medical

সম্পাদক সমীপেষু: অসার শিক্ষা

হাতেকলমে ‘বেডসাইড টিচিং’, অর্থাৎ রোগীকে পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করার পাঠ প্রায় অবলুপ্ত।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২২ ০৫:৪৭
Share:

‘ডাক্তারি শিক্ষার গোড়ায় গলদ’ (১৪-৩) শীর্ষক প্রবন্ধে অভিজিৎ চৌধুরী লিখেছেন, এ রাজ্যের চিকিৎসাব্যবস্থা সম্পর্কে যে অভিযোগগুলি জানা যায়, তা নিয়ে আলোচনার সময় এসেছে। বস্তুত এই সব কারণ, ঘটনা ও বেনিয়মগুলিকে আজ ‘ওপেন সিক্রেট’ বলা চলে, এবং গত দুই দশক থেকে সেগুলি ক্রমবর্ধমান। অতএব আলোচনা অনেক আগেই বাঞ্ছিত ছিল। রাজ্যের সর্বত্র ব্যাঙের ছাতার মতো মেডিক্যাল কলেজ খুলছে, সরকারি ও বেসরকারি দুটোই। এত কলেজে পড়ানোর মতো যথেষ্ট সংখ্যায় শিক্ষক কোথায়? যেটুকু ক্লাসে পড়ানো হয়, তার অধিকাংশই ‘থিয়োরিটিক্যাল’ বা পাঠ্যপুস্তকের থেকে পাঠ। হাতেকলমে ‘বেডসাইড টিচিং’, অর্থাৎ রোগীকে পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করার পাঠ প্রায় অবলুপ্ত।

Advertisement

যে কাজের মাধ্যমে আমরা প্রধানত কাজ শিখতাম, সেই ‘হাউস জব’ অর্থাৎ ‘হাউস স্টাফ’ হিসেবে হাসপাতালে চিকিৎসার দায়িত্ব পালন করার ব্যাপারটাই উধাও হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থার জন্য মেডিক্যাল শিক্ষা নিয়ামক কর্তৃপক্ষও দায় এড়াতে পারেন না। এর সঙ্গে অবশ্যই আছে মেডিক্যাল শিক্ষাব্যবস্থায় দলীয় রাজনীতির রমরমা, যেটা পুরো ব্যবস্থাটায় পচন ধরিয়েছে। অভিজিৎবাবুর কথায়, এটা ‘ফাইলেরিয়াল গ্রোথ’, যদিও একে ‘ম্যালিগন্যান্ট গ্রোথ’ বা ক্যানসারের টিউমার বললেই ঠিক হয়।

আর যে শিক্ষক-চিকিৎসকরা সপ্তাহে একটা বা দুটো দিন হাজিরা দেওয়া সত্ত্বেও বহাল তবিয়তে প্রমোশন পেয়ে চলেছেন, তাঁদের তো আমরা দীর্ঘ দিন ধরে সহ্য করছি। না প্রশাসন, না অভিভাবক, না ছাত্রগোষ্ঠী, কোনও তরফে তাঁদের অনিয়ম বা কর্তব্যে ফাঁকির বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ নেই। পুরো মেডিক্যাল শিক্ষাটাই একটা অন্তঃসারশূন্য, ফাঁপা ভিতের উপরে বসে আছে। এর ফল সুদূরপ্রসারী, কিছু আমরা ভোগ করছি, আরও ব্যাপক ভাবে ভুগবে পরবর্তী প্রজন্ম। অভিজিৎবাবু বলেছেন, এই পরিস্থিতি শোধরাতে হবে। কিন্তু বেড়ালের গলায় সেই ঘণ্টা বাঁধবে কে?

Advertisement

মণিমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়

ধানবাদ, ঝাড়খণ্ড

কেন অবক্ষয়?

অভিজিৎ চৌধুরী তাঁর প্রবন্ধে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর আলোকপাত করেছেন। সমাজের সেরা ছেলেমেয়েদের নিয়ে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলে, তাতে বর্তমানে পরতে পরতে এত অন্ধকার জমছে কেন? আসল কথা হল, শিক্ষার জায়গাটি যদি ফাঁকিবাজি আর দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠে, তা হলে সেখানে প্রকৃত শিক্ষা হবে কী করে? সপ্তাহে এক দিন বা দু’দিন শিক্ষক চিকিৎসকের ক্লাসে উপস্থিতি এখন আর কোনও ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়, বরং সেটাই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ রকমটাই যদি চলতে থাকে, তবে আগামী দিনে আমরা ভাল চিকিৎসক পাব কী ভাবে?

আজ থেকে বিশ বছর আগেও চিকিৎসা শিক্ষায় শৃঙ্খলা, নিষ্ঠা, দায়িত্ব পালনের ঐতিহ্যের ইতিহাস লক্ষ করার মতো ছিল। মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যার সঙ্গে আসনসংখ্যাও বেড়েছে প্রয়োজনের নিরিখেই, কিন্তু শিক্ষাদানের শৃঙ্খলা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার এই অস্বাভাবিক অবনমন বা অবক্ষয় কেন? এ কথা অনস্বীকার্য যে, এখনও শিক্ষকদের একাংশ নিষ্ঠার সঙ্গে তাঁদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন বিরামহীন ভাবে। ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চলা প্রাইভেট কলেজে শিক্ষকদের দেওয়া হয় নামমাত্র পারিশ্রমিক। সেখানে এই ব্যাধির ব্যাপকতা যে আরও বেশি, সে কথা বলা বাহুল্য।

হোম সেন্টারের ব্যবস্থা করে ছাত্রছাত্রীদের পাশ করিয়ে দেওয়ার যে প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে, তা কি শুধুই শিক্ষকদের গাফিলতি ঢাকার তাগিদে? চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যাধির শিকড় গভীরে। রাজনৈতিক রং না দেখে সরকারের উচিত নিরাময়ের পথ খোঁজা।

দিলীপ কুমার সেনগুপ্ত

কলকাতা-৫১

শিথিল শর্ত

‘ডাক্তারি শিক্ষার গোড়ায় গলদ’ শীর্ষক সময়োচিত প্রবন্ধের জন্য অশেষ ধন্যবাদ। ডাক্তারি শিক্ষার শোচনীয় বিপর্যয়ের কারণগুলি হল— ফাঁকিবাজ ও দায়িত্বজ্ঞানহীন শিক্ষক, শান্তিপ্রিয় প্রশাসক, পরীক্ষায় ফেল না করা।

কিন্তু একটা বিষয়ের উল্লেখ অভিজিৎবাবু তাঁর প্রবন্ধে করেননি। তা হল, মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া-কে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন-এ পরিবর্তন করা। যখন এমসিআই ছিল, তখন বার বার একটা মেডিক্যাল কলেজ পরিদর্শন হত, একটি বিভাগে কত জন শিক্ষক চিকিৎসক আছেন, সেটা এমসিআই-এর মানদণ্ডের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হত। যদি না মিলত, তা হলে সেই কলেজের পুনরায় পরিদর্শন হত।

ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন এখন পরিদর্শনের মানদণ্ড অনেকাংশেই লঘু করেছে। এখন মেডিক্যাল কলেজ খোলার জন্য একটা জেলা হাসপাতালকে দেখালেই হবে। একটি বিভাগে যথেষ্ট সংখ্যক শিক্ষক থাকার প্রয়োজনও রদ করে দেওয়া হয়েছে। এই ভাবে বহু সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্বীকৃতি পাচ্ছে। সুতরাং, অদূর ভবিষ্যতে আমাদের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা কাদের হাতে যাচ্ছে, তা ভেবে দেখার সময় হয়েছে।

সুব্রত বাগচী

প্রাক্তন অধ্যাপক, এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ

ওরা শিশু

সর্বত্র আজকাল মানবশিশুদের ‘বাচ্চা’ বলার চল হয়েছে। রেডিয়ো-টিভিতেও যত ডাক্তারবাবু শিশুস্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা করেন, অধিকাংশই বলেন “বাচ্চাকে এই করুন, বাচ্চাকে ওই করুন” ইত্যাদি। যদিও ওই ডাক্তারবাবুদের আমরা ‘শিশু-চিকিৎসক’ বলেই জানি।

আমরা জানি, মনুষ্যেতর প্রাণীদের নবজাতককেই সাধারণত ‘বাচ্চা’ বলা হয়, যেমন কুকুরের বাচ্চা, ছাগলের বাচ্চা ইত্যাদি। ব্যবহারিক ক্ষেত্রেও কোথাও ‘বাচ্চা’ কথাটি পাওয়া যাবে না। যেমন আমরা বলি— শিশু চিকিৎসালয়, শিশু উদ্যান, শিশু শিক্ষাকেন্দ্র ইত্যাদি। আইনের পরিভাষাতেও রয়েছে শিশুশ্রম, শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ ইত্যাদি। তাই মানবসন্তান বাচ্চা নয়, শিশু। শিশুদের ওই নামেই ডাকুন।

সাধন মুখোপাধ্যায়

অরবিন্দনগর, বাঁকুড়া

নিরাপদ আবির

‘ফুলের আবির প্রসারে উদ্যোগী রাজ্য’ (১৫-৩) শীর্ষক সংবাদটি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। দোল মানে রঙের খেলা, কিন্তু কেমিক্যাল মিশ্রিত রং চোখ ও ত্বকের পক্ষে খুবই বিপজ্জনক। খুশির খবর, ভেষজ আবির তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে পুরুলিয়া সিধো কানহো বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনোভেশন হাব’-এর উদ্যোগে। এ ছাড়া পুরুলিয়ার বলরামপুর ব্লক প্রশাসনের সাহায্যে জঙ্গলমহলের মেয়েদের হাতে এখন তৈরি হচ্ছে ভেষজ আবির। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এই উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত। ক্ষতিকর রাসায়নিক মিশ্রিত আবির বর্জন করে ভেষজ আবির তৈরির পদ্ধতি প্রথম দেখিয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। এ বার সরাসরি মাঠে নেমেছে রাজ্য সরকার। পলাশ ফুল, বিট, নিম, হলুদ ও গাঁদার নির্যাস দিয়ে পরিবেশবান্ধব ভেষজ আবির তৈরি করা হয়। রাজ্য জুড়ে বাজারে ভেষজ আবিরের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। মনে রাখতে হবে, শুধু দোল উৎসবে নয়, খেলাধুলা ও নির্বাচনে বিজয় উৎসব উদ্‌যাপনে রং ও আবিরের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। তাই অনেকেই ভেষজ আবির তৈরি শিখে স্বনির্ভর হওয়ার নতুন দিশা পেয়েছেন। এই ধরনের আবিরের একটা স্থায়ী বাজার গড়ে তোলার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে এ কাজে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এতে গ্রামের মানুষ বিকল্প জীবিকার হদিস পাবেন।

বিপদতারণ ধীবর

বেলিয়াতোড়, বাঁকুড়া

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement