Education System

সম্পাদক সমীপেষু: উপেক্ষিত স্কুলশিক্ষা

সরকারি স্কুলগুলির ভেঙে পড়া পরিকাঠামোর কথা কারও অজানা নেই। যথেষ্ট শিক্ষক নেই, ক্লাসরুম নেই, শিক্ষকদের শিক্ষা-বহির্ভূত নানা কাজে লাগানো চলছে দীর্ঘ দিন ধরে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৪ ০৪:৩৩
Share:

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

‘অ-শিক্ষার ভোট’ (৫-৩) সম্পাদকীয়ের সঙ্গে একমত। নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার আগেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর থাকার জন্য পড়াশোনা বন্ধ করে স্কুলের কথাই ভাবা হল! বাহিনীর থাকার জন্য আর কি কোনও জায়গা পাওয়া গেল না? কলকাতা তো বটেই, জেলাগুলিতেও এখন অনেক কমিউনিটি হল, স্টেডিয়াম হয়েছে, সরকারি বিল্ডিং রয়েছে। অনায়াসে সেগুলিতে বাহিনীকে রাখা যেত।

Advertisement

এই ঘোষণার ফলে সব মিলিয়ে প্রায় মাস আড়াই স্কুল বন্ধ থাকবে। তার পরে পড়বে গরমের ছুটি। মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বহু স্কুল বন্ধ ছিল, কিছু স্কুল আংশিক বন্ধ ছিল। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্যও বহু স্কুল ছুটি দেওয়া হয়েছে। তার পর আবার যদি কেন্দ্রীয় বাহিনীর জন্য স্কুল বন্ধ থাকে, তবে ছাত্রছাত্রীদের সিলেবাস শেষ হবে কী করে? এ সব কথা নির্বাচন কমিশন কিংবা স্কুল শিক্ষা দফতর এক বারও ভাবল না?

সরকারি স্কুলগুলির ভেঙে পড়া পরিকাঠামোর কথা কারও অজানা নেই। যথেষ্ট শিক্ষক নেই, ক্লাসরুম নেই, শিক্ষকদের শিক্ষা-বহির্ভূত নানা কাজে লাগানো চলছে দীর্ঘ দিন ধরে। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেহাল দশার কারণে ইতিমধ্যেই মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত পরিবার সন্তানদের বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে নিয়ে গিয়েছে। ফলে ছাত্রছাত্রীর অভাবে সরকার নিজেই ৮২০৭টি স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পড়াশোনা আরও ব্যাহত হলে সরকারি স্কুলগুলিতে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা আরও কমবে এবং আরও বহু স্কুল বন্ধ হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হবে। রাজ্য সরকারই বা কেন পড়াশোনার ক্ষতি করে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে স্কুলে রাখার অনুমতি দিল? কেন্দ্রীয় সরকারেরও কি উচিত ছিল না বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবার?

Advertisement

আজ সেনা রাখার জন্য কিছু স্কুল বন্ধ করা হচ্ছে, আগামী কাল অন্য কোনও অজুহাতে তা বন্ধ হবে। এর অনেক নজির রয়েছে। কোনও অজুহাতেই স্কুল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া যায় না।

সমর মিত্র, কলকাতা-১৩

ছুটির বহর

‘অ-শিক্ষার ভোট’ শীর্ষক সম্পাদকীয়তে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষার বিষয়টির যথাযথ উপস্থাপনা হয়েছে। শিক্ষা তার গুরুত্ব হারিয়েছে এ রাজ্যে। এই বারের লোকসভা ভোটে ন’শোর বেশি কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী আসছে, তারা থাকবে কোথায়! হাতের কাছে সরকারি স্কুল বিল্ডিং আছে, ওখানেই ঢুকিয়ে রাজ্য প্রশাসন নিশ্চিন্তে থাকবে। প্রশ্ন হল, স্কুলের পড়াশোনা তা হলে হবে কী করে? কোনও কোনও স্কুল এক পাশে জওয়ানদের জায়গা করে দিয়ে বাকি অংশে কিছু ক্লাসের পড়াশোনা চালাচ্ছে। স্কুলের সীমিত সংখ্যক শৌচাগারের উপর বাহিনীর চাপ বাড়লে স্কুলের ছেলেমেয়েরা যায় কোথায়! সারা বছর নানা অছিলায় স্কুল শিক্ষার দফারফা হয়। অতিমারি কালের আগে থেকেই এই রেওয়াজের শুরু। তার উপর সরকারি ছুটির বহরও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। এর পর ছেলেমেয়েরা পড়াশোনায় মন বসায় কী ভাবে!

শিক্ষা তলানিতে ঠেকে যাওয়ার আগে এ নিয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভাবনা যেমন সংশ্লিষ্ট দফতর বা রাজ্য সরকারের ভাবা উচিত, তেমনই নিরাপত্তা বাহিনীর মাসের পর মাস থাকার বন্দোবস্ত করতে বিকল্প ভাবনা ভাবা দরকার প্রশাসনের। আলো-জল’সহ আধুনিক ব্যবস্থা সম্বলিত বড় বড় হলঘরের কমিউনিটি সেন্টার এক-একটি লোকসভা কেন্দ্রের জন্য কেন্দ্রীয় ভাবে বানিয়ে রাখলেই স্কুল বা স্কুলশিক্ষার উপর এই চাপ পড়বে না। সরকারি পতিত জমি যা পড়ে আছে, তাতে এ প্রকল্প সরকার নিয়ে প্রয়োজনে স্থানীয় সামাজিক অনুষ্ঠানে ভাড়াও দিতে পারে। ভোটের সময় কেন্দ্রীয় বাহিনী, বা স্থানীয় পুলিশ ফোর্সের থাকার কাজেও ব্যবহৃত হতে পারে এই কমিউনিটি হলগুলো। এমনিতেই স্কুলছুটের সংখ্যা বেড়ে গিয়ে বা নিয়মিত ভাবে ছাত্র অনুপস্থিতির কারণে প্রচুর সরকারি স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার জোগাড়। স্কুলশিক্ষা তার গুরুত্ব হারালে যুব সমাজের হাল কী হবে, সহজেই অনুমেয়।

সৌম্যেন্দ্র নাথ জানা, কলকাতা-১৫৪

বিকল্পের খোঁজ

আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর আগমনে বেশ কিছু সরকারি স্কুল-কলেজে পঠন-পাঠন বন্ধ হতে বসেছে। যখনই কোনও ভোট হয়, তখন ৯৫ শতাংশ ভোটকেন্দ্রই তৈরি হয় কোনও না কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এর ফলে বেশ কিছু দিন পড়াশোনা বন্ধ থাকে। আবার প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার হিসেবে যত সংখ্যক ভোটকর্মী নেওয়া হয়, তারও সিংহভাগ শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী। তার পরেও কর্মী সঙ্কুলান না হলে তখন অন্যান্য সরকারি দফতর থেকে লোক নেওয়া হয়। ভোটকর্মীদের ট্রেনিং-এর দিনগুলো ধরলে চার-পাঁচ দিনেরও বেশি অচল থাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি।

এখন বেশির ভাগ ভোটই দফায় দফায় সম্পন্ন হয়। মাসাধিক কাল কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রতিটি রাজ্যের মতো এ রাজ্যেও থাকে। এ বছর লোকসভা ভোট ঘোষণার অনেক আগে থাকতেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর আসা শুরু হয়ে গেছে। আশা করা যায়, ভোটের ফল ঘোষণার পর আরও কিছু দিন তারা থাকবে। সব রাজনৈতিক দলের মানসিক স্থিতি এলে তবেই তারা বিদায় নেবে (নির্বাচন কমিশনের অনুমতি পেলে)। অর্থাৎ, তারা প্রায় চার মাসের কাছাকাছি এ রাজ্যে থাকবে। কিন্তু তারা এখানে থাকবে কোথায়? বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা এই কয়েক মাস কোথায় শিক্ষালাভ করবে?

শিক্ষা-সংক্রান্ত বিষয়ে বাজেটে ব‍্যয় বরাদ্দ ও নানা গালভরা উন্নয়নের খতিয়ান কেন্দ্র ও রাজ‍্য উভয় সরকারের মন্ত্রীদের মুখে চির কালই শোনা যায়। কিন্তু নির্বাচনের সময় ছাত্রছাত্রীদের পঠন-পাঠনে যাতে ব্যাঘাত না ঘটে, তার চেষ্টা কোনও সরকার কখনও করেছে কি?

বিভিন্ন সময়ে কেন্দ্রের বিভিন্ন সরকার দাবি করে এসেছে যে, তারা নাকি নির্বাচনী ক্ষেত্রে নানা রকম সংস্কারে উদ্যোগী হয়েছে। কিন্তু এটা অত‍্যন্ত হতাশাজনক যে, কোনও সরকারই ভোটের কারণে পঠন-পাঠন ব্যাহত হওয়া আটকাতে কোনও সুপারিশ করেনি, বা আইনসভায় (লোকসভা বা বিধানসভা) প্রস্তাব আনেনি। নির্বাচন কমিশনও এ ব্যাপারে কোনও নীতি গ্রহণ করতে পারেনি। কোনও শাসক দলের প্রথম সারির নেতা-মন্ত্রীকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে তাঁরা সম্ভবত বলবেন যে, ওটা দু’-এক দিনের ব্যাপার, গুরুতর সমস্যা নয়; আর বিরোধী দলের নেতাকে প্রশ্ন করলে বলবেন যে, ওটা শাসক দলের সদিচ্ছার অভাব এবং ব‍্যর্থতা। কিন্তু বিরোধীরা যখন শাসক ছিলেন, বা এখনও যেখানে শাসক আছেন, সেখানে কী করেছেন? তা জানতে চাইলে হয় তাঁরা উত্তর এড়িয়ে যাবেন, নয়তো কিছু মিথ্যা কথা বলে দেবেন।

বিকল্প পথ নিশ্চয়ই আছে। বড় কোনও ময়দানে বা স্টেডিয়ামে অস্থায়ী তাঁবু তৈরি করে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে রাখা যেতে পারে। সেখানে কয়েক মাস থাকার মতো সেনা-জওয়ানদের প্রয়োজনীয় যাবতীয় ব‍্যবস্থা করা যেতে পারে। সেখান থেকে বাসে করে প্রতি দিন বিভিন্ন থানা এলাকায় পৌঁছে দেওয়া যেতে পারে। খাস কলকাতা শহরে ও সংলগ্ন এলাকায় এই ধরনের কিছু স্থান আছে; যেমন— কলকাতা ময়দান (যা সেনাবাহিনীরই অধীনে), সল্ট লেক সেন্ট্রাল পার্ক, মিলনমেলা প্রাঙ্গণ, হাওড়া ডুমুরজলা স্টেডিয়াম, নিউ টাউনের বেশ কিছু ফাঁকা জায়গা ইত্যাদি। কোনও জেলায় এই ধরনের মাঠ বা ফাঁকা সরকারি জমির অভাব হবে না। প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনে অনেক দক্ষ ও বিশেষজ্ঞ মানুষ আছেন। তাঁরা চাইলে এই প্রস্তাবের চেয়েও বাস্তবসম্মত, বিজ্ঞানসম্মত পথ আবিষ্কার করতে পারেন।

ইন্দ্রনীল ঘোষ, লিলুয়া, হাওড়া

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement