Letters to the editor

সম্পাদক সমীপেষু: ৭৫-এও জনপ্রিয়

আজও প্রেমেন্দ্র মিত্রের কবিতা বহুলচর্চিত এবং জনপ্রিয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২১ ০০:০১
Share:

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘ঘনাদা ৭৫’ নিবন্ধ (২৭-১২) প্রসঙ্গে এই চিঠি। ঘনাদার গল্পের ৭৫ বছর পূর্ণ হয়েছে। সাখালিন দ্বীপে মশা মেরে ঘনাদার গল্পের সূচনা। আর তার পর বাংলা ভাষার প্রায় সব দু’-অক্ষরের শব্দ দিয়ে একটা করে গল্প। ঘনাদা অত্যন্ত জনপ্রিয় চরিত্র, প্রতি বছর পুজোর সময় দেব সাহিত্য কুটীর থেকে যে বিশেষ পুজোসংখ্যা বেরোত, আমরা ছোটরা মুখিয়ে থাকতাম ঘনাদা, টেনিদা, অমরেশের নতুন নতুন কীর্তি পড়ার জন্য, শিবরাম চক্রবর্তীর লেখার জন্য।

Advertisement

লোকে প্রেমেন্দ্র মিত্রকে সাহিত্যিক হিসেবে মনে রেখেছে মূলত ঘনাদার জন্যই। সিনেমা না হলে, সাগরসঙ্গমে বা তেলেনাপোতা আবিষ্কার যে ওঁর রচনা, তা অনেকেই হয়তো জানতেন না। আমার এই চিঠি অবশ্য অন্য একটি লেখাকে নিয়ে। তখন ঘনাদা মেসবাড়ি ছেড়ে লেকের ধারে বৈকালিক আড্ডায় যোগ দিয়েছেন। নানা ঘটনার কথা বলছেন, নিজেকে নিয়ে নয়, নিজের পূর্বপুরুষ ঘনরাম দাস বা গানাদোকে নিয়ে। এই সময়ের একটা অসাধারণ উপন্যাস সূর্য কাঁদলে সোনা। ফ্রান্সিসকো পিজ়ারোর পেরু অভিযান নিয়ে লেখা। পড়লেই বোঝা যায়, কী অসম্ভব পরিশ্রম করতে হয়েছে। আমার মনে হয়, এটাই বোধ হয় প্রথম বাংলা উপন্যাস, যার শেষে একটা ‘গ্লসারি অব টার্মস’ দেওয়া আছে। এর ফলে বহু ইনকা ভাষার শব্দের মানে বোঝা যায়।

আদিত্য বাগচি

Advertisement

কলকাতা-৮৪

আজও জনপ্রিয়

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, প্রেমেন্দ্র মিত্রের কবিতার বিষয়ে বাঙালি এক রকম ভুলেই গিয়েছে। তিনি এ বিষয়ে নিশ্চিত কী ভাবে হলেন? আজও প্রেমেন্দ্র মিত্রের কবিতা বহুলচর্চিত এবং জনপ্রিয়। আবৃত্তিকারেরা তাঁর ‘কাগজ বিক্রি’, বা ‘বুড়ো রাজার খুড়ো’ অথবা ‘হাওয়াই দ্বীপে যাইনি’ কবিতাগুলিকে আগ্রহের সঙ্গে পাঠ করেন, এবং তা বাঙালি আগ্রহ সহকারেই শোনে।

রাজর্ষি মুখোপাধ্যায়

কলকাতা-৩৪

টাকার ভার

সেমন্তী ঘোষ তাঁর ‘এখন সতর্ক থাকার সময়’ (১-১) প্রবন্ধে শিবরাম চক্রবর্তীর বাড়ি থেকে পালিয়ে-র কিশোর নায়ক কাঞ্চনের উদাহরণ দিয়েছেন। এটি নিমেষে ছেলেবেলার স্মৃতি উস্কে দিল। মনে পড়ে গেল, ক্ষুধার্ত কাঞ্চন কিছু খাদ্যের আশায় একটি দোকানের সামনে পাতা বেঞ্চে বসে আছে। এক জন এসে তাকে একটু সরে বসতে বলল। কাঞ্চন বলল, বা রে, বসার বেলায় ধারে, আর পয়সার বেলায় নগদে। এটা শুধু হিউমার নয়। ওইটুকু ছেলে, সেও বোঝে, নগদ পয়সার কী ভার। টাকা কথা বলে। তেলা মাথায় তেল ঢালো। পয়সাওয়ালা লোকেরাই পৃথিবী নিয়ন্ত্রণ করে। বাঙালি ও অবাঙালি, দুর্নীতি, চরিত্রহনন ইত্যাদি শব্দগুলি তাদের কাছে অর্থহীন। শুধু ভোটের সময় জনতার কদর বাড়ে।

রঞ্জিত কুমার দাস

বালি, হাওড়া

চতুর্থ স্তম্ভ

‘হাততালির লোভে’ (১৬-১২) শীর্ষক চিঠিতে পত্রলেখক সঠিক ভাবেই বলেছেন— সংবাদমাধ্যম গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে বলতে হয়, সংবাদমাধ্যম বর্তমানে মোটেও ধোয়া তুলসীপাতা নয়। কিছু টেলিভিশন স্টুডিয়ো যেন নিয়মিত বিভাজন ও বিদ্বেষের বিষ ছড়িয়ে চলেছে। অপুষ্টি, অনাহার, বেকারত্ব, দারিদ্র, শিশুমৃত্যু, পরিবেশ দূষণ, ইত্যাদি বিষয়ে কোনও গঠনমূলক সমালোচনা নেই। আছে অতিনাটকীয়তা, চাটুকারিতা, রং-বেরঙের খবর পরিবেশন। নেতানেত্রীরা যে সব কটুবাক্য প্রয়োগ করেন, টিআরপির লোভে সেগুলো অনবরত প্রচার করে তাঁদের নায়কনায়িকায় উন্নীত করে টিভি চ্যানেলগুলোই। তাই সাংবাদিকতায় ম্যাগসাইসাই পুরস্কার-প্রাপক সাংবাদিকও সংবাদমাধ্যমের এই বিপজ্জনক ও দুর্ভাগ্যজনক অবস্থানে হতাশ হয়ে জনগণকে টেলিভিশন না দেখার অনুরোধ করেন। ‘রাজা তোর কাপড় কোথায়’ প্রশ্ন করার ক্ষমতা বর্তমানে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের কত শতাংশের রয়েছে?

অনিমেষ দেবনাথ

নাদনঘাট, পূর্ব বর্ধমান

বেলপাহাড়ি

ঘুরে এলাম ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়ি। সেখানকার বড় রাস্তার ধার ঘেঁষে দোকান-পসারি, ঝাঁ চকচকে হোটেল, রেস্টুরেন্ট, পরিচ্ছন্ন হোম-স্টে। কিন্তু একটু ভিতরে ঢুকলেই বোঝা যাবে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দুরবস্থা। অনেক জায়গায় এখনও পৌঁছোয়নি জলের কল। ইঁদারা বা পাতকুয়ার উপর নির্ভরশীল সেখানকার মানুষেরা। সকালে উঠে হোম-স্টে থেকে হাঁটা পথে যা দেখলাম, তা স্বচ্ছ ভারত বা মিশন বাংলা কর্মসূচিকে লজ্জায় ফেলবে। এলাকার নাম ভুঁইয়া পাড়া। দেখলাম, রাস্তার ধারে ঝোপের আড়ালে বেশ কয়েক জন বসে পড়েছেন প্রাতঃকৃত্য সারতে। বেলপাহাড়ি থানা থেকে দূরত্ব মেরেকেটে ৩০০ মিটার হবে। সেই ভুঁইয়া পাড়ার মাঠের পাশে ছয়লাপ হয়ে রয়েছে মানববর্জ্য। রাস্তার দু’পাশে পড়ে আবর্জনা। নিকাশি ব্যবস্থার অভাবে নোংরা জল থৈ থৈ। সেখানে শুয়োর চরে বেড়াচ্ছে। শহুরে চাকচিক্যের বাইরে সারা ভারতের যে দুর্দশা, তা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি পশ্চিমবঙ্গের গ্রামগুলিও। এটাই প্রকৃত ভারত।

সফিয়ার রহমান

অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা

কমলালেবু

এ বছর প্রচুর কমলালেবুর ফলন হয়েছে। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ সুস্বাদু কমলা মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত সবার নাগালের মধ্যে। দার্জিলিং, নাশিক-সহ বহু জায়গায় লেবুর উৎপাদন প্রচুর হওয়ায় বাজারে বিকোচ্ছে খুবই কম দামে। নাশিকের কমলা আকারেও যথেষ্ট বড়। এমতাবস্থায় কমলালেবুর সংরক্ষণ খুব জরুরি। কমলার জুস তৈরি করে, ঠান্ডা ঘরে তা সংরক্ষণ করে সারা বছর যাতে পাওয়া যায়, তার ব্যবস্থা করা উচিত।

রাধারমণ গঙ্গোপাধ্যায়

বজবজ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

তথ্য ও সত্য

অর্ঘ্য মান্নার ‘লক্ষণের মিল কাকতালীয়’ (২৬-১২) নিবন্ধটির প্রেক্ষিতে কয়েকটি তথ্য সংযোজন করতে চাই। মধুশ্রী মুখোপাধ্যায়ের চার্চিল’স সিক্রেট ওয়ার (বাংলা অনুবাদ পঞ্চাশের মন্বন্তরে চার্চিলের ষড়যন্ত্র, সেতু প্রকাশনী, ২০১৭) গ্রন্থটিতে লেখক তথ্যপ্রমাণ-সহ স্পষ্ট দেখিয়েছেন, পঞ্চাশের মন্বন্তরের জন্য অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের ‘এফএডি’ বা ‘অসমবণ্টন’ তত্ত্ব ততটা দায়ী নয়, যতটা দায়ী বাংলার মানুষের খাদ্যাভাব মেটানোর সমস্ত পথ বন্ধ করার জন্য চার্চিলের অমানবিক অভিসন্ধি। লেখক দেখিয়েছেন, কী ভাবে আমেরিকা ও কানাডার লক্ষ লক্ষ টন গম ত্রাণ হিসেবে পাঠানোর প্রস্তাব চার্চিল নাকচ করে দেন, যখন বাংলার ত্রিশ লক্ষ মানুষ চরম অন্নকষ্টে ছিল। অস্ট্রেলিয়া থেকে খাদ্যশস্য বোঝাই ব্রিটিশ জাহাজ ভারতের পাশ দিয়ে চলে যায় ভূমধ্যসাগরীয় এলাকায়। ১৯৪২-এর ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের সময় মেদিনীপুরের বিপ্লবীদের স্বাধীন তাম্রলিপ্ত সরকার প্রতিষ্ঠার ‘ঔদ্ধত্য’কে হাতে মারতে না পেরে ভাতে মারার কৌশল গ্রহণ করেন চার্চিল।

ছিয়াত্তরের মন্বন্তরে এক কোটি মানুষের মৃত্যু হয়। এ হিসেব দিয়েছেন উইলিয়াম উইলসন হান্টার। বিহারের নায়েব নাজিম সিতাব রায়ের বিরুদ্ধে শস্য চুরি বা পাচারের অভিযোগও সত্য নয়। বরং পটনার ক্ষুধাপীড়িত মানুষের জন্য তিনি বারাণসীর রাজা বলবন্ত সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করে তিন কিস্তিতে চাল আনিয়েছিলেন পটনায়। তাতেও সমস্যার সমাধান না হওয়ায় তিনি তাঁর চারটি বাগানে বুভুক্ষুদের আশ্রয় দিয়ে তাঁদের মুখে অন্ন তুলে দেন ব্যক্তিগত উদ্যোগে।

নিখিল সুর

কলকাতা-৩৪

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement