তাপস সিংহের ‘কাঁটাতারের লক্ষ্মণরেখা’ (৩০-৫) বিষয়ে কিছু কথা। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আজ সংবাদপত্রের শ্বাস রোধ করতে ব্যস্ত, এবং তা অভিনব কায়দায়। ঘুরপথে আইন দিয়েই আইনকে প্রতিহত করছে। সেই আরোপিত রাষ্ট্রদ্রোহী আইনে এক বার জেলে ঢুকিয়ে দিতে পারলেই, ব্যস। তার পর টানুক সাংবাদিক বেশ কয়েক বছর জেলের ঘানি। শেষপর্যন্ত বিচারে কী শাস্তি হবে, সেটা জানা না গেলেও এটুকু নিশ্চিত যে, তাঁর জীবনের অনেকগুলো বছর বরবাদ করে দেওয়া যাবে। তাতেই লাভ। আর যাতে বেশি স্বাধীনতা দেখাতে সাহস না পায়। হাথরসের ঘটনা সম্পর্কে খবর করতে গিয়ে কেরলের সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পান আজও জেল থেকে মুক্তি পাননি।
অথচ জেনে এসেছি, খোলা চোখ মানে সংবাদপত্র। খোলা কান মানে সংবাদপত্র। এবং খোলা মুখ মানেও সংবাদপত্র। সংবাদপত্র এবং সাংবাদিক গণতন্ত্রের ধারক ও বাহক। ব্রিটিশ রাষ্ট্রনীতিবিদ এডমন্ড বার্ক সংবাদপত্রকে তাই গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলেছেন। দার্শনিক জন লক বলেছেন, “সত্যকে খুঁজে পাওয়া যাবে কেবলমাত্র বিরোধীর উচ্চারিত স্বাধীন মতামতে” (ট্রুথ ক্যান অনলি বি ডিসকভার্ড ইন দ্য মার্কেটপ্লেস অব আইডিয়াজ় থ্রু ফ্রিলি এক্সপ্রেসড অ্যাডভার্সরি)। এই সত্যের সন্ধান একমাত্র সাংবাদিকরাই পেতে পারেন এবং সংবাদপত্রের মাধ্যমে তা জনগণকে জানিয়ে দিতে পারেন। ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইনস্টিটিউটের সমীক্ষায় পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই সংবাদপত্রের স্বাধীনতা লঙ্ঘিত হয়। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স-এর ২০২২ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের স্থান ১৫০, যেখানে ২০১৬ সালে ছিল ১৩৩। এই হচ্ছে ভারতের সংবাদপত্রের স্বাধীনতার অবনমনের চিত্র। কারণ, সর্বত্র রয়েছে রাষ্ট্রের শাসানি, “মাস্টারমশাই, আপনিকিচ্ছু দেখেননি।”
দীননাথ চক্রবর্তী, দুইলা, হাওড়া
দায়বদ্ধ
‘কাঁটাতারের লক্ষ্মণরেখা’ প্রসঙ্গে কিছু কথা। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কিংবা সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নিয়ে যেমন বিস্তর নিউজ়প্রিন্টের অপচয় হয়েছে, তেমনই অবলীলাক্রমে গরিষ্ঠ অংশের মানুষকে মেনে নিতেও দেখা গিয়েছে যে, এ সম্পর্কে তাঁদের কোনও হেলদোল আদৌ নেই। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের যুগে লর্ড লিটন কর্তৃক আরোপিত ‘ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্ট’ আজ অস্তিত্ব হারালেও অলক্ষে স্বাধীন ভারতেও সংবাদমাধ্যম এবং সাংবাদিকদের উপর প্রতিনিয়ত রাষ্ট্রযন্ত্র হস্তক্ষেপ করে চলেছে। প্রবন্ধকার জানিয়েছেন, ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স’, ২০২২ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের স্থান ১৫০তম। এই তথ্যে আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই।
মনে রাখতে হবে, সাংবাদিক যিনি, তিনিও এক জন রক্তমাংসের মানুষ। প্রতিটি সাধারণ মানুষের ন্যূনতম চাহিদার মতোই তাঁর চাহিদার অথবা প্রত্যাশার মধ্যে আপাতদৃষ্টিতে কোনও তফাত নেই। তবুও তিনি ঝুঁকি নেন, পেশাটিকে স্বেচ্ছায় গ্রহণ করেছেন বলেই। নির্বিবাদী, উপদ্রবহীন শান্তির জীবনযাপনে অভ্যস্ত নাগরিকদের বিপরীতে এই সাংবাদিককুল আমাদের মনের আয়না। জীবন বিপন্ন করে তাঁরা তুলে আনেন সমাজচিত্র। যে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশনের দুঃসাহস সাংবাদিক দেখান, তিনি নিজেও সেই রাষ্ট্রের নাগরিক। এবং রাষ্ট্রের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা নিয়ে তিনিও যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। সরকারের সমালোচনা মানেই যে দেশের বিরোধিতা নয়, রাষ্ট্র সে কথা মানতে নারাজ। অথচ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বলেছে, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমেই বলিষ্ঠ গণতন্ত্রের ভিত মজবুত হয় ও রাষ্ট্র সহজেই তার ত্রুটিগুলি চিহ্নিত করে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে সচল রাখে।
সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র কিংবা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, সব ক্ষেত্রেই শাসক ও শোষিতের ব্যবধান বেড়েই চলে। ব্রিটিশ শাসনাধীনে থাকা ভারত ও আজকের স্বাধীন ভারতের প্রেক্ষাপট ভিন্ন ভিন্ন হলেও আজকের ভারতও যে অতীতের অনুসারী, তা বোধকরি বিচক্ষণ সাংবাদিকেরাও জানেন। ঔপনিবেশিক ভারত থেকে আজকের ভারতের পার্থক্য কি তবে ঘুচেই গেল!
রাজা বাগচী, গুপ্তিপাড়া, হুগলি
সুবিধের খেলা
বলতে দ্বিধা নেই যে, স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের লক্ষ্যে যেতে গিয়ে আজ কেউ কেউ অতি সুবিধাবাদী হতে গিয়ে সংবাদের স্বাধীনতাটাই হারিয়ে বসেছে। বার বার ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে তা আজ ভোঁতা হয়ে পড়েছে। কিছু সুবিধাবাদী এবং স্বার্থপর লোকের জন্য সংবাদ আজ স্বাতন্ত্র্য হারিয়েছে। রাষ্ট্র যত দিন সংবাদের নির্মাণে নাক গলায়নি, তত দিন পর্যন্ত সংবাদ কিছুটা নিরপেক্ষ এবং স্বাধীন ছিল। সংবাদমাধ্যম এই নিরপেক্ষ ও স্বাধীনতার অন্তরালে যে মুহূর্তে সুবিধাবাদী খেলায় প্রবেশ করল, ঠিক সেই সময় থেকেই ভারতে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচক পড়তে শুরু করল। সম্পাদক, সাংবাদিক, সংবাদমাধ্যম আজ বিভাজিত হয়ে পড়েছে এই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের ডামাডোলে বাঁচার তাগিদে। এই পরিস্থিতিতে সংবাদের অবনতি হবে না তো কি উন্নতি হবে? কেন্দ্র-রাজ্য, সব ক্ষেত্রেই সংবাদে স্বাধীনতার যে চিত্র ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স’-এর রিপোর্টে ধরা পড়েছে তা সর্বৈব সত্য এবং বাস্তব।
দেবাশীষ দত্ত, কলকাতা-৬৩
পথচারীর ঝুঁকি
যানবাহন চলাচলের রাস্তায় পথচারীদের হাঁটা যে ট্র্যাফিক ব্যবস্থার সম্পূর্ণ পরিপন্থী, তা অধিকাংশ পথচারী না জানলেও ট্র্যাফিক পুলিশ তো জানে। তা হলে পথচারীরা কী ভাবে রাস্তার উপর দিয়ে হাঁটার সাহস পান? ট্র্যাফিক আইনে তো এই কারণে জরিমানা-সহ শাস্তি হওয়ার কথা। কিন্তু এ রাজ্যে তা কখনও হয় না। এর কারণ, ‘ফুটপাত’ নামক যে জায়গা রয়েছে, তা হয় অটো, টোটো, সাইকেল, মোটরবাইক, ভ্যান-রিকশা ও হকারদের দখলে, নয়তো এতটাই এবড়োখেবড়ো যে কোনও পথচারীই এর উপর পা ফেলতে সাহস পান না, হাঁটা তো দূরের কথা। নিরুপায় পথচারীরা বিপদের ঝুঁকি জেনেও রাস্তায় হাঁটতে বাধ্য হন। শুধু তা-ই নয়, রাস্তা পারাপারের জন্য নির্দিষ্ট কোনও সুব্যবস্থা (ডিজিটাল জেব্রা ক্রসিং) না থাকায় পথচারীরা যত্রতত্র রাস্তা পারাপারে বাধ্য হন। ফুটপাত এবং ডিজিটাল জেব্রা ক্রসিং— এই দু’টিই যে শহরে পরিকাঠামো উন্নয়নের একেবারে প্রথম ও অত্যাবশ্যক ধাপ, তা কি প্রশাসন জানে না? শহরে যান চলাচলের মূল রাস্তা থেকে যত দিন না রাজ্য সরকার পথচারী ও বাইসাইকেল চালকদের যাতায়াত বন্ধ করতে পারবে, তত দিন ট্র্যাফিক ব্যবস্থার এই বিশৃঙ্খল দশা থেকে মানুষকে মুক্ত করা যাবে না। মনে রাখতে হবে, পরিচ্ছন্ন ও সুশৃঙ্খল ট্র্যাফিক ব্যবস্থা একটি দেশের অর্থনীতিকে উন্নত করে।
বিভূতিভূষণ রায়, ডহরথুবা, উত্তর ২৪ পরগনা
তারে গাছ
ভদ্রেশ্বর কবি সুকান্ত মহাবিদ্যালয়ের সামনের ব্যস্ত রাস্তায় বেশ কিছু দিন আগের এক বৈশাখী ঝড়ে সুপুরি গাছ ভেঙে বিদ্যুৎবাহী তারের উপর বিপজ্জনক ভাবে ঝুলে আছে। স্থানীয় মানুষ কয়েক বার সিইএসসি দফতরে অভিযোগ জানালেও কোনও সুরাহা হয়নি। যে কোনও সময় তার ছিঁড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। অবিলম্বে গাছটি সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।
সিদ্ধার্থ দত্তচৌধুরী, ভদ্রেশ্বর, হুগলি
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।