আজ আমানতের বড় অংশ চলে গেল কংগ্রেস-সিপিআই(এম) জোটে। ফাইল চিত্র।
দেবাশিস ভট্টাচার্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পরামর্শ দিয়েছেন, “আগের মতোই ‘একলা’ চলতে হবে” যা ‘বন্ধুর’ পথ (‘একলা’ পথের চলা, ৯-৩)। সাগরদিঘি উপনির্বাচনের ফল নিয়ে সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ না করে প্রবন্ধকার হেঁটেছেন ভোটের সংখ্যাতত্ত্ব, নির্বাচনী জোট রাজনীতি ও সংখ্যালঘু ভোট বিচারের একমুখী পথে। জনমত সমীক্ষা, ভোটদাতারা কী ভাবে, ও কী ভেবে ভোট দিয়েছেন, সে সব বিশ্লেষণ অবহেলিত হল। উপেক্ষিত রয়ে গেল গরিব, শ্রমনির্ভর মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছা। প্রবন্ধে পাখির চোখ হয়েছে মমতার সংখ্যালঘু ভোটে কংগ্রেস-সিপিএম জোটের ভাগ বসানো। তৃণমূল দলটির গুণগত চরিত্রের বদলে ব্যক্তি মমতা, ও সংখ্যালঘু ভোটের ভাগ এখানে প্রাধান্য পেয়েছে।
এই সময়ে ভারতে কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের পরধর্মে অসহিষ্ণুতা, রাজ্য সরকারের প্রতি অসহযোগিতা, কেন্দ্রীয় এজেন্সির এক দিকে অতিসক্রিয়তা আবার অন্য দিকে দীর্ঘসূত্রতা— এগুলির প্রভাব আলোচনায় আসেনি। তা হলে কি সাগরদিঘির নির্বাচকরা এ বিষয়কে গুরুত্ব দেননি? নিয়োগ দুর্নীতির সামান্য উল্লেখ থাকলেও, অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি, বালি-পাথর-মাটির তোলাবাজি, অবৈধ লেনদেনের বিপুল টাকা প্রকাশ্যে আসা সে ভাবে উল্লিখিত হয়নি। সরকারি উন্নয়নের রঙিন খতিয়ানে সবাই সন্তুষ্ট নয় কেন? বাকি রাখা হল ‘সংখ্যালঘু’ ভোটকে, যা ২০১০-পূর্ব নির্বাচনে বামফ্রন্টের পক্ষে ছিল এবং ২০১০ থেকে তৃণমূলের ‘আমানত’ হয়ে গেল। আজ সেই আমানতের বড় অংশ চলে গেল কংগ্রেস-সিপিআই(এম) জোটে। কেন? প্রবন্ধকারের মত, “মনে হতে পারে— সংখ্যালঘুরা এ বার উজাড় করে ভোট দেননি বলেই তৃণমূল হারল।” তবে কি শাসক তৃণমূলের প্রতি বিশ্বাস রাখতে পারছে না নির্বাচকমণ্ডলীর বড় অংশ? কেন?
তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের যোগ ছিন্ন হয়েছে, বরং বিজেপির দলবদলুরা স্থান পেয়েছে তৃণমূলে। কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে যত বার বিরোধী শিবির জোট বাঁধার চেষ্টা করেছে, প্রায় প্রতি বার সে জোট ঘেঁটে দিয়েছে তৃণমূল, যা পক্ষান্তরে বিজেপির সুবিধা করে দিয়েছে।নিন্দুকেরা অভিযোগ করেন, তৃণমূল নেতাদের নিয়ে বিভিন্ন মামলা এ কারণেই দীর্ঘসূত্রী হয়ে যায়। প্রশ্ন ওঠে, তা হলে কি ধরা পড়ে বাধ্য হয়ে নিরুপায় এই ‘একলা’ পথের চলা?
রাজনৈতিক ক্ষমতা পেয়ে তৃণমূল হুঙ্কার দিয়েছে, এ বার সব ফাঁস করে দেবে, তাদের কাছে সব ফাইল আছে ইত্যাদি। অথচ, এখনও অবধি কোনও উচ্চস্তরের বামনেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। এটাও তৃণমূলের ব্যর্থতা। এই ছবিটাও প্রবন্ধকার এড়িয়ে গিয়েছেন। ভোটদাতারা, বিশেষ করে সংখ্যালঘুরা কি এ সব নিয়ে না ভেবেই ভোট দিয়েছেন?
নিশ্চয়ই না। বরং এটা ভাবলে সংখ্যালঘু ভোট বিষয়ে অবিচার করা হবে। কার্যত এই ভাবনা সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু, উভয়কেই বিরক্ত করবে, অসাম্প্রদায়িকতার পরিবেশ নষ্ট করবে। রাজ্যের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নে বিভাজন আনবে। এমন নির্বাচনের একলা পথ বা একলা পথের নির্বাচন, কোনওটাই কাজের কথা নয়।
শুভ্রাংশু কুমার রায়, চন্দননগর, হুগলি
বিজেপির বিপরীতে
উপনির্বাচনের ভোটের ফল নিয়ে ভবিষ্যতের রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করতে যাওয়া অনুচিত। তবুও আচমকা তৃণমূলের আধিপত্যে ভাগ বসানো বাম-কংগ্রেসকে নিয়ে বঙ্গীয় রাজনীতিতে যে খানিক ঝড় উঠবেই, তা প্রত্যাশিত। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ‘নো ভোট টু বিজেপি’ এক সময়ে অত্যন্ত সফল একটি প্রতিরোধ আন্দোলন। গত বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে এই মঞ্চে বহু মানুষই একত্র হয়েছিলেন। নির্বাচনের ফলাফলে তৃণমূলের একাধিপত্য সত্ত্বেও ‘নো ভোট টু বিজেপি’ যে ম্লান হয়ে যায়নি, তার প্রমাণ মিলল সাগরদিঘিতে। বিজেপি-বিরোধী এই আন্দোলনের মূল সম্পদই ছিল পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে বিজেপি ব্যতিরেকে অন্য যে কোনও দলকে সমর্থন জানানো। সেই পরিপ্রেক্ষিতে কংগ্রেস-সিপিএমের জোট হিসাবে সাগরদিঘি জয় ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়।
সঞ্জয় রায়, দানেশ শেখ লেন, হাওড়া
অপরিবর্তন
উত্তর-পূর্ব ভারতের তিনটি রাজ্যের ভোটাররা ফের সেই ক্ষমতাসীন দল ও জোটের উপর আস্থা রেখেছেন। এই তিনটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল বিজেপির জন্য যেমন উৎসাহব্যঞ্জক, তেমনই কংগ্রেসের জন্য উদ্বেগজনক। প্রকৃতপক্ষে, বিজেপির কৌশলগুলি ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের উপর ক্রমশ নিবদ্ধ হয়ে উঠেছে। রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রা সেখানকার নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে, এবং কংগ্রেস এর সুফল পাবে বলে যে জল্পনা ছিল, তা ঘটেনি। উত্তর-পূর্ব রাজ্যের ভোটের ফলাফল কংগ্রেসের জন্য আর একটি ধাক্কা। গত বছরে পঞ্জাব এবং গুজরাতে বিব্রতকর হারের পর কংগ্রেসের পক্ষে এই হার নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক, কারণ খুব শীঘ্রই রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়-সমেত আরও কয়েকটি রাজ্যের নির্বাচন রয়েছে। এখনই যদি কংগ্রেস নিজের স্থান পাকা না করতে পারে, তা হলে ২০২৪-এ দেখার আর থাকবে কী?
সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, কংগ্রেস সমর্থকরা নিজেরাও পুরোপুরি নিশ্চিত নন যে, তাঁদের দল একটি শক্তিশালী বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে পারে। ভারত জোড়ো যাত্রা সেই ছবিতে খুব বেশি পরিবর্তন করছে বলে মনে হয় না। ৯৬৯৮ শহুরে জনতার মধ্যে করা ওই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, ৫১ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, রাহুল গান্ধী তাঁর দলকে পুনরুজ্জীবিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন। স্পষ্টতই, কংগ্রেস-সহ অন্য আঞ্চলিক দলগুলির প্রতি ভোটদাতারা এখনও দ্বিধাবিভক্ত।
অভিজিৎ রায়, জামশেদপুর
জলের অভাব
পলাশ, শিমুল, কোকিলের কুহুতান বলে দিচ্ছে বসন্ত এসে গিয়েছে। কিন্তু ইতিমধ্যেই পানীয় জলের হাহাকার শুরু হয়েছে গ্রামাঞ্চলে। অনেক টিউবওয়েলের জলস্তর নীচে নেমে গিয়েছে। কিছু টিউবওয়েল আবার অকেজো হয়ে পড়েছে। ফলে বরাবরের মতো পানীয় জলের ভীষণ সমস্যা দেখা দিয়েছে। ভরা গ্রীষ্মে কী অবস্থা হবে, ভেবে এখনই শিউরে উঠছে মানুষ। মিষ্টি জলের পরিমাণ যে ধীরে ধীরে কমে আসছে, এটা যেন আমজনতা এখনও বুঝতে পারছে না, বা বুঝতে চাইছে না। তাই দেখি, যে সমস্ত এলাকায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জল সরবরাহ আছে, সেখানে জলের অপচয় হচ্ছে বেশি। সারা দিনে তিন বার জল সরবরাহের ফলে অনেকেই মহার্ঘ পানীয় জল নিয়ে আনাজের খেতে দিচ্ছেন। কেউ আবার জলের কল খুলে রেখে চলে যাচ্ছেন। অনেক জায়গায় রাস্তার পাশে জলের কল বন্ধ করার যন্ত্রটি নেই। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জল নষ্ট হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন এগিয়ে এসে কলের মুখ লাগানোর ব্যবস্থা করছেন না। আবার জল সরবরাহকারী ব্যক্তিদেরও হেলদোল নেই। তাঁরাও উদাসীন। একই গ্রামে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জল অনেকে পাচ্ছেন, আবার অনেক গ্রামবাসী পাচ্ছেন না। তাই জল সরবরাহের ব্যবস্থা নিয়ে একটা ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে এক শ্রেণির মনে। পানীয় জল যে এক প্রকার অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদ, এই ধারণাটাই বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে এখনও গড়ে ওঠেনি। সে কারণেই এই বিষয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েতের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে সচেতনতার প্রচার চালানো উচিত। তা ছাড়া মানুষকে ভাবার এবং জানানোর জন্য গণমাধ্যমগুলোর সক্রিয় ভূমিকা দরকার।
রতন নস্কর, সরিষা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা