কলকাতার কড়চায় ‘হেমচন্দ্র ১৫০’ (১২-৬) শীর্ষক প্রতিবেদনে স্বল্প পরিসরে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে যে ভাবে বিপ্লবী হেমচন্দ্র কানুনগোর অতুলনীয় অবদানকে উন্মোচিত করা হয়েছে, তার জন্য অভিনন্দন। আজও অনেকে স্বীকার করেন না যে, হেমচন্দ্রই হল ভারতের ত্রিবর্ণ-রঞ্জিত জাতীয় পতাকার প্রথম রূপকার। পরবর্তী কালে এই পতাকার বহু বিবর্তন হয়েছে। দ্বিতীয়ত, সম্ভবত বাঙালিমাত্রেই শহিদ ক্ষুদিরামকে নিয়ে এক অখ্যাত লোককবির (কারও মতে, বাঁকুড়ার লোকশিল্পী পীতাম্বর দাস) রচিত ‘একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি’ গানটি শুনেছেন। ১৯৫১ সালে হিরন্ময় সেন পরিচালিত বিপ্লবী ক্ষুদিরাম ছবিতে গানটি ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের কণ্ঠে শোনা গেলেও, ১৯৬৬-তে সুভাষচন্দ্র নামে একটি চলচ্চিত্রে লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠে গানটি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিল। গানটির একাধিক পাঠ রয়েছে। তবে লতাজির গাওয়া গানের এক জায়গায় আছে— “অভিরামের দ্বীপ চালান মা, ক্ষুদিরামের ফাঁসি।” এখানে প্রশ্ন, কে এই অভিরাম? আলিপুর বোমার মামলায় যাঁদের দ্বীপান্তর হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে ‘অভিরাম’ নামে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না! দীর্ঘ দিন ধরেই গবেষকরা ‘অভিরাম’-এর সন্ধান করছেন, তাতে উঠে এসেছে নানা মত। ইন্টারনেট সার্চে ‘অভিরাম’ হিসেবে উল্লাসকর দত্তের নাম দেখায়, কারণ ওটাই অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করেন। তাঁদের মতে, উল্লাসকরের ছদ্মনাম ছিল অভিরাম। কেউ আবার বলেছেন, গীতিকার ছন্দ মেলানোর প্রয়োজনে এই ‘কাল্পনিক’ নামের আমদানি করেছিলেন। এক জায়গায় এমন মন্তব্যও দেখেছি যে, অভিরাম ছিল ক্ষুদিরামের আপন বড় ভাই! স্বয়ং হেমচন্দ্রই হলেন সেই ‘অভিরাম’, কারণ মেদিনীপুরের রাধানগর গ্রামে হেমচন্দ্রের নিজের নকশায় তৈরি যে বসতবাড়িটি রয়েছে, সেখানে একটি ফলকে লেখা রয়েছে, “নির্বাসন-পরবর্তী জীবনে এই বাড়িতে বসবাস করতেন হেমচন্দ্র কানুনগো (অভিরাম)।” স্থানীয় মানুষ বা গীতিকার তা জানলেও দুর্ভাগ্য এটাই যে, অধিকাংশ মানুষ, এমনকি গবেষকরাও এই তথ্যটি জানেন না। এই বিতর্কের অবসান হওয়া উচিত।
শুভেন্দু মজুমদার
চুঁচুড়া, হুগলি
অন্য তেরঙা
গভর্নমেন্ট আর্ট স্কুলের কৃতী ছাত্র হেমচন্দ্র জীবনের নানা সময়ে চিত্রাঙ্কনকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। আক্ষরিক অর্থে ভিটেমাটি বিক্রি করে ১৯০৬ সালে তিনি ইউরোপ পৌঁছে যাঁদের স্নেহভাজন হয়ে ওঠেন, তাঁদের অন্যতম মাদাম ভিকাজি কামা। ‘বিপ্লবজননী’ মাদাম কামা হেমচন্দ্রকে ভারতের জাতীয় পতাকা আঁকার গুরুদায়িত্ব দেন। লাল-গেরুয়া-সবুজ রঙে হেমচন্দ্র জাতীয় পতাকা আঁকেন। ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকার উপরের লালে আটটি অর্ধপ্রস্ফুটিত সাদা পদ্ম, তৎকালীন ভারতের আটটি প্রদেশের প্রতীক। মধ্যে গেরুয়াতে দেবনাগরী হরফে ‘বন্দে মাতরম্’ লেখা, নীচের সবুজে এক দিকে সূর্য, অন্য দিকে অর্ধচন্দ্র ও তারা— হিন্দু ও মুসলমান ভারতবাসীর প্রতীক। প্রসঙ্গত, একাধারে গীতিকার-সুরকার-সুকণ্ঠী হেমচন্দ্র ফোটোগ্রাফি চর্চাতেও মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথের চিত্রগ্রাহক শম্ভু সাহা ছিলেন তাঁর প্রত্যক্ষ শিষ্য।
শুভাশিস চক্রবর্তী
অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
রাওজি রানা
2 প্যারিসে হেমচন্দ্রের বোমা তৈরির কৌশল আয়ত্ত করার ক্ষেত্রে যাঁর অবদান অনস্বীকার্য, তিনি হলেন সর্দারসিংজি রাওজি রানা। রানা হেমচন্দ্রকে একটা ল্যাবরেটরি তৈরি করে দিয়েছিলেন। রুশ ও পোলিশ বিপ্লবীদের কাছ থেকে পাওয়া বোমার বিধান-কে রাওজি রানা ফরাসি ভাষায় এবং সেখান থেকে ইংরেজি ভাষায় অনূদিত করে তা সাইক্লোস্টাইল কপি করে হেমচন্দ্রকে দিয়েছিলেন। সেই কপি মানিকতলার বাগানবাড়িতে পাওয়া গিয়েছিল। এই প্রসঙ্গে বিস্তারিত তথ্য আছে অবিনাশচন্দ্র ভট্টাচার্যের ইয়োরোপে ভারতীয় বিপ্লবের সাধনা ও চিন্মোহন সেহানবীশের রুশ বিপ্লব ও প্রবাসী ভারতীয় বিপ্লবী বইয়ে। অথচ আশ্চর্য, হেমচন্দ্রের লেখা বাংলায় বিপ্লব প্রচেষ্টা গ্রন্থে প্যারিসে রানার এই সাহায্যের উল্লেখ নেই।
কাজল মুখোপাধ্যায়
বিধাননগর, দুর্গাপুর
সুরকার বালসারা
‘রবীন্দ্রসঙ্গীতের নোটেশন ভুল হলে জেলে যেতে হবে’ (রবিবাসরীয়, ২০-৬) নিবন্ধে সিনেমার বাইরে আধুনিক গানে ভি বালসারার সুরযোজনার প্রসঙ্গ অনুপস্থিত। তিনি বেশ কিছু আধুনিক গানে মনে রাখার মতো সুর করেছিলেন। যেমন, শ্যামল গুপ্তের কথায় তালাত মাহমুদের গাওয়া ‘যেথা রামধনু ওঠে হেসে’ ও ‘তুমি সুন্দর যদি নাহি হও’, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের ‘পথের যেমন চলা’, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়-হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের দ্বৈত-কণ্ঠে ‘শোনো শোনো এই রাত কী যে বলে’ ও ‘তরী ভেসে যায়’, পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় হেমন্ত মুখোপাধ্যায়-শ্রাবন্তী মজুমদারের যুগ্ম-কণ্ঠে ‘আয় খুকু আয়’ ইত্যাদি। ষাটের দশকের শেষ-সত্তরের দশকের শুরুতে কিছু আধুনিক গানের রেকর্ড বেরিয়েছিল গ্রামোফোন কোম্পানি থেকে। পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় এবং রানু মুখোপাধ্যায়ের ‘কুচকুচে কালো সে’ বা শ্রাবন্তী মজুমদারের ‘মধুপুরে পাশের বাড়িতে তুমি থাকতে’ এবং ‘আমার চার বছরের বড়’ প্রভৃতি। এই গানগুলির সঙ্গীত পরিচালক তথা সুরকার ভি বালসারা। বেতারে স্টুডিয়ো-রেকর্ডে গৃহীত ‘রম্যগীতির গান’ সমৃদ্ধ করেছে সঙ্গীতজগৎকে। বালসারার সুরে সেখানে মেলে কিছু মধুর গান।
একই দিনে হারমোনিয়াম সংক্রান্ত রচনায় (‘টিউন করালেই জাত যাবে এই হারমোনিয়ামের’, রবিবাসরীয়) তথ্যগত ভুল রয়েছে। কৃষ্ণচন্দ্র দে, মান্না দে থাকতেন সিমলের ৯ মদন ঘোষ লেনে, শান্তি ঘোষ স্ট্রিটে নয়। সে বাড়ি এখনও আছে।
স্বপন সোম
কলকাতা-৩৭
ইস্টবেঙ্গল
খেলার পাতায় ‘চুক্তিতে কোনও অসঙ্গতি নেই, দাবি লগ্নিকারী সংস্থার’ শীর্ষক প্রতিবেদনে (৪-৬)ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের পরিচালনা যাঁদের হাতে বলে তিন জনের ছবিসহ নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁরা হলেন— দেবব্রত সরকার, কল্যাণ মজুমদার এবং প্রণব দাশগুপ্ত। জানাতে চাই, ইস্টবেঙ্গল ক্লাব যৌথ ভাবে সব ধরনের খেলাধুলোর প্রসারে এবং যুবসমাজের স্বার্থে বিশেষ করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ফুটবলের উন্নতির প্রয়াসী। গঠন করা হয়েছে নতুন সংস্থা ‘এসসিএল’। প্রাথমিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন এসসিএলের তরফে সুভাষ জাজো এবং শ্রেণিক শেঠ, ইস্টবেঙ্গলের পক্ষ থেকে ফুটবল সচিব এবং কর্মসমিতির সদস্য সৈকত গঙ্গোপাধ্যায়। চুক্তি অনুযায়ী, নতুন এই ফুটবল দল আইএসএলে অংশ নেবে। এখনও পর্যন্ত যৌথ ভাবে এসসিএল ও ইস্টবেঙ্গলের মধ্যে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের তরফে ইমেল করে এসসিএলের প্রতিনিধিদের জানানো হয়েছে, চূড়ান্ত চুক্তির কিছু শর্ত স্পষ্ট নয়, তা পরিবর্তন করা হোক, অসঙ্গতি দূর করা হোক। এ ব্যাপারে দেবব্রত সরকারের কোনও ভূমিকা নেই। অথচ, তাঁর সমালোচনা করা হয়েছে উক্ত প্রতিবেদনে। দেবব্রত সরকারও কর্মসমিতির এক জন সদস্যমাত্র। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের নিয়ম অনুযায়ী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে পরিচালন সমিতির। কাউকেই ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধ করার অনুমতি দেওয়া হয় না। কোনও প্রমাণ ছাড়া তাঁকে নিয়ে এমন প্রতিবেদনে তাঁর সম্মানহানি হয়েছে। সারদা কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার কথাও বলা হয়েছে। ঘটনা হচ্ছে, আলিপুর আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করেছে। সিবিআইয়ের জামিন খারিজের আবেদনও প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। ইস্টবেঙ্গলের সভাপতি প্রণব দাশগুপ্ত, সচিব কল্যাণ মজুমদার ও দেবব্রত সরকারের ছবিও অনৈতিক ভাবে প্রকাশ করা হয়েছে।
বিশ্বজিৎ বসু
কলকাতা-৭৫
প্রতিবেদকের উত্তর: দেবব্রত সরকারকে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের শীর্ষকর্তা হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে। তিনি যে ক্লাবের অন্যতম প্রধান কর্তা, প্রতিবেদনে সেটাই বলা হয়েছে। এমন দাবি করা হয়নি যে, লগ্নিকারী সংস্থার সঙ্গে ইস্টবেঙ্গলের যাবতীয় সংঘাতের মূলে একা তিনিই আছেন। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সভাপতি এবং সচিবের ছবি-সহ উল্লেখও প্রতিবেদনে ছিল।