‘হয় উন্নয়ন, নয় পরিবেশ?’ (২০-৫) প্রবন্ধের জন্য জয়ন্ত বসুকে ধন্যবাদ। তিনি যথার্থই বলেছেন, সংসদে দাঁড়িয়ে রাজনৈতিক নেতারা আজ বলছেন, হয় দূষণ না হয় পরিবেশ, কোনও একটাকে বেছে নিতে হবে। পত্রপত্রিকায় পরিবেশ দূষণের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হলেও, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উন্নয়নের সঙ্গে দূষণ নিয়ন্ত্রণের সংঘাত ঘটবে বলে মনে করা হয়। তাই দূষণ নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নটি গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। আমজনতাও বিশ্বাস করে, উন্নয়ন চাইলে দূষণকে মেনে নিতেই হবে। অতএব দূষণই আমাদের ভবিতব্য।
উন্নয়নের যে মডেল বর্তমানে অনুসরণ করা হচ্ছে, তার বিকল্প মডেল কল্পনা করার শক্তি অধিকাংশ মানুষের মধ্যে না-ও থাকতে পারে। অনেক বিখ্যাত বিজ্ঞানীও মানবজাতিকে এই গ্রহ পরিত্যাগ করার উপদেশ দেন। কারণ, এই গ্রহ নাকি দূষণের জন্য এক সময় আর বাসযোগ্য থাকবে না। অথচ, উন্নয়নের বিকল্প মডেল ভাবার, এবং অনুসরণ করার উপরে যথেষ্ট জোর দেওয়া হয় না। ইউরোপের কোনও কোনও দেশে ‘গ্রিন পার্টি’ রাজনৈতিক দল হিসেবে জনপ্রিয় হলেও এই পোড়া দেশে এখনও তেমন রাজনীতি অকল্পনীয়। দু’এক জন ব্যক্তিগত ভাবে কিছুটা লড়াই করলে, সেটাও আমজনতার কাছে অনেক সময়ই বিরক্তির কারণ হয়। ভারতে পরিবেশের সুরক্ষা কখনও ভোটের বিষয় হয় না। পরিবেশের জন্য আন্দোলনে শ্রেণিসংগ্রামের কাহিনি নেই বলেই হয়তো বামপন্থীরাও তাতে উৎসাহী নন।
অপর দিকে পুঁজিবাদী মহাশক্তিধর দেশগুলি ১৯৯৭ সালের কিয়েটো চুক্তির পর বস্তুত এক পা-ও এগোতে পারেনি। কেবল বৃহৎ বাণিজ্যিক সংস্থার বিপুল লাভের উদ্দেশ্যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পরিচালিত হলে পরিবেশ বাঁচানো সম্ভব নয়। উন্নয়নের বিকল্প পথের কথা ভাবা প্রয়োজন।
অনিন্দ্য কুমার পাল, কলকাতা-৯৬
ঘূর্ণিঝড়ের ভয়
পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে বননিধন, শিল্পায়ন, নগরায়ণের কারণে। তার উপর রয়েছে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি, জীবাশ্ম জ্বালানির অত্যধিক ব্যবহার। ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমাগত বাড়ছে। পৃথিবীর মোট সম্পদের ৯০ শতাংশ ভোগ করে মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ। তাদের জন্য প্রভাবিত হচ্ছে অধিকাংশ মানুষের ভবিষ্যৎ। ধ্বংস হচ্ছে বাস্তুতন্ত্র, হ্রাস পাচ্ছে জীববৈচিত্র।
এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সৃষ্টি হতে পারে ঘূর্ণিঝড় বা ছোটখাটো টর্নেডো। পার্শ্ববর্তী অঞ্চল অপেক্ষা কোনও স্থানের উষ্ণতা অধিক হলে টর্নেডো দেখা যায়। কয়েক মুহূর্ত স্থায়ী হলেও এর বিধ্বংসী ক্ষমতা সাংঘাতিক। আন্টার্কটিকা ছাড়া সব মহাদেশে এই ঝড় লক্ষ করা যায়। পশ্চিমবঙ্গে প্রথম টর্নেডো নথিভুক্ত করা হয়েছিল ১৮৩৮ সালে, কলকাতার কাছে। ১৯৯৮ সালের ২৪ মার্চ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সুবর্ণরেখার তীরবর্তী সারতা গ্রামে টর্নেডোর বিধ্বংসী রূপ দেখা গিয়েছিল। গত দশ বছরে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে এই ঝড় বার বার দেখা গিয়েছে। তবে এই ধরনের টর্নেডোকে ‘মিনি টর্নেডো’ আখ্যা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা, কারণ এগুলি দেখতে টর্নেডোর মতো হলেও এর স্থায়িত্ব ও বিধ্বংসী ক্ষমতা খুব বেশি নয়। সাধারণত মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে এই ধরনের টর্নেডোর প্রকোপ লক্ষ করা গিয়েছে। উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যাও যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনই বঙ্গোপসাগর নিকটবর্তী পশ্চিমবঙ্গেও ‘দমকা টর্নেডো’ উৎপত্তি হবে আগামী দিনে, এটাই প্রত্যাশিত।
নরসিংহ দাস, রবীন্দ্রনগর, পশ্চিম মেদিনীপুর
সর্বনাশা প্লাস্টিক
হঠাৎ হঠাৎ সরকারের খেয়াল হয় যে, প্লাস্টিকের ব্যাগ পরিহার করা প্রয়োজন। বিশ্ব পরিবেশ দিবসে দেখা যায়, ঘটা করে পরিবেশ দিবস উদ্যাপিত হচ্ছে। তার পর আবার যে কে সে-ই। পাহাড়, জঙ্গল থেকে নদী, মহানগর— সর্বত্র প্লাস্টিক বোতল, ব্যাগ, আর থার্মোকল। ২০১৮ সালে প্লাস্টিক ব্যবহারের উপর নতুন আইন আসে। কিন্তু সেই আইন ঠান্ডা ঘরে রাখা থাকে, বিশেষ বিশেষ দিনে তাকে বার করা হয়। যদিও ১ জুলাই থেকে এক বার মাত্র ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধ হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে, তবুও অতীতে যে ভাবে অবাধে নিয়মভঙ্গ হয়েছে, তা দেখে বিশেষ ভরসা হয় না। সম্প্রতি হিমালয়ের বেশ কিছু জায়গায় অভিযান চালিয়ে যে পরিমাণ প্লাস্টিক আবর্জনা পাওয়া গেছে, তাতে পুরো হিমালয়ের বাস্তুতন্ত্রই বিপন্ন হয়ে পড়বে বলে পরিবেশবিদরা জানিয়েছেন।
প্লাস্টিক পুরোপুরি বাতিল করতে গেলে অনেক বড় পদক্ষেপ করতে হয়। জল, দুধ, তেল, ঘি, প্রসাধনী, মশলা, সব ক্ষেত্রেই প্লাস্টিক। পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করার অভিযান না করে আগেই পলিথিন প্রস্তুত করা আইনবিরুদ্ধ বলে ঘোষণা করলে কাজ হত বেশি। নিত্য বাজারহাট করার জন্য আমরা যে সব প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার করি, সেগুলোই সবচেয়ে সমস্যার কারণ। এতে নিকাশিব্যবস্থা ধ্বংস হচ্ছে, চাষের জমিতে বিষ ছড়াচ্ছে, মাছ ও প্রাণীদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। ক্লোরিনযুক্ত প্লাস্টিক থেকে বিষাক্ত রাসায়নিক ভূগর্ভস্থ ও ভূপৃষ্ঠীয় জলে মিশে যাওয়াতে আমাদের দেহেও তা প্রবেশ করছে। অথচ, আমরা ভুলে গিয়েছি আগের মতো সেই চটের ব্যাগে বাজার করা। আমরা বাজার যাই খালি হাতে, আর বাড়ি নিয়ে আসি আট-দশটা প্লাস্টিকের ব্যাগ। আমরা সচেতন না হলে আইন করে কোনও লাভ নেই।
পার্থময় চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা-৮৪
দুয়ারে সঙ্কট
অদিতি মুখোপাধ্যায়ের ‘বিপর্যয়ের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে’ (৮-৬) প্রবন্ধটি গুরুত্বপূর্ণ। যে ভাবে প্রতি বছর তীব্র গরম কিংবা অতি ভারী বৃষ্টিপাত ও বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়, তা যে বিশ্ব উষ্ণায়নের ফল, বলার অপেক্ষা রাখে না। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, হিমালয়ের হিমবাহগুলির বরফ গলছে দ্রুত হারে। সমুদ্রের জলতল বাড়ছে, বাড়ছে ঘূর্ণিঝড়ও। তাই জলবায়ু রক্ষার্থে বিভিন্ন পরিকল্পনা ও নীতির প্রকৃত বাস্তবায়ন করা উচিত। স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা উচিত আরও ব্যাপক ভাবে।
সৌগত কাঞ্জিলাল, রামপুর, বাঁকুড়া
আইনে আস্থা
নারকোটিক্স কন্ট্রোল বুরো মাদক কাণ্ডে শাহরুখ-পুত্র আরিয়ান খানকে ক্লিনচিট দিয়েছে (‘আরিয়ানকে রেহাই দিল এনসিবি-ই’, ২৮-৫)। অন্য ভাবে বললে, তারা নিজেদের ভুল স্বীকার করে নিয়েছে। এতে কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের মুখ পুড়ল না। বরং তদন্তের ক্ষেত্রে তাদের নিরপেক্ষতার প্রমাণ মিলল। সম্প্রতি পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী তাঁর মন্ত্রিসভার এক সদস্যের দুর্নীতির খবর জানামাত্র তাঁকে বরখাস্ত করেছেন। দিল্লির জনৈক আইএএস-কে ক্ষমতার অপব্যবহারের জন্য বদলি করেছে সরকার। এই সমস্ত ঘটনা দেশের আইনি ব্যবস্থার উপর মানুষের আস্থা ফেরাতে সাহায্য করে। দুঃখের বিষয়, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এটা বলা যাবে না। সাধারণ মানুষকে কিছু পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা এখানে হয়েছে। কিন্তু কেড়ে নেওয়া হচ্ছে আত্মমর্যাদাবোধ, গণতন্ত্র। সাম্প্রতিক এসএসসি দুর্নীতির পরও সরকারের অভূতপূর্ব নীরবতা দেখে বিষয়টি আর এক বার প্রতীয়মান হল।
স্বপন কুমার ঘোষ, কলকাতা-৩৪
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।