পশ্চিমবঙ্গের পরিপ্রেক্ষিতে তিনটি কৃষি সংস্কার আইনের পর্যালোচনা করেছেন স্বাতী ভট্টাচার্য (‘চাষি যখন নিমিত্তমাত্র’, ২-১১)। নিবন্ধটি সময়োপযোগী ও বাস্তবসম্মত। তবে শেষ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, নয়া আইনে বাংলার চাষি উপেক্ষিত। এই প্রসঙ্গে সংযোজন করতে চাই যে, চাষিদের ফসল বিপণনের সমস্যা, এবং যথাযথ লাভ পাওয়ার সমস্যার সমাধানের উদ্দেশ্যে গত ২ জুলাই কেন্দ্রীয় সরকার একটি নির্দেশিকা জারি করেছে। তাতে বলা হয়েছে, আগামী পাঁচ বছরে ১০ হাজার ফার্মার্স প্রোডিউসার্স অর্গানাইজ়েশন (এফপিও) গঠন করবে সরকার। এর জন্য সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে। তার রূপরেখাও দেওয়া রয়েছে।
২০১৩ সালে ঘোষিত হয়েছিল চাষিদের শেয়ারহোল্ডার করে তাঁদের নিজস্ব কোম্পানি, ‘ফার্মার্স প্রোডিউসার্স অর্গানাইজ়েশন’ তৈরির নীতি। তার রূপায়ণে যে সব ভুল হয়েছিল, সেগুলি সংশোধন করে, অত্যন্ত পেশাদার মনোভাব নিয়ে বর্তমান প্রকল্পটির রূপ দান করা হয়েছে। এই বিশাল ব্যয়ের সবটাই কেন্দ্রীয় সরকার বহন করবে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে সম্মান দিয়ে। তাই কেন্দ্রীয় স্তরে কমিটি ছাড়াও, রাজ্য ও জেলা স্তরে রাজ্যের আধিকারিক, রূপায়ণকারী সংস্থার স্থানীয় আধিকারিক এবং কৃষক প্রতিনিধিদের নিয়ে রাজ্য ও জেলা স্তরে রূপায়ণ ও তদারকি কমিটি গঠন করার সংস্থান করা হয়েছে। সব রাজ্যেই এই প্রকল্প রূপায়ণের কাজ এগিয়ে গিয়েছে। কিন্তু বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যস্তরের কোনও কমিটি তৈরি করা হয়নি। তাই আবার সেই কৃষকরাই উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছেন।
বিদ্যুৎ কুমার বসু , প্রাক্তন ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার, নাবার্ড
উজ্জ্বল অতীত
বাংলার কৃষক কৃষি আইন ভালই বোঝেন, কতটা সরকারের কাছে বিক্রি করলে আর কতটা কর্পোরেটকে দিলে লাভ হবে, তা-ও বোঝেন। কিন্তু পরিস্থিতি অন্য। সরকার রেশনের জন্য প্রয়োজনীয় অল্প কিছু চাল কৃষকের কাছ থেকে কেনে। আগে যেমন সমবায় ব্যবস্থার মাধ্যমে চাষি সুষ্ঠু ভাবে টাকা পেতেন, এখন সে ব্যবস্থা কার্যকর নেই। চালকল মালিকদের কাছ থেকে পাওয়া চেক কখনও বাউন্সও হয়। আবার পরিকাঠামোর অভাবে কোম্পানিগুলো চাষির সঙ্গে চুক্তি করতে উৎসাহী হয় না। মাঝখান দিয়ে শাসক দলের মদতে পুষ্ট ফড়ে লাভবান হয়। স্বাতী ভট্টাচার্য লিখেছেন, বামফ্রন্ট আমলের শেষের দিকে এক বারও অত্যাবশ্যক পণ্য আইন প্রয়োগ হয়নি। বস্তুত, বামফ্রন্ট আমলে এই আইন প্রয়োগের প্রয়োজনই ছিল না। কৃষিবিজ্ঞানে উন্নতি, সমবায় ব্যবস্থার সুফল ইত্যাদির মাধ্যমে চাষি লাভবান হতেন। ভালবেসে তাঁরা অধিক ফলনশীল আলুর নামকরণ করেছিলেন তখনকার মুখ্যমন্ত্রীর নামে, যা ‘জ্যোতি আলু’ বলে এখনও বাজারে সর্বাধিক বিক্রি হয়। কৃষির উন্নতির জন্যই গ্রামাঞ্চলে বামফ্রন্ট সরকার বহু ভোট পেত।
শিখা সেনগুপ্ত, কলকাতা-৫১
তারিখের ফাঁদে
‘কত ধানে কত আলু’ (৯-১১) পত্রের সপক্ষে কিছু কথা। সরকারি ভাবে ২ নভেম্বর থেকে ধান কেনার কথা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ঘোষণা করা হলেও, বাস্তব অন্য রকম। আমি গত ৫ নভেম্বর পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা ৩নং ব্লকের একটি সরকারি ধান কেনার খামারে ধান বিক্রির তারিখ জানতে গিয়েছিলাম। নাম নথিভুক্ত করলেও তাঁরা ধান কেনার তারিখ জানাতে পারেননি। একটা নম্বর দিয়ে বলেছেন, ফোন করে খবর নিতে। দ্বিতীয়ত, তাঁরা জানিয়েছেন, সরকারি নির্দেশ যা-ই থাক না কেন, স্বর্ণমাসুরি ছাড়া অন্য ধান কেনা হবে না। কারণ, চালকল মালিকরা তাতে অনিচ্ছুক। অর্থাৎ, সরকারি ধান কেনা চালকলের মালিকের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। তৃতীয়ত, ধুলোবালির জন্য কুইন্টালে অন্তত ৫-৬ কেজি বাদ যাবে। চতুর্থত, চাষির পাঁচ একরের বেশি জমি থাকলে সর্বোচ্চ ৯০ কুইন্টাল ধান সরকারি কেন্দ্রে বিক্রি করা যাবে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে প্রথম দফায় ১৮-২০ কুইন্টালের বেশি নেওয়া হবে না। অনেক চাষির ঘরে মাঠের পাকা ধান উঠে গিয়েছে। এই সময় তাঁরা ধান বিক্রি করে আলু, সর্ষে প্রভৃতি রবিশস্য চাষের অর্থ জোগাড় করবেন, এটাই স্বাভাবিক। অথচ, সরকারি ধান কেনার সময়সূচি কাগজে-কলমে ঘোষিত হলেও, বাস্তবে তার রূপায়ণ নেই। ফলে সাধারণ কৃষক খোলা বাজারে ১৩০০-১৪০০ টাকা কুইন্টাল দরে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
রাইকিশোর কার্ফা, আমশোল, পশ্চিম মেদিনীপুর
কার স্বার্থে?
আমি উত্তরবঙ্গের কৃষক পরিবারের সন্তান। কৃষকের জীবনের মূল সমস্যাগুলি অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জানা। এক, উৎপাদন ব্যয় বেশি, আয় সামান্য। দুই, সরকারি উদ্যোগে সেচের ব্যবস্থা নেই। তিন, নগদের অভাবে মহাজনের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ। চার, বিমার সুবিধা না পাওয়া। পাঁচ, অভাবী বিক্রি। ছয়, মাটি পরীক্ষা করে সারের পরিমাণ নির্ধারণ, মাটির উপযোগী ফসল লাগানোর ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক সহায়তা না পাওয়া। এই সমস্যার সমাধানে কৃষক স্বার্থরক্ষায় কোনও আইন তৈরি হয়নি। চাষ করতে যে সমস্ত দ্রব্যসামগ্রী লাগে, যেমন বীজ, সার, কীটনাশক, মাটির তলা থেকে জল তোলার মেশিন, তার জন্য ডিজ়েল, বিদ্যুৎ ইত্যাদির দাম ক্রমাগত বাড়ছে। ফলে, চাষের খরচও বাড়ছে। কিন্তু ঋণখেলাপির ভয়ে চাষিকে ব্যাঙ্ক লোন দেয় না। অথচ, কোটি কোটি টাকা বড় ব্যবসায়ীদের কাছে ‘এনপিএ’ (খেলাপি ঋণ) পড়ে রয়েছে। চাষিরা নগদ টাকার জন্য সুদখোর মহাজনের কাছে, অথবা মাইক্রোফিনান্স সংস্থার কাছে যেতে বাধ্য হন, যেখানে চাষিকে প্রতি মাসে ৮-১০ টাকা, বছরে ৯৬-১২০% হারে সুদ দিতে হয়। ফসল যখন ওঠে, তখন লাভের গুড় পিঁপড়ে খেয়ে নেয়। হিসেব করে দেখা গিয়েছে, ধানের দামের ৫৩% পান চাষি, ৩১% পায় ফড়ে। শাক-সব্জি ও ফলের ক্ষেত্রে চাষির অংশ আরও কম। যথাক্রমে ৩৯% ও ৩৪%। স্বামীনাথন কমিশন বলেছে, উৎপাদন খরচের দেড় গুণ দাম চাষিকে দিতে হবে। সরকার তা দেয় না।
আগে কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিভিন্ন রাজ্য সরকারের বীজ নিগম ছিল। চাষি সেখান থেকে সার্টিফায়েড বীজ কম দামে পেতেন। বীজ নিগমগুলো তুলে দেওয়া হল। এখন বীজ সরবরাহ করে কিছু বহুজাতিক কোম্পানি। সরকারি সার কোম্পানিগুলিও তুলে দেওয়া হয়েছে। বড় বড় বহুজাতিক কোম্পানি সার উৎপাদন করে। সরকার চাষিকে ভর্তুকি না দিয়ে সার কোম্পানিকে ভর্তুকি দেয়। বীজ, সার, কীটনাশক, ডিজ়েলের দাম চাষি নিয়ন্ত্রণ করে না, সরকারও নিয়ন্ত্রণ করে না। সবটাই বহুজাতিক পুঁজির দখলে। এ সব দেখে মনে হয়, চাষির স্বার্থরক্ষার চাইতে পুঁজিপতির স্বার্থ দেখাই সরকারের কাজ। সেই জন্যই কি সংসদকে এড়িয়ে তড়িঘড়ি কৃষি বিল পাশ করানো হল?
রণজিৎ রাজবংশী, রায়গঞ্জ, উত্তর দিনাজপুর
খড়ের দাম
হুগলিতে দাদপুর, বাবনান, বেলমুড়ির বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ধান কাটার মজুর পাওয়া যাচ্ছে না। চাষিরা নিরুপায় হয়ে মেশিনে ধান কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। খড়ের কুচো শুকনো হওয়ার পর জমিতেই জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে বায়ুদূষণের সঙ্গে মাটিরও অত্যন্ত ক্ষতি হচ্ছে। উর্বরতা হ্রাস পাওয়ায় আলুর জমিতে এক-দেড় বস্তা সার বেশি দিতে হচ্ছে। খড়ের অভাবে গবাদি পশুর খাদ্যসঙ্কট দেখা দিচ্ছে। নতুন ধান উঠলে সাধারণত খড় বিক্রি হয় ৫০০-৬০০ টাকা কাহন দরে। মেশিনে ধান কেটে খড় নষ্ট করার ফলে সেই খড়ের দাম এখন ২০০০-২২০০ টাকা কাহন। এখনই উপযুক্ত পদক্ষেপ করা দরকার।
লক্ষ্মণ সাঁতরা, দাদপুর, হুগলি
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।