চলেছে পশ্চিম ইউরোপের সমস্ত যুদ্ধ ব্যবসায়ী, যে-হেতু পশ্চিম ইউরোপের যুদ্ধব্যবসা ব্যক্তি মালিকানাধীন, বেসরকারি উদ্যোগে।

পশ্চিমি রাষ্ট্রসমূহ এই বিপুল পরিমাণ অস্ত্রের জোগানদাতা। পরিণামে বেসরকারি সামরিক শিল্পে ট্রিলিয়ন মূল্যে উত্তুঙ্গ লাভ, সমরাস্ত্রের কারখানায় নতুন নিযুক্তি। ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সালে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম বর্ষপূর্তি হয়েছে। এবং সামরিক ব্যবসায়ীদের চওড়া হাসিতে তুমুল স্ফূর্তি। সর্বনাশ ও পৌষ মাস মিলেছে ইউক্রেনে।

মানস দেব, কলকাতা-৩৬

বাঙালির খেলা

কলকাতার দুই প্রধান ফুটবল দলের খেলা দেখতে বসে এমন অনুভূতি হল যে, খেলা বন্ধ করে উঠে পড়তে বাধ্য হলাম। আমি কোনও এক দলের আজন্ম সমর্থক, ৬৫ ঊর্ধ্ব ব্যক্তি। অনেক খুঁজেও কোনও খেলোয়াড়ের মধ্যে বাঙাল বা ঘটির আবেগ খুঁজে পেলাম না। বাইশ জন খেলোয়াড়ের মধ্যে মোট তিন জন বাঙালি। বিদেশি খেলোয়াড় প্রচুর। এদের মধ্যে ঘটি-বাঙাল আবেগ আশা করা সম্ভব? অথচ, দর্শকরা মাঠে আশা করে গিয়েছেন যে, খেলোয়াড় নিজের ক্ষমতাকে ছাপিয়ে গিয়ে দলকে জেতানোর জন্য খেলবেন, কারণ এটা বাঙাল-ঘটির লড়াই। এই আবেগে ঘরের মধ্যে অশান্তি শুরু হয়ে যায়, আনন্দ হলে নিজের সব কিছু বিলিয়ে দিতেও মন তৈরি হয়ে যায়। এটাই তো বাঙালির ফুটবল। এর পিছনে অনেক ইতিহাস আছে।

প্রচুর খরচ করে বিদেশি খেলোয়াড় এনে যতই স্কিল, বল কন্ট্রোল ইত্যাদি দেখানো হোক না কেন, মনে রাখতে হবে যে, আবেগ ছাড়া কিছু হয় না। সত্তরের দশকে যাঁরা কলকাতার ফুটবল দেখেছেন, তাঁরা জানেন, আবেগ এই খেলাকে কোন উচ্চতায় তুলতে পারে। ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান, দু’দলেরই কাছে আবেদন রইল, বাঙালি দিয়ে ফুটবল খেলান। না হলে অদূর ভবিষ্যতে ডার্বিতে দর্শক পাবেন কি না, সন্দেহ।

পার্থ প্রতিম দাঁ, কলকাতা-৪৮

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement