Mamata Banerjee

সম্পাদক সমীপেষু: আবেগের ফাঁদে

মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, তিনি সিপিএম-এর কারও চাকরি খাননি। যদি দুর্নীতি হয়ে থাকে, তা হলে কেন চাকরি খাননি? মুখ্যমন্ত্রীর আবেগ অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:১১
Share:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “আমি অন্যায় করে থাকলে আমার গালে একটা চড় মারুন। কিছু মনে করব না। কথায় কথায় লোকের চাকরি খাবেন না। চাকরি গেলে খাবে কী?” (চাকরি খাবেন না: মুখ্যমন্ত্রী, ১৬-৩)। খুব সঙ্গত এবং মানবিক প্রশ্ন। কিন্তু এই মানবিকতা একতরফা কেন? যে ছেলেমেয়েরা এক দিন স্বপ্ন দেখেছিল নিজের যোগ্যতায় চাকরি পেয়ে পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দেবে, স্বামী, স্ত্রী আর সন্তানকে নিয়ে সুখে দিন কাটাবে, তাদের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর মানবিকতার প্রকাশ নেই কেন? ‘চড় মারা’-র মতো কথায় আবেগ সৃষ্টি করা যায় বটে, কিন্তু সে আবেগ যদি সমাজে দুর্নীতি আর অন্যায়কে বৈধতা দেয়, তা হলে তো চোর, ডাকাত, সমাজবিরোধীদেরও জেলে পোরা উচিত নয়। কারণ, তারা জেলে গেলে তাদের পরিবারই বা খাবে কী? নারদ কাণ্ডে তাঁর দলের নেতা, মন্ত্রীদের টিভিতে দেখার পর মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, আগে জানলে তিনি এঁদের নির্বাচনে টিকিট দিতেন না। পরে নিজেই তাঁর উক্তিকে অসার প্রমাণিত করে বলেন, নারদ কাণ্ড আসলে বিরোধীদের চক্রান্ত। যাঁরা টাকা দিয়েছেন আর যাঁরা নিয়েছেন, সব পার্টির অনুদান সাপেক্ষে। এতে দুর্নীতির কিছু নেই। সে দিন মানুষ হয়তো মুখ্যমন্ত্রীকে ততটা অবিশ্বাস করেনি। নির্বাচনকালে তিনি বলেছিলেন, ২৯৪টি কেন্দ্রে তিনি স্বয়ং প্রার্থী, তাঁকেই যেন সবাই ভোট দেন। জনগণ ভোট দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর আবেগকে সম্মান জানিয়েছিল। কিন্তু আজকের দুর্নীতির ফাঁদে পড়ে অন্যায় ভাবে চাকরি পাওয়ার পরে যখন বহু লোক কোর্টের নির্দেশে চাকরিচ্যুত হচ্ছে, তখন মুখ্যমন্ত্রীর এই পক্ষপাত আপাতদৃষ্টিতে মানবিক মনে হলেও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনের পরিপন্থী।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, তিনি সিপিএম-এর কারও চাকরি খাননি। যদি দুর্নীতি হয়ে থাকে, তা হলে কেন চাকরি খাননি? মুখ্যমন্ত্রীর আবেগ অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন— যারা চাকরি খোয়াল, আর যারা ন্যায্য চাকরি থেকে বঞ্চিত হল, তাদের মর্মবেদনা যদি এক হয়, তবে তার দায় কার? মুখ্যমন্ত্রীর কথা রাজ্যের মানুষের শিক্ষা, জ্ঞান, বিবেক, বুদ্ধিকে আহত করে।

মিহির কানুনগো, কলকাতা-৮১

Advertisement

আইনের শাসন

‘চাকরি খাবেন না: মুখ্যমন্ত্রী’ শীর্ষক সংবাদ প্রসঙ্গে বলতে চাই, একটি গণতান্ত্রিক রাজ্যে এক জন নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য পরিচালনায় সর্বাধিক ক্ষমতা ভোগ করে থাকেন। তাঁর চলন-বলন, কথাবার্তা সব সময়ে জনমানসে একটা প্রভাব ফেলে। রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার কিছু দিন পর পার্ক স্ট্রিটে ঘটে যাওয়া ধর্ষণ কাণ্ডকে ‘সাজানো ঘটনা’ বলে অভিহিত করেন। প্রায় একই সময়ে এক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের হাতে অধ্যক্ষ নিগৃহীত হওয়ার ঘটনাকে ‘ছোট ছেলেদের দুষ্টুমি’ বলেও আখ্যায়িত করা হয়েছিল। এই ভাবে একের পর এক অন্যায়-অপরাধকে লঘু করে আমাদের প্রশাসনিক প্রধান তাঁর উজ্জ্বল ভাবমূর্তি বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন। অথবা কাউকে আড়াল করেছেন, বা প্রশ্রয় দিয়েছেন।

সম্প্রতি অযোগ্যদের চাকরি থেকে বরখাস্ত ও যোগ্যদের চাকরির জন্য লাগাতার আন্দোলনে রাজ্য-রাজনীতি যখন উত্তাল, ঠিক তখনই চাকরি হারানো অযোগ্যদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী যেন স্নেহে অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র হয়ে উঠলেন। এক দিকে, দিনের পর দিন যোগ্য প্রার্থীদের চাকরির কাতর আবেদন কানেই তুললেন না, অন্য দিকে সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে চাকরিতে নিযুক্ত হওয়া অসংখ্য অযোগ্য চাকরিচ্যুত ব্যক্তির পাশে দাঁড়ালেন। এতে তিনি শুধু একটা সংগঠিত অপরাধকে প্রশ্রয় দিলেন না, অপরাধকে লালনের জন্য আবেগমথিত আবেদনও রাখলেন। রাজ্যে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হোক, যোগ্যরা যোগ্য সম্মান ও অধিকার পাক, অযোগ্য ও অন্যায়কারীরা ভর্ৎসিত হোক ও আইনানুগ শাস্তি পাক— এটাই সকলের কাম্য। কিন্তু এ কী! মুখ্যমন্ত্রী সম্পূর্ণ উল্টো পথে হাঁটলেন? তিনি ভুলেই গেলেন সেই সত্য, “অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে/ তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে।” তিনি কোর্টের নির্দেশানুসারে চাকরিচ্যুতদের জন্য আবেদন রাখলেন, “চাকরি গেলে খাবে কী?” অথচ, দীর্ঘ দিন ধরে ধর্নারত যোগ্য প্রার্থীদের পরিবার-পরিজন নিয়ে তিনি নীরব রইলেন।

ভাবতে অবাক লাগে, একটা গণতান্ত্রিক রাজ্যে নিচু তলা থেকে উপর তলা পর্যন্ত সংগঠিত অপরাধের মাধ্যমে অনৈতিক ভাবে অসংখ্য অযোগ্য প্রার্থীকে চাকরি দেওয়া হল, আর সরকার কিছুই জানতে পারল না? তর্কের খাতিরে ধরেই নেওয়া যাক, সরকার কিছুই জানত না। কিন্তু ঘটনাটা জনসমক্ষে আসার পর, মহামান্য আদালতের নির্দেশে অযোগ্যদের চাকরি চলে যাওয়ার পরেও সরকার কী ভাবে অন্যায়কারীদের জন্য সহানুভূতিতে গদগদ হচ্ছে? এতে তো স্বয়ং হীরকরাজাও লজ্জা পাবে। কোন দিকে যাচ্ছে রাজ্যের ভবিষ্যৎ? এ তো অন্যায়-অপরাধকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার নামান্তর।

হারানচন্দ্র মণ্ডল, ব্যারাকপুর, উত্তর ২৪ পরগনা

প্রশ্রয় কেন?

শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসার পর আদালতের নির্দেশে যাদের চাকরি চলে যাচ্ছে, তাদের কেউ কেউ আত্মহত্যার পথও বেছে নিচ্ছে। এটা সবার কাছেই বেদনাদায়ক। তবে দুঃখ-যন্ত্রণা কি বিচারবুদ্ধিকে গুলিয়ে দেবে? যারা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও চাকরি পাচ্ছে না, যারা অযোগ্যদের জায়গা করে দেওয়ার কারণে চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়ে দু’বছর ধরে শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষাকে উপেক্ষা করে রাস্তায় বসে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে, তাদেরও কেউ কেউ আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সে নিয়ে কতখানি বেদনাহত, জানি না। আশঙ্কা হয়, তবে কি চাকরি-বঞ্চিত যোগ্য প্রার্থীদের জন্য তাঁর বেদনাকে ছাড়িয়ে গিয়েছে ভুয়ো চাকরি প্রাপকদের বর্তমান দুরবস্থার জন্য বেদনা? যাদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী কাতর, তারা তো অন্যায়কারী। নিয়োগ দুর্নীতিচক্রের অংশীদার। এই অযোগ্য শিক্ষককুল দিয়ে রাজ্যের শিক্ষার কতখানি অগ্রগতি হওয়া সম্ভব?

প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও আজ জেলে। সন্দেহ অমূলক নয় বলেই হয়তো দলও পার্থবাবুকে বহিষ্কার করেছে। প্রশ্ন হল, সিবিআই বা ইডি বলার আগে মুখ্যমন্ত্রী দীর্ঘ দিন ধরে পার্থবাবুর কাছে থেকেও তাঁর কুকর্ম ধরতে পারলেন না কেন? এটা নিতান্তই প্রশাসনিক সীমাবদ্ধতা ছিল, না কি সঙ্কীর্ণ স্বার্থে ভিতরে ভিতরে পার্থবাবুকে প্রশ্রয় দেওয়ার ব্যাপার ছিল? সেই কারণেই কি এখন অযোগ্যদের চাকরি চলে যাওয়ার বিষয়ে মুখ খুলতে হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীকে?

গৌরীশঙ্কর দাস, খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

ঘরের টান

‘কেবলই ঘরকন্না’ (২৮-৩) শীর্ষক সম্পাদকীয়টি কয়েকটি জরুরি বিষয়ে আলো ফেলেছে। কন্যাশ্রী, রূপশ্রী প্রকল্প সাড়া জাগালেও প্রকৃত উদ্দেশ্য কতটা সফল হচ্ছে, তা ভাবার বিষয়। আসলে চিন্তা করার অভ্যাসটা আমাদের কম। সরকার টাকা দিচ্ছে, আমরাও নিয়ে নিচ্ছি। কেন দিচ্ছে, আর কেনই বা নিচ্ছি, ভেবে দেখিনি। খেয়াল করলে দেখা যাবে, যে সব মেয়েকে অল্প বয়সে ছাঁদনাতলায় বসতে হচ্ছে, তারা মুখ খোলে না। অন্য দিকে, মেয়েকে বড় হতে দেখলে বাবা মায়ের সামাজিক নিরাপত্তা সম্পর্কে দুশ্চিন্তা বুকে চেপে বসে। কোনও রকমে একটা হিল্লে হলে তাঁরা নিশ্চিন্ত হবেন। মেয়েদের পড়াশোনার কোনও ভবিষ্যৎ নেই, ছেলেরাই চাকরি পাচ্ছে না, এ সব পুরনো কিছু ধারণা সহজে সরতে চায় না। অন্য দিকে, মেয়েরা মনে করে পুরুষদের স্বীকৃতির উপরে তাদের সাফল্য আর স্বাধীনতা নির্ভরশীল। যদিও, ঘরে-বাইরে অনেক কিছু করেও মেয়েদের মানুষের সম্মানটুকুও জোটে না। মেয়েদের এগিয়ে যাওয়ার গতি যে জোর পায়নি, পরিসংখ্যানই তা বলছে।

প্রতিমা মণিমালা, হাওড়া

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement