উৎসশ্রী প্রকল্প চালু হয়েছিল যাতে দূরবর্তী শিক্ষক-শিক্ষিকারা তাঁদের নিজেদের জেলায় বা জেলার পার্শ্ববর্তী ব্লকে ট্রান্সফার নিতে পারেন। এটি নিঃসন্দেহে প্রশাসনের একটি মহৎ প্রচেষ্টা। কিন্তু এর ফলে লাভবান হয়েছে শহরের দিকের স্কুলগুলো, যেখানে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অভাব নেই। নিজেদের ছেলেমেয়েদের শহরের ভাল স্কুলে পড়াবেন বলে অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকাই শহরমুখী হচ্ছেন। ফলে গ্রামের দিকে স্কুলগুলোর অবস্থা করুণ হয়ে পড়ছে। অধিকাংশ স্কুলেই শিক্ষক সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। তা ছাড়া অনেক দিন স্কুল সার্ভিস কমিশন-এর পরীক্ষা হয়নি। ফলে শিক্ষক নিয়োগও হচ্ছে না সে ভাবে। এ ভাবে চলতে থাকলে গ্রামের স্কুলগুলিতে শিক্ষাব্যবস্থা বেহাল হয়ে পড়বে। তাই আপাতত উৎসশ্রী বন্ধ করা হোক। সারপ্লাস ট্রান্সফার কিংবা অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রান্সফার করে আগে স্কুলগুলিতে শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ করা হোক। গ্রামাঞ্চলে শিক্ষার হাল ফিরুক। তার পরে নাহয় উৎসশ্রী চালু করা হবে। এই বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
সুজিত কুমার ভৌমিক
চণ্ডীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর
মাত্র ৭৫
২৭ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি এবং ১ মার্চ— এই তিন দিন ধরে চলেছে পোলিয়ো টিকাকরণ কর্মসূচি। এই কর্মসূচি বাস্তবায়িত করার ক্ষেত্রে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের অধিকাংশই আশাকর্মী। এ ছাড়া আছেন আইসিডিএস কর্মী এবং অন্যরা। ওঁরা সকালেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান পোলিয়ো টিকা আনার জন্য। কারও সামনে, কারও বা ৮-১০ কিলোমিটার দূরে গ্রামের অঞ্চল অফিসে গিয়ে ভ্যাকসিন বক্সে পোলিয়ো টিকার শিশি নিয়ে আসতে হয়। তার পর নির্দিষ্ট এলাকার প্রতিটি বাড়ি ঘুরতে হয় পাঁচ বছরের ছোট ছেলেমেয়েদের পোলিয়ো খাওয়ানোর জন্য। যাঁদের বাড়িতে শিশু আছে শুধু সেই বাড়িতে নয়, প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নিতে হয় বাইরে থেকে কোনও পাঁচ বছরের শিশু এসেছে কি না। তার পর প্রত্যেকের বাড়ির দেওয়ালে চক দিয়ে লিখে মার্কিং করতে হয়। পরে আবার একই ভাবে ওই বাড়িগুলি রি-ভিজ়িট করে খোঁজ নিতে হয় অন্য এলাকা থেকে কোনও শিশু বাড়িতে এসেছে কি না। তার পর আবার প্রতিটি বাড়ির দেওয়ালে রি-ভিজ়িট’এর জন্য মার্কিং করতে হয়। যে কোনও সময়ে ইনস্পেকশন করে দেখা হয়, ঠিক ভাবে কাজ হয়েছে কি না। এ ভাবে সারা দিন রোদ্দুরে, গরমে, না খেয়ে দিনের শেষে ক্লান্ত শরীরে ডিউটি সেরে বাড়ি ফেরেন এই কর্মীরা। এ ভাবে পর পর তিন দিন কাজের ডিউটি ভাগ করা থাকে। এঁদের ঘটা করে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। মাথার উপর ফুল ছড়ানো হবে। অথচ, এই সারা দিনের কাজের জন্য তাঁদের দেওয়া হয় মাত্র ৭৫ টাকা! তাই এক আশাকর্মীর আক্ষেপ, “কোনও সরকারই আমাদের মানুষ বলে মনে করে না।”
কাজল চক্রবর্তী
পশ্চিম মেদিনীপুর
সুরাহা হয়নি
রিষড়া পুরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। সুভাষনগর ‘সারস্বত সম্মিলন’ ক্লাব সুভাষনগর মাঠে একটি কংক্রিটের পিচ বানাচ্ছে। সেখানে ডিউজ় বলে ক্রিকেট প্র্যাকটিস করা হবে। পিচটি আমাদের শোয়ার ঘরের একদম পাশে। আমার স্বামী খুবই অসুস্থ। গত মাসে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে বেশ কিছু দিন ভর্তি ছিলেন। অতি সঙ্কটজনক অবস্থা থেকে ফিরিয়ে এনে ডাক্তার তাঁকে সাবধানে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা ক্লাব কর্তৃপক্ষকে বহু বার অনুরোধ জানিয়েছি, পিচটি মাঠের অন্য জায়গায় করার জন্য। কারণ, ডিউজ় বলে প্র্যাকটিসের শব্দ স্বামীর ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু ক্লাবের সদস্যদের পক্ষ থেকে তো বটেই, পঞ্চায়েত পুরসভা বা রিষড়া থানায় জানিয়েও কোনও রকম সহযোগিতা পাইনি। বদলে ক্লাবের সদস্যরা আমাদের রীতিমতো উত্ত্যক্ত ও অপমানিত করতে থাকে, যার ফলে আমার স্বামী আবার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। জেলাশাসক ও অতিরিক্ত জেলাশাসককেও ইমেল করা হয়। কিন্তু এখনও কোনও সদুত্তর মেলেনি। এ রকম পরিস্থিতিতে মেয়ে ও
অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে খুব অসহায়
হয়ে পড়েছি।
দোলা দে
রিষড়া, হুগলি
বিলুপ্তপ্রায় পাখা
বিজ্ঞানের আশীর্বাদের ফলে আজ বাংলার হাতপাখা শিল্প ধ্বংসের মুখে। যে তালপাতার হাতপাখা এক সময় রাজা-বাদশা বা তারও আগের আমল থেকে মানুষকে আরাম দিয়ে আসছে, সেই পাখাই আজ কদর হারিয়েছে। যদিও আজও গ্রাম বাংলার জেলাগুলিতে এই পাখার ব্যবহার চোখে পড়ে, তবে তা-ও নামমাত্র। আগে তালপাতার পাখার ব্যবহার শুরু হত জ্যৈষ্ঠ মাসে জামাইষষ্ঠীর অনুষ্ঠান দিয়ে। পরিবারের সদস্যদের মাথায় বিভিন্ন পাতা সহযোগে জল দিয়ে ভেজা পাখার বাতাস করার প্রচলন ছিল। সেই প্রচলনও আজ কমে গিয়েছে। তবুও জামাইষষ্ঠী উপলক্ষে এখনও কিছু পাখা বিক্রি হয়।
সুতো দিয়ে পাখার গায়ে পাখি, ফুল, লতাপাতা কিংবা ভালবাসার চিহ্ন ফুটিয়ে তোলা হত। কত ধরনেরই না পাখা দেখা যেত। কাপড়ের পাখা, বাঁশের চাটাইয়ের রঙিন পাখা, তালপাতার পাখা, ভাঁজ পাখা, চায়না পাখা, ঘোরানো পাখা ইত্যাদি। প্রচণ্ড গরমে তালপাতার পাখা জলে ভিজিয়ে সেই হাওয়া খাওয়ার অনুভূতিই ছিল আলাদা। পদ্ম, উনিশ কাঁটা, বরফি, শঙ্খ, আয়না কোটা, শঙ্খ পদ্ম, ঝুরি ফুল, চালতা ফুল, পান পাতা, তারাফুল, চার মাছ, মোরগ, চৌখুপি— এ সব হল পাখার নকশার নাম।
বর্তমানে ওই তালপাতার জায়গা নিয়েছে প্লাস্টিক বা সান প্যাকের তৈরি পাখা। ব্যাটারি চালিত পাখাও দেদার বিক্রি হচ্ছে বাজারে। এক দিন হয়তো উচ্চবিত্ত বা মধ্যবিত্তের ড্রয়িংরুমে শো-পিস হিসেবে জায়গা করে নেবে এই তালপাতার হাতপাখা।
পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় চক্রবর্তী
হাকিম পাড়া, শিলিগুড়ি
নিজস্বীর জালে
‘নিজেই দেখি, নিজেই দেখাই’ (২৩-২) শীর্ষক শ্রীদীপ-এর নিজস্বী সম্পর্কিত প্রবন্ধটি মূল্যবান আলোচনায় সমৃদ্ধ। সত্যিই, এখন নিজস্বী তোলায় ব্যস্ত আট থেকে আশি। মুঠোফোনের ক্যামেরা দিয়ে আত্ম-ছবি তুলে এবং বার বার তা দেখে আত্মসুখে মশগুল হই আমরা। সেই ছবি মুহূর্তে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অন্যের স্মার্টফোনে পাঠিয়ে মন্তব্য প্রাপ্তির সংখ্যা গুনে তৃপ্তির ঢেকুর তুলি। নিজস্বীর কারণে আজ আর একটির অস্তিত্ব প্রায় অবহেলিত, যা আমাদের কাছে ‘অটোগ্রাফ’ নামে পরিচিত। বিখ্যাত ব্যক্তির ‘অটোগ্রাফ’ বা সই নেওয়ার যে আধিক্য আগে দেখা যেত, এখন কিছুটা হলেও তা স্তিমিত। বরং তাঁর সঙ্গে নিজস্বী তোলার দিকেই বেশি ঝোঁক দেখা যাচ্ছে। সব কিছুকে নিজস্বীর আওতায় রাখতে গিয়ে আবার নানা দুর্ঘটনাও ঘটে যায়। পাহাড়ের চূড়ায় উঠে, নদীর কিনারায়, চলন্ত বাস-ট্রেনের গেটে, ট্রেন লাইনে দাঁড়িয়ে নিজস্বী তুলতে গিয়ে কত প্রাণ অকালে হারিয়ে যায়। সময়ের নিরিখে নিজস্বী থাকুক, কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে নিজস্বী তোলার যে কুঅভ্যাস গড়ে উঠেছে, তা বন্ধ হোক।
সত্যকিঙ্কর প্রতিহার
দেশড়া, বাঁকুড়া
গ্রহণযোগ্য নয়?
রেশন দোকানে বা ‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্প শিবিরে গিয়ে প্রাপ্য রেশন তোলার সময়ে জানতে পারি, আসল রেশন কার্ড থাকলে ই-রেশন কার্ড রাখা যাবে না। স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য ই-রেশন কার্ড দেওয়াতে বারুইপুর এসডিও অফিস সেটি নিতে অস্বীকার করে। তা হলে ই-রেশন কার্ড কি কোনও সরকারি কাজে গ্রহণযোগ্য নয়?
দীপঙ্কর দে
সোনারপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা