—ফাইল চিত্র।
সম্প্রতি বারবিল-হাওড়া জনশতাব্দী এক্সপ্রেসে সাঁতরাগাছি স্টেশনে নেমে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হল। ট্রেনটি নির্দিষ্ট সময়ের দু’ঘণ্টা দেরিতে সাঁতরাগাছি স্টেশনে পৌঁছয়। রাত তখন প্রায় এগারোটা। প্রি-পেড ট্যাক্সি বুথে কোনও ট্যাক্সি নেই। কখন আসবে, অথবা আদৌ আসবে কি না বুথে বসা ভদ্রলোক কিছুই বলতে পারলেন না। আমি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। সামনে বসা পুলিশের কাছে সাহায্য চাইতে উনি ফোন ঘাঁটতে ঘাঁটতে অ্যাপের মাধ্যমে ট্যাক্সি বুক করতে পরামর্শ দিলেন। অথচ, যত বার অ্যাপ-এর মাধ্যমে বুক করছিলাম প্রতি বারই ক্যানসেল হয়ে যাচ্ছিল। যাচ্ছিলাম সাঁতরাগাছি থেকে দানেশ শেখ লেন। অনেক কষ্টে মালপত্র নিয়ে আন্ডারপাসের কাছে এগিয়ে দেখি অনেক গাড়ি। কিন্তু এই সামান্য দূরত্বের জন্য বারোশো থেকে দেড় হাজার টাকা দাবি করছিল। সমস্ত এলাকা যেন দালাল ও সমাজ-বিরোধীদের দখলে। অথচ, স্টেশন থেকে নবান্ন ঢিল ছোড়া দূরত্বে। রেল পুলিশের এবং রাজ্য পুলিশের কোনও অস্তিত্ব ছিল না রাত এগারোটাতেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে রেল এবং রাজ্য পুলিশ— দুই কর্তৃপক্ষেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
অজয় দাস, উলুবেড়িয়া, হাওড়া
কাগজেই থাকবে
‘কামরায় আহত হওয়া কমাতে তৎপর রেল’ (১৪-১১) শীর্ষক সংবাদটি পড়ে যৎপরোনাস্তি প্রীত হলাম। ভারতীয় রেল যে অবশেষে যাত্রী-নিরাপত্তা ও যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে ভাবছে, এটাই খুশির খবর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আদৌ কি কিছু হবে? আশাবাদী হওয়া মুশকিল। কারণ ভারতীয় রেলের স্কন্ধে যে দু’টি ভূত আপাতত নৃত্যরত, তাদের এক জনের নাম নির্বিচার বিদ্যুদয়ন, আর অপর জনের নাম এলএইচবিফিকেশন। রেলগাড়ির সাবেক কামরা ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি (আইসিএফ) বাদ দিয়ে লিঙ্ক হফম্যান বাশ (এলএইচবি) কামরা চালু করতে রেল এখন অতি তৎপর।
বলা হয়, এলএইচবি রেক তুলনামূলক ভাবে নিরাপদ, যদিও ওড়িশার বাহানাগা-য় সাম্প্রতিক করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা সেই দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। নিরাপদ হোক বা না হোক, এলএইচবি রেকের ঝাঁকুনি— যত বার চলতে শুরু করবে, যত বার থামবে, এবং তার মধ্যেও— প্রবাদপ্রতিম। সাম্প্রতিক কালে আমার করমণ্ডল এক্সপ্রেস, দার্জিলিং মেল এবং পদাতিক এক্সপ্রেস-এর বাতানুকূল প্রথম শ্রেণিতে যাত্রার সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য হয়েছিল। জলের বোতল থেকে ছাতা, কোনও কিছুই দেখি যেখানে রেখেছিলাম সেখানে নেই। দার্জিলিং মেলে সকালবেলা জুতো খুঁজে পাচ্ছিলাম না, আর করমণ্ডল এক্সপ্রেসে আস্ত সুটকেস। সারা রাস্তা তারা কামরার মধ্যে এ মাথা-ও মাথা করে গেল। একেবারে বিপর্যস্ত অবস্থা। তুলনামূলক ভাবে সাবেক আইসিএফ রেক-এর যাত্রা ঝাঁকুনিবিহীন, আরামদায়ক, মসৃণ, ভদ্রজনোচিত। বিশ্বাস না হলে শালিমার পুরী, শালিমার শ্রীজগন্নাথ এক্সপ্রেস বা শিয়ালদহ মালদহ টাউন, শিয়ালদহ গৌড় এক্সপ্রেস চেপে দেখা যেতে পারে।
এলএইচবি রেকের ঝাঁকুনির মূল কারণ তার সেন্টার বাফার কাপলার (সিবিসি)। ভারতীয় রেলের এলএইচবি রেকে এএআর (আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব রেলরোডস) ‘এইচ’ টাইপ টাইট লক কাপলার ব্যবহৃত হয়। আর, আইসিএফ রেকে ব্যবহৃত হয় স্ক্রু কাপলার। যত দূর জানা আছে, ইউরোপে সেন্টার বাফার কাপলার ব্যবহৃত হয় না; আমেরিকায় হয়, তবে মালগাড়িতে। এক বার পূর্বা এক্সপ্রেসে বারাণসী যাচ্ছিলাম, কামরায় আমাদের সহযাত্রী ছিলেন এক ফরাসি দম্পতি। সেই সাহেব বললেন যে, ইউরোপে কোনও রেল সংস্থার পরিষেবায় এমন ঝাঁকুনি হলে অস্বাচ্ছন্দ্যজনিত ক্ষতিপূরণ চেয়ে এত মামলা হত যে, ক্ষতিপূরণ দিতে দিতে সেই রেল সংস্থা দেউলিয়া হয়ে যেত। তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, “তোমরা কিছু বলো না কেন?”
এলএইচবি রেক ভারতে চলছে অনেক বছর হয়ে গেল। এই রেকের ঝাঁকুনি নিয়ে আলোচনাও হয়েছে বিস্তর। তবে কাজের কাজ কিছু হয়নি। তাতেই সন্দেহ জাগে, এই ঝাঁকুনি কমানো প্রায়োগিক দিক দিয়ে সম্ভব নয়। যদি সম্ভব হত, তা হলে অনেক আগেই তা হত। তাই আশঙ্কা হয়, রেল-দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে কামরার ভিতরে যাত্রীদের হতাহত হওয়া রোধে কোচ নির্মাণের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের রেল বোর্ডের নির্দেশিকা কাগজেই থেকে যাবে।
তপন পাল, কলকাতা-১৪০
বিপজ্জনক গাছ
চুঁচুড়া মিউনিসিপ্যালিটি-র অন্তর্গত ৫ নম্বর ওয়র্ড-এর বাসিন্দা। আমি এক জন প্রবীণ নাগরিক। আমার বাড়ির উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে দু’টি বিশালাকার তুলোগাছ আছে। এদের মধ্যে একটির গুঁড়ি কোনও কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছে। যে কোনও সময় গাছটি পড়ে যেতে পারে। ফলে জীবনহানি ও ব্যক্তিগত সম্পত্তির ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। প্রসঙ্গত, উক্ত তুলোগাছটি যে রাস্তার পাশে অবস্থিত, সেখান দিয়ে বহু সাধারণ মানুষ ও স্কুলের ছাত্রছাত্রী যাতায়াত করে।
এ ছাড়া, কিছু দিন আগে এই তুলোগাছের প্রকাণ্ড অংশ ভেঙে পড়ার দরুন আমার অনেক সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছিল। তার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে আমি স্থানীয় প্রশাসনকে লিখিত ভাবে জানিয়েছিলাম। কিন্তু কোনও সহযোগিতা পাইনি। এমতাবস্থায়, স্থানীয় প্রশাসনের কাছে পুনরায় অনুরোধ, তারা যেন এই বিষয়ে যথাযোগ্য ব্যবস্থা করে, যাতে ভবিষ্যতে কোনও জীবনহানি অথবা ব্যক্তিগত সম্পত্তির ক্ষতি না হয়।
দেবীপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, হুগলি
অমানবিক
দমদম ক্যান্টনমেন্ট অঞ্চলের একটি প্রধান রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক প্রবীণ পেনশনারদের প্রতি কতটা যে কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণ করে, তার প্রমাণ নিম্নলিখিত ঘটনা। গত ১৪ নভেম্বর সকালে লাইফ সার্টিফিকেটের ফর্ম জমা দেওয়ার জন্য ব্যাঙ্কের পেনশন কাউন্টারে পনেরো-ষোলো জনের পিছনে দাঁড়াই। পরে আমার পিছনে আরও কুড়ি-পঁচিশ জন লাইনে দাঁড়ান। কিন্তু লাইন আর এগোচ্ছিল না। অথচ বাইরে থেকে এসে একের পর এক ব্যক্তি কাউন্টারের উপর দিয়ে একাধিক পাতার, অনেকেই উনিশ-কুড়ি পাতার কাগজপত্র কাউন্টারে কর্মরত ব্যক্তিকে দিচ্ছিলেন। আর সেই কর্মী পেনশনারদের দাঁড় করিয়ে রেখে সেই সব কাগজপত্রের প্রতিটি পাতা চেক করে স্ট্যাম্প মেরে সই করছিলেন। ওই উনিশ-কুড়ি পাতা চেক করতে যত সময় লাগছিল, তত ক্ষণে উনিশ-কুড়ি জনের এক-এক পাতার লাইফ সার্টিফিকেটের ফর্ম জমা নেওয়া হয়ে যেত। সেই সঙ্গে একের পর এক ফোন তাঁর মোবাইলে আসছিল, বিভিন্ন ফোন উনিও করছিলেন!
পরে জানলাম কাউন্টারের ভদ্রলোকই ব্যাঙ্কের ম্যানেজার। এক জন ম্যানেজারের হাজার কাজ থাকতেই পারে। কিন্তু তার জন্য তাঁর নিজস্ব চেম্বার আছে। পেনশন কাউন্টার নয়। বাধ্য হয়ে ম্যানেজারের এ-হেন অমানবিক আচরণের আমি প্রতিবাদ করি। প্রসঙ্গত, আমার বয়স প্রায় আশির কাছাকাছি, জটিল অসুখে আক্রান্ত ও আংশিক প্রতিবন্ধী। দুই পায়েই প্রচণ্ড ব্যথা, সেই সঙ্গে ভারসাম্যহীনতার জন্য হ্যান্ড ক্রাচ ব্যবহার করি। এর আগে আমার অসুস্থতার কারণে ভিড়ের মধ্যে কয়েক বার জ্ঞান হারিয়েছি। সেই দিনও আমার তেমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল, এবং পেনশন কাউন্টারের কর্মরত ম্যানেজারকে কয়েক বার তা জানিয়েওছিলাম। কিন্তু তা গ্রাহ্য না করে তিনি বাইরের কাজই করে যান। প্রায় দু’ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ফর্ম জমা দিতে পারি। বয়স্ক পেনশনারদের প্রতি ব্যাঙ্কের এই ধরনের আচরণ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। তবে, উনি আমার প্রতিবাদের সময় কোনও অভদ্র আচরণ করেননি।
রণেন বসু, কলকাতা-৬৫