‘এটি কে? নতুন নামে মোহনবাগান’ (১৭-১) শীর্ষক সংবাদটি পড়ে বিস্মিতই হলাম। ১৩০ বছরের প্রাচীন ক্লাব যে ভাবে একটি সংস্থার কাছে নিজেদের সত্তা বিকিয়ে দিল, তা মোহনবাগানপ্রেমীদের হতাশই করবে। কেম্পানিতে এটিকে-র শেয়ার আশি শতাংশ আর মোহনবাগানের মাত্র কুড়ি শতাংশ। মোহনবাগানের মাঠ, তাঁবু, ড্রেসিংরুম সবই ব্যবহার করার অধিকার থাকবে এটিকে-র। কোচ বাছাই থেকে খেলোয়াড় নির্বাচন সবেতেই অগ্রাধিকার এটিকে-র! তা হলে মোহনবাগান ক্লাবটার অস্তিত্ব রইল তো শুধু নামে!
অতীশচন্দ্র ভাওয়াল
কোন্নগর, হুগলি
ঠিক সিদ্ধান্ত
আমার প্রিয় মোহনবাগান এটিকে-র সঙ্গে যে গাঁটছড়া বাঁধল, তার পরিণাম কী হবে, সময় বলবে। অর্থনৈতিক মন্দার বাজারে দল চালানো ক্রমশ কষ্টকর হচ্ছে, সবার ক্ষেত্রেই। সেই সময়ের প্রেক্ষিতে এটা সঠিক সিদ্ধান্ত বলেই মনে হয় আমার। আবেগ আর অর্থ— দুইয়ের সংযোগে শত শত বছর চলুক আমাদের দল। তবে সমর্থকদের ও কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকতে হবে, কর্পোরেট লবি যেন পুরো গিলে না নেয়।
সোমনাথ রায়
কলকাতা-৮
ঘাটতি ও মন্দা
‘ঘাটতি নিয়ে কটাক্ষ অভিজিতের’ (১২-১) প্রসঙ্গে এই চিঠি। ঘোষিত লক্ষ্যের চেয়ে বাজেটে ঘাটতি বেশি হওয়ার জন্য অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারকে ‘কটাক্ষ’ করেননি। উনি চেয়েছেন সরকার যেন প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যয় করে। তাতে যদি বাজেটে ঘাটতি বাড়ে তো বাড়ুক। তিনি বলেছেন, “রাজকোষ ঘাটতি ইতিমধ্যেই লক্ষ্যমাত্রার অনেকখানি বাইরে। আরও বাইরে গেলে তা খুব বড় ব্যাপার বলে মনে করি না। আমি এখন ঘাটতিকে লাগামের মধ্যে রাখাও সমর্থন করব না।”
এখন বিষয় হচ্ছে, বাজেট ঘাটতি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাখলে সরকারের ঋণ পরিশোধের সমস্যা হবে দেরি করে; না রাখলে সমস্যা হবে দ্রুত। উভয় ক্ষেত্রেই বর্ধিত ঋণ পরিশোধের জন্য সরকার বাধ্য হবে ভবিষ্যতে করের হার বৃদ্ধি করে আয় বাড়াতে। করের হার বৃদ্ধি না করতে পারলে বিভিন্ন খাতে হয় খরচ বাড়ানো যাবে না; নয়তো খরচ কমাতে হবে।
এই জন্য সনাতনপন্থী (orthodox) অর্থনীতিবিদেরা পরামর্শ দেন, হয় বাজেটে কোনও ঘাটতি না করার; নয়তো যথাসম্ভব ঘাটতি কম করার, যাতে ঋণ পরিশোধের সমস্যাকে বিলম্বিত করা যায়। মনে রাখতে হবে, বাজেটে ঘাটতি করতে থাকলে, দ্রুত হোক বা ধীরে হোক, ঋণ পরিশোধের সমস্যাকে কিছুতেই এড়ানো যাবে না। এই কারণেই আর্থিক মন্দাকে পুরোপুরি এড়ানো একেবারেই অসম্ভব। বাজেটে ক্রমাগত ঘাটতি বৃদ্ধি করার এবং ঋণ পরিশোধ করতে না পারার কারণেই গ্রিসের অর্থনৈতিক দুরবস্থা হয়েছে।
আর এক শ্রেণির (heterodox) অর্থনীতিবিদ মনে করেন, যত ক্ষণ পর্যন্ত না সবাইকে কাজ দেওয়া যাচ্ছে বা বেকার সমস্যার পুরোপুরি সমাধান হচ্ছে, তত ক্ষণ সরকারের উচিত বাজেটে ঘাটতি বৃদ্ধি করে যাওয়া বা ঘাটতি বৃদ্ধিতে রাশ না টানা। Lagu Randall Wray এই রকম একটি মতের প্রবক্তা। এই মতের নাম Modern Money Theory। অভিজিৎ এই দ্বিতীয় শ্রেণির অর্থনীতিবিদদের মধ্যে পড়েন।
এখন সমস্যা হল, সরকার কোনটা করবে? বাজেট ঘাটতি কমিয়ে রেখে মন্দা আসাটাকে কিছু দিন আটকে রাখবে; না কি ঘাটতি বৃদ্ধি করে মন্দাকে ত্বরান্বিত করবে? এখনও পর্যন্ত অর্থনীতির তত্ত্বে এবং কাজে এমন কোনও দাওয়াই নেই, যাতে দূর বা অদূর ভবিষ্যতে মন্দা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। সনাতনপন্থী (orthodox) বা অন্য মতের (heterodox) অর্থনীতিবিদ কেউই এই ঋণ পরিশোধের সমস্যার কোনও সহজ সমাধান আজ অবধি করেননি ; অভিজিৎও নয়।
অতএব, ঘাটতি বাজেট বৃদ্ধির পক্ষে যাঁরা সওয়াল করছেন, তাঁদের উচিত পথ দেখানো, কী ভাবে বর্ধিত ঋণ পরিশোধ করা যাবে, যাতে মন্দা দ্রুত না আসে বা আটকানো যায়।
নব কুমার আদক
কলকাতা-৩৪
তাঁর পরিচয়
‘চাকরির দাবিতে পোস্টার হাতে সাতাত্তরের বৃদ্ধ’ (১২-১) লেখাটিতে এক সংগ্রামী মানুষকে জনসমক্ষে তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু যে বৃদ্ধের কথা এখানে বলা হয়েছে তাঁকে যাঁরা চেনেন-জানেন তাঁদের কাছে লেখাটি অসম্পূর্ণ মনে হতে পারে। তাই এই সংযোজন।
সৃজন সেন, পূর্ববঙ্গ থেকে দাদা ও বৌদির হাত ধরে কলকাতা শহরে চলে আসা একটি ছোট ছেলে। তখন সবে দেশ ভাগ হয়েছে, কলকাতা শহর জুড়ে বাস্তুহারাদের ভিড়। বিভিন্ন দাবিতে হয়ে চলেছে আন্দোলন। এই পরিস্থিতির মধ্যেই ধীরে ধীরে বড় হয়ে, কলেজ জীবনে প্রবেশের আগেই লাল পতাকার প্রতি তাঁর ভালবাসা জন্মে গিয়েছিল।
কলেজে প্রবেশ করেই তিনি বঙ্গীয় প্রাদেশিক ছাত্র ফেডারেশন (BPSF)-এর সমর্থক হয়ে ওঠেন। ১৯৫৯ সালে খাদ্য আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য তাঁর কপালে জোটে প্রথম কারাবাস। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ভেঙে গেলে তিনি সিপিআই(এম) দলের সদস্য হন। কিন্তু সশস্ত্র পথে বিপ্লবের দিকে ঝুঁকতে থাকলে, পার্টি থেকে তিনি বহিষ্কৃত হন। তার পর তিনি যুক্ত হলেন চারু মজুমদারের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সিপিআই(এমএল)-এর সঙ্গে।
সত্তরের দশক। সাংস্কৃতিক বিপ্লব গড়ে তোলার আন্দোলনে পশ্চিমবঙ্গ উত্তাল, শামিল হলেন সৃজন সেন-ও। বিপ্লবের স্বপ্ন বুকে বেঁধে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ছুটে যান গ্রামে। তবে পুলিশের নজর এড়াতে পারেননি। তাই আবার তাঁকে ঢুকতে হয়েছিল কারাগারে, যেখানে সহ্য করেছিলেন পুলিশের অকথ্য অত্যাচার। তিনি লিখেছিলেন, ‘‘মা গো, সোনা মা আমার, তোমার খোকা আত্মসমর্পণ করেনি গো। তোমাকে করেনি কাপুরুষের মা।’’— যে কবিতা সেই সময় আন্দোলনের শক্তি জুগিয়েছিল।
সত্তরের রাজনৈতিক আন্দোলন এক সময় নিস্তেজ হয়ে পড়ল। কারাগার থেকে বেরিয়ে অনেকে চাকরিতে যোগ দিলেন। কিন্তু সৃজন কোনও চাকরি করলেন না, তিনি নিজেকে সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত রাখলেন। জড়িয়ে পড়লেন বিজ্ঞান আন্দোলনের সঙ্গে। গ্রামে থাকাকালীন এই বামপন্থী কর্মীরা উপলব্ধি করেছিলেন, বিজ্ঞানকে সাধারণ মানুষের জন্য কাজে লাগানো প্রয়োজন। তা ছাড়া তাঁরা বুঝেছিলেন, শুধু রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক পরিবর্তন আসবে না, এর জন্য প্রয়োজন মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক করে তোলা। তাই পরে গড়ে তুলেছিলেন লোকবিজ্ঞান নামে সংগঠন, একই নামে বেরিয়েছিল সংগঠনের পত্রিকা।
পরমাণু-শক্তি বিরোধী বিতর্কে তিনিই ছিলেন আন্দোলনের একমাত্র কর্মী, যিনি পরমাণু-শক্তির সমর্থনে কথা বলেছিলেন। এই নিয়ে তিনি একাধিক পত্রিকায় লেখালিখি করেছিলেন। তাঁর যুক্তি ছিল, বিজ্ঞান এক দিন পরমাণু শক্তির ক্ষতিকারক দিকগুলি দূর করতে সক্ষম হবে। তাই পরমাণু শক্তিকে দূরে সরিয়ে না রেখে তাকে পুঁজিবাদের কবল থেকে মুক্ত করে সাধারণ মানুষের কাজে লাগাতে হবে, এই ছিল তাঁর মত।
দীর্ঘ সময় ধরে তিনি যুক্ত ছিলেন কোটনিস কমিটির সঙ্গে। সৃজন সেনের অনেক পরিচয়— রাজনৈতিক কর্মী, সাংস্কৃতিক কর্মী, প্রচ্ছদশিল্পী, কবি, প্রবন্ধকার। লেখালিখি বা ছবি হয়ে উঠেছে তাঁর আন্দোলনেরই ভাষা। বেরিয়েছে তাঁর একাধিক কাব্যগ্রন্থ, যেমন— ‘থানা গারদ থেকে মাকে’, ‘মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী-সমীপেষু’, ‘একশ ছড়া ও চল্লিশ লিরিকের বাছাই হুল’, ‘স্মৃতি-বিস্মৃতির কবিতা’। ২০১৩ সালে অনুষ্টুপ থেকে বেরিয়েছে ‘সব কবিতা দু’মলাটে এবং...’ বইটি। কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও তিনি লিখেছেন বেশ কিছু ছড়ার বই।
নটরাজ মালাকার
ইমেল মারফত