সুদীপ ঘোষের ‘শাস্তি’ ছবির (১৭-৫, কলকাতা) প্রেক্ষিতে এই চিঠি। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, লকডাউনের কড়াকড়ির মধ্যে অকারণে রাস্তায় বেরোনো সাইকেলের টায়ারের হাওয়া খুলে দিচ্ছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে বারাসতের হেলাবটতলায়। সংক্রমণ ঠেকাতে মানুষের অকারণ গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা হবে, এই পরিস্থিতিতে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই ভাবে সাইকেলের হাওয়া খুলে দেওয়া কি প্রশাসন সমর্থন করে? কোন আইনে এই ধরনের অদ্ভুত হেনস্থা করাকে অনুমোদন করা হয়? কখনও কি রাস্তায় অন্য মোটরযানের হাওয়া এই ভাবে খুলে দিতে দেখেছি আমরা?
গত বছরও প্রথম লকডাউনের সময় পুলিশের লাঠি সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ছিল সাইকেল-আরোহীদের উপর। হয়তো এর পিছনে জটিল সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট রয়েছে। কিন্তু পাশাপাশি সাইকেলের প্রতি এক ধরনের অবমাননা বা অবজ্ঞার বাতাবরণও প্রশাসনিক প্রশ্রয় পেয়ে চলেছে। যার চূড়ান্ত ফল, প্রায় ১২-১৩ বছর ধরে কলকাতার বহু রাস্তায় সাইকেলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা, মহানগরের সাইকেল-আরোহীদের উপর (যাঁদের অধিকাংশের আয় অতি সামান্য) অন্যায় জরিমানা, শহরের পরিবহণ-ব্যবস্থায় সাইকেলকে ব্রাত্য করে রাখা।
আর কয়েক দিন বাদেই, ৩ জুন, ‘বিশ্ব সাইকেল দিবস’। দূষণ নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্যকর পরিবহণ এবং বাসযোগ্য ভবিষ্যৎ শহরের ভাবনায় সাইকেলের সম্ভাবনা উদ্যাপিত হবে পৃথিবী জুড়ে। আমাদের নগরনীতি বা সংস্কৃতিতে কি সাইকেলকে এখনও আমরা উপেক্ষাই করে যাব?
শতঞ্জীব গুপ্ত, কলকাতা-৮
বৈষম্য
কেন্দ্রীয় সরকার মে ও জুন মাসে রেশনে মাথাপিছু অতিরিক্ত পাঁচ কেজি করে চাল/গম মিলিয়ে গ্রাহকদের (এএওয়াই, এসপিএইচএইচ, পিএইচএইচ) ফ্রি-তে দিচ্ছে। রাজ্য সরকারের কার্ডধারীরা এই খাদ্যশস্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিশেষত, আরকেএসওয়াই-রাও তো বিপিএল সমতুল্য, এঁদেরকে বঞ্চিত করা কেন? রাজ্য চাইলে এটার কি ভাগ হয় না? ৩ কেজি কেন্দ্রের ও ২ কেজি রাজ্যের গ্রাহকরা পাবেন। প্রসঙ্গত, মাসের জিনিসপত্র বহু স্থানে রেশন দোকান হতে একবারেই দেওয়া হয়। দুয়ারে রেশন চালু হলেও (হয়তো আগামী জুন মাস থেকে) তা একবারেই যেন দেয়। সরকারের কাছে অনুরোধ, ভোজ্যতেল ও ডাল (মূলত সর্ষের তেল ও মুসুর ডাল) রেশনে অন্তত অর্ধেক দামে গরিবদের দেওয়ার ব্যবস্থা হোক। উপযুক্তরা যেন বৈষম্যের শিকার না হন!
শিবপদ চক্রবর্তী, কাঁচরাপাড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
নেশার অনুমতি
গত ২০ মে কলকাতার পাতায় ‘খাইব সুখে’ শীর্ষক একটি ছবি প্রকাশিত হয়েছে। ছবিটির পাশে লেখা রয়েছে: বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতে মদের দোকানের সামনে লাইন দিয়েছেন খাবার সরবরাহের একটি অনলাইন সংস্থার কর্মীরা। মদের দোকানের বাইরে সারি সারি দু’চাকার বাহন ও কর্মীদের হাতে মদের বোতলের ছবি দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এই অতিমারির সময় এটা কী করে সম্ভব? লকডাউনের সময় সরকার কী করে বিভিন্ন অনলাইন খাবার সরবরাহকারী সংস্থাকে খাবারের সঙ্গে নেশার সামগ্রীও সরবরাহের অনুমতি দিল! এটা কোন সুস্থ মস্তিষ্কের পরিচয়? এ কোন প্রশাসনিক নিয়মকানুন চলছে! করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গের প্রকোপে যখন মৃত্যুমিছিল বেড়ে চলেছে প্রতি দিন, তখন ভুক্তভোগীদের পক্ষে এই দৃশ্য যে খুব সুখকর নয়, সে কথা বলা বাহুল্য।
সদ্যগঠিত সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের মধ্যে বাড়িতে মদ সরবরাহের প্রকল্পটিকে লকডাউনের সময় কি বন্ধ রাখা যায় না? এই সময়ে এটা শুধু দৃষ্টিকটুই নয়, অনৈতিকও বটে। বন্ধ না হলে সাধারণ মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাবে।
চন্দন দাশ, কলকাতা-২৬
নিঃসঙ্গ
স্বামী-স্ত্রী, সন্তান, সর্বোপরি অত্যাধুনিক স্মার্টফোনটি হাতে নিয়ে নানা ধরনের জিনিসে মন ভুলিয়েও আমরা বলে থাকি— সারা দিন বড্ড একা লাগে, এই করোনার বাজারে ঘরে বসে বসে আর ভাল লাগছে না।” তা হলে ভাবুন তো, সেই সব বয়স্ক মানুষদের কথা, যাঁদের ছেলেমেয়েরা কাজের সূত্রে বাইরে আছে! ওঁদের হয়তো সাহায্য করার কিছু লোক আছে, কিন্তু সেটাও কি সবার ভাগ্যে জোটে! অন্যান্য সময় হয়তো বিকেলে পাড়াটা হেঁটে দুটো মানুষের সঙ্গে কথা বলে কিছুটা ভাল লাগত! এখন সেটা করারও উপায় নেই। কী ভাবে আছেন তাঁরা! অথবা, এক বার নিজেকে বৃদ্ধাশ্রমের ঘরে কল্পনা করে দেখুন। বুঝতে পারবেন, পরিবারের সঙ্গে আমরা সবাই কত ভাল আছি। ঘরবন্দি থাকলেও অন্তত নিজের লোকদের সঙ্গে তো আছি! বৃদ্ধাশ্রমের ঘরে আটকে থাকা সেই মুখগুলোর কথা সে ভাবে ভাবি না আমরা। এত দিন ওঁরা নিজেরাই একে অপরের সঙ্গে কথা ভাগ করে নিতেন। আজ করোনা সেটুকু সুখেরও অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাস্ক পরে দূর থেকে কথা বলে নিজের ঘরে চলে যাওয়া, জানলার শিক ধরে দাঁড়িয়ে থাকা... এই তো সম্বল এখন ওঁদের। করোনার দাপটে সবচেয়ে বেশি মানসিক ক্ষতি হয়েছে এঁদের। গ্রাস করছে প্রবল নিঃসঙ্গতা।
সৃজিতা ধর, হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
বুদ্ধপূর্ণিমা
তথাগত বুদ্ধদেবের জন্ম, বোধিপ্রাপ্তি ও মহাপরিনির্বাণ লাভ— এই তিনটি অবিস্মরণীয় ঘটনা বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে ঘটে। বৌদ্ধ ইতিহাসে এই দিনটি বৈশাখী পূর্ণিমা তথা বুদ্ধ পূর্ণিমা নামে সমাদৃত। বোধিজ্ঞান লাভের অব্যবহিত পরে বুদ্ধদেব মানবহিতার্থে ‘বহু জন হিতায় বহু জন সুখায়’ বীজমন্ত্রে উদ্দীপ্ত করে সঙ্ঘের বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন। বিশ্বের সকল জীবের প্রতি মৈত্রী প্রদর্শনের নজির স্থাপন করে তিনি ‘পঞ্চশীল’ বাণীতে সকলকে প্রাণী-হত্যা হতে বিরত থাকতে সুপরামর্শ দিয়েছেন। প্রতিটি জীবের প্রতি মৈত্রীময় আচরণ করতে বলেছেন। অহিংসার প্রতিভূ বুদ্ধদেবের মৈত্রীর চিত্রায়ণ করেছেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক, নাট্যকার ও লেখক গিরিশচন্দ্র ঘোষ, যিনি তাঁর অসামান্য সৃষ্টি বুদ্ধদেবচরিত-এ উল্লেখ করেছেন, স্বয়ং বুদ্ধদেব নৃপতি বিম্বিসারের কাছে গিয়ে নিজের প্রাণের বিনিময়ে বলিপ্রদত্ত ছাগশিশুর প্রাণভিক্ষা চেয়েছেন।
ইতিহাসের পাতায় রাজা হরিশচন্দ্রের অপরিসীম দানমানসে চণ্ডালের কাছে আত্মবিক্রীত হয়ে তার ক্রীতদাসে পরিণত হওয়ার কাহিনিও লিপিবদ্ধ রয়েছে। পশুবলি প্রসঙ্গে যুগপুরুষ স্বামী বিবেকানন্দের বজ্রনির্ঘোষও সমান ভাবেই সুবিদিত। “ছাগকণ্ঠ রুধিরের ধার— ভয়ের সঞ্চার, দেখে তোর হিয়া কাঁপে? কাপুরুষ, দয়ার আধার! ধন্য ব্যবহার— মর্মকথা বলি কাকে?” যদিও তিনি প্রচলিত প্রথা মেনে বেলুড় মঠের দেবীপূজায় পশুবলির পক্ষে ছিলেন বটে, কিন্তু মা সারদার প্রবল আপত্তিতে তার বাস্তবায়ন সম্ভবপর হয়নি।
প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও পরিবেশ রক্ষার প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দিয়ে তথাগত বুদ্ধদেবই প্রথম প্রাণী-হত্যার বিপক্ষে সওয়াল করে সকল জীবের প্রতি পরম মৈত্রী ও করুণা প্রদর্শনের কথা মানুষকে বারে বারে স্মরণ করিয়েছেন। তথাপি অর্থলোলুপ মানুষ বিষম হত্যালীলায় বিশ্ব জুড়ে দিবারাত্রি নিমগ্ন। সমাজ পরিপূর্ণ হচ্ছে বিষবাষ্পে। বিরামহীন ভাবে তা শিশুদের কাছে এ পৃথিবীকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলেছে।
শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ, নিদেনপক্ষে বুদ্ধ পূর্ণিমার পবিত্র তিথিতে প্রাণী-হত্যা থেকে বিরত হন। মৈত্রী প্রয়াসে সচেষ্ট হয়ে মানবতার নিদর্শন প্রদর্শন করুন।
ইন্দ্রনীল বড়ুয়া, কলকাতা-১৫