পাভলভে গলায় ‘ডিম আটকে’ মৃত্যু” (১০-৩) পড়ে দু’চোখ জলে ভরে গেল। আমার মনের ঘা এখনও দগদগে। জানুয়ারি মাসে আমার স্বামী ভর্তি হলেন হাইল্যান্ড পার্কের একটা বড় নার্সিংহোমে। হেঁটে গিয়ে ভর্তি হলেন, আর ফিরলেন না। আমি দেখেছি, কী অসহায় এই রোগীরা। জেনারেল ওয়ার্ডে এক জন আয়ামাসির উপর দায়িত্ব রোগীদের খাওয়ানোর। যাঁরা নিজে খেতে পারেন না, বা বিশেষ কারণে হাত বেঁধে রাখা হয়েছে, সেই রোগীদের খাওয়ানোর দায়িত্ব তাঁর। গোটা পাঁচতলার সব ক’টা কেবিন এবং ৩০টা জেনারেল বেড, সকলের দায়িত্ব ওই এক জনের। সকাল সাড়ে দশটায় গিয়ে দেখেছি, বেড-এর সামনে খাবার রাখা আছে। রোগী ‘খাননি’। পরবর্তী সময়ে যাঁর ওষুধ খাওয়ানোর কথা, তিনি কিন্তু ওষুধ খাইয়ে দিয়েছেন। জলখাবারে দুটো টোস্ট, সুপ, গোটা ডিম সেদ্ধ। ট্রেনেও সেদ্ধ ডিম কিনলে কেটে দেওয়া হয়। এখানে সেই ব্যবস্থা নেই।
ডাক্তার দেখানোর সময় সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয় সময়ে খাওয়া, সময়ে ওষুধ খাওয়ার উপর, যাকে ‘কেয়ারিং’ বলা হয়। এখানে এটারই সবচেয়ে অভাব। ডাক্তাররা স্টেথো দিয়ে রোগী দেখেন না, বাইরের জুতো পরে সারা নার্সিংহোম ঘুরছেন। বাইরে থেকে এসে রোগীকে দেখছেন; তার পর নিজের হাত স্যানিটাইজ় করছেন।
রাজনৈতিক দলের স্লোগানে, ইস্তাহারে এই রোগীদের কথা বলা নেই। যাঁদের ক্ষমতা আছে, রোগী নিয়ে অন্য জায়গায় যাচ্ছেন। কেউ বাড়িতে রেখে, বাইরে থেকে বেড ভাড়া করে, আয়া দিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছেন। নইলে পরিণাম তো
জানাই আছে।
সুপ্তি মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-৮৪
সংগঠনের দাম
নর্দমা সাফ করতে গিয়ে শ্রমিকদের মৃত্যুর সংবাদ আমাদের মাঝে-মাঝে নাড়া দিয়ে যায় বটে, কিন্তু শ্রমিকদের প্রতি সরকার বা সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির কোনও পরিবর্তন ঘটাতে পারে না। মৃত্যু হলে একটা ক্ষতিপূরণ মেলে, কিন্তু যে শ্রমিকরা প্রতি দিন মরছেন, তাঁদের কথা কেউ ভাবে না। অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় ‘নর্দমায় তলিয়েই যাব কি’ (১২-৩) রচনাটিতে সমস্যার গভীরতা বর্ণনা করে সমাধানেরও সঠিক ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি শ্রমজীবী মানুষের সংগঠিত রাজনীতির কথা বলেছেন। ক্রীতদাস প্রথা থেকে আজ পর্যন্ত শ্রমিকদের অবস্থার উন্নতির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এই তত্ত্বেরই সমর্থন মেলে।
গত শতাব্দীতে আমরা ভারতে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের চূড়ান্ত দেখেছি। অস্বীকার করার উপায় নেই, অনেক ক্ষেত্রেই আন্দোলন লাগামছাড়া ছিল। শ্রমিকরা নিজেদের দাবি আদায়ে যত সচেষ্ট ছিলেন, দায়িত্ব পালনে ততটা ছিলেন না। মানুষ এক সময়ে বিশ্বাস করেছিল যে, ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনই শিল্পের ধ্বংসের মূলে। মাথার উপর থেকে ছাতা সরে গেলে যেমন রোদ্দুরের তেজ বোঝা যায়, ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন শক্তিহীন হয়ে যাওয়ার পর বোঝা যাচ্ছে তার প্রয়োজনীয়তা। নীচের দিকের সমস্ত চাকরি, যেমন— কলকারখানায় অদক্ষ শ্রমিক, সিভিক ভলান্টিয়ার, প্যারাটিচার, সাফাইওয়ালা, সিকিয়োরিটি গার্ড— সবই এখন চুক্তিভিত্তিক। এমনকি, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারও কখনও কখনও চুক্তিতে নেওয়া হচ্ছে। এক কথায়, যে হেতু কাজের সুযোগের তুলনায় প্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি, তাই কম পারিশ্রমিকে শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়া হয়।
চুক্তি এখন শ্রমিকদের সঙ্গে হয় না। শ্রমিক সরবরাহকারী ঠিকাদারের মাধ্যমে কর্মীদের বহাল করা হয়। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জানাই, চুক্তিভিত্তিক কাজ পাওয়ার জন্যে ঠিকাদারদের খুশি করতে হয়। এই ঠিকাদাররা কর্মীদের বেতন দেওয়ার সময়ও কম টাকা দিয়ে থাকে। বিরক্ত হয়ে কর্মীরা কাজ ছেড়ে গেলে ঠিকাদারের লাভ। তাঁদের বোনাস দিতে হয় না। আর নতুন মজুরের তো অভাব নেই। আট ঘণ্টা কাজের সময় এখন ইতিহাস। কম বয়সে শ্রমিকরা সামান্য পারিশ্রমিকে রাজি হয়ে গেলেও, মধ্যবয়সে যখন তাঁদের পরিবার হয়, দায়িত্ব বাড়ে, তখন হতাশা আসতে বাধ্য। তখন তাঁদের সামনে অন্য কোনও রাস্তা খোলা থাকে না। এই দুঃসহ অবস্থা থেকে রক্ষা করতে পারে একমাত্র সংগঠিত শ্রমিক আন্দোলন। ভারতে অদূর ভবিষ্যতে সে সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তবু আশা জেগে থাকে।
ত্রিদিবেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীরামপুর, হুগলি
কলকাতার হকার
আট বছর আগে বাবা যখন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি ছিলেন, তখন দুই নম্বর গেটের ঠিক উল্টো দিকে এক দোকানে ডিম-টোস্ট খেতাম সকালে আর রাতে। বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপ জমে গিয়েছিল। দোকানে পালা করে থাকতেন তিন জন। এক প্রৌঢ়া আর তাঁর দুই ছেলে। ২৪ ঘণ্টাই ফুটপাতের দোকান খোলা, সকালে মা, দুপুর থেকে রাত বড় ছেলে, আর সারা রাত ছোট ছেলে। ওঁদের মেডিক্যাল কলেজের যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে জায়গা ভাড়া নেওয়া ছিল ঘুমোনোর জন্য। পালা করে সেখানেই সারা দিন তিন জনে ঘুমোতেন। খাওয়াদাওয়া পাইস হোটেলে, আর স্নান-শৌচকর্ম পুরসভার সুলভ শৌচাগারে। সাত দিনের এটাই রুটিন।
হাসপাতালের বেডেই বাবাকে বলেছিলাম ওঁদের গল্পটা। বাবা বলেছিলেন, পরিশ্রম করতে পারলে মহানগর কাউকে খালি হাতে ফেরায় না। কথাটা যে কতখানি সত্যি, তার প্রমাণ আর এক বার পেয়েছিলাম অ্যাকাডেমির সামনে গাছতলায়। এক অতি বৃদ্ধা লুচি-তরকারি বিক্রি করতেন। শত চেষ্টাতেও এই বয়সে হকারি করতে ওঁকে নামতে হয়েছে কেন, জানতে পারিনি। এতটাই তাঁর আত্মসম্মানবোধ। হকারি করছেন, অথচ কথাবার্তা শুনে সম্ভ্রান্তবংশীয়া বলেই মনে হয়। দোকানে আসা যুগলদের সঙ্গে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির হাল-হকিকত জেনে নিতে তাঁর আগ্রহ দেখে খুব কৌতূহল হয়েছিল ওঁর গল্পটা জানার। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছিলাম।
শঙ্খমণি গোস্বামী, কলকাতা-১২২
আরও কাজ
আশাকর্মীদের বিভিন্ন অঞ্চলে কোভিড ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজে নিযুক্ত করা হয়েছে। সপ্তাহে কয়েক দিন এই অতিরিক্ত ডিউটি করতে হবে তাঁদের, সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। এই কার্যসূচি দীর্ঘ দিন চলবে। অথচ, এই কাজের জন্য কোনও পারিশ্রমিক দেওয়া হচ্ছে না। এ ছাড়া, ওই সময় যদি কোনও গর্ভবতী মা’কে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়, তা হলে তাঁরা সেই ডিউটি করতে পারবেন না, এবং তার জন্য বরাদ্দ অর্থও পাবেন না। কোভিড ভ্যাকসিন ডিউটির জন্য সম্মানজনক পারিশ্রমিকের ব্যবস্থা করতে স্বাস্থ্য দফতরের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।
কাজল চক্রবর্তী, ডেবরা, পশ্চিম মেদিনীপুর
পিতা-পুত্র
পাই দিবস উপলক্ষে রূপালী গঙ্গোপাধ্যায়ের মনোগ্রাহী প্রবন্ধের (“কী করে ‘পাই’”, এষণা, ১৭-৩) প্রসঙ্গে আমার এই পত্র। ইউনেস্কো প্রতি বছর ১৪ মার্চ ‘পাই দিবস’ পালন করে। এই দিনটি আন্তর্জাতিক গণিত দিবস হিসেবেও পালন করা হয়। আবার ২২ জুলাই, অর্থাৎ ২২-৭ ‘পাই অ্যাপ্রক্সিমেশন ডে’ হিসেবেও পালিত হয়, যে হেতু এই সংখ্যাটি ‘পাই’-এর আনুমানিক মানকে নির্দেশ করে। ‘পাই’ একটি ধ্রুবক এবং অমূলক রাশি।
এই প্রসঙ্গে জানাই, ‘পাই’ সংখ্যার আধুনিক আবিষ্কারক উইলিয়াম জোনস ছিলেন বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যর আইজ়াক নিউটন ও এডমন্ড হ্যালির সমসাময়িক। তিন জনেই লন্ডনের বিখ্যাত রয়াল সোসাইটির ফেলো ছিলেন। জোনসের পুত্র উইলিয়াম জোনস জুনিয়র বিখ্যাত ভাষাতাত্ত্বিক ছিলেন। তিনি ‘ইন্দো ইউরোপিয়ান ফ্যামিলি অব ল্যাঙ্গোয়েজেস’ ভাষাতত্ত্বের আবিষ্কারক, এবং ১৭৮৪ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল-এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে প্রাতঃস্মরণীয়।
তপন কুমার মুখোপাধ্যায়, সুভাষপল্লি, বর্ধমান