Economy

সম্পাদক সমীপেষুঃ মিথ্যার জালে

আজকাল শাসক দল নিজ সত্তা বাঁচাতে যে ভাবে মরিয়া হয়ে ওঠে, সে ভাবে দেখি না প্রতিশ্রুতি রক্ষার স্বার্থে একজোট হয়ে কাজ করতে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২৪ ০৫:০০
Share:

প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

বিশ্বজিৎ ধর তাঁর ‘ব্যর্থতার প্রমাণপত্র’ (৯-৪) শীর্ষক প্রবন্ধে ভারতের বর্তমান অর্থনৈতিক চিত্রটি তথ্য, পরিসংখ্যান এবং নানান দৃষ্টান্তকে সাক্ষী রেখে যে ভাবে তুলে ধরেছেন, তাতে সন্দেহের অবকাশ থাকে না যে, ভারতীয় অর্থব্যবস্থার স্বাস্থ্য ক্রমশ উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। এর মূল কারণগুলি হল— প্রথমত, পরিকল্পনার সঙ্গে দূরদর্শিতার ফারাক। যেমন, নোটবন্দি। দ্বিতীয়ত, শিল্পপতিদের সঙ্গে অশুভ আঁতাঁত। যেমন, তাঁদের বড় বড় অঙ্কের দেনা মকুব করে দেওয়া কিংবা ব্যাঙ্কঋণ না মিটিয়ে দেশান্তরিত হয়ে যাওয়ার মতো অভূতপূর্ব ঘটনা। তৃতীয়ত, শ্রমজীবী মানুষ-সহ কৃষকদের আর্থিক বঞ্চনা। যেমন, কৃষকদের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বেঁধে না দেওয়া-সহ শ্রমজীবী মানুষের হাতে কাজ না থাকার মতো দুঃখজনক ঘটনা। সর্বোপরি, আর্থিক কেলেঙ্কারি। যেমন, নির্বাচনী বন্ড। সরকারি কর ফাঁকি দিয়ে কিংবা বেআইনি কাজ-কারবারে লিপ্ত থেকে বিপুল অর্থ উপার্জন করে রাজনৈতিক দলের ভান্ডারে মোটা অঙ্কের উৎকোচ ফেলে দিয়ে রেহাই পাওয়ার মতো ভয়ঙ্কর ঘটনা।

Advertisement

আজকাল শাসক দল নিজ সত্তা বাঁচাতে যে ভাবে মরিয়া হয়ে ওঠে, সে ভাবে দেখি না প্রতিশ্রুতি রক্ষার স্বার্থে একজোট হয়ে কাজ করতে। দেশে গত দশ বছরে ক’টি শিল্প স্থাপিত হয়েছে? কত জন ছেলেমেয়ে চাকরি পেয়েছেন? বরং দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকে তুলে দেওয়া হয়েছে বেসরকারি হাতে। এ ছাড়া, বিরোধী নেতৃত্বের সঙ্গে শত্রুতার মনোভাব অর্থনৈতিক উন্নয়নকে একপেশে এবং দুর্বল করে তুলছে। একতরফা ভাবে সংসদ থেকে সাংসদদের বহিষ্কার করে দেওয়া এবং তাঁদের অনুপস্থিতিতে একের পর এক বিল পাশ করিয়ে নেওয়া কোনও গণতান্ত্রিক দেশের লক্ষণ হতে পারে না। সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার আর এক ভয়ঙ্কর ব্যাধি। মুখে গণতন্ত্রের বুলি আওড়ানো, আবার তাকেই নিজ স্বার্থে শূলে চড়ানো— এই দ্বিচারিতা লজ্জার, বিপদেরও।

আসলে, দ্বিচারিতার স্বভাব নিয়ে কাজের কাজ কিছু হয় না। কেবলই বাস্তব চিত্রকে আড়াল করার নিষ্ফল প্রয়াসটুকু ছাড়া— কেন্দ্রে বিজেপি সরকার যেটি করছে। ভোটের আগে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেশের মানুষকে বোকা বানাতে পারে, কিন্তু প্রকৃত উন্নয়ন ঘটাতে পারে না। এই ভাবে আরও কিছু দিন চলতে থাকলে খুব শীঘ্রই অযোগ্য আর স্বার্থান্বেষী মানুষগুলির জন্য দেশের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে।

Advertisement

বাবুলাল দাস, ইছাপুর, উত্তর ২৪ পরগনা

শোচনীয়

বিশ্বজিৎ ধরের প্রবন্ধের সূত্রে এই চিঠি। অর্থনৈতিক বিষয়ে অসত্য বিবরণী যে বা যারা দেয়, তাদের উপর আর কোনও বিষয়েই আস্থা রাখা যায় না। কোনও দাবি করে বা প্রতিবাদ করে আন্দোলন এবং প্রচার চলতেই পারে। কিন্তু জনসভায় বা সাক্ষাৎকারে বিভিন্ন বিষয়ে শাসক দল যদি অনর্গল মিথ্যা বলে যায়, তা হলে তাদের থেকে কোনও প্রকার স্বচ্ছতা আশা করা যায় না।

অর্থনৈতিক বিষয়ে ভারতের যে তথ্যভান্ডার (অ্যানুয়াল সার্ভে অব ইন্ডাস্ট্রিজ়) থেকে সারা বিশ্বের বিভিন্ন অর্থনীতিতে গবেষণা হয় (আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কয়েকটি দেশ, জাপান, চিন ও ভারতের অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন কারণে), তা আর ইন্টারনেটে সহজলভ্য নয়। এর পিছনের কারণটা, সকলের কাছে অনুমেয়। প্রধানমন্ত্রীই এক সময় প্রচার করছিলেন, দেশ নাকি ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে চলেছে। কিন্তু তাতে এই সত্যগুলি কি পাল্টাবে যে, দেশের ১০ শতাংশ বা তার বেশি মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে থাকবে, ৫ শতাংশের বেশি শিশু অভুক্ত থাকবে, দেশের অর্থনৈতিক বিষয়ে আয়-ব্যয়ের সঠিক কোনও তথ্য জনগণের কাছে আসবে না। এমন ঘটনা কখনও একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ নয়।

সংসদে সরকার-বিরোধী কোনও আলোচনা হবে না, বরং অপ্রিয় প্রশ্ন করলে সংসদ থেকে বহিষ্কার করা হবে। সংবাদমাধ্যমগুলো সরকারের বদান্যতাপ্রাপ্ত শিল্পগোষ্ঠী দ্বারা পরিচালিত হবে। এক সঙ্গে এ সব পর পর সাজানো হলে যা বেরিয়ে আসে তা হল, দেশের বর্তমান অবস্থা নিঃসন্দেহে শোচনীয়।

সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-৫৯

পশ্চাদ্‌গামী

বিশ্বজিৎ ধর যথার্থই বলেছেন, সরকারের দাবির সঙ্গে বাস্তব মেলে না। সরকারের শুধু প্রচার চলছে। ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচারের জন্য গত তিন মাসে বিজেপি খরচ করেছে ৩৭ কোটি টাকা। অন্য দিকে, ওয়ার্ল্ড ইনইকোয়ালিটি ল্যাবের রিপোর্ট বলছে, ভারতের আয় বৈষম্যের হাল ব্রিটিশ আমলের থেকেও খারাপ। মোদীর মুখে ‘গ্যারান্টি’ আছে, কিন্তু মানুষের জীবনের হাল ফেরেনি। চাষিদের আয় যে দ্বিগুণ হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে, তারও কোনও তথ্য নেই। বেকারত্ব চরমে। আইএলও রিপোর্ট দাবি করছে, ভারতে ৮৩ শতাংশ কর্মহীন, ১২ শতাংশ শিক্ষিত যুবক বেকার। বৈষম্যের আড়ালে উন্নয়নের ফানুস উড়ছে। ধর্মের খেলা চলছে দক্ষিণ ভারত থেকে সমগ্র উত্তর ভারতে। রামমন্দির উদ্বোধনের দিনে ৫০টি দেশের প্রায় সাত হাজার মানুষকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। অথচ, রাজনৈতিক তহবিল নিয়ে প্রশ্ন করা যাবে না। নির্বাচনী বন্ড বন্ধ হওয়ার পরে প্রধানমন্ত্রী কটাক্ষ করে কৃষ্ণ-সুদামার প্রসঙ্গ এনেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, নির্বাচনী বন্ড বন্ধ হওয়ার কারণে আজ যাঁরা আনন্দ করছেন, আগামী দিনে তাঁরাই অনুতাপ করবেন।

মন্ত্রী পীযূষ গয়াল যতই বলুন তাঁর দল জাতপাতের রাজনীতি করে না, আইএইচএল রিপোর্ট বলছে, বিজেপি আমলেই মুসলিম বিদ্বেষ বেড়েছে। জাতীয়তাবোধে ফাটল ধরছে, বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব ভারতে। সনিয়া গান্ধী বলেছিলেন, বিজেপির হাতেই মিজ়োরাম আজ বিপন্ন। মণিপুরের আগুন আজও নেবেনি। ক্যাগের রিপোর্টে দুর্নীতির প্রমাণ রয়েছে। ভারত আজ দুর্নীতিতে বিশ্বে ৯৩তম স্থানে। পরিবেশ নিয়ে আপত্তি উড়িয়ে জঙ্গলে খনির বরাত দেওয়া হচ্ছে সরকারপন্থী শিল্পপতিদের। ‘দ্য হাউসহোল্ড কনজ়াম্পশন এক্সপেন্ডিচার সার্ভে’ জানাচ্ছে, মানুষের খাওয়া-দাওয়ার খরচ কমছে। প্রধানমন্ত্রী তাই আরও সময় চাইছেন এখন। নতুন চমক শুরু হয়েছে। প্রচারে তিনি বলছেন, গত দশ বছর ছিল ট্রেলার, এ বার উন্নয়ন হবে। মানুষ জানে, যা এত দিনে হয়নি, তা ভবিষ্যতেও হবে না। বিজ্ঞান কংগ্রেস ধুঁকছে, গবেষণাতে নামমাত্র বরাদ্দ। প্রতি দিন সাত কোটি শিশু অভুক্ত থাকে। রাষ্ট্রপুঞ্জ বলছে, এত বৈষম্যের পিছনে রয়েছে সরকারের সদিচ্ছার অভাব। তবু তিনি নীরব।

তন্ময় কবিরাজ, রসুলপুর, পূর্ব বর্ধমান

শব্দদানব

রাস্তায় কিছু ব্যক্তি তাঁদের মোটরসাইকেল নিয়ে তীব্র গতিতে বিকট আওয়াজ করতে করতে ছুটে যান। এতটাই বিকট আওয়াজ যে, তা সহ্য করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে যেমন শব্দদূষণ হচ্ছে, তেমনই তীব্র গতিবেগের দরুন যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাই, এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হোক।

কালী শঙ্কর মিত্র, ভদ্রেশ্বর, হুগলি

অমিল পরিবহণ

এই প্রবল গরমে একটু বেলা গড়ালেই রাস্তাঘাট শুনশান হয়ে যায়। অটো প্রায় নেই, বাসও না থাকার মতোই, ট্যাক্সি-অ্যাপ ক্যাবেরও দেখা মেলে না। অথচ, মানুষের প্রয়োজন থেমে থাকে না। দুপুরের দিকে কোথাও বেরোতে হলে মেট্রো ছাড়া গতি নেই। অথচ, যাঁদের গন্তব্য মেট্রো পথে নয়, তাঁরা কী ভাবে যাবেন? বাসের অভাব অবিলম্বে মেটানোর ব্যবস্থা করা হোক।

তিথি মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-৫৭

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement