Education system

সম্পাদক সমীপেষু: শিক্ষার কাঠামো

শিশু শিক্ষা কেন্দ্র (৫-৯ বছরের শিশুদের জন্য) এবং মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র (৯-১৪ বছরের শিশুদের জন্য) শুরু হয়। শিক্ষকদের পরিবর্তে সম্প্রসারকদের দ্বারা পরিচালিত হত এই কেন্দ্রগুলি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৩ ০৪:০৮
Share:

২০০১ সালে সর্বশিক্ষা অভিযান প্রকল্পের সূচনা করে কেন্দ্রীয় সরকার। উদ্দেশ্য ছিল, ৫-৯ বয়সের বালক-বালিকাদের স্কুলমুখী করা। ফাইল ছবি।

দীর্ঘ দিন প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে কর্মসূত্রে যুক্ত থাকার অভিজ্ঞতা থেকে পঞ্চায়েতের স্কুল পরিচালনার বিষয়ে স্বাতী ভট্টাচার্যের প্রবন্ধটি (নির্বাচনী প্রশ্নমালা, ১৪-২) নিয়ে কিছু বলতে চাই। ২০০১ সালে সর্বশিক্ষা অভিযান প্রকল্পের সূচনা করে কেন্দ্রীয় সরকার। উদ্দেশ্য ছিল, ৫-৯ বয়সের বালক-বালিকাদের স্কুলমুখী করা। সেটি করতে গিয়ে যে সমস্যা দেখা গেল তা হল, প্রাথমিক স্কুল এবং শিক্ষকদের সংখ্যার অপ্রতুলতা। তখন শিশু শিক্ষা কেন্দ্র (৫-৯ বছরের শিশুদের জন্য) এবং মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র (৯-১৪ বছরের শিশুদের জন্য) শুরু হয়। শিক্ষকদের পরিবর্তে সম্প্রসারকদের দ্বারা পরিচালিত হত এই কেন্দ্রগুলি। জনবসতির এক কিলোমিটারের মধ্যে স্কুল না থাকলে এই কেন্দ্রগুলি স্থাপন করার নীতি নেওয়া হয়েছিল। পরিকাঠামোর অর্থের জোগান আসত সর্বশিক্ষা অভিযান থেকে, শৌচাগার ও পানীয় জলের ব্যবস্থা ইউনিসেফ-এর অর্থানুকূল্যে হত। পঞ্চায়েতগুলির সার্বিক সহযোগিতা পাওয়া গিয়েছিল, বালক-বালিকাদের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। সেতু পাঠ্যক্রম বা ব্রিজ কোর্স-ও চালু হয়েছিল।

Advertisement

তবে পঞ্চায়েত দফতরের পক্ষে দীর্ঘমেয়াদে প্রকল্পটি চালাতে অসুবিধা হচ্ছিল। গ্রামোন্নয়নের প্রকল্পগুলির রূপায়ণের পাশাপাশি এসএসকে-এমএসকে তত্ত্বাবধানের অতিরিক্ত দায়িত্ব নেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠল। পঞ্চায়েত দফতর সমগ্র প্রকল্পটি শিক্ষা দফতরের অধীনে দিতে চাইল। প্রথম দিকে শিক্ষা দফতরের দ্বারা অধিগ্রহণের নীতিগত সিদ্ধান্তও হয়েছিল, কিন্তু এখন তো দেখা যাচ্ছে শিক্ষা দফতর অনিচ্ছুক! নির্মিত পরিকাঠামোর ব্যবহার কী করে হবে, শিক্ষা সম্প্রসারকদের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা অনিশ্চিত। ও দিকে সংবাদমাধ্যমে দেখছি, সরকারি স্কুলগুলি শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে। ওই পরিকাঠামোর সদ্ব্যবহার করা, এবং প্রশিক্ষিত সম্প্রসারকদের আইন-কানুন মেনে স্কুলগুলিতে নিয়োগ কি করা যায় না?

সুবীর ভদ্র, ডানকুনি, হুগলি

Advertisement

শিক্ষকের সম্মান

‘নির্বাচনী প্রশ্নমালা’ প্রবন্ধটি শিশু শিক্ষা কেন্দ্র (এসএসকে) ও মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রের (এমএসকে) ছাত্রছাত্রীদের অবস্থার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এই প্রসঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পরিস্থিতিও তুলে ধরা দরকার। ১৯৯৯ সালে এসএসকে, এবং ২০০৩ সালে এমএসকে শুরু হওয়ার সময় এলাকার শিক্ষিত, চল্লিশোর্ধ্ব বেকার ব্যক্তিদের নিয়োগ করা হয়। এসএসকে-র সহায়ক-সহায়িকা এক হাজার টাকা বেতনে, এবং এমএসকে-র সম্প্রসারক-সম্প্রসারিকা দু’হাজার টাকা মাসিক বেতনে নিযুক্ত হন। ২০০৯ সালে রাজ্যে এসএসকে ছিল ১৬ হাজার, এমএসকে ১৯০০। এই বছর রাজ্য সরকার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাম্মানিক বৃদ্ধি করায় বেতন দাঁড়ায় যথাক্রমে ৬০০০ টাকা এবং ৮১০০ টাকা। তিন বছর অন্তর সাম্মানিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধির নির্দেশও দেওয়া হয়। ২০১৯ সালে এই বেতন হয় যথাক্রমে ১০,০০০ টাকা এবং ১৩,০০০ টাকা। ১০ মার্চ, ২০২৩ সালে জারি করা সরকারি নির্দেশিকায় সহায়িকাদের বেতন ১০,৬০৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০,৯২৭ টাকা করা হয়েছে, যাতে এঁদের প্রতি সরকারের প্রকৃত মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে।

এসএসকে-এমএসকে’র শিক্ষক-শিক্ষিকারা পঠনপাঠন, মিড-ডে মিল, কন্যাশ্রী-রূপশ্রী প্রভৃতি প্রকল্পের দায়িত্ব তো পালন করেনই, সেই সঙ্গে অফিস কর্মী, পিয়নের অনুপস্থিতিতে নিজেরাই বিদ্যালয়ের ঝাড়ু দেওয়া থেকে ঘণ্টা বাজানো, সবই করেন। বেশির ভাগ সহায়ক-সহায়িকা, সম্প্রসারক-সম্প্রসারিকাই শিক্ষা দফতরে নিয়মিত নিয়োগের আশায় পেশাগত প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রাথমিক-উচ্চ প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের সমতুল ডিগ্রি অর্জন করে নিয়েছেন। ২০১১ সালে মু‌খ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসএসকে-এমএসকেগুলিকে যথাক্রমে প্রাইমারি বোর্ড ও সেকেন্ডারি বোর্ডের অধীনে আনার কথা ঘোষণা করেন, এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পর্যায়ক্রমে স্থায়ীকরণের কথা বলেন। ১৯ জানুয়ারি, ২০১৩ রাজ্য মন্ত্রিসভা এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করে। ১৮ এপ্রিল, ২০১৩ সালে শিক্ষা দফতর এ ব্যাপারে ‘নো অবজেকশন’ চিঠি দেয়, ও সেই মোতাবেক কাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের মধ্যে অনুমোদনগুলি সম্পূর্ণ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু হয়নি। সম্মান রক্ষার্থে শিক্ষক-শিক্ষিকারা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হলে রাজ্য সরকার নিয়োগের শর্তে অসঙ্গতি দর্শায়। সরকারের প্রস্তাব মেনে প্রায় ১৩ হাজার শিক্ষক অবসরের বয়স ৬০ বছর করার প্রস্তাব মেনে নেন। কিন্তু তার পরেও স্থায়ীকরণ হয়নি। সমকাজে সমবেতন দেওয়ার নীতি কি এ ভাবেই পালন করবে সরকার?

সেখ সিরাজুল ইসলাম, আমতা, হাওড়া

ত্রিশঙ্কু স্কুল

‘নির্বাচনী প্রশ্নমালা’ প্রবন্ধ পড়ে জানা গেল, রাজ্যের ১৫ হাজার শিশু শিক্ষা কেন্দ্র ও ১৯০০ মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রের এখন ত্রিশঙ্কু অবস্থা— সেগুলি না শিক্ষা দফতরের অধীনে, না পঞ্চায়েত দফতরের। বারো বছর এই স্কুলগুলিতে কোনও শিক্ষক নিয়োগ হয়নি, ফলে ছ’-সাত লক্ষ পড়ুয়া কমেছে। বাম আমলে যেখানে ষোলো হাজারেরও বেশি শিশু শিক্ষা কেন্দ্র চলত, মোট স্কুলপড়ুয়াদের ১৫ শতাংশ পঞ্চায়েত পরিচালিত শিক্ষা কেন্দ্রে পড়ত, সেখানে আজ এই হাল কেন? আশঙ্কা হয়, রাজ্য সরকার ভবিষ্যৎ নাগরিকদের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়ে তাদের হাতে ভিক্ষার বাটি ধরিয়ে দিতে চায়। বিরোধী পক্ষও যদি শিক্ষার দাবিতে যথেষ্ট সরব না হয়, তা হলে স্বেচ্ছাচারী সরকার যা খুশি তা-ই করবে। জনমত গঠনে গণমাধ্যমেরও ভূমিকা রয়েছে। শুধু দুর্নীতির খবরে আবদ্ধ না থেকে, শিক্ষা ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের সার্বিক ব্যর্থতাকে জনসমক্ষে আনা প্রয়োজন।

শিখা সেনগুপ্ত, কলকাতা-৫১

নৈতিক প্রশ্ন

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের পক্ষ থেকে সরকার-পোষিত বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পূর্ণ দিবস কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছিল। মূল দাবি ছিল বকেয়া ডিএ প্রদান। ওই দিন বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির সভাপতি হিসাবে সারা দিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলাম। দেখলাম, শিক্ষক-শিক্ষিকারা উপস্থিতির খাতায় সই করলেন, কিন্তু একটিও ক্লাস নিলেন না। আংশিক সময়ের শিক্ষাকর্মী, অফিস কর্মচারী, উঁচু শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে কোনও ক্রমে কাজ হল। শিক্ষক-শিক্ষিকারা আগামী দিনের মানুষ তৈরির কারিগর। তাঁরাই এক দিনের জন্য বঞ্চিত করলেন ছাত্রছাত্রীদের, শুধুমাত্র ব্যক্তিগত দাবি পূরণের স্বার্থে। সমাজের এমন কিছু পেশা আছে, যেখানে সামগ্রিক স্বার্থই প্রাধান্য পায়। শিক্ষকরা সেটাও বিস্মৃত হলেন।

সৈকত বাগচী, গুপ্তিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, হুগলি

পোর্টালের তথ্য

‘বাংলার শিক্ষা’ পোর্টালে প্রকাশিত শিক্ষার্থীদের পরিসংখ্যান সঠিক নয়। পোর্টালের এমনই ব্যবস্থা যে, ট্রান্সফার সার্টিফিকেট না নেওয়া পর্যন্ত নাম কাটানো যায় না। পরীক্ষা না দিয়ে, স্কুলে এক দিনও না এসে পোর্টাল ধরে একের পর এক শ্রেণি উত্তীর্ণ হয়ে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া যায়। আমার স্কুলের এক জন ছাত্রী তিন বছর আগে অসুখে মারা গিয়েছে, এখনও সে পোর্টালে জীবিত রয়েছে! পোর্টালের এ এক বিরাট ফাঁক। শিক্ষকদের অনৈতিক বদলি ও অপ্রতুলতা, সরকারি প্রকল্প সামলানো, পরিকাঠামোর দুর্বলতা— এমন নানা কারণে শিক্ষাব্যবস্থায় কার্যত ডামাডোল চলছে। কোভিড-উত্তর পরিস্থিতিতে শিক্ষাব্যবস্থার পুনরুজ্জীবনের জন্য যে বিশেষ যত্নের প্রয়োজন ছিল, তা আদৌ মেলেনি। ফলে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে অগণিত ছাত্রছাত্রী।

শুভ্রা সামন্ত, বালিচক, পশ্চিম মেদিনীপুর

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement