—ফাইল চিত্র ।
‘চোখ বন্ধের বলি’ (১৯-৩) সংবাদ প্রতিবেদন প্রসঙ্গে আমার এই চিঠি। ভেঙে পড়া বহুতলের প্রোমোটার, স্থানীয় কাউন্সিলর, বরো চেয়ারম্যান, সর্বোপরি মেয়র এই ঘটনার যাবতীয় দায় কর্পোরেশনের বিল্ডিং বিভাগের আধিকারিক ও ইঞ্জিনিয়ারদের উপর চাপিয়ে দিয়ে নিজেরা সাধু সাজতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। অস্বীকারের উপায় নেই, পুলিশ এবং প্রশাসনের একটি বড় অংশ লোভে পড়ে, চাকরি ও সম্মান বাঁচাতে শাসকের দলদাসে পরিণত হন। আর শাসক যখন বিপদে পড়েন তখন এঁদের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিতে এক মুহূর্ত সময় নেয় না। তাই জনপ্রতিনিধিদের মুখ থেকে প্রকাশ্যে প্রশাসনের লোক, ইঞ্জিনিয়ারদের গালিগালাজ শুনতে হয়, চোর অপবাদ পেতে হয়। দীর্ঘ দু’বছর ধরে চলা এই অবৈধ নির্মাণের অধিকাংশ তথ্য সবার গোচরে ছিল। তাই সকলে কমবেশি এই মর্মান্তিক ঘটনার দায় নিতে বাধ্য। কলকাতার বুকে বহু জলাশয় ভরাট করে তার উপর বেআইনি বহুতল নির্মাণ করা হয়েছে। বিল্ডিং নির্মাণের ব্যবসা এখন দুর্নীতির অন্ধকার জগৎ। কত সাধারণ মানুষ যে এদের হাতে প্রতিনিয়ত মানসিক নির্যাতন ভোগ করছেন, তা গণনাতীত।
কলকাতা তো বটেই, জেলা শহর, মহকুমা শহর, ছোট শহর থেকে শুরু করে শহর-ঘেঁষা গ্ৰামগুলোতেও বেআইনি গৃহ নির্মাণ রমরমিয়ে চলছে। এই সব জায়গায় বড় বড় কোম্পানি বাড়ি নির্মাণের কাজ করে না। করেন স্থানীয় প্রোমোটাররা। জমি, বাড়ি তৈরির প্ল্যান অনুমোদন, রেজিস্ট্রি ইত্যাদি বিভিন্ন জায়গায় দুর্নীতি চলছে। যাঁরা ফ্ল্যাট কিনছেন, তাঁদের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত হতে হচ্ছে। গ্ৰামীণ এলাকায় পঞ্চায়েত শুধুমাত্র দ্বিতল বাড়ির প্ল্যান অনুমোদন করতে পারে। তৃতীয় এবং চতুর্থ তলের জন্য জেলা পরিষদের অনুমোদন দরকার। কোনও অনুমোদন না নিয়ে অনেক বাড়ির মালিক তৃতীয় তল কিংবা চতুর্থ তল বানিয়ে ফেলছেন। ত্রিতলের ভিত দেওয়া বাড়িও চারতলা হয়ে যাচ্ছে। অনেক বাড়ির সুপরিকল্পিত জল নিকাশি নেই। মিউনিসিপ্যালিটি, পঞ্চায়েতের নাকের ডগায় এই সব ঘটনা ঘটছে। পুলিশ, প্রশাসনের কোনও হেলদোল নেই। অনেক বসবাসের বাড়ির একতলায় হঠাৎ করে হোটেল বা অন্য ব্যবসা শুরু হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে সেই বাড়ির অন্যান্য বাসিন্দা ভীষণ অসুবিধার মধ্যে পড়ছেন।
কখনও যদি বিরাট কিছু অঘটন ঘটে, তখন একে অপরকে দোষারোপ করা হয়। কিন্তু এই অঘটনে যাঁরা হারিয়ে যান, তাঁরা আর ফিরে আসেন না। তাই পুলিশ-প্রশাসনের ফ্ল্যাটবাড়ির দুর্নীতি চক্র ভেঙে ফেলার জন্য জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন।
গৌতম পতি, তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর
বিপর্যয়
খোদ মেয়রের খাসতালুকে একের পর এক বেআইনি বহুতল নির্মাণ সংক্রান্ত সম্পাদকীয় প্রতিবেদন ‘ধ্বংসস্তূপ’ (২০-৩) প্রশাসনকে কতটা নাড়া দিতে পারবে, সেটা সময়ই বলবে। পুরসভার নাকের ডগায় পুকুর ভরাট করে দীর্ঘ দিন ধরে চলছিল নিয়মবিধি না-মানা বহুতলের নির্মাণকাজ। মেয়র ফিরহাদ হাকিম স্বীকার করেছেন যে, পুরসভার কোনও অনুমতি ছিল না এই আইন বহির্ভূত নির্মাণকাজে। ৩-৪ ফুটের রাস্তায় বহুতলের নির্মাণ চলছে, আর প্রশাসন ‘অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র’ হয়ে বসে রয়েছে? মেয়রের যুক্তিটিও হাস্যকর— বামেদের আমল এই বেআইনি নির্মাণের পথিকৃৎ, সেটাই চলছে এখনও। এক যুগ অতিক্রান্ত হলেও পুকুর বুজিয়ে বেআইনি নির্মাণ বন্ধ করার ক্ষেত্রে কোনও সদর্থক পদক্ষেপ করতে পারেনি তৃণমূল সরকার। ফলস্বরূপ, বহুতল বিপর্যয় চলছেই। প্রাণ হারাচ্ছেন বহু নিরীহ মানুষ। অথচ, পুর প্রশাসন পুরো দায়টাই চাপিয়ে দিতে চাইছে পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকার ও কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের আধিকারিকদের কাঁধে।
স্থানীয় মানুষজন সঙ্গত কারণেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন কাউন্সিলর ও আধিকারিকদের উপর, যাঁরা অবৈধ নির্মাণকাজে বাধা দেওয়ার বদলে, বখরা নিতে ব্যস্ত থাকেন। তবে লালবাজারের কর্তারা নড়েচড়ে বসেছেন। শহরের অন্যত্র বিধি মেনে নির্মাণকাজ হচ্ছে কি না, নজরদারির নির্দেশ দিচ্ছেন। কবে শেষ হবে এই বিভীষিকাময় বিপর্যয়ের ছবি?
প্রবীর কুমার সরখেল, ক্ষুদিরামনগর, পশ্চিম মেদিনীপুর
প্রশ্ন অনেক
‘ধ্বংসস্তূপ’ সম্পাদকীয় প্রসঙ্গে এই চিঠি। দুর্নীতির বিষপ্রবাহ যখন কোনও রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ মহলে পৌঁছে যায়, আর ওই দুর্নীতির পঙ্কিল আবর্তে মন্ত্রী, বিধায়ক, সচিব এবং বড় থেকে ছোট নেতা হাবুডুবু খেতে থাকে, তখন সেই অবক্ষয় সর্বগ্রাসী হয়ে প্রশাসনের তৃণমূল স্তরে খুব দ্রুত পৌঁছে যায়। প্রশাসনের এই বিরামহীন অবনমন রোখার বা প্রতিকার করার মতো আর কেউ থাকে না। গার্ডেনরিচে বহুতল আবাসন ভেঙে পড়ার পর মাননীয় মেয়র ফিরহাদ হাকিম প্রথমে এর দায় চাপিয়েছিলেন বাম আমলের উপর, যদিও বাড়িটি নির্মীয়মাণ স্তরে ছিল। এর চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই তিনি বেআইনি নির্মাণকে ‘সামাজিক ব্যাধি’ বলে চিহ্নিত করে দায় চাপালেন পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের উপর। এবং ওই এলাকার কাউন্সিলরকে কার্যত ক্লিনচিট দিলেন। এও বললেন, মানুষ সচেতন না হলে গার্ডেনরিচ গ্যাস-চেম্বারে পরিণত হবে। আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পুরসভার নাকের ডগায় যে এই বেআইনি নির্মাণ চলছিল বছরের পর বছর, পুর প্রশাসনের শীর্ষ স্তরের কাছে তা অজানা নয়। প্রশ্ন হল, এই শহরে পুর প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া একের পর এক অবৈধ বহুতলের উত্থান কী করে ঘটল? রাজ্য প্রশাসনের অন্যান্য স্তরে এই অদ্ভুত নীরবতা কেন? এই ঘটনার সমস্ত দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে মেয়র নিজে পদত্যাগ করলেন না-ই বা কেন?
দিলীপ কুমার সেনগুপ্ত, বিরাটি, উত্তর ২৪ পরগনা
সিঁদুরে মেঘ
‘চুন খেয়ে গাল পুড়েছে, দই দেখলে ভয় করে’— বাংলার এ প্রবাদ যেন আমাদের একে একে বহু দুর্ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। মনে করিয়ে দেয়, সতর্ক থাকতে হবে। সারা রাজ্যের সঙ্গেই আমাদের রানাঘাটেও বহুতলের সংখ্যা প্রচুর। তাই আশঙ্কার মেঘ ঘনিয়ে উঠেছে, এ শহরের বহুতলগুলো সব সুরক্ষিত তো? এগুলো আইন মেনে তৈরি তো? এগুলো সুরক্ষা বিধি মেনে নির্মাণ করা হয়েছে কি? বাম আমলেই রানাঘাটে এক শ্রেণির জমি মাফিয়া জমি-বাড়ি কেনাবেচার দালালি শুরু করেছিল এবং বর্তমানে সিন্ডিকেট গড়ে সেটা কারবারে পরিণত হয়। এদের প্রধান টার্গেট থাকে অসহায় পরিবারগুলি, যাদের বাড়ি সংলগ্ন কিছু জমিও রয়েছে। বাড়ির মালিককে কিছু টাকার টোপ দিয়ে তাঁদের বাড়ি বিক্রির জন্য চাপ দেওয়া হয়। না বিক্রি করতে চাইলে হুমকি ও ভয় দেখানো শুরু হয়। তার পর সেই বাড়ি তাদের কব্জায় চলে আসে। পুলিশে অভিযোগ দায়ের করে কিছু সুরাহা হয় না; কারণ রাজনৈতিক মদত এবং টাকার টোপ আগেই দেওয়া থাকে। জমির চরিত্র বদল বা হাত বদল বা ভুয়ো দলিল তৈরির কাজে ভূমি দফতরের কর্তাব্যক্তি থেকে নিচুতলার কর্মীরাও জড়িত থাকেন। তা ছাড়া পুরসভা বা পঞ্চায়েতের উপরতলার সক্রিয় মদত থাকে। দেখা যায়, রানাঘাটে বহু পুরনো বাড়ি জমির অস্তিত্ব, বহু শরিকের দ্বন্দ্ব প্রোমোটারদের সুযোগ করে দিচ্ছে সেখানে থাবা বসানোর। ফলস্বরূপ এখন শপিং মল আর বহুতল আবাসনে রানাঘাট ছয়লাপ। কিন্তু এখানে যদি গার্ডেনরিচের মতো দুর্ঘটনা ঘটে, তখন কী জবাব দেবেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ? নির্মাণ সঠিক নিয়ম মেনে হচ্ছে কি না বা পাশে রাস্তা ছাড়া হচ্ছে কি না, এগুলো খতিয়ে দেখবেন না দায়িত্বশীল ইঞ্জিনিয়াররা? আশা করি, প্রশাসন বহুতল নির্মাণের ছাড়পত্র দেওয়ার আগে সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখবেন, এবং কোনও চাপের কাছে নতিস্বীকার না করে যথাযথ পদক্ষেপ করবেন।
দেবাশ্রিত রায় রানাঘাট, নদিয়া