দেবাশিস ভট্টাচার্যের ‘বিষাইছে বায়ু...’ (৮-৫) নিবন্ধ প্রসঙ্গে প্রথমেই বলি, বাংলার বায়ুও বিষিয়ে যায়নি, আলোও নেবেনি। সম্প্রীতির বাতিটা আজও আপন আলোয় ভাস্বর। ত্রিপুরা হতে হতে বেঁচে গিয়েছে বাংলা। এটাই তো স্বস্তির, সুখের। এর চেয়ে বড় খবর কী হতে পারে? তবে নির্বাচন চলাকালীন এবং নির্বাচন-উত্তর হিংসা গণতন্ত্রের পক্ষে লজ্জাজনক ও অনভিপ্রেত। ভোট-পরবর্তী হিংসা দমন বা নিয়ন্ত্রণের দায় অবশ্যই বিজয়ী দলের। শাসক দলের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদত না থাকলে, ভোট-পরবর্তী এই হিংসার দাবানল, খুনোখুনি ও বিরোধী বাড়িগুলিতে অগ্নিসংযোগের মতো জঘন্য ঘটনা কখনও ঘটতে পারে না। এটা কি গণতন্ত্রের উৎসব না গণতন্ত্রের শ্মশান, এক বার ভেবে দেখা উচিত শাসক, এমনকি বিরোধী দলেরও।
অন্তহীন অত্যাচার, খুন ও রক্তপাত সহ্য করে বামেরা যখন বিপুল জয়কে সঙ্গে নিয়ে ক্ষমতায় এলেন সাতাত্তর সালে, তখন তাঁরাও ওই অত্যাচারের প্রতিশোধ কড়ায়-গন্ডায় মিটিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু সে পথে তাঁরা সে দিন হাঁটেননি। বাংলার মাটি এক জনের রক্তেও সে দিন রাঙা হয়নি।
দিলীপ কুমার সেনগুপ্ত
কলকাতা-৫১
উগ্র বিরোধিতা
চমৎকার দৃঢ়তার সঙ্গে দেবাশিস ভট্টাচার্যের লেখনী তুলে ধরেছে এই সত্য যে, ‘বিজেপি’ নামক সাম্প্রদায়িক, হিন্দুত্ববাদী, পুরুষতান্ত্রিক দলটি কিছুতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সহ্য করতে পারছে না। এই নির্বাচনে বাম ও কংগ্রেস দলের উগ্র মমতা-বিরোধিতা বিজেপিকে আরও উৎসাহিত করেছে বলে মনে হয়। ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, সিপিআই (এম এল) নেতা দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বারংবার আবেদন করে বলেছেন, এই নির্বাচনে প্রধান শত্রু হিসেবে ধরা উচিত বিজেপিকেই, তৃণমূলকে কখনও নয়। কিন্তু বাম-কংগ্রেস নেতৃত্ব তাঁদের পাত্তা দেননি। ফলে বিজেপি তার সুযোগ নিয়েই চরম মমতা-বিরোধিতার পথে নেমেছে নির্বাচনের আগে এবং পরে। আর পাটিগণিতের সোজা হিসেবে বাম-কংগ্রেসের ভোট কেটে বিজেপি ২০১৬ সালের ৩টি সিট থেকে ৭৭-এ পৌঁছেছে। এক লাফে বিরোধী দলের মর্যাদা লাভ ওদের যেন দম্ভে পাগল করে দিয়েছে। তাই এত মারামারি, খুন, যা বেদনাদায়ক। সর্বদলীয় কমিটি গড়ে দ্রুত এই অশান্তি থামাতেই হবে। এত আসন সংখ্যা নিয়ে তৈরি হয়েছে যে সরকার, তাকে অস্থিরতা ও হিংসার অজুহাতে ফেলে দিয়ে রাষ্ট্রপতির শাসন চাওয়া অসুস্থ মানসিকতার পরিচয়। আসলে মমতার মতো নেত্রী যদি ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে মোদীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াইয়ের ময়দানে নামেন, তা হলে কী হতে পারে, তা আগাম আঁচ করে বিজেপির এই সর্বাত্মক বিরোধিতা। এই নির্বাচনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী-সহ তাঁদের রাজনৈতিক দলের সমস্ত কর্তাব্যক্তির ধারাবাহিক মিলিত প্রচেষ্টা, ডেলি প্যাসেঞ্জারের মতো আসা-যাওয়া, কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেও সোনার বাংলা গড়ার প্রতিশ্রুতি জনগণ মেনে নেননি স্রেফ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রহণযোগ্যতার জন্য। তাই বিজেপি আজ মরিয়া, যেন তেন প্রকারেণ এই নির্বাচিত সরকার ফেলে দিয়ে যে তারা রাষ্ট্রপতির শাসন কায়েম করতে চায়, তা বেশ বোঝা যাচ্ছে।
মৃত্যুঞ্জয় বসু
কলকাতা-৩০
বুমেরাং
দেবাশিস ভট্টাচার্য এক কঠিন সত্য আমাদের সামনে উন্মোচিত করেছেন। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বাংলার সাধারণ মানুষের নাড়ির স্পন্দন বুঝতে না পারেন, কিন্তু নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত ফল লাভ না করার পরেও রাজ্য নেতৃত্বের একই ভুলের পুনরাবৃত্তি দুর্ভাগ্যজনক। ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাসের প্রশ্নে বিভাজনের রাজনীতির মাধ্যমে বাংলার গরিষ্ঠ অংশের হিন্দুদের মন জয়ের চেষ্টা প্রকৃতপক্ষে অন্ধের হস্তিদর্শনের মতো, এবং বিপজ্জনক প্রবণতাও বটে। রাজ্যের শান্তিপ্রিয় মানুষ দলমত নির্বিশেষে সাম্প্রদায়িক উস্কানি বা হানাহানির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, অতীতেও তা বহু বার প্রমাণিত হয়েছে। ওই দিনের সংবাদপত্রে সন্দেশখালির ঘটনাও তা দেখিয়ে দেয় (‘সন্ত্রাস দমনে ঝাঁটা, খুন্তি হাতে মহিলারা’, ৮-৫)।
দ্ব্যর্থহীন ভাষায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হিংসা দমনের কথা বললেও, কোনও কোনও ক্ষেত্রে তাঁর দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের অন্য পথে হাঁটতে দেখা যাচ্ছে। ধনেখালিতে বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখানো প্ররোচনায় পা দেওয়ার শামিল। বিরোধী দল দায়িত্বজ্ঞানহীন হলে শাসক দলকে আরও বেশি দায়িত্ববান হতে হয় হিংসা বন্ধে এবং ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরানোর উদ্যোগের মধ্যে দিয়ে, যা রাজ্যের অন্যত্র দেখা গিয়েছে। ২০২৪ সালকে মাথায় রেখে, ১৯৪৬ সালের স্মৃতি রোমন্থন করে দিবাস্বপ্ন দেখা বিজেপির পক্ষে এমন পদক্ষেপ বুমেরাং হবে না, কে বলতে পারে?
ধীরেন্দ্র মোহন সাহা
কলকাতা-১০৭
প্রাদেশিকতা
সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতে গিয়ে দেবাশিস ভট্টাচার্য নিজেকে প্রাদেশিকতার জালে জড়িয়ে ফেলেছেন। এই দু’ধরনের বিষ কিন্তু একই ফ্যাসিবাদের সৃষ্টি করে, যা আমরা পশ্চিমবঙ্গে বিগত ৪৪ বছর ধরে লক্ষ করে আসছি।
সাগর গঙ্গোপাধ্যায়
ইমেল মারফত
শর্টকাট নেই
‘হার মানিতে শিখুন’ (৭-৫) সম্পাদকীয়ের সঙ্গে সহমত। এই বিজেপি হার মানতে শেখেনি। গোয়া, কর্নাটক ও মধ্যপ্রদেশে জনগণের রায় অমান্য করে, ঘোড়া কেনাবেচা করে নির্বাচিত সরকারকে ফেলে দিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে একের পর এক রাজ্যে ক্ষমতা দখল করেছে বিজেপি। এটা গণতন্ত্রের পক্ষে চরম ক্ষতিকর। গণতন্ত্রে বিরোধী দলের পরিসরটাই ধ্বংস করতে চায় তারা, ‘ডবল ইঞ্জিন’ তত্ত্বের কুযুক্তিতে। পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে অনেক দূরে থমকে গিয়েছে তাঁদের বিজয়রথ। এই রাজ্যে ঘোড়া কেনাবেচা করে সরকার গঠন অসম্ভব। অতএব নানা ভাবে উস্কানি দিয়ে দাঙ্গা লাগিয়ে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করিয়ে ক্ষমতা দখলের ছক। দিল্লির ভোটে হারের পরেও বিজেপি দাঙ্গা ছড়িয়ে ক্ষমতা দখল করতে চেয়েছিল। সংসদীয় গণতন্ত্রে জন-রায়ই আসল। ক্ষমতা দখলের কোনও শর্টকাট পদ্ধতি হয় না।
অভিজিৎ ঘোষ
কমলপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
মেয়েদের ভোট
স্বাতী ভট্টাচার্যের প্রতিবেদন, ‘মেয়েরা নিজের বাংলাকে চায়’ (৫-৫) প্রসঙ্গে জানাই, এ বার ভোটের দায়িত্ব নিয়ে যেতে হয়েছিল দুবরাজপুর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত হজরতপুর হাই স্কুলের বুথে। ভোটগ্রহণ শুরু হতেই প্রথম ভোটটি দিলেন এক জন মহিলা। তার পর শুরু হল একের পর এক মহিলা ভোটারদের ভোটদান। বাধ্য হয়ে তিন জন মহিলার পর এক জন পুরুষের ভোট দেওয়ার নির্দেশ দিতে হল। প্রখর রোদ উপেক্ষা করে সারা সকাল ধরে চলল নিরবচ্ছিন্ন ভোটদান পর্ব। বিকেল সাড়ে তিনটে পর্যন্ত মেয়েরাই ভোটদানের ক্ষেত্রে এগিয়ে রইলেন।
ভোট শেষ হলে দেখা গেল, সংখ্যার দিক থেকে পুরুষরা মাত্র ১২-১৩টি ভোটে এগিয়ে। ওই বুথে ভোট পড়েছিল ৮৩%। তা-ও আমাদের বুথের আশাকর্মীরা আক্ষেপ করছিলেন, পোস্টাল ব্যালট পাননি বলে তাঁরা ভোট দিতে পারলেন না। ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে ভোট করছি, এত বিপুল সংখ্যক মহিলাদের সক্রিয় ভোটদান বড় একটা চোখে পড়েনি। সম্পূর্ণ মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত বুথের সংখ্যাও এ বারে বেশি ছিল। এটা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার পক্ষে নিশ্চয়ই আশাব্যঞ্জক।
সোমনাথ মুখোপাধ্যায়
সিউড়ি, বীরভূম