Christmas Day

সম্পাদক সমীপেষু: বড়দিনের পানীয়

বড়দিনের খুশির কলকাতায় মন যাঁর বিষণ্ণ, তাঁর মন ভাল করার জন্য রয়েছে নানা পানীয়। শ্রীপান্থ লিখছেন, অষ্টাদশ শতকে এ দেশে সাহেবদের প্রিয় পানীয় ছিল ‘আরক’।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২০ ০১:৫৯
Share:

— ফাইল ছবি

সুমনা সাহার ‘বাঙালির বড়দিন’ (রবিবাসরীয়, ২০-১২) প্রসঙ্গে কিছু সংযোজন করতে চাই। লেখক শ্রীপান্থ তাঁর কলকাতা বইতে ‘ডলি’ প্রসঙ্গে লিখেছেন, “এক সাহেব লিখেছেন ‘ডলি’ প্রাচুর্যময় প্রাচ্যে ভিজিটিং কার্ড। শুধু ফলমূল, কিংবা হাঁস, মুরগী আর চেরী, ব্রান্ডি, বিয়ার নয় ডলিতে অনেক সময় অন্য উপহারও থাকত। ফ্যানি পার্কস এলাহাবাদে কালেক্টারের বৌ। একবার কিসমিস বকশিস বা বড়দিনের ডালিতে তিনি যেসব উপহার পেয়েছিলেন, তার মধ্যে ছিল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের একটি স্কেচ, ওয়ালনাটের থলি, হিরের আংটি, কাশ্মিরী শাল, দুই বোতল পাহাড়ি মধু ইত্যাদি।”

Advertisement

বড়দিনের খুশির কলকাতায় মন যাঁর বিষণ্ণ, তাঁর মন ভাল করার জন্য রয়েছে নানা পানীয়। শ্রীপান্থ লিখছেন, অষ্টাদশ শতকে এ দেশে সাহেবদের প্রিয় পানীয় ছিল ‘আরক’। তা বাংলা হোক, বা গোয়ান। আরক দিয়ে পাঁচমিশেলি পাঁচন তৈরি হত, নাম পাঞ্চ। তার নামেই পাঞ্চ হাউস, জনপ্রিয় পাব, সে কালের খালাসিটোলা। ছিল তাড়ি, গেরি, পোটার, বাস্, অ্যালসপ্ও। ১৮১০ সাল অবধি খানদানি সাহেবরা হুইস্কি ছুঁতে চাইতেন না। কারণ, ওটা দেখতে সস্তা আরকের মতো। বিয়ারও ছিল। গৃহকর্তা বিয়ার পান করে যেতে বললে সেটা খেয়ে যাওয়ার আমন্ত্রণ মনে করা হত। তরল আমোদের বড় অংশ জোগাতেন কলকাতার বাবুরা।

অভিজিৎ ঘোষ

Advertisement

শ্যামনগর, উত্তর ২৪ পরগনা

বাঙালির জিশু

‘বাঙালির বড়দিন’ নিবন্ধটি প্রসঙ্গে জানাই, বাঙালির জীবনে জিশু খ্রিস্টের প্রবেশ কোম্পানির আমলে মিশনারিদের হাত ধরে। ফুলমণি ও করুণার বিবরণ-কে বাংলা ভাষায় প্রথম উপন্যাস হিসেবে দেখা চলে কি না, তা নিয়ে দ্বিমত আছে। তবে ১৮৫২ সালে প্রকাশিত, হানা ক্যাথরিন মুলেন্স-এর লেখা এই বাংলা বই মূলত একটি ইংরেজি আখ্যানের অনুসারী হলেও চরিত্রগুলি সে কালের বাঙালি খ্রিস্টান সমাজ থেকে উঠে এসেছিল। কেরি সাহেবের মুন্সি-তে দেখি, সাহেব উপরওয়ালাদের সন্তুষ্ট করতে খ্রিস্টবন্দনা লিখছেন রামরাম বসু। শুরুর দিকের এ সব কথা নাহয় ঔপনিবেশিক প্রভাব, মিশনারিদের দায়। কিন্তু আস্তে আস্তে জিশু হয়ে উঠলেন বাঙালির ভালবাসার জন। বাঙালির দুই প্রাণের ‘ঠাকুর’— এক জন শ্রীরামকৃষ্ণ, অন্য জন রবীন্দ্রনাথ, দু’জনেরই খ্রিস্ট-অনুরাগের কথা নিবন্ধকার বিশদ লিখেছেন। কথামৃতে ‘শ্রীম’ বার বার মিল খোঁজেন ঠাকুরের জীবনের নানা ঘটনার সঙ্গে প্রভু জিশুর জীবনের; শ্রীরামকৃষ্ণের ১২ জন সন্ন্যাসী সন্তানের সঙ্গে তুলনা করা হয় জিশুর ১২ জন শিষ্যের। স্বামী বিবেকানন্দ খ্রিস্টের প্রতি তাঁর গভীর শ্রদ্ধার কথা জানিয়েছেন বিভিন্ন বক্তৃতায়। বলেছেন, জিশুর সময় তিনি উপস্থিত থাকলে চোখের জল দিয়ে নয়, বুকের রক্ত দিয়ে তাঁর পা ধুইয়ে দিতেন। ভগিনী নিবেদিতা শ্রীমা সারদার মধ্যে মা মেরির রূপ দেখেছেন।
রবীন্দ্রনাথের ‘শিশুতীর্থ’, ‘খৃস্টোৎসব’, ‘আজি শুভদিনে পিতার ভবনে’ ইত্যাদি রচনা, শান্তিনিকেতনের পৌষমেলার সঙ্গে বড়দিনের উৎসবকে মিলিয়ে দেওয়ার কথা প্রায় সবাই জানেন। বাংলা সাহিত্যে, গানে, চলচ্চিত্রেও বার বার এসেছেন জিশু। তারাশঙ্করের সপ্তপদী, কান্না-র মতো উপন্যাসে মানবপ্রেমিক খ্রিস্টের প্রতীক হয়ে ওঠেন কখনও সন্ন্যাসী হয়ে যাওয়া কৃষ্ণেন্দু, কখনও অনাথ শিশুদের আশ্রয়দাতা বাঙালি খ্রিস্টান ফাদার। সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের কিশোর-উপন্যাস-এও এ জাতীয় চরিত্রের আনাগোনা। সুবোধ ঘোষের ‘চতুর্থ পানিপথের যুদ্ধ’ গল্পে খ্রিস্ট হয়ে ওঠেন নিপীড়িত প্রান্তিক মানুষদের ভরসা। রুননু হোরো বলে, তাদের ‘বিরসা ভগবান’-এর চেহারা ছিল ‘জিশুখ্রিস্টের মতো’। লীলা মজুমদারের গল্পে অবিবাহিতা, মাঝবয়সি খ্রিস্টান নার্স মাতৃত্বের স্বাদ পান হিন্দু পরিবারের পরিত্যক্ত এক শিশুকে কোলে তুলে নিয়ে, বলেন, “আজ জিশু আমাদের ঘরে এসেছেন!” নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতায় উদ্যত ট্র্যাফিক থামিয়ে দিয়ে রাজপথ পেরিয়ে যায় পথশিশু— ‘কলকাতার যিশু’।

সপ্তপদী-র চলচ্চিত্রায়ণে মন্দিরের ঘণ্টায় মিলে যায় গির্জার বেল, সন্ন্যাসী কৃষ্ণস্বামী-রূপী উত্তমকুমারের মুখে ফুটে ওঠে খ্রিস্টের আদল। সিস্টার ছবিটি বাঙালি দর্শক ভুলতে পারবে না, বিশেষ করে সলিল চৌধুরীর সুরে ‘বিশ্বপিতা তুমি হে প্রভু’ গানটি। বাংলায় ক্রিসমাস ক্যারলের ধাঁচে গান বললে আরও মনে পড়ে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ‘শোন শোন গল্প শোন’ (চেনা অচেনা), ‘সূর্যের রক্তরাগে’ (অসাধারণ)। আবার ভোলা ময়রা যখন অ্যান্টনিকে বলেন, “তোর কি ইষ্ট কালীকৃষ্ট, ভজগে তুই জিশুখ্রিস্ট”, অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি জবাব দেন তাঁর গানে— “ঐহিকে সব ভিন্ন ভিন্ন অন্তিমে সব একাঙ্গী।” এ ভাবেই, কলকাতার দীর্ঘ দিনের বাসিন্দা অ্যাংলো-বাঙালি খ্রিস্টানদের মতোই জিশু আমাদের কাছের মানুষ হয়ে ওঠেন, মাদার টেরিজ়া আপন হয়ে ওঠেন, বাঙালির বড়দিনের সঙ্গে জড়িয়ে যান নাহুম সাহেব আর বো ব্যারাকের সান্টা ক্লজ়-সাজা প্রবীণ, পার্ক স্ট্রিটের বেহালাবাদক।

পৃথা কুন্ডু

কলকাতা-৩৫

ভয়ের পিকনিক

‘পিকনিক যেন মহামারির নতুন ষড়যন্ত্রের কারণ না হয়’ (২১-১২) খবরটি খুবই উদ্বেগজনক। দুর্গাপুজো, কালীপুজো, ছট ও জগদ্ধাত্রী পুজোর সময়ে অতিমারির সংক্রমণ থেকে রেহাই পেয়েছি, যদিও তা হাইকোর্টের বিধিনিষেধ আরোপিত হওয়ার ফলে। বর্তমানে আবার শুরু হয়েছে শীতকালীন উৎসব। দল বেঁধে মাঠে, ময়দানে এবং পিকনিক স্পটগুলোতে পিকনিক শুরু হয়ে গিয়েছে। যেখানে শুধু বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস, আনন্দ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বালাই নেই। অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই, দূরত্ববিধির তোয়াক্কা নেই। প্রশাসনের তরফেও কোনও নজরদারির ব্যবস্থা নেই। ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি প্রবল। পার্ক স্ট্রিটে বড়দিন ও বর্ষবরণের রাতে মানুষের বাঁধভাঙা ভিড় প্রতি বছর লক্ষ করা যায়। এ বারও তার ব্যতিক্রম হবে না, যদি না সরকার ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য দ্রুত বিধিনিষেধ আরোপ করে।

অতীশচন্দ্র ভাওয়াল

কোন্নগর, হুগলি

নেশার শহর

অগ্নি রায়ের ‘প্রেমতক্তির পরানকথা’ (রবিবাসরীয়, ১৩-১২) নিবন্ধ প্রসঙ্গে কিছু কথা। টেকচাঁদ, হুতোমেরও প্রায় ৩০ বছর আগে ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বিলাসাখ্য রচনাবলিতে গাঁজাপ্রেমী বিবি-বাবুদের কথা বলেছেন। এঁরা গাঁজা, গুলি, চরস আর ‘মদ্যতেই সদ্য সুখ’ বুঝে দিবারাত্র নেশায় অচেতন হয়ে কাল কাটাতেন। আবার, অর্থাভাবে এঁরা আট পয়সার ‘মোহিনী’ গাঁজার পরিবর্তে চার পয়সা ছটাক ‘বালচরে পাতি ভরা গাঁজা’-তে মজা নিতেন। সঙ্গে বিলিতি ব্র্যান্ডির পরিবর্তে ধেনো মদও গিলতেন। অবশ্য এ সব রচনার মূল উদ্দেশ্য ছিল অন্যায় ও অসামাজিক কাজকর্মের বিরোধিতা করে সমাজকে কলুষমুক্ত করা। ভবানীচরণের ইঙ্গিত অনুসরণ করেই প্যারীচাঁদ লিখেছিলেন আলালের ঘরের দুলাল (১৮৫৮), যে কথা জানিয়েছেন মনীষী-সমালোচক রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্র তাঁর সম্পাদিত বিবিধার্থ সংগ্রহে। অজ্ঞাতসারে প্রায় একই পথে পা ফেলেছিলেন মধুসূদন দত্ত। অধঃপতন কেবল অশিক্ষিত, গণ্ডমূর্খ আলাল বা ‘গুলজার শহর’ কলকাতার ‘মৌতাতি বুড়ো’-দের (হুতোমে বর্ণিত) হয়নি— পাশ্চাত্য শিক্ষার আলোয় মাতাল হয়ে মদ আর মহামাংসের প্রকাশ্য তাণ্ডবে উচ্ছৃঙ্খলতার চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছেছিল মধুসূদনের নবকুমার, কালীনাথরাও (একেই কি বলে সভ্যতা?)। তবে পক্ষীর দলের খগরাজ রূপচাঁদ শুধু গেঁজেল হিসেবে নয়, সঙ্গীত রচনাকার হিসেবেও প্রসিদ্ধ ছিলেন। প্রায় দু’শো বছর আগে কলকাতার আকাশে উড়তে-থাকা নানা নকশায় গাঁজাখোরদের গাঁজাপ্রীতি সংবাদ উঠে এসেছে এ ভাবেই।

সুদেব মাল

খরসরাই, হুগলি

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement