গত ৮ অক্টোবর অনলাইনে শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারির টিকিট কেটেছিলাম ২২ অক্টোবর বিকেল সাড়ে চারটের গ্র্যান্ড সাফারির জন্য। বোলপুর, কলকাতা, দুর্গাপুর মিলিয়ে আমাদের পরিবারের ছ’জন প্রবীণ নাগরিক, একটি ৭ বছরের শিশু-সহ মোট ১১ জন ছিলাম। কালিম্পং পাহাড়ের রাস্তা বন্ধ থাকার কারণে আমরা বাধ্য হয়ে লাভা, ওদলাবাড়ি, গজলডোবা, শিলিগুড়ির রাস্তা ধরি। সকাল আটটায় চিবো (যেখানে আমরা তিন দিন রাত্রিবাস করেছিলাম) থেকে যাত্রা শুরু হয়। লাভার কাছাকাছি কয়েকটি ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা ধীরে ধীরে অতিক্রম করে পথের যানজট এড়িয়ে বিকেল চারটে পঁয়ত্রিশ মিনিটে বেঙ্গল সাফারির কাউন্টারে পৌঁছলে সিকিয়োরিটি গার্ড জানান, সেটা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কাউন্টারের কর্মচারীদের দেরির কারণ জানালেও তাঁদের থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। গার্ড জানান, ফোনের মাধ্যমে সমস্যাটি আমাদের আগে জানানো উচিত ছিল। অথচ, সকাল থেকে নির্দিষ্ট মোবাইলে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের বার বার চেষ্টা বিফলে যায়। এ দিকে সিকিয়োরিটি গার্ড হুমকি দিতে থাকেন এবং আমরা বেরিয়ে আসতে বাধ্য হই। প্রবীণদের অনুরোধ, শিশুর কান্না বিফলে যায়। এই ভাবে পর্যটনে উন্নয়ন! সরকার কী ভাবছে? টিকিটের ২২০০ টাকা কি অপাত্রে দান, না কি এটাও এক ধরনের প্রতারণা! এই হয়রানির দায় কার?
প্রদীপ ভট্টাচার্য
সাতের পল্লি, বোলপুর
পুজোতেও চাই
সংবাদপত্রকে অত্যাবশ্যক পণ্য হিসাবে গণ্য করা হয়। রাজনৈতিক দলের ডাকা বন্ধের সময়ও সংবাদপত্র এর আওতার বাইরে থাকে। অতিমারির সময়ে দীর্ঘ লকডাউনেও সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়েছে, বাড়ি বাড়ি সরবরাহও করা হয়েছে। কিন্তু দুর্গাপুজোর সময় টানা চার দিন সংবাদপত্রের মুদ্রণ বন্ধ থাকে। ফলে পাঠক মুদ্রিত সংস্করণ থেকে বঞ্চিত হন।
একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মুষ্টিমেয় মানুষের ধর্মীয় উৎসবের জন্য কেন সংবাদপত্র বন্ধ রাখা হবে? দুর্গাপুজো নাকি বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব। কিন্তু সত্যিই কি তাই? কলকাতায় সম্ভবত দুর্গাপুজোর বাড়বাড়ন্ত রাজা নবকৃষ্ণ রায়ের হাত ধরে। সাহেবদের মনোরঞ্জন, বাইজি নাচ এবং মদ্যপানের আসরে জমে উঠত জমিদার বাড়ির পুজোমণ্ডপ। উনিশ শতকের মাঝামাঝি দেখা যায়, বারোয়ারি পুজোর প্রচলন হচ্ছে। হুতোম প্যাঁচার নকশা-তে তার বর্ণনা রয়েছে।
কিন্তু সামগ্রিক ভাবে বাংলার শ্রেষ্ঠ উৎসব এখনও দুর্গাপুজোকে বলা যায় না। কেননা মূলত কলকাতা-সংলগ্ন এলাকা বাদ দিলে দুর্গাপুজো তত জনপ্রিয় নয়। বরং শান্তিপুরের পাঁচশো বছরের পুরনো রাস উৎসব নদিয়ার দুই প্রাচীনতম জনপদে (শান্তিপুর এবং নবদ্বীপ) এখনও মূল উৎসব। শান্তিপুরের বিখ্যাত ভাঙা রাসই বোধ হয় রাজ্যের প্রাচীনতম কার্নিভাল। কৃষ্ণনগরে ধুমধাম করে হয় জগদ্ধাত্রী পুজো। এই পুজো হুগলির চন্দননগরে দুর্গাপুজোকেও ম্লান করে দেয়। ব্যারাকপুর, নৈহাটি, বারাসতে কালীপুজো প্রবল উৎসাহে পালিত হয়।
বাঁকুড়া, বীরভূম জেলার গ্রামাঞ্চলেও দুর্গাপুজো সে ভাবে জনপ্রিয় উৎসবের চেহারা পায়নি। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া জেলায় মনসা পুজোর বহুল প্রচার আছে। এ ছাড়াও গ্রামবাংলা জুড়ে চড়ক, নবান্ন, ভাদু, টুসু, পুণ্যিপুকুর, ইতুর প্রচলন আছে। মেলা বসে নানা জায়গায়। আঞ্চলিক এই সব উৎসবের কাছে দুর্গা নেহাতই ম্লান। তবে টেলিভিশন, ইন্টারনেটের সর্বগ্রাসী ধাক্কায় শহরের প্রাচুর্যময় দুর্গাপুজো ধীরে ধীরে বিভিন্ন জেলার গ্রামেও কিছুটা প্রভাব তৈরি করেছে, যার ধাক্কায় লোকায়ত উৎসবগুলি কিছুটা কৌলীন্য হারিয়েছে। তা হলেও দুর্গাপুজো রাজ্য জুড়ে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব, এটা বলা মুশকিল।
এ তো শুধু হিন্দু ও লোকাচারের কথা হল। এর পরে অন্য ধর্মের উৎসবগুলিও যোগ হলে কোনও ভাবেই আর বাংলার শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো থাকে না। তা হলে ওই চার দিন সংবাদপত্রের মতো একটি অত্যাবশ্যক পরিষেবা থেকে কেন বাঙালি বঞ্চিত হবে?
গৌতম সরকার
শ্রীরামপুর, হুগলি
জেটি চালু হোক
সাঁকরাইল থানার অন্তর্গত সারেঙ্গা থেকে বাটানগর যাওয়ার জন্য ভাগীরথী নদী পারাপার করতে হয়। তার জন্য ভুটভুটি নৌকা করে সাধারণ মানুষকে যেতে হয়। এতে বিপদ অনেক, কারণ ভাটার সময় এত বেশি চড়া পড়ে যে বলার নয়। নৌকা এমন জায়গায় যাত্রীদের নামায় যে, কাঠের সিঁড়ি দিয়ে প্যান্ট বা কাপড় উঁচু করে খুব সাবধানে জলের মধ্যে দিয়ে নেমে তার পর দীর্ঘ পলি মাখা গোল গোল ইটের উপর দিয়ে প্রায় ৫০ মিটার হাঁটার পর পারে পৌঁছনো যায়। প্রায়শই কোনও না কোনও বয়স্ক মানুষ পা পিছলে পড়ে যান। শীতকাল আসন্ন। নদী পারাপার খুবই কষ্টের। এ দিকে, পারাপারের জন্য জেটি নির্মাণ করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। প্রায় দেড় বছরের বেশি হয়ে গেল অতি আড়ম্বরের সঙ্গে এই জেটির উদ্বোধন করেছেন সরকারি প্রতিনিধিরা। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, এখনও এই জেটি দিয়ে বাস্তবিক যাতায়াত শুরু করা গেল না। অবিলম্বে এই জেটি কাজ শুরু করলে অনেক সাধারণ মানুষ নদী পারাপারের বর্তমান দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবেন।
স্নেহাশীষ পাল
সারেঙ্গা, হাওড়া
অমানবিক খেলা
পুরুলিয়া জেলার কাড়া খুঁটা (মহিষকে আঞ্চলিক ভাষায় কাড়া বলা হয়) একটি দুর্ধর্ষ খেলা। এটি কালীপুজোর পর ভাইফোঁটার দিন এখনও অনেক গ্ৰামেই হয়ে থাকে। একটি কাড়াকে গ্ৰামের মাঝখানে, যেখানে অনেক মানুষের সমাগম ঘটতে পারে, তেমন জায়গায় একটি শক্ত শণের দড়ি দিয়ে খুঁটিতে বাঁধা হয়। সামান্য দূরে মহিলা, পুরুষ এবং শিশুদের সামনে বাজনা বাজিয়ে লাল রঙের কাপড় ও চামড়া বার বার কাড়াটির মুখের সামনে ধরা হয় এবং প্রাণীটিকে ধীরে ধীরে উত্তেজিত করা হয়। অনেক মানুষের হট্টগোলে কাড়াটি চরম উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং খুঁটিটির চার দিকে বৃত্তাকারে ঘুরতে থাকে। রাগের বশে সে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে।
কাড়ার এই উত্তেজনা ও হয়রানি মানুষের মনে এক ধরনের আনন্দ ও উল্লাস প্রদান করে। সারা বছর চাষের কাজে প্রাণীগুলি এমনিতেই অত্যন্ত কষ্টের মধ্যে থাকে। তার উপর এই পৈশাচিক খেলায় তারা যারপরনাই পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ে। এক সময় প্রাণপণে দড়িটিকে ছিঁড়ে পালানোর চেষ্টা করে। কখনও কখনও দড়ি ছিঁড়ে গেলে সেটি দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে দৌড়তে থাকে এবং এই অবস্থায় তার সামনে যাঁরা পড়েন, তাঁরা দুর্ঘটনার শিকার হন। এমনকি মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে এই অমানবিক খেলার কারণে।
স্মৃতি শেখর মিত্র
মুরগাসোল, আসানসোল
নোটের ঝকমারি
২০০০ টাকার নোট নিয়ে এক দিন গ্রামের এক স্থানীয় দোকানে চা, দুধ, বিস্কুট, চানাচুর কিনতে গিয়ে নাস্তানাবুদ হতে হল। পাঁচ-ছ’টা দোকান ঘুরেও না জিনিসপত্র কিনতে পারলাম, না করাতে পারলাম ২০০০ টাকার খুচরো। গ্রামীণ এলাকায় অধিকাংশ দোকানদার নগদ টাকা লেনদেন করেন, অনলাইনের মাধ্যমে লেনদেন করায় তাঁরা অভ্যস্ত নন। সকলেই এক বাক্যে ১০০০ টাকার নোটের প্রয়োজনীয়তার কথা বলতে থাকেন।
২০০০ টাকা দিয়ে যদি লেনদেনই না করা যায়, তা হলে কী জন্য সরকার এই নোট বাজারে চালু রেখেছে? কেন্দ্রীয় অর্থ দফতরের কাছে একান্ত আবেদন, অবিলম্বে বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে নতুন ১০০০ টাকার নোট ছাপিয়ে ছাড়া হোক। তা হলে দোকান-বাজারে দোকানদার ও খরিদ্দার উভয়েরই সুবিধা হবে।
শ্রীমন্ত পাঁজা
গঙ্গাধরপুর, হাওড়া