বেশ কিছু দিন ধরে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন না অফলাইন পরীক্ষা হবে, তা নিয়ে বিস্তর বাদানুবাদ চলছে। শিক্ষকমহলের একাংশের দাবি, অফলাইন পরীক্ষা নেওয়া উচিত প্রয়োজনীয় স্বচ্ছ মূল্যায়নের জন্য। কিন্তু প্রশ্ন হল, এই স্বচ্ছ মূল্যায়ন আদতে কিসের? শিক্ষালাভ কতটা হচ্ছে, তার মূল্যায়ন স্বচ্ছ ভাবে কি সত্যিই হয়? এত দিন ধরে চলে আসা অফলাইন পরীক্ষাব্যবস্থায় কে কতটা মুখস্থ করে নিখুঁত উত্তর জমা করতে পারল, প্রকৃতপক্ষে তারই মূল্যায়ন হয়ে থাকে। সত্যিই কি ওই উত্তরপত্রের উত্তর কোনও শিক্ষার্থীর নিজস্বতার প্রতিফলন ঘটায়?
অনেকে বলছেন, অনলাইন পরীক্ষায় মূল্যায়ন হয় না, অস্বচ্ছ প্রক্রিয়া এটি। কিন্তু অনলাইনেও এক জন ছাত্র বা ছাত্রী সংশ্লিষ্ট বিষয়টি কতটা বুঝেছে, তা মূল্যায়ন করা সম্ভব। শিক্ষার্থীরা অনেক সময় ভুল পঠনপাঠনের সম্মুখীন হয়। কেন হয়? এই শিক্ষকরাও তো অফলাইন ব্যবস্থার স্বচ্ছ মূল্যায়নের দ্বারাই নির্বাচিত। তা হলে এই স্বচ্ছতা কি এতটাই ঠুনকো, যাতে সঠিক মানুষটিই নির্বাচিত হন না কিছু ক্ষেত্রে? অধিকাংশ শিক্ষক এবং ছাত্রছাত্রী একটা অচলায়তনকেই কান্ডারি করে তথাকথিত মূল্যায়ন দ্বারা আদতে ব্যর্থতাকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। আর, নতুন গঠনমূলক পদ্ধতিতে শিক্ষালাভ থেকে বিরত থাকতে চাইছেন গণটোকাটুকির দোহাই দিয়ে। প্রশ্ন হল, অফলাইনে আক্ষরিক অর্থে টোকাটুকির সুযোগ কমের মানে কি এই যে, তারা প্রত্যেকেই নিজে কিছু প্রস্তুত করছে? এখানেও অনেকেই অন্য কারও তৈরি উত্তর মস্তিষ্কে ধারণ করে তা থেকে টুকছে। শুধু এই টোকাতে উত্তর তৈরি করে লিখে আনা কোনও কাগজ দৃশ্যমান হচ্ছে না বলেই এটা স্বচ্ছ! অনলাইনে প্রশ্নে কিছু কনসেপচুয়াল এবং প্রয়োগমূলক পরিবর্তন আনলে খানিকটা স্বচ্ছ মূল্যায়ন সম্ভব বলে মনে হয়। প্রসঙ্গত, একটা ঘটনার উল্লেখ করা প্রয়োজন। সাহিত্যের বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে যে উত্তর এবং ভাবনা শিক্ষকমণ্ডলীর কাছে ধার্য, তার থেকে বেরিয়ে ছকভাঙা কোনও উত্তর লিখলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেটায় কম নম্বর দেওয়া হয়ে থাকে। হয়তো উত্তরটি অন্য কোনও দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে পারত, যা এত দিনে হয়নি। যে পরীক্ষামাধ্যমে একটাই ধারণাকে মুখস্থ করার উপর মূল্যায়ন হয়, নতুনের প্রবেশ যেখানে ক্ষীণ, সেই পরীক্ষায় স্বচ্ছতার প্রসঙ্গ প্রহসনমাত্র বলে মনে হয়।
চন্দ্রানী দে, কলকাতা-২৫
অফলাইনই ঠিক
রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আসন্ন সিমেস্টার নিয়ে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এবং তা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। পরস্পরবিরোধী নানা মত ভেসে বেড়াচ্ছে। অতিমারির কারণে এমনিতেই শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাট ক্ষতি হয়েছে। অনেকেরই পড়াশোনা সুষ্ঠু ভাবে এগোয়নি। বিকল্প হিসেবে অনলাইনকে গ্রহণ করা হয়েছিল বটে, কিন্তু শিক্ষার উন্নয়নে তা যে সম্পূর্ণ ছাপ ফেলতে সক্ষম হয়নি, তা স্পষ্ট। অথচ, সেই পড়াশোনার দুর্বলতার অজুহাতকে খাড়া করে এক পক্ষ অনলাইনে পরীক্ষার ওকালতি করে চলেছে। অনলাইন ধারণাটাই তো সাম্প্রতিক। এর অন্যতম অসুবিধা, পরীক্ষার নিয়মকানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখানো পরীক্ষার্থীদের নিয়ে। অফলাইন পরীক্ষায় বহুলাংশে যেটার দূরীকরণ সম্ভব। শিক্ষার্থী পরীক্ষাকেন্দ্রে হাজির হয়ে সরাসরি পরীক্ষা দেবে, এটাই তো চিরাচরিত ব্যবস্থা। অনলাইনের পক্ষে যে সব শিক্ষক ও অন্যান্য ব্যক্তি সুপারিশ করছেন, তাঁরাও তো অফলাইনে পরীক্ষা দিয়েই প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন? সেই আত্মসমীক্ষা করলে অফলাইনের প্রয়োজনীয়তা বোঝা যাবে। তাই, পরীক্ষা অবশ্যই অফলাইনে হোক। তবে হ্যাঁ, ছাত্রছাত্রীদের কথা মাথায় রেখে প্রশ্নপত্র তৈরিতে সময়ের দাবির ছাপ রাখার প্রয়োজন রয়েছে। দেখতে হবে সিংহভাগ পরীক্ষার্থীদের কাছেই যেন প্রশ্নপত্রের গ্রহণযোগ্যতা থাকে।
অমল চন্দ্র চৌধুরী, ক্ষীরগ্রাম, পূর্ব বর্ধমান
সহযোগিতা কাম্য
এসএসসি-র নিয়োগকে কেন্দ্র করে রাজ্য সরকারের একের পর এক মন্ত্রীর জড়িয়ে পড়া রাজ্যবাসীর কাছে চরম হতাশার। কারণ, আগের সরকারের স্বজনপোষণ, দলবাজি, দুর্নীতিতে তিতিবিরক্ত হয়েই মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় এনেছিল। অথচ, আজ মানুষ দেখছে শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে সব ধরনের নিয়োগে যোগ্য প্রার্থীদের বঞ্চিত করে নেতা-মন্ত্রীদের ঘনিষ্ঠরা কিংবা বিপুল পরিমাণ টাকা ঘুষ দিয়ে অযোগ্যরা নিযুক্ত হচ্ছে। তা হলে পূর্বতন সরকারের সঙ্গে বর্তমান সরকারের পার্থক্য কোথায় রইল? যে দিন এসএসসি তালিকায় মন্ত্রী-কন্যার নাম অনেক পিছন থেকে এক নম্বরে চলে এসেছিল, সে দিন শিক্ষা দফতরের কর্তারা তা কেন না দেখার ভান করেছিলেন? নেতা-মন্ত্রীদের অলক্ষেই কি এমন হয়েছিল?
অভিযুক্ত শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর পুরনো দল ছেড়ে বর্তমান শাসক দলে নাম লেখানোটা যে কোনও আদর্শ বা নীতির টানে ছিল না, শাসক দলের নেতাদের কি তা অজানা ছিল? তাঁর দল পরিবর্তনের শর্তগুলিও তো এখন প্রকাশ্যে আসছে। ফলে শাসক দল এর দায় কোনও ভাবেই এড়াতে পারে না। সরকারের নানা স্তরে এমন দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকেই সরব হতে হবে। দাবি তুলতে হবে, যে যে ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, সবেরই নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। রাজ্যবাসীর কাছে বিশ্বস্ত থাকার জন্য রাজ্য সরকারের উচিত সেই তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা করা।
ইন্দ্রজিৎ মিত্র, কলকাতা-৩১
স্বাতন্ত্র্য থাকুক
চুরুলিয়ায় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মভিটেয় ১৯৬০ সালে গড়ে উঠেছিল নজরুল অ্যাকাডেমি। কবির পৈতৃক মাটির বাড়িটিকে ঘিরে তৈরি হয়েছিল একটি সংগ্রহশালা। ওই সময় থেকেই নজরুল মেলা চুরুলিয়ার ঐতিহ্য। সাত দিন ধরে প্রায় চব্বিশ ঘণ্টা চলত কবির গান, কবিতা, নাটক নিয়ে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিল্পীরা যোগ দিয়েছেন এখানে। সুদূর বাংলাদেশ এবং পার্শ্ববর্তী রাজ্য ত্রিপুরা ও অসম থেকেও নিয়মিত নজরুল অনুরাগীরা এসেছেন। এসেছেন নামী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাও। কিন্তু ২০১৮ সালের পর থেকে চুরুলিয়ার এই চেনা ছবিটি দ্রুত পাল্টে গিয়েছে। কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাকাডেমির দায়িত্ব নিয়ে নেয় আনুষ্ঠানিক ভাবে। অতিমারির কারণে গত তিন বছর মেলা হয়নি। এ বছর মেলা সে ভাবে না হলেও তিন দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও কর্মীরা প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে অনুষ্ঠানটি সামলেছেন। সাত দিনের পরিবর্তে মাত্র তিন দিন অনুষ্ঠান হয়েছে বলে অনেকেই শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আগে অ্যাকাডেমি থেকে দশ জন বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও সমাজকর্মীকে বিভিন্ন পুরস্কার দেওয়া হত। নগদ অর্থ, মানপত্র দেওয়া হত। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে এ সব তুলে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ও অন্যান্য রাজ্যের অতিথিদের জন্য কোনও ব্যবস্থা ছিল না। এ সব নিয়ে ক্ষোভও জমেছে অনেকের মনে। এলাকার সবাইকে নিয়ে কবির জন্মদিন ও মেলার আয়োজন করলে, এবং অ্যাকাডেমি তার স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে চললে ভাল হবে।
কাজী নিজামউদ্দীন, বেনাচিতি, পশ্চিম বর্ধমান
অকেজো নলকূপ
হাওড়ার উলুবেড়িয়া ১ নম্বর ব্লকের অধীন কালীনগর পূর্বপাড়া গ্ৰামে একাধিক পানীয় জলের নলকূপ দীর্ঘ দিন ধরে অকেজো। বিশেষ করে যে সব এলাকায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের নলবাহিত পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা নেই, সেখানকার বাসিন্দাদের অবস্থা দুর্বিষহ। তাঁরা অনেকটা পথ পেরিয়ে পানীয় জল সংগ্ৰহ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
পুষ্পরানি মণ্ডল, কালীনগর, হাওড়া
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।