সম্প্রতি ভারতের বিভিন্ন বিজেপি-শাসিত রাজ্যে ভিন্ন ধর্মে বিয়ে রুখতে যে আইন আনা হচ্ছে, তার বিরোধিতা করে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন একটি টিভি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, এটা অসাংবিধানিক। যে কোনও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষই তাঁর নিজের ধর্ম বদলে অন্য ধর্ম গ্রহণ করতে পারেন। ‘লাভ’ বা প্রেমের মধ্যে কোনও ‘জেহাদ’ থাকতে পারে না।
অতীতে আমরা দেখেছি, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, কাজী নজরুল ইসলাম, প্রাবন্ধিক-গবেষক আবু সয়ীদ আইয়ুব, ক্রিকেটার মনসুর আলি খান পটৌডি, সঙ্গীতশিল্পী ফিরোজা বেগম, সরোদিয়া আমজাদ আলি খান প্রমুখ ভালবেসেই ভিন্ধর্মে বিয়ে করেছিলেন। এর মধ্যে ‘জেহাদ’ ছিল বলে কেউ শোনেনি।
তবে বেজায় চটেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। জানিয়েছেন, আমপান বা করোনা সঙ্কটের সময়ে অমর্ত্য সেনকে দেশে কোথাও দেখা যায়নি। তাই তাঁর কাছ থেকে নীতিকথা শুনতে চান না তিনি। তা তিনি শুনতে না-ই পারেন। তবে দিলীপ ঘোষের মনে রাখা উচিত, আমপান বা করোনার মতো সঙ্কটের মোকাবিলা করার দায়িত্ব রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের, অমর্ত্য সেনের নয়। তাঁর কাজ বিশ্ব জুড়ে, সমগ্র মানবজাতির কল্যাণের। তিনি কোন দেশে থাকছেন, সেটা বড় কথা নয়। তাঁর কাজের মধ্য দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের জনগণ উপকৃত হচ্ছেন, এটাই বড় কথা। দলীয় রাজনীতির ঘেরাটোপে আবদ্ধ দিলীপবাবুর মতো রাজনীতিকরা তা ভাবতেই পারেন না। অমর্ত্য সেনের নীতিকথা দিলীপ ঘোষ না শুনলে তাঁর কিছু এসে যায় না। তাঁর বক্তব্য শোনার জন্য, তাঁর সুগভীর চিন্তাধারার আলোকে আলোকিত হওয়ার জন্য এই বিশ্বের নানা প্রান্তে বসবাসকারী শিক্ষিত মানুষ সাগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন।
সমীর কুমার ঘোষ
কলকাতা-৬৫
অমৃতসমান
ভারতীয় জনতা পার্টির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের লাগাতার বচন শুনে সত্যিই বলতে সাধ হয়— তোমার প্রতি চেয়ে আমাদের বিস্ময়ের শেষ নেই। ঘোষবাবুর মুখে কিছুই আটকায় না। সেটা বড় কথা নয়। ব্রেক-ফেল বাচাল তো রাজনীতির হাটে কাঁড়ি কাঁড়ি পাওয়া যায়। কিন্তু তাঁর বিশেষত্ব হল, কুকথার নিশানা বাছতে গিয়ে তিনি বাছবিচার করেন না। অমর্ত্য সেন থেকে শঙ্খ ঘোষ— যাকে যা খুশি অনায়াসে বলে দিতে পারেন। এই নিরঙ্কুশ সাম্যবাদের কোনও তুলনা নেই। অনেকেই তাঁর সমালোচনা করে বলেন— ছি ছি, কী অসভ্য! ঠিকই, ছেলেমেয়ে জনসমক্ষে এমন কথা বললে অভিভাবকরা কড়া বকুনি দেবেন। কিন্তু বিজেপির রাজ্য সভাপতি যদি নিজেকে সভ্যতা-অসভ্যতার ঊর্ধ্বে বলে মনে করেন, ঠেকায় কে? মানী লোকের মান রেখে কথা বলতে হবে— কে দেয় এ সব তুচ্ছ বিধান?
আর একটা সন্দেহ হয়। কে শঙ্খ ঘোষ, কে অমর্ত্য সেন, কী তাঁদের কাজ, কেন তাঁরা সম্মানিত— এ সব একটু-আধটু জানা থাকলে কুকথা বলার আগে এক বার ভেবে দেখা যায়, হয়তো বা দু’চারটে গালিগালাজ গলা অবধি এসে আটকে যেতে পারে। কিন্তু একেবারে কিছুই না জানলে সেই বালাই থাকে না। ওই যে বলেছে না— অজ্ঞতাতেই আনন্দ! দিলীপ ঘোষও কি সেই পরম আশীর্বাদে ধন্য?
নবীন অধিকারী
কলকাতা-১
আফসোস
অমর্ত্য সেনের মেধা ও মনীষা বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের শংসাপত্রের অপেক্ষায় নেই। তবে বাঙালির শ্রদ্ধার এবং ভালবাসার মানুষদের প্রতি দিলীপবাবুদের ক্রমাগত বিষোদ্গার ভোটবাক্সে প্রতিফলিত হলেও হতে পারে। সতর্ক না হলে পরে আফসোস করতে হবে।
পার্থপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা-৫০
কুৎসিত
বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ আরও এক বার ভারতরত্ন অমর্ত্য সেনকে কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ করলেন। এটি অত্যন্ত নিন্দনীয়। অতীতেও দিলীপবাবু বহু বার এই নোবেলজয়ীকে অসম্মান ও অপমান করেছেন। প্রত্যুত্তরে অমর্ত্য সেন বরাবরই জবাব না দিয়ে নীরব থেকেছেন, যা তাঁর ভদ্র, মানবিক আচরণকে ফুটিয়ে তুলেছে। তিনি সর্বদা অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্মনিরপেক্ষতা ও একতার কথা বলেন।
প্রশ্ন জাগে, এক জন অভিজ্ঞ নেতা তথা রাজনীতিক হিসেবে দিলীপবাবু এমন মন্তব্য করেন কী করে? বার বার তাঁর এই জঘন্য আচরণ ইঙ্গিত করে যে, তিনি কোনও রাজনৈতিক দলের রাজ্য সভাপতি হওয়ার যোগ্য নন! ইতিমধ্যে কিছু বিদ্বজ্জন, এবং তৃণমূল, বাম ও কংগ্রেস নেতা অমর্ত্যবাবুর উপর আক্রমণের নিন্দা করেছেন। কিন্তু আরও তীব্র প্রতিবাদ হওয়া প্রয়োজন। বিধানসভায় এ ব্যাপারে আলোচনা করা উচিত, এবং সর্বদলীয় বৈঠক ডেকে নিন্দা প্রস্তাব এনে দিলীপ ঘোষকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা উচিত। বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বেরও উচিত এমন আচরণের সমালোচনা করা। নিজের ও দলের সুনাম রক্ষার্থে দিলীপ ঘোষ অমর্ত্য সেনের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চান।
পঙ্কজ সেনগুপ্ত
কোন্নগর, হুগলি
বিরোধীর শাস্তি
ভারত গণতান্ত্রিক দেশ হলেও, বিরুদ্ধ মত সহ্য করে না কোনও দল, বিশেষ করে বিজেপি। কোনও বিষয়ে মতের মিল না ঘটলেই নেমে আসবে ব্যক্তির উপর আক্রমণ, অপবাদ, মিথ্যা মামলা, এমনকি কারাবাস। এর শিকার শুধুমাত্র রাজনৈতিক কর্মী নয়, সমাজসেবী ও বিদ্বজ্জনরাও। তালিকায় রয়েছেন অমর্ত্য সেনও। তিনি দীর্ঘ দিন বিজেপির আর্থিক নীতি, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দর্শন ও কার্যকলাপের সমালোচনা করে আসছেন। সুতরাং বিজেপি সামান্য সুযোগ পেলেই যে তাঁর সততা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে চরিত্রহনন করবে, এ তো প্রত্যাশিত। ঘটেছেও তা-ই। বিশ্বভারতীতে একটি রাস্তাকে কেন্দ্র করে যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, তাতে তাঁকে জড়াতে বিজেপি বিন্দুমাত্র দেরি করেনি। কারণ, ওই রাস্তার উপরেই তাঁর বাড়ি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অমর্ত্য সেনের উপর বেআইনি ভাবে জমি দখল করার অভিযোগ চাপিয়েছেন। রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নের এটাই অবশ্যম্ভাবী ফল।
কুমার শেখর সেনগুপ্ত
কোন্নগর, হুগলি
মাদ্রাসার সাফল্য
‘ভুল ধারণা থেকেই বিদ্বেষ শুরু’ (৩০-১২) নিবন্ধে সাবির আহমেদ বলেছেন, “সব পরিচয় চাপা পড়ে মুসলমান পরিচয়টিই কর্তৃপক্ষের কাছে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।” আমার প্রশ্ন, বাঙালি মুসলমানদের একটি অংশ কি সব পরিচয় চাপা দিয়ে মুসলমান পরিচয়টি সামনে আনতে বেশি আগ্রহী নন? তাঁদের নামে বাংলা থাকে না, থাকে আরবি। পোশাকেও তাঁরা তাঁদের ধর্মীয় পরিচয়টিকে প্রাধান্য দেন। অন্য দিকে, আমার শহর হাওড়ার বহু আবাসনে হিন্দু ও মুসলমান পরিবার দীর্ঘ দিন পাশাপাশি বসবাস করছেন। কোথাও সমস্যার কথা শুনিনি। অনেক কাশ্মীরি মুসলমান পোশাক বিক্রেতা দোকান ও ঘর ভাড়া নিয়ে রয়েছেন এই শহরেই।
সাবির আহমেদ জানিয়েছেন, “পশ্চিমবঙ্গের মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মতো পেশায় সফল হয়েছেন অনেকে।” জানার আশায় রইলাম, বিগত জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় কত জন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সুযোগ পেয়েছেন। আমার পরিচিত যে ক’জন মুসলিম পরিবারের ছাত্রছাত্রী ডাক্তারি ও ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে সরকারি কলেজে পড়ছেন বা পাশ করেছেন, তাঁরা কেউ মাদ্রাসার পড়ুয়া ছিলেন না।
কৌস্তভ বন্দ্যোপাধ্যায়
হাওড়া
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।