আইন কি সবার জন্য সমান? প্রতীকী ছবি।
নিয়োগ দুর্নীতিতে যুক্ত ব্যক্তিরা কেন ঘুরে বেড়াচ্ছেন, কেন তাঁদের ছেড়ে রাখা হয়েছে, সিবিআই এত উদাসীন কেন, আদালত এটা বুঝতে পারছে না (নিয়োগ চক্রে বাকিরা অধরা কেন: কোর্ট, ৭-২)। শুধু নিয়োগ দুর্নীতি নয়, ভারতে যত বড় বড় দুর্নীতি বা কেলেঙ্কারি হয়েছে, সেগুলির শেষ কিনারায় কি সিবিআই ঢুকতে পেরেছে? বফর্স কেলেঙ্কারি, কফিন কেলেঙ্কারি, মধ্যপ্রদেশে ব্যপম, রাজস্থানে খনি, ছত্তীসগড়ে রেশন নিয়ে কেলেঙ্কারি, গুজরাতে পেট্রোলিয়াম দুর্নীতি, এমনকি পশ্চিমবঙ্গে সারদা, নারদ, বেঙ্গল ল্যাম্প, ট্রেজ়ারি, জাল মার্কশিট-সহ নানা কেলেঙ্কারির সঠিক তদন্ত কি আজও শেষ হতে পেরেছে? দুর্নীতি কখনও দু’-এক জনের সংযোগে ঘটে না। একটা বিশাল চক্র কাজ করে। তার শিকড় অনেক গভীরে। এই চক্র সমূলে উপড়ে ফেলার সাধ্য কি সত্যিই আছে সিবিআই-এর মতো সংস্থার? হ্যাঁ, জনগণকে কিছুটা ঠান্ডা করার জন্য মাঝেমধ্যে কেঁচো ধরতেই হয়। কিন্তু কেঁচো ধরতে গিয়ে কেউটে ধরা পড়বে, এমন আশা বৃথা। সবাই সত্যেন দুবের মতো ‘বোকা’ নন।
এই ব্যবস্থায় আইন কি সবার জন্য সমান? যারা জনগণের কয়েক লক্ষ কোটি টাকা ব্যাঙ্ক থেকে মেরে দিল, তারা কেউই শাস্তি পেল না। আইন কেবল আইনের পথেই চলে না, প্রভাবশালীর অঙ্গুলি হেলনেও চলে। তা না হলে বিলকিস বানোর ধর্ষক ও খুনিদের মুক্তি হত না, বহু দাগী আসামি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াত না। জনগণের টাকা মেরে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেতেন না প্রভাবশালীরা। আবার, অনেক নিরপরাধ ব্যক্তিকে বছরের পর বছর জেলের ঘানি টানতে হত না।
যে ব্যবস্থা দুর্নীতির উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে, কোনও তদন্ত সংস্থা তার নিরসন করতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। ব্যবস্থার পরিবর্তন না করে সমাজকে কোনও মতেই দুর্নীতিমুক্ত করা যাবে না।
নিখিল কবিরাজ, শ্যামপুর, হাওড়া
কর্তব্যের ডাক
স্কুল সার্ভিস কমিশন রাজ্যের স্কুলগুলিতে নিয়মবহির্ভূত নিয়োগের বিষয়টি আদালতে স্বীকার করে নিয়ে মহামান্য বিচারকদের নির্দেশ মেনে অবৈধ ভাবে নিযুক্ত শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের চাকরি বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করতে চলেছে (নিয়োগ বাতিলের বিজ্ঞপ্তি, আপিল চাকরিচ্যুতদের, ১৪-২)। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাঠ নেওয়ার সময় জেনেছি, অধিকার ও কর্তব্য নাকি হাত ধরাধরি করে চলে। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখছি, এই কথাটি সারবত্তা হারিয়ে ফেলেছিল। আইন আইনের পথে চলে, এই কথা প্রায়ই উচ্চারিত হলেও আইনকে ভিন্ন পথে চালিত করার প্রচেষ্টায় আমরা অনেকেই উৎসাহী। আবার আপসহীন মানুষও আছেন। গত এক দশকেরও বেশি সময় জুড়ে রাজ্যে ন্যায়বিচার আদায়ের লড়াইয়ের তালিকা কিছু কম নয়। শাসকের রোষানলে কর্তব্যপরায়ণ ডাক্তার থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরে সরকারি কর্মী, সকলেই পড়েছেন। তাঁদের নানা রকম হেনস্থার মুখোমুখি হতে হয়েছে। আবার, প্রশাসনের সুনজরে থাকতে নানাবিধ সুযোগ-সুবিধার প্রত্যাশায় অন্যায়, অনিয়ম করছেন আধিকারিকরা, এমন দৃষ্টান্ত প্রচুর। এমনটা কিন্তু হওয়ার কথা নয়। যে কোনও সরকারের কাজের ভাল-মন্দ সবটাই নির্ভর করে তার কর্মী-বাহিনীর কর্মকুশলতার উপর। নিজের কর্তব্য সম্পর্কে সজাগ থেকে নিয়ম মেনে কাজ করে গেলে কোনও কোনও ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের বিষনজরে পড়লেও পড়তে হতে পারে সংশ্লিষ্ট কর্মীকে; কিন্তু তাঁর সেই কাজ যদি সত্যিকারের জনহিতের জন্য হয়, তার জন্য যে মানসিক প্রশান্তি বা সন্তোষ পাওয়া যায়, তার মূল্য কম নয়, বরং প্রশাসনিক স্তুতির চেয়ে বেশি।
শুধুমাত্র নিচু স্তরে নয়, অনেক উপরের স্তরের কর্মীদেরও প্রশাসনের সুনজরে থাকার জন্য প্রাপ্ত সুবিধার নির্লজ্জ প্রকাশ আমরা দেখেছি। প্রশাসনের কুনজরে পড়া মানে তো বদলি, কম দায়িত্বপূর্ণ পদে পোস্টিং ইত্যাদি। একেবারে নিচুস্তরে এ-হেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বেশ খানিকটা অসুবিধার মধ্যে ফেলে, তা নিয়ে সংশয় নেই। কিন্তু মধ্য বা অতি উচ্চস্তরে এই ব্যবস্থা খুব বড় কোনও অসুবিধার কারণ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে হয় না। অথচ, রাজ্যের প্রশাসনিক রোজনামচায় এর অজস্র নজির। এমনকি সচিব পর্যায়ে কর্মজীবনের শেষেও উপদেষ্টা বা ওই ধরনের কোনও সমতুল পদে কাজে নিযুক্ত হওয়া এখন প্রায় রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশাসনের অনৈতিক কাজে সহায়তা করা কি একান্তই জরুরি? আমরা যারা বিভিন্ন দায়িত্বে সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে এসেছি তারা জানি, কর্মী সংগঠনের অস্তিত্ব প্রায় সর্বস্তরে। কর্মী সংগঠন তো সরকারের থেকে শুধুমাত্র কিছু দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য নয়। কর্মী সংগঠন সরকারের বৈধ পথে চলার সহায়ক শক্তিও বটে। সরকার অন্যায্য পথে পরিচালিত হলে, বা জনবিরোধী কোনও নীতি রূপায়ণে উদ্যোগ করলে, সেই রাস্তা থেকে সরে আসার পরামর্শ কর্মীরা দিতেই পারেন, এবং অবশ্যই দেওয়া উচিত। সে কর্তব্য তাঁরা পালন করলে রাজ্যবাসীকে প্রত্যক্ষ করতে হত না শিক্ষাক্ষেত্রের এই পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতি, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বেনিয়ম, ত্রাণের নামে সরকারি টাকা লুটের অশ্লীলতা। জনসাধারণের মৌলিক চাহিদা পূরণের বিষয়টি কেন এই অবহেলা সয়ে চলবে, স্বাধীনতা প্রাপ্তির ৭৫ বছর পরেও? তরুণ-তরুণীর স্বপ্নের বাস্তবায়নের জন্য নীতিবিবর্জিত রাজনীতির মুরুব্বিদের বিদায় দিতে হবে। রাজনীতিকে কলুষমুক্ত করতে হবে।
বরুণ কর, ব্যান্ডেল, হুগলি
ইতিহাস পরীক্ষা
সম্প্রতি বাংলার রাজনীতিতে অমর্ত্য সেন নিয়ে যে ধরনের বিতর্ক ও অশালীন মন্তব্য ধেয়ে এসেছে, তা কোনও ভাবেই কাম্য নয় (গন্ধটা খুব সন্দেহজনক, ৯-২)। অকারণ বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে নোবেল পুরস্কার নিয়ে। সকলেই জানেন, বিজয়ী ঘোষণা করা হয় একটা কমিটির মাধ্যমে। আগামী দিনে আরও অনেক বিষয়ে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হতে পারে। এই সহজ বিষয়টি কেউ কেউ বুঝতে পারছেন না, অথবা বুঝে না বোঝার ভান করছেন। অমর্ত্য সেন ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে বারে বারে কথা বলে এসেছেন। তাই তিনি অনেক রাজনৈতিক দলের নেতার কাছে ‘শত্রু’ বলে পরিগণিত হচ্ছেন। অমর্ত্য সেনের মতো মানুষের এই বয়সে নতুন করে কিছু পাওয়ার নেই। তিনি তাঁর অভিমত খুব জোরের সঙ্গে প্রকাশ করেন। ফলত তাঁকে কোনও না কোনও ভাবে জব্দ করার চেষ্টা করছেন এক শ্রেণির নেতা। দেখা যাচ্ছে, কোনও রাজনৈতিক দলের ছোট, মেজো নেতারা আক্রমণ করছেন না। রাজনীতির বাইরের লোক দিয়ে আক্রমণ করানো হচ্ছে। নানা কুরুচিকর শব্দ ব্যবহার করা হচ্ছে। আসলে বাংলার মানুষ বিষয়টা কী ভাবে নিচ্ছেন, সেটাই দেখা হচ্ছে। তেমন প্রতিবাদ না হলে হয়তো সরাসরি রাজনৈতিক ভাবে আক্রমণ করা হবে। আজ কিন্তু সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক দলের নেতাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন। অন্তত শিক্ষিত মানুষ সহজেই বুঝতে পারছেন, রাজনীতির স্বার্থে জল ঘোলা করা হচ্ছে। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। ভবিষ্যতে অকারণ অবমাননাকারীদের নাম কালিমালিপ্ত হবে নিশ্চিত ভাবে।
সৈয়দ সাদিক ইকবাল, সিমলা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
স্কুলে কম্পিউটার
রাজ্য সরকারের প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি করে কম্পিউটার এবং প্রিন্টার মেশিন বিশেষ প্রয়োজন। ছাত্র-ছাত্রীদের মার্কশিট এবং সার্টিফিকেট দেওয়া, প্রাক্-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের সমস্ত তথ্য নিবদ্ধীকরণ করা, সব কাজই এখন কম্পিউটারে হয়। অথচ, রাজ্যের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে কম্পিউটার ও প্রিন্টার মেশিন না থাকার জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিশেষ অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সব স্কুলে এই দু’টি যন্ত্রের ব্যবস্থা হোক।
জগন্নাথ দত্ত, সিউড়ি, বীরভূম