Dearness allowance

সম্পাদক সমীপেষু: আর কত গড়িমসি?

রাজ্য সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগীরা ৩১ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা না পেয়ে বসে আছে। এটি না দেওয়ার ঢিলেমি বা সরকারি পদ্ধতি জনমনে হতাশা সৃষ্টি করছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৫:১৮
Share:

সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে রাজ্য প্রশাসন।

‘সময় কিনতেই রাজ্য ডিএ নিয়ে কোর্টে’ (১২-৮) শীর্ষক প্রতিবেদনটি পড়ে মনে হল, শুধু সময় কেনা নয়, রাজ্য প্রশাসন এক প্রকার সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনাল ঘুরে মহামান্য হাই কোর্টের নিদান পেয়েও সরকারের কাজ হচ্ছে যত পারা যায় সময় কাটিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করে সরকারি কর্মচারীদের স্বার্থরক্ষার চেষ্টা ছেড়ে দেওয়া। সময়ের নিরিখে বাজার মূল্যসূচক মেনে কর্মচারীদের ডিএ পাওয়া ন্যায্য অধিকার, রাজ্যের উচ্চ ন্যায়ালয় এমত নিদান দিয়ে সময় নির্ধারণ করে ডিএ মেটানোর নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও, কোন যুক্তিতে সরকার দীর্ঘসূত্রতার পথ নিচ্ছে, বোঝা দায়। প্রশাসন কারও মর্জিমাফিক চলতে পারে না। একটা ব্যবস্থা মেনে প্রশাসন চলে। সেটি ভেঙে শুধু পরিবর্তনের নমুনা দেখাতে চাইলে, বা নিজেকে ব্যতিক্রমী প্রমাণ করতে চাইলে তা শাসকের সম্পর্কে বিরূপতাই তৈরি করে। রাজ্য সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগীরা ৩১ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা না পেয়ে বসে আছে। এটি না দেওয়ার ঢিলেমি বা সরকারি পদ্ধতি জনমনে হতাশা সৃষ্টি করছে।

Advertisement

এমনিতেই কর্মসংস্থানের তেমন সুযোগ নেই। শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা পরীক্ষা পাশ করেও বছর দেড়েক রাস্তাঘাটে নিজেদের কাজের দাবিতে রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ধর্নায় বসে দিন কাটাচ্ছে। যে কাজ সময়মতো করলে নানা সমস্যা এড়ানো যায়, ওখানেই সরকারি প্রচেষ্টায় ঢিলেমি। সব বিষয়ে সিঙ্গল বেঞ্চের (হাই কোর্টের) রায়ের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চ বা সুপ্রিম কোর্ট যাওয়া তো খরচসাধ্য। জনস্বার্থ আটকাতে জনগণের টাকায় রাজ্যের বার বার কোর্টের দরজায় যাওয়া রাজকোষকে খালি করার শামিল! খরচের যে সব জায়গায় লাগাম পরানোর, সেই দিকে নজর দিয়ে সরকারি কর্মী ও পেনশনভোগীদের ন্যায্য প্রাপ্তিকে মেনে নেওয়া প্রশাসনিক সুবিচার বলে মনে হবে।

সৌম্যেন্দ্র নাথ জানা, কলকাতা-১৫৪

Advertisement

দয়া নয়

সরকারও মহামান্য হাই কোর্টের আদেশ মানতে চায় না। ডিএ মামলা নিয়ে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে কোর্টে কোর্টে ঘুরতে হয়। ডিএ মামলা প্রথমে স্যাটে শুরু হয়। স্যাট-এর বিচারক অমিত তালুকদার আদেশে বলেছিলেন ‘ডিএ সরকারের দয়ার দান’। পরে স্যাটের বিচারক রঞ্জিত কুমার বাগ আদেশে বলেন “ডিএ সরকারের দয়ার দান নয়, মৌলিক অধিকার।” তার পর সেখান থেকে কলকাতা হাই কোর্টে শুনানির পর সুপ্রিম কোর্ট যায়। সুপ্রিম কোর্ট থেকে হাই কোর্ট হয়ে আবার স্যাটে যায়। স্যাট হয়ে হাই কোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ। তার পর ডিভিশন বেঞ্চ। মে মাসে বিচারপতি হরিশ টন্ডন এবং বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্তের ডিভিশন বেঞ্চের আদেশে বলা হয়, ডিএ সরকারি কর্মচারীদের ন্যায্য অধিকার, চাকরির অন্যতম মৌলিক শর্ত। তিন মাসের মধ্যে সরকার ৩১% বকেয়া ডিএ সরকারি কর্মচারীদের দিতে বাধ্য থাকবে। এমন আদেশে সরকারি কর্মচারীরা আশায় বুক বাঁধেন তাঁদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্যে। সমকাজের জন্যে সমবেতন মৌলিক অধিকার বইকি। কিন্তু দুর্ভাগ্য, কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের আদেশকে মান্যতা না দিয়ে নির্ধারিত সময়ের শেষ লগ্নে ওই আদেশের পুনর্বিবেচনার জন্যে সরকার হাই কোর্টে আবেদন জানায়। সময় নষ্ট করে সরকার সরকারি কর্মচারীদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে তৎপর হয়, যা কাম্য নয়। অন্য দিকে, সরকারি কর্মচারীদের পক্ষ থেকে আবেদনকারীরা ঠিক করেছেন আদালত অবমাননার জন্যে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হবেন।

এখন রিভিউ পিটিশন ভার্সেস কনটেম্পট অব কোর্ট চলবে। জানি না, মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে আর কত সময় লাগবে?

সুবল সরদার, মগরাহাট, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

নিজের রুচি

‘জ্যাঠামশায়ের নিদান’ (১১-৮) শীর্ষক সম্পাদকীয় প্রসঙ্গে সহমত পোষণ করে কিছু বলতে চাই। পেশার সঙ্গে ব্যক্তিগত পরিসরে পোশাকের কোনও যোগ নেই। পোশাকের জন্য উক্ত শিক্ষিকার পেশাগত পরিসরে কোনও গাফিলতি পাওয়া গেছে কি? অলিখিত নিয়মে সব ধরনের পেশার জন্যই কিছু পোশাক নির্দিষ্ট হয়ে থাকে। সেটা অবশ্য শুধুমাত্র কর্মক্ষেত্রের পরিসরেই সীমাবদ্ধ, তার বাইরে নয়। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা পেশাগত পরিচয়টিই ব্যক্তির সামগ্রিক পরিচয় নয়‌। প্রতিটি ব্যক্তিরই পেশাদার জীবনের বাইরে ব্যক্তিগত জীবন ও পরিসর রয়েছে। সেখানে অন্যের প্রবেশ করার অধিকার নেই। কাজের জায়গায় এক জন কর্মীর মূল্যায়ন হওয়ার কথা তাঁর কাজ, দক্ষতার নিরিখে। এখানে বর্জন-নীতি চলতে পারে না। ঠিক যেটা হয়ে গেল এই শিক্ষিকার সঙ্গে। মনে রাখতে হবে, পোশাক এক জন ব্যক্তির ‘চয়েস’ মাত্র। বর্তমান সময়ে যে কোনও বিষয়ই সমাজমাধ্যমের আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে। কিন্তু এ সবের ফলে যেটি আরও ব্যক্ত হয়ে ওঠে, তা হল ‘নীতিপুলিশি’র তৎপরতা। পেশা ও ব্যক্তিগত জীবন আলাদা। তাই থাকাই শ্রেয়। কে কী করবেন বা পরবেন, তাতে ছড়ি ঘোরানো নীতিপুলিশি। নীতিপুলিশি কখনওই সমর্থনযোগ্য নয়। প্রতিষ্ঠান যদি ব্যক্তির বিরুদ্ধে নীতিপুলিশি করে তা যেমন নিন্দনীয়, তেমনই রাষ্ট্রের মতো বৃহৎ প্রতিষ্ঠান যদি তুলনায় হীনবলের উপর নীতিপুলিশি চালায়, তাও সমালোচনার যোগ্য।

অভিজিৎ ঘোষ, কমলপুর, উত্তর ২৪ পরগনা

দলিত নিগ্রহ

‘জল খেতে গিয়ে জীবন গেল দলিত ছেলেটার (১৫-৮) শীর্ষক সংবাদের প্রেক্ষিতে কিছু কথা। ন’বছরের ইন্দ্র মেঘওয়ালের মৃত্যু কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়,বরং ভারতের গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ঘটে যাওয়া অসংখ্য দলিত বিদ্বেষের ‘শিরোনাম না হওয়া’ ঘটনাগুলির মধ্যে একটি খণ্ডচিত্র মাত্র। বাস্তবিকই এই ভারত জুড়ে বর্ণবিদ্বেষের শিকার হন ছাত্র, যুব, মহিলা, পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই। ঘটনাপরম্পরা সংবাদ শিরোনাম না হলে শিক্ষিত সমাজের মননে আঘাত করে না।

যেখানে নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্য থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনযাপনের সবটাই রাজনীতি নির্ভর, সেখানে মাঝেমধ্যে এমন ঘটনা সত্যিই বিড়ম্বনায় ফেলে। বি আর আম্বেডকর সংবিধান রচনার প্রারম্ভিক পর্যায়ে দলিত সম্প্রদায়ের মানুষের উত্তরণের পথ প্রশস্ত করে দিয়েছিলেন সংবিধানে তাঁদের জন্য আলাদা অনুচ্ছেদ রচনা করে। এই স্বাধীন ভারতেই সংবিধানের সহায়তায় অসংখ্য মানুষ জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। অগণিত সরকারি আধিকারিক থেকে শিক্ষক, চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার উঠে এসেছেন দলিত সম্প্রদায় থেকে। তা সত্ত্বেও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দলিত নিগ্রহ বন্ধ হয়নি। রাজনীতির কারবারি যাঁরা, তাঁদের শুধু ভোটের সময় মনে পড়ে দলিতদের কথা। তাঁরা ভোট এলেই দলিতদরদি সাজেন, তাঁদের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজন করেন এবং ভোট বৈতরণি পার হওয়ার পর বেমালুম ভুলে যান দলিতদের কথা। এই দৃশ্যটা ভারতবাসীর চোখ-সওয়া হয়ে গিয়েছে এবং বিনা তর্কে আমরা মেনে নিচ্ছি বলেই সমাজের এই অন্ধকারটুকু কিছুতেই দূর হয় না।

দলিত ছেলেটার পরিবারের জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ এই ভয়ঙ্কর অপরাধের পরিসমাপ্তি ঘটাবে না। অবিলম্বে নিজেদের চেতনাবোধকে জাগ্রত না করলে আরও একশো বছর এই নির্যাতনের সাক্ষী থাকতে হবে আমাদের। সম্প্রতি ভারতের রাষ্ট্রপতি হয়েছেন দ্রৌপদী মুর্মু। কিন্তু অতীতের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে, কোনও এক দলিত নাগরিক দেশের উচ্চপদে অধিষ্ঠিত হলেই বহু দিন ধরে প্রতিষ্ঠিত অচলায়তনের সিংহদ্বার ভেঙে যায় না। এর জন্য চাই আন্তরিকতা এবং সততা। অত্যাচারীকে কড়া শাস্তি এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধ করবে না। একমাত্র অত্যাচারিতের পক্ষে উন্মুক্ত কণ্ঠস্বর পারবে সর্বাত্মক সাফল্য অর্জন করতে। ভারতের শাসক এবং নাগরিকদের এটুকুই অনুরোধ।

রাজা বাগচী, গুপ্তিপাড়া, হুগলি

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement