গৌতম চক্রবর্তীর ‘জনসেবা থেকে রাজনীতি’ (২৩-৫) লেখাটি পড়ে কমিউনিস্ট পার্টির সেবার ইতিহাসকে একটু ফিরে দেখতে ইচ্ছে করছে। চল্লিশের দশক। মানুষ মারি নিয়ে ঘর করছে, পাশাপাশি তাদের লড়তে হচ্ছে খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানের সমস্যার সঙ্গে। জনগণের এই লড়াইয়ে শামিল হল কমিউনিস্ট পার্টি। সেবামূলক কাজের জন্য পার্টির উদ্যোগে গড়ে উঠল একাধিক সংগঠন; পিপলস সাইক্লোন রিলিফ কমিটি, পিপলস ফ্লাড রিলিফ কমিটি, খাদ্য কমিটি, মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি, জনরক্ষা সমিতি, কিশোর বাহিনী। কলকাতায় দু’শো বাড়ি পিছু গড়ে তোলা হয়েছিল একটি করে কমিটি, যাদের কাজ ছিল মজুতদারদের লুকিয়ে-রাখা চাল খুঁজে বার করা। ত্রাণকাজে নিয়োজিত পার্টির অসুস্থ কর্মীদের চিকিৎসার জন্য বৌবাজারে ৪০ বেডের হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়। ১৯৪৩-এর দুর্ভিক্ষের সময় বঙ্গীয় প্রাদেশিক কৃষকসভা ও বিভিন্ন গণসংগঠনের উদ্যোগে ত্রাণের কাজে স্থায়ী সংগঠন হিসেবে গড়ে ওঠে ‘পিপলস রিলিফ কমিটি’ (পিআরসি)। ১৯৪৬ সালে নোয়াখালির দাঙ্গার সময় কৃষকসভার ডাকে সাড়া দিয়ে চিকিৎসা ও ত্রাণের কাজে অংশ নেয় পিআরসি। আর্তের সেবায় কর্মীরা হাজির হতেন তাঁদের গরুর গাড়ির অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে।
তেতাল্লিশের মন্বন্তরের সঙ্গে এল মহামারি। পিআরসি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করার সিদ্ধান্ত নিল। ১৯৪৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৮টি রিলিফ সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে তৈরি হল ‘বেঙ্গল মেডিক্যাল রিলিফ কো-অর্ডিনেশন কমিটি’। সভাপতি করা হল বিধানচন্দ্র রায়কে। ওই কমিটি ১৯৪৪ সালে বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে ৫৫টি চিকিৎসকবাহিনী পাঠিয়ে প্রায় ৬ লক্ষ মানুষের চিকিৎসা করেছিল। কমিটির পরিচালনায় অন্যান্য রিলিফ কমিটি ১৫০টি চিকিৎসকবাহিনী পাঠিয়ে ১৯ লক্ষ মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছিল।
মহামারি ও দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধে বিএমআরসিসি ঔপনিবেশিক সরকারের কাছে দাবি করেছিল, দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষদের জন্য বিশুদ্ধ পানীয় জল, রেশন, চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু সরকার সেই কাজে ব্যর্থ হল। অন্য দিকে, মারোয়াড়ি ত্রাণ কমিটি ও হিন্দু মহাসভা ত্রাণ কমিটির কাছে প্রাধান্য পেয়েছিল মধ্যবিত্ত শ্রেণি। কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টির সংগঠনগুলি কাজ করেছিল ধর্ম নির্বিশেষে কৃষক-শ্রমিকদের জন্য। বাংলার কৃষকদের মধ্যে পার্টির জনপ্রিয়তা বেড়ে গিয়েছিল।
নটরাজ মালাকার
আন্দুলবেড়িয়া, মুর্শিদাবাদ
সহানুভূতির দৌড়
গৌতম চক্রবর্তী রেড ভলান্টিয়ারদের বর্তমান কর্মকাণ্ডকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে নিয়ে এসেছেন প্রাক্-স্বাধীনতা কালের বেশ কিছু চরিত্র, জনসেবামূলক সেবাসমিতি ও তাদের কর্মকাণ্ড। তখন ভারতবাসীর রাজনৈতিক যুদ্ধটা ছিল ব্রিটিশরাজের বিরুদ্ধে, উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয়দের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার। সেবাসমিতিগুলি গড়ে উঠেছিল ব্রিটিশ বিরোধিতাকে সামনে রেখে, জাত ও ধর্মকে দূরে সরিয়ে রেখে। আজকের বামফ্রন্টের রেড ভলান্টিয়ারদের কর্মকাণ্ড কারও বিরোধিতার লক্ষ্যে গড়ে ওঠেনি। তাদের শত্রু তৃণমূল, বিজেপি নয়। তাদের শত্রু কখনও আমপান, কখনও কোভিড। রেড ভলান্টিয়ারদের জনসেবা বিধানসভা ভোটে সিপিএম তথা জোটের পক্ষে কোনও রেখাপাত করতে পারেনি, পারার কথাও নয়। কারণ সেই কর্মকাণ্ডের পরিসর খুবই সীমিত। তাদের কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল না, আজও নেই। কিছু মানুষের সহানুভূতি দিয়ে ভোট বৈতরণি পার হওয়া দুরাশামাত্র।
সনৎ কুমার কান্ডার
কলকাতা-৭৪
সেবার মূল্য
গৌতম চক্রবর্তী খুব মূল্যবান একটা বিষয় আলোকপাত করেছেন। অতিমারিতে অক্সিজেন, ওষুধ, অক্সিমিটার, নেবুলাইজ়ার, অ্যাম্বুল্যান্স, ডাক্তারের কাছে বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার ব্যবস্থা করা— এটা যাঁরা পারবেন, তাঁরাই অসুস্থ মানুষের আপনজন। প্রকৃত বন্ধু। এই কাজ আরও সঠিক ভাবে করার জন্য প্রতি দিন কোন হাসপাতালে কত বেড ফাঁকা আছে, বা বিশেষ কোভিড সেন্টারগুলোতেও কোথায় কেমন সুযোগ আছে, সেই তথ্য যেন রেড ভলান্টিয়ারদের কাছে থাকে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোও এই তথ্য দিয়ে এদের সঙ্গে যেন সহযোগিতা করে।
১৯৭৮-এ পশ্চিমবঙ্গে সাঙ্ঘাতিক বন্যা হয়। হাজার হাজার মানুষের বাড়ি জলের তলায় চলে যায়। এর এক বছর আগে জ্যোতি বসু মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। তিনি সরকারি কর্মসূচি নিলেও, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ, রামকৃষ্ণ মিশনের মতো প্রতিষ্ঠানকে নানা ভাবে সাহায্য করেন। সেবার কাজ যে-ই করুক, সেটাই ভাল।
প্রবীর চক্রবর্তী
জয়নগর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
ঝুঁকির ভল্ট
সম্প্রতি ইন্ডিয়ানাপোলিসে ‘ইউএস ক্ল্যাসিক্স জিমন্যাস্টিক্স’-এ আমেরিকার সিমোন বাইলস ‘ইউরচেঙ্কো ডাবল পাইক’ ভল্ট দিয়ে সাড়া ফেলেছেন। এই খবরের প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে এই সংবাদপত্রেই ভারতের দ্রোণাচার্য পুরস্কারপ্রাপ্ত দীপা কর্মকারের কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দী বাইলসকে তাঁর এই নতুন ভল্টের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন। তবে এ-ও বলেছেন, দীপা কর্মকারের প্রোদুনোভা ভল্ট আরও কঠিন (‘কুর্নিশ বাইলসকে, কিন্তু প্রোদুনোভা আরও বিপজ্জনক’, ২৪-৫)। তিনি স্মৃতিচারণ করেছেন, দীপা কর্মকারকে এই ‘মারণ-ভল্ট’ শেখাতে গিয়ে তাঁকে কম কথা শুনতে হয়নি। তবুও হাল ছাড়েননি। রিয়ো অলিম্পিক্সে দীপা চতুর্থ হলেও ভারতবাসী মুগ্ধ হয় তাঁর ভল্ট দেখে।
কিন্তু, এই প্রসঙ্গে বিশ্বেশ্বরবাবুর গলায় শোনা গেল ভারতীয় মহিলা জিমন্যাস্টিক্সে দৈন্যদশার কথা। এখানে মহিলা জিমন্যাস্টদের হীন চোখে দেখা হয়। দীপা কর্মকার, অরুণা রেড্ডি, প্রণতি নায়েকের মতো প্রতিভাবান জিমন্যাস্টদের কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া-আসরে অংশগ্রহণ করতে হয়। কয়েক দিন আগে এই কাগজেই বাংলার জিমন্যাস্ট প্রণতি নায়েকের টোকিয়ো অলিম্পিক্সে অংশগ্রহণের আগে প্রস্তুতির ছবি বেরিয়েছিল। ছবিতে দেখেছি, বাড়ির বাইরে দু’টি গাছে বাঁশ বেঁধে প্রণতি প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অলিম্পিক্সে খেলার যোগ্যতা অর্জনকারী এক ভারতীয় জিমন্যাস্টের প্রস্তুতির যদি এই হাল হয়, তার ভবিষ্যৎ সহজেই অনুমেয়। এই দুর্দশার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার কি দায় এড়িয়ে যেতে পারে? ক্রীড়া সংস্থার নজর কি শুধুই ক্রিকেটের দিকে? ক্রিকেটে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা, আয় আছে, তার জন্য সব পরিকাঠামো, নতুন স্টেডিয়াম তৈরি হয়, প্রতি বছর নিয়ম করে আইপিএল-এর আসর বসে। সারা ভারতের ফিল্মস্টার থেকে শুরু করে শিল্পপতিরা কোটি কোটি টাকা খাটান এই খেলায়। অন্য দিকে দীপা, প্রণতিদের মতো আন্তর্জাতিক মানের প্রতিভাবান জিমন্যাস্টরা বছরের পর বছর উপযুক্ত পরিবেশ, পরিকাঠামো এবং আর্থিক সঙ্গতির অভাবে
হাতড়ে বেড়ায়।
অরুণ মালাকার
কলকাতা-১০৩
সত্যকে ভয়
বাংলাদেশের সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের উপর হামলার ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় সত্যকথন শাসকের কাছে কত অপ্রিয় (‘গ্রেফতার নামী সাংবাদিক, বিক্ষোভ বাংলাদেশে’, ১৯-৫)। রোজিনার অপরাধ, বাংলাদেশে টিকাকরণ ও কোভিড মোকাবিলা নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খোলা। সব দেশেই সাংবাদিকরা হত্যা, নয় নির্যাতন, অথবা ষড়যন্ত্রের শিকার। সত্যিটাকে এতই যদি ভয়, তবে ক্ষমতায় থাকা কেন? মুখে শাসকরা বলবেন তাঁরা জনগণের প্রতিনিধি, কাজের বেলায় করবেন উল্টো। সুখের কথা, বাংলাদেশের সাংবাদিকরা এক হয়েছিলেন বলে রোজিনা জামিন পেলেন কারাবাসের ছ’দিন পর।
অভিজিৎ দত্ত
জিয়াগঞ্জ, মুর্শিদাবাদ