ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরোর তথ্য অনুযায়ী কলকাতা শহর মোটামুটি নিরাপদ, যা আনন্দের খবর (‘শহর নিরাপদ, রাজ্যে বেড়েছে নারী নির্যাতন’, ১৬-৯)। তবে এনসিআরবি আরও জানিয়েছে, রাজ্যে মেয়েদের উপর হিংসাত্মক ঘটনা ও নারী নির্যাতনের সংখ্যা বেড়েছে, যা অনভিপ্রেত। অবশ্য তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, রাজ্যে মহিলাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বরাবরই অগ্রাধিকার পেয়েছে এবং মহিলাদের ক্ষমতায়নের প্রশ্নে রাজ্য সরকার যে বিপুল কর্মসূচি নিয়েছে, দিল্লি তার স্বীকৃতি দিতে বাধ্য। মনে হয় তিনি অত্যুক্তি করেননি, কারণ নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ শ্রদ্ধেয় অমর্ত্য সেনও আগে এই ধরনের মন্তব্য করেছেন, যা রাজ্যের পক্ষে অবশ্যই ইতিবাচক ও প্রশংসনীয়।
তবে গত এক বছরে সারা দেশে মহিলাদের উপর অপরাধের হার ৮.৩ শতাংশ কম হলেও পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশায় তা উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে। পরিসংখ্যান থেকে জানা গিয়েছে যে, ২০১৯ সালে এ রাজ্যে মহিলাদের উপর যত হিংসাত্মক ঘটনা লিপিবদ্ধ হয়েছে, ২০২০ সালে তা প্রায় ২৬ শতাংশ বেড়েছে এবং ওড়িশাতে বেড়েছে প্রায় ১১ শতাংশ।
এখানে বলার এই যে, নারীদের উপর হামলা তথা আক্রমণের সংখ্যা কমাতে ও তাঁদের নিরাপত্তা বাড়াতে ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় সরকার-সহ সব রাজ্যের উচিত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা। প্রতিটি শহরের অপরাধপ্রবণ ও অরক্ষিত এলাকাগুলিতে নিরাপত্তা বাড়ানো, পর্যাপ্ত পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করা দরকার, বিশেষ করে রাতের বেলায়। একই সঙ্গে পুলিশের পেট্রল ভ্যানের সাহায্যে কড়া নজরদারি রাখা এবং ওই সব অঞ্চলগুলিতে পর্যাপ্ত সিসিটিভি বসানো দরকার। কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত এই ক্ষেত্রে সব রাজ্যকে প্রয়োজনীয় অর্থ ও লোকবলের জোগান দেওয়া বা পরিকাঠামো সুনিশ্চিত করা। আশা করা যায়, সাধারণ মানুষও এ ব্যাপারে সচেতন হবেন এবং পুলিশ ও প্রশাসনের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন।
পঙ্কজ সেনগুপ্ত
কোন্নগর, হুগলি
প্রতিবাদ কই
শামিম আহমেদের “‘জেহাদি’ সন্ত্রাসের গৈরিক পাঠ্য” (১৬-৯) বাস্তব সত্যকে ঢাকা দিতে সঙ্কীর্ণ রাজনীতির আশ্রয় নেওয়া ছাড়া আর কিছু নয়। কিন্তু এতে কি শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায়? লেখক লিখেছেন— ইসলামের দর্শন পড়লে বোঝা যায়, যে সব ‘মুজাহিদ’ সন্ত্রাস চালায় তাদের সঙ্গে ধর্মের যোগ প্রায় নেই বললেই চলে। ধর্মকে তারা নিজেদের হিংসার সমর্থনে অপব্যবহার করে মাত্র। যদি তা-ই হয়, তা হলে বিশ্ব মুসলিম সমাজ তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় না কেন? বিশ্বে ৫০টিরও বেশি মুসলিম দেশ আছে, যেখানে সংখ্যালঘুরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। সেই মুসলিম দেশগুলিকে কি কখনও দেখা গিয়েছে বিশ্বব্যাপী এই জেহাদি ইসলামিক সন্ত্রাসবাদ নিয়ে প্রতিবাদ করতে? বরং, এই ‘জেহাদি সন্ত্রাস’কে অমুসলিমদের বিরুদ্ধে এক হুঁশিয়ারি বলে তারা আত্মপ্রসাদ লাভ করে আর আর্থিক সাহায্য জোগায়।
হিন্দু ধর্মেও ‘ধর্মযুদ্ধ’-এর কথা বলা আছে। সেটা অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের। তাই বলে তার অপব্যবহার বিশ্বব্যাপী দেখা যায় না। ভারতে বিজেপি বা আরএসএসের ধর্মীয় অসহিষ্ণুতাকে প্রবল ভাবে প্রতিবাদ করা হয় ও হবে। অথচ, জেহাদি সন্ত্রাস নিয়ে ভারতের মুসলিম সমাজকে কোনও দিন কোনও প্রতিবাদ মিছিল করতে দেখা যায় না। আজ ‘জেহাদি সন্ত্রাস’ তালিবান বা অন্যান্য জেহাদি গোষ্ঠীর সমর্থনে যে উৎকর্ষ লাভ করেছে, তাকে যদি দলমত, ধর্ম-বিশ্বাস নির্বিশেষে আমরা রুখতে না পারি, তা হলে মানবসভ্যতা বলে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। আদিমতাই শেষ কথা বলবে এই পৃথিবীতে। আফগানিস্তানে ‘তালিবান’ তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
মিহির কানুনগো
কলকাতা-৮১
উৎসবে অনুদান
‘নিয়ম মেনে পুজোর ডাক’ (৮-৯) খবরটি সত্যিই শারদীয় আনন্দের বার্তাবাহক বলেই মনে হয়েছে। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম অনুষ্ঠিত পুজো কমিটিগুলির প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সভায় মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, গত বছরের মতো এ বারও এই পরিমাণ টাকা প্রতিটি পুজো কমিটিকে অনুদান হিসাবে দেওয়া হবে। আগে এই অনুদানের পরিমাণ ছিল দশ হাজার টাকা। কোভিড পরিস্থিতির কারণে প্রতিটি মানুষের পাশাপাশি সরকারের আর্থিক অবস্থা ক্রমশ খারাপ হয়ে পড়েছে। তা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী চেষ্টা করছেন, সর্ব ধর্মসমন্বয়ের এই আনন্দের উৎসবে যাতে কোথাও আনন্দের ঘাটতি না হয়। এই জন্য তাঁকে ধন্যবাদ।
কিন্তু একটা বিষয় বার বার মনে হয়েছে। এই আনন্দের উৎসবে অনুদান দেওয়ার বিষয়টি সংখ্যাগুরুদের পাশাপাশি সব ধর্মের মানুষের জন্যই ভাবা উচিত। মুসলমান, খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ ইত্যাদি নানা ধর্মের মানুষের বাস আমাদের রাজ্যে এবং তাঁদের প্রত্যেকেরই আলাদা আলাদা আনন্দের অনুষ্ঠান আছে। স্বাভাবিক ভাবেই শুধুমাত্র একটা সম্প্রদায়ের মানুষদের উৎসবে অনুদানের টাকা দিলে অন্য ধর্মের মানুষের মনে আঘাত লাগতে বাধ্য। এক সময় শুধুমাত্র মুসলিম সম্প্রদায়ের ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের ভাতা দেওয়ার কারণে হিন্দু পুরোহিত, খ্রিস্টান যাজক ও অন্য সম্প্রদায়ের মানুষরা আঘাত পেয়েছিলেন। সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সেই সময় প্রচুর রাজনীতিও হয়েছিল। গত বিধানসভা ভোটের আগে পুরোহিতদের ভাতা দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের মধ্যে দিয়ে এই ক্ষোভ অনেকটাই প্রশমিত হয়েছিল। স্বাভাবিক ভাবেই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত সরকারের উচিত কাউকে আঘাত না দিয়ে সব ধর্মের মানুষের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নেওয়া।
পার্থ সারথী মণ্ডল
কৃষ্ণনগর, নদিয়া
শিক্ষার অধিকার
অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়ের ‘চোখের সামনে সর্বনাশ’ (৩১-৮) শীর্ষক প্রবন্ধ সংবেদনশীল মানুষের মনে নিঃসন্দেহে আলোড়ন তুলবে। ছেলেমেয়েদের অন্ধকারাচ্ছন্ন ভবিষ্যৎ দেখেও তথাকথিত নাগরিক সমাজের নিস্পৃহ থাকার কথা লেখক উল্লেখ করেছেন। কিন্তু ক্ষমতার বৃত্তের কাছাকাছি থাকা বিদ্বজ্জনদের একটা প্রজন্মের সর্বনাশ দেখেও উদাসীন থাকা অত্যন্ত পীড়াদায়ক।
উপনির্বাচন করা কিংবা রেস্তরাঁ, পানশালা বা মদের দোকান খোলা সরকারের অগ্ৰাধিকারের তালিকায় পড়লেও, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তার থেকে বহু দূরে। করোনার সম্ভাব্য দীর্ঘ স্থায়িত্বের কথা ভেবে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বজায় রাখতে এক সময় রাজ্যবাসীকে পরিহাস ছলে করোনাকে পাশবালিশ করে থাকার কথা বলেছিলেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকাকালীন বিকল্প শিক্ষাদান, বিশেষ করে প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়াদের শিক্ষাদান নিয়ে তাঁর কোনও নির্দিষ্ট পরিকল্পনা না থাকাটা দুর্ভাগ্যজনক। ‘শিক্ষার অধিকার’ থেকে গরিষ্ঠ অংশের শিশু-কিশোররা বঞ্চিত। তাদের স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যারও সৃষ্টি হচ্ছে। পড়াশোনার পাট উঠে যাওয়ায় অভাবের তাড়নায় কেউ কেউ রোজগারের পথেও নেমেছে। এদের বৃহৎ অংশকে শিক্ষাঙ্গনে ফেরানো নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ আছে। এই সমস্ত বঞ্চিত, হতভাগ্য শিশু-কিশোরদের জন্য শিশুসুরক্ষা কমিশন-এর কি কিছুই করার নেই?
শিক্ষার অধিকার সাংবিধানিক এবং মৌলিক অধিকার। ৬-১৪ বছর বয়সি সকল শিশু-কিশোরের জন্য স্কুলের পাঠদানের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় তাদের মৌলিক অধিকার খর্ব হচ্ছে এবং শৈশব-কৈশোরের অপমৃত্যু হচ্ছে। মানবাধিকার রক্ষার দাবিতে যাঁরা সরব, এই মৃত্যু কি তাঁদের নাড়া দেয় না? কাঠবিড়ালীর মতো সেতু বন্ধনে যাঁরা ব্রতী, সরকার তাঁদের পাশে থাকুক।
ধীরেন্দ্র মোহন সাহা
কলকাতা-১০৭