কবীর সুমন।
চার দিকে যখন কুকথার ক্যাকোফনি চলছে, তখন যেন ‘সপ্তক’ (বিশেষ ক্রোড়পত্র, ২২-১) এসে বলল: ‘‘গান তুমি হও বিশ্রী গরম ভুলিয়ে দেওয়া বৃষ্টি/ সজীবতার ভরসা দেওয়া সফল অনাসৃষ্টি।’’ গায়ক সুমন সম্পর্কে একটা ঘটনা বলি। ১৯৯৪ সাল, জলপাইগুড়ি শহরের শ্রীদয়াল সিনেমা হলে গানের অনুষ্ঠান করছেন সুমন। এই প্রথম দেখলাম, মঞ্চে এক জনই মানুষ। গাইছেন, কি-বোর্ড বাজাচ্ছেন, মুখে আটকানো মাউথ-অর্গ্যান বাজাচ্ছেন, সঙ্গে গিটার তো আছেই। প্রেক্ষাগৃহ পূর্ণ, বলা বাহুল্য। কিন্তু তার পরেও গোল বাধল। আরও উৎসুক শ্রোতা ঢুকতে শুরু করলেন ভিতরে, এবং বসে পড়লেন নীচে ও ব্যালকনিতে চলাচলের রাস্তায়। ব্যাপারটা চোখে পড়তেই সুমন গান থামিয়ে দিলেন, ঘোষণা করলেন, ‘‘এ ভাবে আমি গান গাইব না। এই মুহূর্তে একটা যদি দুর্ঘটনা ঘটে, কী হবে? উদ্যোক্তাদের অনুরোধ করছি, সমস্ত আলো জ্বালিয়ে দেওয়া হোক, সব ক’টা দরজা খুলে দেওয়া হোক।’’ সুমনের ওপর কথা চলে না! তা-ই করা হল। মানুষ হুড়মুড় করে ঢুকে পড়লেন, ঢোকার চেষ্টা করতে থাকলেন আরও মানুষ। একটা গুঞ্জন চলছিল, এ বার সুমন গান ধরতেই সবাই চুপ! একে রাত হয়েছে, তায় জলপাইগুড়িতে তখন রীতিমতো ঠান্ডা। খোলা দরজা দিয়ে হুহু করে ঢুকে পড়ছে কুয়াশা। স্মোক মেশিনের কোনও দরকারই পড়ল না। মায়াবী পরিবেশে জিনসের প্যান্ট-শার্ট পরা নাগরিক কবিয়াল গান ধরলেন, ‘আমাদের জন্য’!
শঙ্খমণি গোস্বামী
কলকাতা-১২২
বিশ্বভারতী
স্বাতী ভট্টাচার্যের ‘প্রতিষ্ঠান বনাম পড়ুয়া?’ (১৭-১) লেখাটি সময়োচিত এবং আমি অনেকটাই সহমত। লেখায় উল্লেখ আছে উপাচার্য ‘‘সিএএ বিরোধী শিক্ষকদের ডেকেছিলেন, তাঁরা আসেননি।... বিতর্কের আহ্বান যাঁরা খারিজ করেন তাঁরা কেমন অধ্যাপক?’’ সম্ভবত আমিই সেই অধম, যার বিরোধী মত উপাচার্য আহ্বান করেছিলেন। গত ৫ জানুয়ারি, উপাচার্য ফোন মারফত আমাকে জানান, তিনি সিএএ নিয়ে একটি সেমিনার আয়োজন করছেন। আমি এবং অন্য বিভাগের আর এক অধ্যাপককে তিনি যথাক্রমে সিএএ-র বিপক্ষে ও পক্ষে বলতে অনুরোধ করবেন ভেবেছেন। এ ছাড়াও আর এক জন মূল বক্তাকে বাইরে থেকে আনা হবে। আমি জানতে চাই, সেই মূল বক্তাটি কে? তিনি কি কোনও নির্দিষ্ট দলের লোক? দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে উপাচার্য বলেন, ‘না’; যদিও বক্তার নাম তিনি গোপনই রেখে দেন। সেমিনারের দিনক্ষণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন ৮ জানুয়ারি, ২০২০, বিকেলবেলা, লিপিকা অডিটোরিয়ামে। আমি তাঁকে মনে করিয়ে দিই, ওই বিশেষ দিনটিতে বিরোধী দলগুলি সিএএ নিয়ে সারা ভারতে ধর্মঘট ডেকেছে; তাই জটিলতা এড়াতে অন্য কোনও দিন সেমিনারটি করাই শ্রেয়। উপাচার্য জানান, বাইরের যিনি বক্তা তিনি অন্য কোনও দিন সময় দিতে পারবেন না; তাই ওই নির্দিষ্ট দিনেই সেমিনার করতে হবে। আমি তখনই টেলিফোনে এবং পরে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ মারফত উপাচার্যকে জানিয়ে দিই, ৮ জানুয়ারি আমি ছুটি নেব এবং কোনও অ্যাকাডেমিক কাজে অংশ নিতে পারব না। অন্য তারিখে আমার বলতে কোনও আপত্তি নেই। উপাচার্য তার কোনও উত্তর দেননি।
এর এক দিন পর, বিশ্বভারতীর নোটিস মারফত জানতে পারলাম, বাইরের সেই মূল বক্তা বিজেপি-পন্থী রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত। জানতে পারি, সেমিনারটি আয়োজিত হচ্ছে ‘বিশ্বভারতী লেকচার সিরিজ়’-এর অধীনে। প্রসঙ্গত, ২০ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে বিশ্বভারতীর বর্তমান রেজিস্ট্রার আশা মুখোপাধ্যায়কে চেয়ারপার্সন করে এক বিশ্বভারতী লেকচার সিরিজ় কমিটি বানানো হয়। ছয় সদস্যের সেই কমিটিতে আমিও এক সদস্য মনোনীত হই। এই কমিটির প্রধান দায়িত্ব ছিল, লেকচার সিরিজ়ের সমস্ত বক্তা ও বিষয় ঠিক করা। বাস্তবে ২৭ জানুয়ারি ২০১৯ সেই কমিটির প্রথম ও শেষ মিটিং হয়। এই সিরিজ়ের যাবতীয় লেকচার আয়োজন করা হয়েছে এই কমিটিকে অন্ধকারে রেখে। যেমন এই ক্ষেত্রেও, কমিটির এক জন সদস্য হওয়া সত্ত্বেও উপাচার্য মূল বক্তা স্বপন দাশগুপ্তের নাম অন্ধকারে রেখেই আমাকে সিএএ নিয়ে বক্তৃতা দিতে আহ্বান করলেন।
আমাদের অধ্যাপক সংগঠন বিশ্বভারতী ইউনিভার্সিটি ফ্যাকাল্টি অ্যাসোসিয়েশন-এর (ভিবিইউএফএ) কোনও বক্তা বা মতাদর্শের প্রতি বিন্দুমাত্র বিরাগ নেই। আমাদের অরাজনৈতিক অধ্যাপক সংগঠনের ভিতরে সব দলের, সব মতের এবং দলহীন রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক মানুষ আছেন। আমরা চাই ‘শতফুল বিকশিত হোক’। ৮ জানুয়ারির সেমিনারে স্বপন দাশগুপ্ত একমাত্র মূল বক্তা জানার পর আমরা জানিয়েছিলাম, এটা যে হেতু জাতীয় ক্ষেত্রে একটি অতি সংবেদনশীল বিষয়, তাই ওই তারিখের পরিবর্তে অন্য আর এক দিন স্বপনবাবু-সহ সম-উচ্চতার একাধিক বক্তা এনে প্যানেল ডিসকাশন হোক। আমাদের এই বক্তব্য মিডিয়াতে প্রচারিতও হয়। উপাচার্য কর্ণপাত করেন না। তা সত্ত্বেও আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে সেমিনার বয়কট করার কোনও ডাক আমরা দিইনি। বরং আমাদের সংগঠনের বেশ কিছু সদস্য তথা অধ্যাপক-অধ্যাপিকা মন দিয়ে সেমিনার শুনবেন বলে লিপিকাতে গিয়ে জানতে পারেন, সেখানে কোনও সেমিনার হচ্ছে না। কোনও নোটিস না দিয়ে সেমিনার শ্রীনিকেতনের সমাজকর্ম বিভাগে স্থানান্তরিত করা হয়, যেটা আমরা সংবাদমাধ্যম মারফত পরে জানতে পারি। তাই ‘‘বিতর্কের আহ্বান যাঁরা খারিজ করেন তাঁরা কেমন অধ্যাপক?’’ অভিযোগ ঠিক নয়।
ছাত্রছাত্রীরা কেন সিএএ-র বিরুদ্ধে সর্বাত্মক বন্ধ পালন করেছিল, কেনই বা তারা স্বপন দাশগুপ্তের সেমিনারে প্রতিবাদ করেছিল, তা তারাই ভাল বলতে পারবে। নিজে সিএএ নিয়ে একপক্ষীয় সেমিনার করে উপাচার্য প্ররোচনা সৃষ্টি করলেন, অবস্থা যখন হাতের বাইরে চলে গেল, নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে আমাদের বলির পাঁঠা করা হল। ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের পুরো দায় ১৪-১ তারিখে একটা মিটিং ডেকে উপাচার্য আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিলেন। অথচ মিটিংয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে আমাদের ডাকলেন না। পরের দিন বিনা নোটিসে আমাদের অফিসে তালা মেরে দিলেন। আর সেই তালা মারার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ছাত্রাবাসে, এমনকি হাসপাতালে চলল ন্যক্কারজনক গুন্ডা আক্রমণ। হাসপাতালে প্রত্যক্ষদর্শী আমি নিজে। উপাচার্য স্বপন দাশগুপ্তের সেমিনারে ছাত্রদের প্রতিবাদ এবং হস্টেলে ‘দুই ছাত্রগোষ্ঠীর মারামারি’ নিয়ে একই তিন সদস্যের কমিটি করে বুঝিয়ে দিলেন, দ্বিতীয় ঘটনার উৎসমুখ হল প্রথম ঘটনা। মজার বিষয়, তিন সদস্যের কমিটির দুই সদস্যই সিএএ-র পক্ষে অবস্থান নিয়ে আরও অনেকের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন! তার মধ্যে এক সদস্য আবার তদন্ত শুরুর আগেই সংবাদমাধ্যমে প্রতিবাদী ছাত্রদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, এমনকি বলেছেন ছাত্রদের মার খাওয়ার ব্যাপারটা ‘গট আপ’ হতে পারে।
সুদীপ্ত ভট্টাচার্য
সভাপতি, বিশ্বভারতী ইউনিভার্সিটি ফ্যাকাল্টি অ্যাসোসিয়েশন
কেন দেখাব না
কিছু রাজনীতিবিদ, নাগরিক, বুদ্ধিজীবী কাগজ দেখাব না বলে যে ধুয়ো তুলেছেন, সেটা ঠিক হজম করতে পারছি না। আমাদের জন্মের প্রমাণ দিতে হয় বার্থ সার্টিফিকেট দেখিয়ে, মৃত্যুর প্রমাণ ডেথ সার্টিফিকেট দেখিয়ে। তার মাঝখানে এই ক’টা দিন কাগজ না দেখাবার অধিকার আছে কি? কাগজ যদি ঠিক থাকে, তবে দেখাতে দোষ কোথায়? কু-মনে সন্দেহ জাগে, কাগজেই কোনও গন্ডগোল নেই তো? যদি ক’টা কাগজের দৌলতে নাগরিকত্বের খুঁটিটা জোরালো হয়, তবে সেটা ফাঁকি দিয়ে ভবিষ্যতের সন্তানদের বঞ্চিত করব কেন? আমাদের গত প্রজন্ম যদি আমাদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে এই কাজটায় ফাঁকি না দিতেন, তা হলে আমাদের এই দায় বর্তাত না।
সুব্রত কুমার দে
কলকাতা-১২
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।